ট্রাম্প–ঝড়ের পরও বিশ্বব্যবস্থা টিকে আছে, স্বস্তি নীতিপ্রণেতাদের
Published: 27th, April 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অন্তর্মুখী নীতি গ্রহণ সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থা যে এখনো ভেঙে পড়েনি, তাতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন বিশ্বের নীতিপ্রণেতারা।
গতকাল শনিবার শেষ হওয়া বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের পাঁচ দিনব্যাপী বসন্তকালীন বৈঠকে মূলত বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেই সঙ্গে এ বৈঠক চালকালে ওয়াশিংটন বেইজিংয়ের সঙ্গে উত্তেজনা প্রশমন নিয়েও কথা বলেছে।
কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে ফেডারেল রিজার্ভ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে আক্রমণ করেছেন, তাতে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকার ও অর্থমন্ত্রীদের মনে এখন একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। সেটা হলো, মার্কিন ডলার যেভাবে এত দিন বিশ্বের নিরাপদ মুদ্রা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে এবং বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ যেভাবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে সমর্থন করে গেছে, সেই ব্যবস্থা কি অক্ষুণ্ন থাকবে?
ডোনাল্ড ট্রাম্প শেষমেশ ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের বরখাস্ত করার হুমকি থেকে সরে আসায় নীতিপ্রণেতারা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন। বিষয়টি হলো, ফেডের চেয়ারম্যান বিশ্বের অন্যান্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও নীতিপ্রণেতাদের কাছে ডলার অভিভাবক হিসেবে বিবেচিত। ফলে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হবে—এমন হুমকি দেওয়া হলে ডলারের ওপর মানুষের আস্থা কমে যায়। কিন্তু ট্রাম্প মনে করেন, জেরোম পাওয়েল একজন পরাজিত মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্র যে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে না, তাতেও অনেকে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন। যদিও মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এ দুই প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। ১৯৪৪ সালের ব্রেটন উডস কনফারেন্সে যুক্তরাষ্ট্রই এই দুটি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার বিষয়ে সমর্থন দিয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর রবার্ট হোলজম্যান বলেছেন, এই সপ্তাহ ছিল স্বস্তির সপ্তাহ। মার্কিন প্রশাসনের অবস্থানে পরিবর্তন এসেছে; কিন্তু তিনি মনে করেন না, এটাই যুক্তরাস্ট্রের চূড়ান্ত অবস্থান। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের বিষয়ে তাঁর সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ফেডারেল রিজার্ভের রাজনৈতিকীকরণ বা বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের মতো প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল করে ফেলার মতো পদক্ষেপ বিশ্বের অধিকাংশ নীতিপ্রণেতার জন্য বোঝা কষ্টকর।
নীতিপ্রণেতাদের মূল উদ্বেগ হলো, বিশ্বের আর্থিক ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্বের বাইরে তাঁরা অন্য কিছু ভাবতে পারছেন না। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিন্ন মুদ্রা রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ইদানীং কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। সম্প্রতি ইইউ তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল অঞ্চলে হিসেবে প্রতিপন্ন হওয়ায় এ মর্যাদা পেয়েছে, অর্থাৎ মানুষ ইউরোতে আস্থা রাখছে।
কিন্তু যে নীতিপ্রণেতারা রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেছেন তাঁদের ভাষ্য হলো, ইউরোপের মুদ্রা এখনই ডলারকে হটিয়ে দিতে পারবে না, বরং বাস্তবতা হলো, যুক্তরাষ্ট্র যতই অস্থিতিশীল হোক, বিশ্বের রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ইউরো তেমন একটা জনপ্রিয়তা পাবে না। এখন বিশ্বের ২০ শতাংশ রিজার্ভ রাখা হয় ইউরোতে; সেখানে হয়তো সামান্য কিছু যোগ হতে পারে।
যে ২০ দেশ ইউরো ব্যবহার করে, তাদের মধ্যে কেবল জার্মানির ঋণমান বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয়। অর্থাৎ নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বিনিয়োগকারীরা যা চান, তা দেওয়ার ক্ষমতা আছে কেবল জার্মানির। অন্যান্য দেশ ঋণগ্রস্ত। শক্তিশালী দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্সেও রাজনৈতিক ডামাডোল শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে রাশিয়া ইউরো অঞ্চলের কাছাকাছি হওয়ার কারণেও ইউরোর ওপর নির্ভরশীলতা সেভাবে বাড়বে না বলেই মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
এদিকে জাপান দেশ হিসেবে অনেক ছোট। চীনের মুদ্রাও অনেক নিয়ন্ত্রিত; এ পরিস্থিতিতে ডলারের ভিন্ন কোনো ব্যবস্থা নেই বললেই চলে; যার পেছনে আছে ফেডারেল রিজার্ভ ও দুটি ব্রেটন উডস প্রতিষ্ঠান।
বস্তুত যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বৃহত্তম শেয়ারহোল্ডার; এ দুই প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়া টিকতে পারবে না। এ পরিস্থিতিতে পুরোনো ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া কঠিন হলেও অনেকে মনে করেন, ক্রেডিট কার্ড ও স্যাটেলাইট সেবার জন্য হাতে গোনা কয়েকটি মার্কিন প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল থাকা চ্যালেঞ্জিং।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ও আইএমএফ র ব যবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
বগুড়ায় ফুটপাত দখল করে দোকানের পসরা, কোটি টাকার চাঁদাবাজির অভিযোগ
বগুড়া শহরের সার্কিট হাউস-কালীবাড়ি মোড় সড়কে সারি সারি ভ্যানে হরেক খাবারের পসরা। পিৎজা, বার্গার, স্যান্ডউইচ, চিকেন শর্মা, মিটবক্স—সবই মিলছে রাস্তার পাশের এসব দোকানে। ক্রেতারা মূলত কিশোর ও তরুণ-তরুণী।
দোকানগুলোতে নেই কোনো আলাদা শেফ। বিক্রেতারাই নিজের হাতে খাবার তৈরি করছেন, পরিবেশনও করছেন। কারও হাতে গ্লাভস নেই, শরীরে নেই অ্যাপ্রোন। বিকেল গড়াতেই এসব ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকানে ভিড় জমছে। কোর্ট হাউস স্ট্রিটের পাশেই আছে ‘পিজ অ্যান্ড বার্গ’, ‘পদ্মা ফুডস’ ও ‘হিলিয়াম রেস্টুরেন্ট’-এর মতো নামীদামি খাবারের দোকান। একসময় সন্ধ্যায় এসব প্রতিষ্ঠানে ক্রেতার ঢল নামত। এখন সে ভিড় চলে গেছে রাস্তার পাশে বসা দোকানগুলোর দিকে।
পদ্মা ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জলেশ্বরীতলা ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমদাদ আহমেদ বলেন, ‘অভিজাত এ এলাকায় একটি খাবারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। অন্তত ১৪টি প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ নিতে হয়। এসব নবায়নে প্রতিবছর মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হয়। ভবন ভাড়া, দামি শেফ ও কর্মচারীর বেতন—সব মিলিয়ে খরচ বিপুল। অথচ রাস্তার পাশে ভ্যানে বসা দোকানে বিনিয়োগ মাত্র ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। কোনো সনদ নেই, দোকানভাড়া নেই, কর্মচারীও নেই। শুধু দামে সস্তা বলে ক্রেতারা ঝুঁকছেন ওদিকে। সড়ক দখল করে দোকান বসায় যানজটও বাড়ছে। অভিযোগ করেও প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো প্রতিকার মিলছে না।
বগুড়া হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম দেলোয়ার হোসেন বলেন, জলেশ্বরীতলা অভিজাত এলাকা। এখানে দোকান দিতে বিপুল বিনিয়োগ লাগে। নামীদামি দোকানে একটি পিৎজার দাম ৫০০ টাকা হলে ভ্রাম্যমাণ দোকানে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলেও ক্রেতারা সস্তা পেয়ে সেখান থেকেই কিনছেন। এতে অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলো লোকসানে পড়ছে। এর সঙ্গে তিনি যুক্ত করেন, ‘আমরা স্ট্রিট ফুড ব্যবসার বিরোধী নই। তবে সেটা অভিজাত এলাকা থেকে সরিয়ে পৌর পার্ক, অ্যাডওয়ার্ড পার্কসংলগ্ন সড়ক কিংবা সরকারি আজিজুল হক কলেজের পাশের এলাকায় নিতে প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি।’
সড়কজুড়ে দোকান, ভোগান্তিতে শহরবাসীসম্প্রতি দেখা যায়, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে সড়কের এক পাশে ২০-২৫টি ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান বসেছে। অন্য পাশে ফলের দোকান। বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আদালত প্রাঙ্গণের সামনে যানজট লেগেই থাকে।
এ ছাড়া পৌরসভা লেন, জেলা খানা মোড়, বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বাকী সড়ক, মহিলা ক্লাব মোড়, শহীদ আবদুল জব্বার সড়ক, সাতমাথা-সার্কিট হাউস সড়কসহ শহরের নানা সড়কেই বসছে ফুচকা, চটপটি, জুস, ফাস্ট ফুড ও ফলের দোকান।
সাতমাথায় প্রতিদিন বসছে অর্ধশতাধিক দোকান। জিলা স্কুলের সামনে চটপটি ও কাবাবের দোকানগুলোর চেয়ার বসানো হয়েছে ফুটপাত দখল করে। কবি নজরুল ইসলাম সড়ক, থানা মোড়, বড়গোলা, দত্তবাড়ি, কালিতলা—সবখানেই দুই পাশে দোকান।
রাস্তা দখল করে দোকান বসানোয় বেশির ভাগ সময় যানজটে থাকে শহরে। সম্প্রতি তোলা