সম্পত্তির ভাগ না পেয়ে দাফন আটকে দিলেন স্ত্রী
Published: 28th, April 2025 GMT
চাঁপাইনবাবগঞ্জে জায়গা জমির ভাগ না দেওয়ায় মাজেদ বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তির দাফন কাজে বাঁধা দিয়েছেন তার স্ত্রী হামফুল বেগম।
বিষয়টি জানাজানি হলে জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এক বৈঠকে অংশীদারদের মাঝে জমি বণ্টনের পর আগামীকাল মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দাফন হবে বলে সিন্ধান্ত নেওয়া হয়।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের কালিনগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিউর রহমান বলেন, ‘‘মাজেদ বিশ্বাসের দুইজন স্ত্রী। এক পক্ষের ছেলেরা তাদের বাবাকে চিকিৎসা করার নাম করে নিয়ে গিয়ে জায়গাজমি লিখে নিয়েছে। মাজেদ বিশ্বাস মারা গেলে আরেকপক্ষ লাশ দাফনে বাধা দেন। এসব নিয়ে দুপক্ষই স্থানীয়ভাবে আপস মীমাংসার জন্য বৈঠক করেছেন। মঙ্গলবার উভয়পক্ষের অংশীদারদের মাঝে জমি সমবণ্টন করে তারপর লাশ দাফন করা হবে।’’
জানা গেছে, দীর্ঘদিন আগে মাজেদ বিশ্বাসের প্রথম স্ত্রী মারা যান। পরে হামফুল বেগম নামে এক নারীকে বিয়ে করেন তিনি। এই সংসারে তার কোনো সন্তান নেই। তবে প্রথম পক্ষের দুজন ছেলে আছে। প্রায় ছয় মাস আগে মাজেদ বিশ্বাস গুরুতর অসুস্থ হলে ছেলে লতিফুর রহমান ও আব্দুল জাব্বার চিকিৎসার কথা বলে তার বাবাকে অন্য জায়গায় নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে বাবার সম্পত্তি তাদের নামে লিখে নেন।
এদিকে গত ১৬ এপ্রিল মাজেদ বিশ্বাসের তালাকনামা পাঠায় হামফুল বেগমকে কিন্তু সেটি তিনি গ্রহণ করেননি। এ নিয়ে হামফুল বেগম স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দিলে আগামী ৫মে গ্রাম্য সালিসের দিন নির্ধারণ হয়। কিন্ত গত রোববার (২৭ এপ্রিল) মাজেদ বিশ্বাস রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
লাশ দাফনের জন্য তার দুই ছেলে গ্রামের বাড়ি নিয়ে এলে মাজেদ বিশ্বাসের দ্বিতীয় স্ত্রী হামফুল বেগম এলাকবাসীকে সঙ্গে নিয়ে লাশ দাফনে বাধা দেন। এ ঘটনায় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সালিসে বসেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
ঢাকা/শিয়াম/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আসামিকে বাদ দিতে হলফনামা, বাদী কৃষক দল নেতাকে শোকজ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় জুলাই আন্দোলনে হামলার অভিযোগে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলায় পাঁচ আসামির নাম বাদ দিতে আদালতে দুটি হলফনামা দিয়েছেন বাদী কৃষক দল নেতা শাহ আলম পাঠান। টাকার বিনিময়ে তিনি হলফনামা দিয়েছেন, এমন অভিযোগ ওঠার পর তাঁকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিয়েছে জেলা কৃষক দল।
শাহ আলম পাঠান নাসিরনগর উপজেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব। ৪ জুন পাঁচজনের নাম মামলা থেকে বাদ দিতে আদালতে হলফনামা দেন শাহ আলম। সম্প্রতি বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা তৈরি হয়।
যে পাঁচজনকে বাদ দিতে হলফনামা দেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন উপজেলার নূরপুর গ্রামের মো. মাসুদ, গোকর্ণ গ্রামের শেখ মো. জোবায়ের হাসান, বেনিপাড়ার মামুন মিয়া, টেকানগরের জসিম উদ্দিন কায়কোবাদ ও নূরপুর গ্রামের শামসুল আরেফিন মিঞা। তাঁরা যথাক্রমে মামলার ৯৭, ৭৯, ৯১, ১০৫ ও ৮৭ নম্বর আসামি। তাঁরা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও কোনো পদ–পদবি ছিল না।
হলফনামা দেওয়ার বিষয়টি জানাজানির পর গত শুক্রবার রাতে জেলা কৃষক দলের দপ্তরে দায়িত্বে থাকা যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আল আমিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে শাহ আলমকে কারণ দর্শাতে বলা হয়। সাত দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আবু শামীম মো. আরিফ ও সদস্যসচিব জিল্লুর রহমান এক যৌথ বিবৃতিতে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শাহ আলম পাঠানের বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা আগামী সাত দিনের মধ্যে জেলার দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছে সশরীর হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৪ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে নাসিরনগর উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনের সড়কে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে জড়ো হন। তখন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় শাহ আলম ১১৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৩০০ জনকে আসামি করে আদালতে মামলার আবেদন করেন। আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে এজাহারটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করতে নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন। গত ২ নভেম্বর মামলাটি থানায় নথিভুক্ত হয়। ওই মামলার পাঁচ আসামিকে বাদ দিতে আদালতে হলফনামা দেওয়া হয়েছে।
একটি হলফনামায় বাদী উল্লেখ করেন, লিখিত এজাহারে মাসুদ, জোবায়ের, মামুন ও জসিম উদ্দিনের নাম আসামির শ্রেণিভুক্ত ছিল না। অসাবধানতার কারণে চারজনের নাম আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তাঁদের চারজনকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না, জানেন না। খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন, তাঁরা কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন।
আরেকটি হলফনামায় বলা হয়, আসামি শামসুল আরেফিন মিয়া ২০১৪ সালে উপজেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি, সাবেক সদস্যসচিব ও ২০০৩ সালের উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য ছিলেন। অসাবধানতাবশত ভুলের জন্য তিনি (শাহ আলম) অনুতপ্ত এবং অনুশোচনা প্রকাশ করছেন।
তবে বিষয়টি জানাজানির পর সমালোচনামুখর হন বিএনপি ও ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা। তাঁরা বলেন, শাহ আলম ২০২০ সালে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য বি এম ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে কেক কেটে মুজিব বর্ষ পালন করেন। তাঁর বাবা মো. ইয়াছিন পাঠান উপজেলার চাতলপাড় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
নাসিরনগর সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ইয়াছিন মাহমুদ ফেসবুক পোস্টে লেখেন, শাহ আলম মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে হলফনামা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের ছত্রচ্ছায়ায় যাঁরা ছিলেন, এখন তাঁরাই আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে লিপ্ত।
তবে কৃষক দলের সদস্যসচিব শাহ আলম পাঠান বলেন, ‘পাঁচজনকে মামলায় ভুলবশত সম্পৃক্ত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাই হলফনামা দিয়েছি। জেলা কৃষক দলের কাছে তথ্য গিয়েছে যে আমি টাকার বিনিময়ে এমন করেছি, যা মোটেও সত্য নয়। স্থানীয় বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’
নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, মূল ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।