বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে এক যুবকের ডান পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সীমান্ত পিলার ৪৪–এর পাশে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আহত যুবকের নাম মোহাম্মদ জোবায়ের (৩০)। তিনি নাইক্ষ্যংছড়ির চাকধালা লম্বামাঠ এলাকার আবদুল হকের ছেলে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার খুঁটি কুড়িয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে ওই এলাকায় যান জোবায়ের। শূন্যরেখা থেকে প্রায় ৩০০ মিটার মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়েন তিনি। এ সময় মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে আহত জোবায়েরকে স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চাকধালা এলাকার বাসিন্দা ফরিদুল আলম বলেন, চাকধালার বড়শনখোলা ভূতেরঝিরি এলাকা দিয়ে জোবায়ের ওপারে গিয়েছিলেন। সেখানে বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, সীমান্তের মানুষ নানা প্রয়োজনে শূন্যরেখা পার হয়ে ওপারে যান। সেখানে প্রায়ই মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে।

এ বছরের জানুয়ারি থেকে নাইক্ষ্যংছড়ির চাকধালা ও ফুলতলী সীমান্তে অন্তত ছয়টি মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় পা হারিয়েছেন সাতজন। সীমান্ত এলাকার জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ওপারে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি এসব মাইন পুঁতে রেখেছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসরুরুল হক বলেন, জোবায়ের মিয়ানমারের ৩০০ মিটার অভ্যন্তরে মাইন বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন। সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের মাইজ্জ্যা সীমান্তফাঁড়ি রয়েছে। ওই ফাঁড়ি আরকান আর্মির দখলে। ধারণা করা হচ্ছে, সীমানার কাছাকাছি আরকান আর্মি মাইন পুঁতে রাখে এবং ওই মাইন বিস্ফোরণে মানুষ হতাহত হচ্ছেন।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ