সমালোচকরা খেলা বোঝে না!—আক্ষেপ তাইজুলের
Published: 29th, April 2025 GMT
তাইজুলের আক্ষেপের জায়গা হলো তারকাখ্যাতি না পাওয়া। মিডিয়াতে এ নিয়ে বেশ কয়েকবার হতাশা প্রকাশ করে অবমূল্যায়নের কথা বলেছেন তিনি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট পাওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে পুরোনো আক্ষেপ শোনা গেল তাঁর কণ্ঠে।
তাইজুল ২৭ ওভারে ৬৬ রানে পাঁচ উইকেট শিকার করার পর জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, দুনিয়ার সবচেয়ে ‘আন্ডার রেটেড’ বোলার তাইজুল। সত্যিই কি তাই? দেশে টেস্ট হলেই তাইজুল বাজিমাত করেন। তাঁর পারফরম্যান্স নিয়ে মিডিয়া ইতিবাচক লেখা কম লেখে না। একজন টেস্ট স্পিনার হিসেবে ভালো প্রচার পান তিনি। এরপরও তাইজুলের অসন্তুষ্টির কারণ জানা নেই কারোরই।
টেস্টের শেষ ১০ ইনিংসে চারবার পাঁচ উইকেট পেছেন তাইজুল। নিজের দিনে সম্মানিত হয়েছেন। এরপরও কেন যেন অতৃপ্তি ও হতাশার চোরাবালিতে ডুবে যেতে দেখা যাচ্ছে বাঁহাতি স্পিনারকে। সংবাদ সম্মেলনে জানতে চাওয়া হয়েছিল তামিমের স্ট্যাটাসের সঙ্গে একমত কিনা? উত্তরে চটজলদি সহমত প্রকাশ তাঁর। প্রশ্ন পছন্দ না হলে রেগেও যাচ্ছেন তিনি।
গতকালও প্রতিবাদের সুরে উত্তর দিলেন বেশ কয়েকবার। তাইজুলের এভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করার পেছনে বড় কারণ হতে পারে প্রথম টেস্ট শেষে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর প্রতিক্রিয়া। বাঁহাতি এ স্পিনারের পারফরম্যান্সে খুশি ছিলেন না লিপু। সেই রেশ ধরে গতকাল তাইজুল বলেন, ‘এতগুলো টেস্ট খেলার পর যতগুলো উইকেট হয়েছে তাতে শুকরিয়া। তবে একটা ম্যাচ দেখে যারা সমালোচনা করেন আমার মনে হয় তারা খেলা বোঝেন না।’
সমালোচনায় অভিমান হলেও সিরিজ নির্ধারণী দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিতে পেরে খুশি হয়েছেন তাইজুল, ‘সিলেটে আমি যেভাবে বোলিং করেছি, তা ভালো ছিল না। এতগুলো টেস্ট খেলার পর এ রকম বোলিং করা হতাশার। এখানে ভালো করতে পেরেছি এটি ভালো লাগার বিষয়। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে দলকে আমি সাহায্য করতে পেরেছি।’
টেস্ট উইকেট শিকারে সাকিবের পেছনে তাইজুল। সাবেক বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে ছাড়িয়ে যেতে আর বেশি দিন লাগার কথা না তাঁর। সাকিবকে ছুঁয়ে ফেলতে ২২ উইকেটের প্রয়োজন বাঁহাতি এ স্পিনারের। দেশি বোলারদের মধ্যে ইনিংসে পাঁচ উইকেটের রেকর্ড নিজের করে নিতে আর চারটি পাঁচ উইকেট লাগে। সাকিব ২৪৬ উইকেট ও ইনিংসে ১৯ বার পাঁচ উইকেট এখনও টেস্টে দেশের সেরা।
এ সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার স্বপ্ন তাঁর, ‘প্রত্যেক খেলোয়াড়ের স্বপ্ন সেরাদের সেরা হওয়া। আমার লক্ষ্য থাকে নিজের ভালো করা নিয়ে। অনেক দূর না যাওয়া পর্যন্ত তৃপ্তি আসবে না। আমি চেষ্টা করব যত দূর যাওয়া যায়।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে গতকাল পাঁচ উইকেট নিয়ে একটি মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেছেন। বাঁহাতি স্পিনারদের মধ্যে ইনিংসে পাঁচ উইকেট পাওয়া বিশ্বে পঞ্চম বোলার তাইজুল। ভারতের রবীন্দ্র জাদেজাকেও ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। ভারতের এ স্পিনারের ইনিংসে ১৫ বার পাঁচ উইকেট পেতে লেগেছে ৮০ ম্যাচ, তাইজুল সেখানে ৫৩ ম্যাচে ১৬ বার পাঁচ উইকেট শিকার করে বাজিমাত করেন। নিজের অর্জনের দিনে অফ স্পিনার নাঈমের প্রশংসা করতেও ভোলেননি বাঁহাতি এ স্পিনার।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বিজিবিতে চাকরি পেলেন ফেলানীর ছোট ভাই
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে নিহত ফেলানী খাতুনের ছোট ভাই আরফান হোসেন (২১) বিজিবির সিপাহি পদে চাকরি পেয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে লালমনিরহাটে ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম তার হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন। এ সময় আরফান হোসেনের বাবা মো. নুরুল ইসলামও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন:
সাতক্ষীরা সীমান্তে ১৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর
কক্সবাজারে ৮০ শতাংশ মাদক আসে সাগরপথে: বিজিবি
এর আগে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৫ বিজিবি আয়োজিত সিপাহি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হন আরফান হোসেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম বলেন, ‘‘বিজিবি সর্বদা ফেলানীর পরিবারের পাশে আছে। ফেলানীর ছোট ভাই বিজিবি নিয়োগ পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণকেন্দ্রে গিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু করবেন। আমরা আশা করি, প্রশিক্ষণ শেষ করে তিনি একজন যোগ্য বিজিবি সদস্য হিসেবে দেশমাতৃকার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবেন।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘সীমান্তে ফেলানী হত্যার মতো নৃশংস ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে আর না ঘটে, সে বিষয়ে বিজিবি সর্বদা সীমান্তে অত্যন্ত সতর্ক ও সচেষ্ট রয়েছে।’’
আরফান হোসেন কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনটারী গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা নুর ইসলাম দিনমজুর ও মা জাহানারা বেগম গৃহিণী। পরিবারের অন্য দুই ভাইয়ের মধ্যে জাহান উদ্দিন স্নাতক পড়ছেন এবং আক্কাস আলী পড়ছেন এইচএসসিতে। দুই বোন মালেকা খাতুন ও কাজলী আক্তারের বিয়ে হয়েছে।
আরফান হোসেন বলেন, ‘‘ফেলানী হত্যার পর সারা দেশের মানুষ যেভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছিল, তখন থেকে ইচ্ছে ছিল; বিজিবিতে চাকরি করব। আজ সেই স্বপ্ন পূর্ণ হলো। আমি দেশের মানুষের জন্য কাজ করব।’’
ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম বলেন, ‘‘ভারত থেকে ফেরার পথে আমার নাবালিকা মেয়েকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখে বিএসএফ। সেই দৃশ্য আজও ভুলতে পারিনি। তবে, দেশবাসী আর বিজিবি সব সময় আমাদের পাশে ছিল। আজ আমার ছেলে মেধা ও যোগ্যতায় বিজিবিতে সুযোগ পেয়েছে। এটা আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি।’’
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় কিশোরী ফেলানী। তার নিথর দেহ কাঁটাতারের বেড়ায় দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা ঝুলে ছিল। সেই ছবি ছড়িয়ে পড়লে দেশ-বিদেশে নিন্দার ঝড় উঠে।
ঢাকা/সৈকত/রাজীব