গণঅভ্যুত্থানে শহীদ রিজভীর ভাইকে কুপিয়ে জখম, গ্রেপ্তার ৩
Published: 28th, April 2025 GMT
নোয়াখালী জেলায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ মাহমুদুল হাসান রিজভীর ছোট ভাই স্কুলছাত্র শাহরিয়ার হাসান রিমনকে (১৬) এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে আহতের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। রবিবার (২৮ এপ্রিল) রাতে সুধারাম মডেল থানায় রিমনের মা বাদী হয়ে দায়ের করেন। পুলিশ এ ঘটনায় তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম ও ছবি প্রকাশ করেনি।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে রিমনের স্কুলের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছে।
আহত শাহরিয়ার হাসান রিমন জেলা শহরের বসুন্ধরা কলোনি বাসিন্দা মো.
আরো পড়ুন:
কুমিল্লায় বজ্রপাতে ৪ জনের মৃত্যু
ধর্ষণের অভিযোগে গণপিটুনি, কারাগারে ইমামের মৃত্যু
বিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে রোববার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে কিশোর গ্যাং সদস্যরা শাহরিয়ার হাসান রিমনকে ধারালো ছুরি এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এতে সে গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। তবে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় রাতে আহত রিমনের মা ফরিদা ইয়াছমিন ২১ জনকে এজহারভুক্ত ও ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ রাতেই অভিযান পরিচালনা করে তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করে।
রিমনের মা ফরিদা ইয়াছমিন জানান, রিমনের পিঠে, মাথায়সহ মোট ছয়টি ছুরির আঘাত করা হয়। তার অপারেশন ঢাকা মেডিকেল কলেজে করানো হয়েছে। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসা চলছে। তার পিঠের আঘাতগুলো ফুসফুস পর্যন্ত চলে গেছে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।
তিনি আরো জানান, হামলাকারীরা ভেবেছিল রিমন মারা গেছে। যখন জানতে পারে সে বেঁচে আছে, তখন তারা ফের হামলা করতে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল পর্যন্ত যায়। রিমনের অপরাধ দুই দল কিশোরের মাঝে চলমান দ্বন্দ্ব মিমাংসা করে দেওয়া। একপক্ষ মানলেও অপরপক্ষ মিমাংসার বিষয়টি মন থেকে মানতে পারেনি। তারাই আমার ছেলের উপর হামলা করেছে।
রিমনের বাবা জামাল উদ্দিন বলেন, রিমনকে ধারালো ছুরি দিয়ে মোট ছয়টি আঘাত করা হয়েছে। নোয়াখালী জেনারেল হাসপতালে নেওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তিনি রিমনের সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন।
ঢাকায় রিমনের সঙ্গে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা নাহিদা সুলতানা ইতু জানান, রাতেই রিমনের সিটিস্ক্যান করা হয়েছে। এরপর তার অপারেশন হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, রিমনের পিঠের আঘাতগুলো গুরুতর। ছুরির আঘাত প্রায় ফুসফুস পর্যন্ত চলে এসেছে। তার সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে।
রবিবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে জেলা শহরের বার্লিংটন মোড়ে একদল কিশোর রিমনকে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করে।
স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নোয়াখালী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বার্লিংটন এলাকাটি কিশোর গ্যাংয়ের আখড়া। এই এলাকা দিয়ে প্রতিদিন সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, হরিনারায়ণপুর স্কুল, সরকারি মহিলা কলেজসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা যাতায়াত করে। প্রতিদিন তাদের উত্ত্যক্ত করা হয়। কিন্তু ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করে না। প্রশাসনেরও নজরদারি নেই।
এদিকে, রিমনকে ছুরিকাঘাত করে আহত করার প্রতিবাদে তার স্কুলের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্কুলের সামনে প্রধান সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে রিমনের স্কুলের শিক্ষার্থী ছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী, স্কুলের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বক্তারা অবিলম্বে রিমনের উপর যারা হামলা করেছেন, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন জানান, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এজহারভুক্ত একজনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনায় আমাদের আরো অনুসন্ধান চলছে। সিসি ক্যামেরা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অপরাধীদের খুব দ্রুতই আইনের আওতায় আনতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।
ঢাকা/সুজন/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন হত গণঅভ য ত থ ন র মন র স ঘটন য় র মনক এ ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
ঐকমত্য কমিশন দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে পারলে দ্রুত রাজনৈতিক বোঝাপড়া সম্ভব: সাইফুল হক
অনেক সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোর বোঝাপড়া আছে জানিয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, ‘যেহেতু রাজনৈতিক দলগুলোর জনপরিসরে কমিন্টমেন্ট আছে, জনগণের কাছে অঙ্গীকার আছে। সে কারণে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে পারলে আগামী জুনের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বোঝাপড়া তৈরি হবে। নূন্যতম জাতীয় ঐকমত্যের প্রশ্নে সবাই একমত হবে। এটিই হবে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের রাজনৈতিক অর্জন।’
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপের সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। সাইফুল হকের নেতৃত্বে দলটির ১০ সদস্যের প্রতিনিধ দল সংলাপে অংশ নেয়।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা পুরানো জামানায় ফিরতে চাই না। যে ব্যবস্থায় একটা দলকে চূড়ান্ত কর্তৃত্ববাদী দলে পরিণত করে। দলের নেতৃত্বকে চূড়ান্ত ফ্যাসিবাদী দুঃশাসককে পরিণত করে।’
তিনি বলেন, ‘এবারকার ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ম্যান্ডেট হচ্ছে সেই জামানা থেকে পার হয়ে একটি গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় শুরু করব, মানুষের ভোট ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করব। ১৬ বছর ধরে মানুষ যে নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে, এবারকার সংস্কার ও নির্বাচন একসঙ্গে বিবেচনা করে বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয় যাবে।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও ১৬ বছরের ‘ফ্যাসিবাদ’ বিরোধী লড়াইয়ের কথা তুলে ধরে সাইফুল হক বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমে মানুষের বিশাল প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। তা যেন হতাশায় পরিণত না হয়, দুঃস্বপ্নে পরিণত না হয়, আমরা সে লক্ষ্যে সবাই কাজ করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি সংবিধান দেখতে চাই যেখানে মানুষের রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সামাজিক, মতাদর্শ ও সাংস্কৃতিক বিশ্বাসের কারণে রাষ্ট্র নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে না। রাষ্ট্রের কাছে প্রতিটি নাগরিকের সাংবিধানিক ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত হবে।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা এমন একটা সংবিধান ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা দেখতে চাই, যেখানে কোনো ব্যক্তি বা দল ইচ্ছা করলে ক্ষমতাকে যা কিছু করবার লাইসেন্স মনে করবে না। ক্ষমতার স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও জনগণের মুখোমুখি হওয়ার সাংবিধানিক এবং আইনগত গ্যারান্টি নিশ্চিত দেখতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের যেহেতু কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই, বিশেষ কোনো পক্ষপাতিত্ব নেই, তাই গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার পথে জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক আকাঙ্খা পূরণে তারা সঞ্চালক হিসবে ভূমিকা পালন করবে। আমরা কোথায় দাঁড়াব? যেখানে নূন্যতম জাতীয় ঐক্যের জায়গা সেখানে। এটা নিয়ে বেশি টানাটানি না করি। বেশি টানতে গেলে অনেক সময় দঁড়ি ছিড়ে যায়। সে কাজটা না করি।’