Samakal:
2025-11-04@00:51:20 GMT

চট্টগ্রামে দর্শক-খরা কাটবে কি

Published: 27th, April 2025 GMT

চট্টগ্রামে দর্শক-খরা কাটবে কি

ক্রিকেটে কি আগ্রহ হারাচ্ছে দর্শক? বিমুখ হচ্ছে মাঠে গিয়ে খেলা দেখার? বাংলাদেশ ক্রিকেট আগের চেয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে কি? সিলেট টেস্টের খাঁ খাঁ গ্যালারি দেখার পর গত কয়েক দিন এই প্রশ্নগুলোই ঘুরছে অনেকের মনে। চট্টগ্রামে জাকের আলী অনিককে পেয়ে তাই সেই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া, ‘ভালো পারফরম্যান্স করা উচিত আমাদের। ভালো পারফরম্যান্সের ওপর আর কিছু নেই। আমাদের সবার লক্ষ্য থাকবে চট্টগ্রাম টেস্টে ভালো পারফর্ম করা।’

অনিকের বিশ্বাস, চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচটিতে যদি তারা প্রত্যাশামতো খেলতে পারেন, তাহলে দর্শকদের আগ্রহ ফিরবে ক্রিকেটে। সিলেটে টেস্টের প্রথম দিন মাত্র শ তিনেক দর্শক মাঠে ছিলেন। সেই টেস্টের প্রথম দুই দিন টিকিট বিক্রি হয়েছিল মাত্র ৬৭১টি। গেল বছর দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজে মিরপুর আর চট্টগ্রাম মিলে টিকিট বিক্রি হয়েছিল ১২ লাখ টাকার। এবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট হারার পর দর্শকের আগ্রহ তলানিতে এসে ঠেকেছে। সেখানে জাকের আলীর ‘ভালো পারফরম্যান্স করতে হবে’ প্রতিশ্রুতি দিয়ে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামের গ্যালারি ভরা বেশ চ্যালেঞ্জিং।

তা ছাড়া দুই দলেরই তারকা উপস্থিতি ভীষণ কম। তাসকিন নেই এই সিরিজে, লিটন দাসও বিশ্রামে। তারকাদের মধ্যে নাহিদ রানাও গিয়েছেন পিএসএল খেলতে। বাকিদের মধ্যে মুশফিকুর রহিমের একটি বিশাল সমর্থক গোষ্ঠী রয়েছে, তবে সিলেট টেস্টে তাঁর পারফরম্যান্স এতটাই অপ্রত্যাশিত ছিল যে হতাশ হয়েছেন দর্শক। যদিও জাকের আলীর বিশ্বাস, এই টেস্টেই হাসবে দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ হাতে ব্যাট, ‘দলে তো উনি (মুশফিকুর রহিম) একা খেলছেন না। উনারই যে রান করতে হবে, রান সবারই করতে হবে। হয়তো উনি করছেন না, এটা যে কারও সঙ্গেই হতে পারে। তিনি অবশ্যই রানে ফিরবেন।’ 

তবে জিম্বাবুয়ের কাছে সিলেটে ওভাবে হারাতে যে দর্শকদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে, সেটি মেনে নিয়েছেন জাকের। দলকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতেও কিছু সময় লাগবে বলে জানান তিনি। ‘যেহেতু সিনিয়র ক্রিকেটাররা যাবেন (অবসরে), স্বাভাবিকভাবেই তরুণ ক্রিকেটারদের মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগতে পারে। আমার মনে হয়, কয়েক দিন সময় লাগবে। আর সবকিছুই রিকভার করা যাবে।’

সিলেট টেস্টে ২৮ আর ৫৮ রানের ইনিংস খেলে প্রতিরোধের একটা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন অনিক। তবে দলের ব্যাটিং যে মোটেই ভালো ছিল না, সেটি অস্বীকার করেননি তিনি। ‘হার তো যে কোনো দলের বিপক্ষেই হতে পারে। আমাদের প্রক্রিয়া ঠিক থাকা উচিত, যার সঙ্গেই খেলি না কেন। ব্যাটিং নিয়ে মূলত বলছি আমি। ব্যাটিংয়ের কারণে আমরা ভুগছি। শট সিলেকশন কীভাবে আরও ভালো করা যায়। সব সময় তো আর বোলাররা জেতাবে না। বেশির ভাগ ম্যাচ বোলাররা জেতায় আমাদের।’ 

জিম্বাবুয়ের বোলিং ধার নয়, বরং নিজেদের ব্যাটিং ভুলেই সিলেট টেস্ট হারতে হয়েছে বলে মনে করেন জাকের আলী। ‘আমরা যেহেতু ভুল করি, এ জন্য হারি। সাধারণ ব্যাপার, যেহেতু প্রথম টেস্টের ফলাফল আমাদের পক্ষে যায়নি, আমরা আমাদের প্রসেসে আছি। ম্যাচের পর আমাদের কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম টেস্টে আমাদের ফোকাস থাকবে যেন ব্যাটিংটা ভালো হয়।’ ব্যাটিংটা ভালো হলে অন্তত চট্টগ্রামে টিকিট ছাপানোর টাকা তোলার জন্য আফসোস করতে হবে না বিসিবিকে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রফরম য ন স জ ক র আল আম দ র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা

লরা উলভার্ট- দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। বয়স মাত্র ছাব্বিশ, কিন্তু মনের দৃঢ়তায় যেন পাহাড়। এবারের ২০২৫ নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন প্রোটিয়া আশার একমাত্র আলোকবর্তিকা। নিজের একক নৈপুণ্যে, এক অসম্ভব সাহসিকতায় দলকে টেনে তুলেছিলেন ফাইনালের মঞ্চে।

সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলে ফেলেছিলেন ১৬৯ রানের অনবদ্য ইনিংস। যেন একক নাটকের একমাত্র নায়িকা তিনি। আর ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন হিমালয়ের মতো দৃঢ় হয়ে। একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন অনবদ্যভাবে। শতরান ছুঁয়ে যখন আকাশে ছুড়লেন ব্যাট, তখন মনে হচ্ছিল, স্বপ্নের ট্রফি যেন হাতের নাগালেই। কিন্তু ক্রিকেটের নির্মম বাস্তবতা! উলভার্ট যখন সাজঘরে ফিরলেন, ঠিক তখনই প্রোটিয়া শিবিরে নেমে এল নীরবতা। জয় হাতছাড়া হলো নিঃশ্বাস দূরত্বে।

আরো পড়ুন:

আরব আমিরাতকে ৪৯ রানে গুঁড়িয়ে ইতিহাস গড়ল যুক্তরাষ্ট্র

মিতালিকে ছাড়িয়ে ইতিহাস গড়লেন মান্ধানা

চোখের কোণে জলের কণা তখনও ঝলমল করছিল। সেটা ঘামের ছিল, নাকি অপূর্ণতার অশ্রু, তা কেউ জানে না। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল, হৃদয়ের গভীরে আগুন জ্বলছে। একটা স্বপ্নের দগ্ধ ছাই হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা।

তবুও এই ব্যর্থতার মাঝেই উলভার্টের জয় আছে। বিশ্বকাপে তিন ফাইনাল, টানা তিনবার! এবং প্রতিবারই দলের একমাত্র ভরসা ছিলেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে করেছেন ৯ ম্যাচে ৫৭১ রান, গড়ে ৭১.৩৭। যা নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ। এর আগে অ্যালিসা হিলির ৫০৯ রান ছিল শীর্ষে।

শুরুটা ছিল নিস্তরঙ্গ- প্রথম ম্যাচে মাত্র ৫, পরেরটিতে ১৪। কিন্তু ধীরে ধীরে আগুন জ্বলে উঠল তার ব্যাটে। ভারতের বিপক্ষে ৭০, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৬০, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯০, আর সেমিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬৯। প্রতিটি ইনিংস যেন নিজের সীমাকে ছাপিয়ে যাওয়া একেকটি যাত্রা।

তবে উলভার্টের কীর্তি শুধু এই বিশ্বকাপেই নয়। ২০২৩ ও ২০২৪ দুই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। প্রতিবারই দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে। কিন্তু ভাগ্য যেন নিষ্ঠুরভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তার দিক থেকে। তিনটি ফাইনাল, তিনটি পরাজয়।

তবু লরার গল্পটা হারের নয়- এ এক অনমনীয়তার গল্প, এক নিঃসঙ্গ অভিযাত্রার গল্প। যেমন শেরপা অক্সিজেনহীন উচ্চতায় পৌঁছে দেয় অন্যদের। কিন্তু নিজে ফিরে আসে নীরবে, তেমনি উলভার্টও দলের স্বপ্নগুলো কাঁধে তুলে বয়ে নিয়েছেন, একা।

ফাইনাল শেষে ভারতীয় খেলোয়াড়রাও যখন এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন, তখন বোঝা গেল; এই হার, এই অশ্রু, এই নীরবতা- সবই সম্মানের প্রতীক।

রবিবার ফাইনাল শেষে লরা বলেছেন অনেক কথা। সেখানে হাতাশার কিছু পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেছে প্রেরণা ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস।

“আমি মনে করি, ২০২৩ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের (নিউল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত) পর থেকেই আমাদের জন্য অনেক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল। সেই সময় থেকেই ঘরোয়া পর্যায়ে কেন্দ্রীয় চুক্তির ব্যবস্থা চালু হয়। আমাদের দলের গভীরতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটা ছিল এক বিশাল পদক্ষেপ।”

“এরপরের (২০২৪ সালের) বিশ্বকাপটা আমাদের দলের নামটা বিশ্ব ক্রিকেটে আরও বড় করে তুলেছে, আমার তাই মনে হয়। এখন আমরা এমন একটি দল, যারা নিয়মিত ফাইনালে পৌঁছাচ্ছে। যেখানে আগে এটা একবারের সাফল্য বলেই ধরা হতো।”

“টানা তিনবার ফাইনালে উঠতে পারাটা সত্যিই গর্বের বিষয়। এটা প্রমাণ করে আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটে এবং দলীয় কাঠামোয় সঠিক দিকেই এগোচ্ছি। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের এই ফলেই আমরা এখানে পৌঁছেছি। আশা করি, আমরা এমন আরও ফাইনাল খেলতে থাকব… আর একদিন, হ্যাঁ, একদিন আমরা অবশ্যই একটা জিতব।”

টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স নিয়ে উলভার্ট বলেন, “আমার মনে হয়, আমাদের এই আসরটা অসাধারণ কেটেছে। ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছানোই একটা বড় সাফল্য। আমরা পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ ক্রিকেট খেলেছি। এই বিষয়টা নিয়েই আমি সবচেয়ে বেশি গর্বিত।”

“একপর্যায়ে আমরা টানা পাঁচটা ম্যাচ জিতেছিলাম। যা আমাদের দলের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। দুই দলের মধ্যকার সিরিজগুলোতে আমরা সবসময় এই ধারাবাহিকতা পাই না। তাই বড় মঞ্চে, বড় টুর্নামেন্টে এমন পারফরম্যান্স দিতে পারাটা সত্যিই গর্বের। আমরা প্রমাণ করেছি, বড় আসরে দক্ষিণ আফ্রিকাও এখন বড় দল।” 

সত্যিই তাই। লরার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা এখন বড় দল। হয়তো একদিন, কোনো এক প্রভাতে, লরা উলভার্ট সেই অধরা ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখবেন। কিন্তু আজকের দিনে, তিনি রয়েছেন বিশ্বকাপের হিমালয়ের চূড়ায়, এক নিঃসঙ্গ শেরপা হয়ে। যিনি নিজের কীর্তিতে চূড়ায় উঠেছেন।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা
  • অ্যালবামের গল্প বলবে ‘পেনোয়া’