জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদের ভাইকে কোপাল কিশোর গ্যাং সদস্যরা
Published: 27th, April 2025 GMT
জুলাই বিপ্লবে শহীদ নোয়াখালীর মাহমুদুল হাসান ওরফে রিজভীর ছোট ভাই স্কুলছাত্র শাহরিয়ার হাসানকে (১৬) এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। আজ রোববার বিকেল সোয়া চারটার দিকে জেলা শহর মাইজদীর বার্লিংটন মোড় এলাকায় ওই হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলায় শাহরিয়ার হাসান গুরুতর আহত হয়। আশপাশের লোকজনের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। রাত আটটার দিকে আহত শাহরিয়ারকে নিয়ে নোয়াখালী থেকে অ্যাম্বুলেন্স ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। শাহরিয়ার শহরের হরিনারায়ণপুর উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র।
এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ রাত পৌনে দশটার দিকে জেলা শহর মাইজদীতে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বিক্ষোভ-সমাবেশে শহীদ রিজভীর ভাই শাহরিয়ারের ওপর হামলার ঘটনার জন্য আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের লালিত কিশোর গ্যাংকে দায়ী করা হয় এবং হামলাকারীদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।
শাহরিয়ারের মা ফরিদা ইয়াছমিন বলেন, তাঁর ছেলে শাহরিয়ার স্থানীয় হরিনারায়ণপুর উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। গত দুই দিন আগে স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে বাইরের কয়েকজন তরুণের ঝগড়া হয়। বিষয়টি তাঁকে (মা) এবং স্কুলের শিক্ষকদের জানায় শাহরিয়ার। পরে বিষয়টি সে মীমাংসা করে দেয়। এ জন্য বহিরাগত তরুণেরা তার বন্ধুদের মারতে পারেনি। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয় শাহরিয়ারের ওপর। আজ বিকেলে স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে ওই তরুণেরা শাহরিয়ারের ওপর অতর্কিতে হামলা চালিয়ে তাকে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে।
শাহরিয়ারের বাবা জামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, হামলাকারীরা প্রথম দুটি মোটরসাইকেলে করে আসে। এরপর আরও কয়েকজন এসে তাঁর ছেলেকে ঘিরে ধরে ব্যাগের ভেতর থেকে ধারালো অস্ত্র বের করে কোপাতে থাকে। এতে তাঁর ছেলে মারাত্মকভাবে আহত হয়। পরে আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তিনি এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রাজীব আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, শাহরিয়ার হাসান নামের এক কিশোরকে গুরুতর আহত অবস্থায় বিকেল সাড়ে চারটার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। তাঁকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। পরবর্তী সময়ে ওয়ার্ড থেকে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলে তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক আরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের কিশোর গ্যাং শহীদ রিজভীর ছোট ভাই শাহরিয়ারকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়েছে। তারা তাকে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেছে। ঘটনার প্রতিবাদে তাঁরা আজ রাতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। এ ছাড়া হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আগামীকাল সোমবার সকালে হরিনারায়ণপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করা হবে।
সুধারাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু তাহের প্রথম আলোকে বলেন, শাহরিয়ারের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। বড় ভাই–ছোট ভাই মধ্যকার বিরোধের জের ধরে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ওই হামলা চালিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক
এছাড়াও পড়ুন:
চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা
‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’
এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন।
এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’
প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’
প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।