কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা বা রোগে বছ‌রে বি‌শ্বে ২৭ লাখ ৮০ হাজার শ্রমিকের মৃত্যু হয়। প্রতি ১৫ সেকেন্ডে একজন শ্রমিকের মৃত‌্যু ঘট‌ছে। কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় আহত হন ৩৭ কোটি ৪০ লাখ শ্রমিক। এ কারণে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছে অর্থনীতি। বছরে বৈশ্বিক জিডিপি হারাতে হচ্ছে ৪ শতাংশ।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি কনফারেন্সে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতিবেদনের বরাত দি‌য়ে এমন তথ্য এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধান এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সহযোগিতায় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর আ‌য়ো‌জিত কনফা‌রে‌ন্সে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.

) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।

বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান। এতে সভাপতিত্ব করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক ওমর মো. ইমরুল মহসিন।

এতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক মো. মতিউর রহমান ‘পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি: জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিত’ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

এ প্রবন্ধে আইএলওর ২০১৯ সালের বরাত দি‌য়ে বাংলাদেশের চিত্র তুলে ধরে তিনি জানান, ২০২৩ সালে কর্মক্ষেত্রে এক হাজার ৪৩২ জন শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটে। আহত হন ৫০২ জন। অনানুষ্ঠানিক খাতে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় এক হাজার ১০৩ জনের। সবচেয়ে বেশি ৬৩৭ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে পরিবহন খাতে। এছাড়া নির্মাণ খাতে ১৪৯ জন এবং দৈনিক মজুরিভিত্তিক ২২০ জন শ্রমিক মারা যান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “শ্রম মন্ত্রণালয় একা কাজ করতে পারে না। যেমন ধরেন-শিপবিল্ডিং, এটি শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতায় না, শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতায়। দুর্ভাগ্যজনক কোনো ইনফরমাল সেক্টর শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতায় নেই। কোনো কনস্ট্রাকশন ফার্ম রেজিস্টার না। যদি কোনো কনস্ট্রাকশন ফার্ম শ্রম আইনের আওতায় নিবন্ধিত না হয়, তাহলে সেই ফার্ম সরকারি কোনো দরপত্রে অংশ নিতে পারবে না।”

কয়েকটি কারখানা শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছে না উল্লেখ করে শ্রম সচিব এ এইচ এম. শফিকুজ্জামান বলেন, “আজ একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতনের ২০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তারা টাকার ব্যবস্থা করতে পারেনি। অন্য একটি কারখানার আগামী ৭ মে শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের টাকা দেওয়ার কথা, তারাও এখনো পর্যন্ত টাকার ব্যবস্থা করতে পারেনি। এমন একটা প্রেক্ষাপটে আমরা ওএসএইচ (পেশাগত সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য) ডে পালন করছি।”

তিনি বলেন, “যেখানে শ্রমিক তার তিন বছর, দুই বছর, তিন মাস, ৮ মাসের বেতনই পায়নি সেখানে আমার কাছে মনে হয় এই জায়গাগুলোতে অনেক গ্যাপ রয়ে গেছে।”

শ্রম সচিব বলেন, “ফার্মাসিউটিক্যালস বা একটি গ্রিন ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকরা সুন্দর পরিবেশে কাজ করছে। আর নির্মাণশ্রমিকরা বা শিপবিল্ডিংয়ে যারা আছে তাদের মধ্যে গ্যাপটা কীভাবে মিনিমাইজ করা যায়, সেটাই টার্গেট হওয়া উচিত।”

তিনি বলেন, “এখানে গভর্নেন্স খুব ইম্পর্টেন্ট। এখানে পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়া হয়। অথচ যেভাবে পরিবেশ দূষণ হয়, তাতে পরিবেশ ছাড়পত্র কীভাবে আসে?”

আইএলওর বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর টুওমো পুটিয়াইনেন বলেন, “কর্মস্থলের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য নিশ্চিতে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় আইএলও পাশে রয়েছে। পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে আইএলওর মৌলিক কনভেনশন, বিশেষ করে কনভেনশন ১৫৫ (পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা) এবং কনভেনশন ১৮৭ (প্রচার কাঠামো) গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি প্রদান করে। প্রতিরোধমূলক কৌশলে বিনিয়োগ, তথ্যভিত্তিক নীতিমালা গ্রহণ এবং ত্রিপক্ষীয় সংলাপের মাধ্যমে কর্মীদের অধিকার সুরক্ষা এবং সবার জন্য মর্যাদাপূর্ণ কাজ নিশ্চিত করা সম্ভব।”

স্বাগত বক্তব্য রাখেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক আরিফ আহমেদ খান।

বাংলাদেশে নিযুক্ত আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর তুওমো পুটিআইনেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তাসলিমা আখতার, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের মহাসচিব ও সিইও ফারুক আহমেদ, বাংলাদেশ বিজনেস অ্যান্ড ডিজ্যাবিলিটি নেটওয়ার্কের ট্রাস্টি রূপালী চৌধুরী এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের উইমেন সেক্রেটারি চায়না রহমান।

এতে ‘বাংলাদেশে পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি: অগ্রগতি ও করণীয়’ শীর্ষক আর একটি প্রেজেন্টেশন দেন সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেইনিং বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. হাসনাত এম আলমগীর।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প শ গত স ব স থ য ও স র আওত য় পর ব শ র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

শ্রম আইনের সংশোধন কবে হবে, তা বলছে না শ্রম মন্ত্রণালয়

শ্রম আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ কবে হবে, সে বিষয়ে আর সময়সীমার কথা বলছে না শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। গত নভেম্বর মাসে এই মন্ত্রণালয় বলেছিল, ২০২৫ সালের মার্চ মাসের মধ্যে এ অধ্যাদেশ হবে। মার্চ শেষে এপ্রিলও শেষ হচ্ছে আজ বুধবার।

সচিবালয়ে আজ ‘মহান মে দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আইন সংশোধনীর ক্ষেত্রে সময়সীমা থাকার পক্ষে নন তিনি। শ্রমিক–মালিকদের স্বার্থ রক্ষাসহ শিগগিরই তা করা হবে। বিষয়টি এখন কোন প্রক্রিয়ায় আছে, তা বলতে রাজি হননি শ্রম উপদেষ্টা।

শ্রম উপদেষ্টা বলেন, এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’। তিনি আরও বলেন, ‘একসময় স্লোগান ছিল দুনিয়ার মজদুর, এক হও।’ এখন তা বদলে গেছে। এখন হবে ‘দুনিয়ার মালিক-শ্রমিক, এক হও’। এখন ভালো মালিকেরা শ্রমিকদের সন্তানের মতো মনে করেন।

প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে ১০১টি ধারা ও উপধারা সংশোধন হবে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ১০ থেকে ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডির বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

আইএলওর বৈঠকে যোগ দিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে যে দলটি জেনেভা সফর করে, সেখানে শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হুমায়ুন কবীর, যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ হোসেন সরকার ও শ্রম উপদেষ্টার একান্ত সচিব মো. জাহিদুল ইসলাম ছিলেন।

এর আগে গত বছরের ১০ নভেম্বর তৎকালীন শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আইএলওর গভর্নিং বডির বৈঠক থেকে দেশে ফিরে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মার্চের মধ্যে শ্রম আইন সংশোধন হবে। উপদেষ্টা তখন এ–ও বলেছিলেন, আগের সরকারের আইনমন্ত্রীর (আনিসুল হক) নেতৃত্বাধীন দলকে আইএলও পর্ষদে অপদস্থ করা হয়েছিল। অথচ এবারের চিত্র ছিল ভিন্ন। বাংলাদেশের পদক্ষেপগুলো নিয়ে বরং প্রশংসা করা হয়েছে। কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো তুলে নেওয়ার কথাও বলেছিল।

জানা গেছে, শ্রম অধিকার বাস্তবায়নে ঘাটতির অভিযোগ এনে জাপানসহ ছয়টি দেশের পক্ষ থেকে আইএলওতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। মামলাগুলো চলমান।

আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাত মিলিয়ে দেশে ৭ কোটি ৬৫ লাখ শ্রমিক রয়েছে। এদিকে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদকে (টিসিসি) শ্রমিকপক্ষ জানিয়েছে, আইন সংশোধনের সময় সব শ্রমিকের কথা মাথায় না রেখে প্রধানত পোশাক খাতের শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মে দিবস আর জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস উপলক্ষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীতে শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ–স্কুল পর্যায়ে রচনা ও প্রবন্ধ লেখার ওপরে বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হবে।

এ ছাড়া শ্রম অধিকার বিষয়ে প্রকাশিত বা প্রচারিত মানসম্মত সংবাদ বা স্থিরচিত্র যাচাই করে সাংবাদিক ও চিত্রগ্রাহকদের দেওয়া হবে পুরস্কার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শ্রম আইনের সংশোধন কবে হবে, তা বলছে না শ্রম মন্ত্রণালয়