বিয়ানীবাজার পৌরসভার গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে সেখানে স্থাপিত পানি শোধনাগার প্লান্টটি। দুই বছর ধরে পুষতে থাকা এই প্রকল্পকে কীভাবে লাভজনক প্রকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যায়, তার পথ খুঁজছেন সংশ্লিষ্টরা। পৌরবাসীকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা এই পানি শোধনাগার প্লান্ট উদ্বোধন করা হয় ২০২৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি। উদ্বোধনের পর এই প্রকল্প থেকে গত ২৬ মাসে এক টাকাও আয় করতে পারেনি পৌরসভা। উল্টো এই সময়ে প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল ও আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে মাসে ৩০ হাজার টাকা ব্যয় করা হচ্ছে এর পেছনে। পৌর সূত্র মতে, ২৬ মাসে এ ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মোট ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
দৈনিক ৪ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে স্থাপিত পানি শোধনাগারটির পানির প্রতি পৌরবাসীর কোনো আগ্রহই নেই। এখানে প্রাকৃতিকভাবে পানি সহজে আহরণ করা যায় বলে কৃত্রিম উৎসে পরিশোধিত পানির চাহিদা একেবারে নেই বললে চলে। যার কারণে শোধনাগারটি কোনো কাজেই আসছে না। উদ্বোধনের পর থেকে অকার্যকার হয়ে আছে এটি।
স্থানীয় পৌরবাসীর ভাষ্য, প্রাকৃতিকভাবে বিশুদ্ধ পানি প্রাপ্তির উৎস থাকায় শোধনাগারের পানির প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ নেই। যারা এসব প্রকল্পের কাজ করেন, তারা নিশ্চয় প্রতিটি স্থানের ভৌগোলিক অবস্থা সম্পর্কে জানেন। যেখানে স্বাভবাবিক উৎস থেকে পানি পাওয়া যাচ্ছে সহজে, সেখানে এমন একটি প্রকল্প যে অপরিকল্পিতভাবে করা– তা বোঝাই যায়।
এদিকে পৌর কর্তৃপক্ষের বোঝায় পরিণত হওয়া এই প্রকল্পটিকে ঘিরে সৃষ্ট সমস্যা উত্তরণে এবং এটিকে আর্থিকভাবে লাভজনক প্রকল্পে পরিণত করার উপায় খুঁজছে পৌরসভা। এর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে পানি সরবরাহের পাইপলাইন সম্প্রসারণ করা বা পানি শোধনাগারটি লিজ দেওয়ার মতো বিষয় নিয়ে ভাবছে কর্তৃপক্ষ।
পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, শোধনাগারটিতে উৎপাদিত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার লক্ষ্যে পৌরসভার আংশিক এলাকায় স্থাপন করা হয়েছিল ২২ কিলোমিটার পাইপলাইন। এ পাইপলাইন থেকে পৌর শহর, শহরতলি ও আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা কোনো সংযোগ নেননি। বাণিজ্যিক সংযোগ না থাকায় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের পুরো প্রক্রিয়াটি অকার্যকর হয়ে পড়েছে, যার কারণে প্রতি মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকার বাড়তি ব্যয়ের চাপ নিতে হচ্ছে পৌরসভাকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমনিতেই টানাটানি তার ওপর বাড়তি ব্যয়।
সিলেট বিভাগের ১৯টি পৌরসভার উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশেষ প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ সালে বিয়ানীবাজার পৌরসভার পানি শোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু হয় পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত মেয়র আব্দুস শুকুরের সময়ে।
২০২০ সালের ২৩ অক্টোবর এ প্লান্ট স্থাপনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। সে সময় এ প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে পৌর পরিষদের মাসিক আলোচনায় কয়েকজন কাউন্সিলর আপত্তি তুলেছিলেন। সে সময় তাদের আপত্তি আমলেই নেননি তৎক্ষালীন মেয়র আব্দুস শুকুর।
২০২৩ সালে শোধনাগারটিকে কার্যকর করতে পৌরসভার ২০০ পরিবারকে বিনামূল্যে পানি সরবরাহের উদ্যোগ নেন সাবেক মেয়র ফারুকুল হক। তবে পৌরসভার সে উদ্যোগেও আগ্রহ দেখায়নি পৌরবাসী। যার কারণে উন্নয়নের নামে সরকারের ৯ কোটি টাকা গচ্চার পাশাপাশি পৌরসভা প্রতি মাসে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
অকার্যকর হয়ে পড়ে থাকা পানি শোধনাগারটি বন্ধের সুযোগ নেই জানিয়ে পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মুস্তফা মুন্না বলেন, এটি স্থাপন করার আগে এর প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা, সেটি সেভাবে সার্ভে করা হয়নি, যার ফলে বর্তমান পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং পৌরসভা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এই পানি শোধনাগারটিকে লাভজনক খাতে নিয়ে আসতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেতে কাজ করা হচ্ছে। দৈনিক ৪ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার মতো প্রয়োজনীয় পাইপলাইন স্থাপন করা হয়নি। পুরো পৌরসভাকে পানি সরবরাহের আওতায় নিয়ে আসতে হলে অবশিষ্ট অংশে পাইপলাইন স্থাপন করতে ব্যয় হবে ৩ কোটি টাকা।
এই প্রশাসনিক কর্মকর্তা আরও বলেন, পুরো পৌরসভায় পানির সরবরাহ লাইন স্থাপন করা গেলে নিয়মতান্ত্রিকভাবে গভীর ও অগভীর নলকূপ থেকে পানি উত্তোলন বন্ধ করা সম্ভব।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরবর হ র প রসভ র প রকল প প রব স ল ইন স
এছাড়াও পড়ুন:
সামুদ্রিক মাছে ভরপুর আড়ত, দাম কেমন
স্তূপ করে রাখা ইলিশে ভরে গেছে ঘাট। চারদিকে মাছের গন্ধ, বরফের ঠান্ডা ধোঁয়া, ক্রেতার হাঁকডাক। কেউ দর কষছেন, কেউ আবার টাটকা ইলিশ দেখে ব্যাগভর্তি করে নিচ্ছেন। গতকাল শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের কর্ণফুলী নদীর তীরে ফিশারিঘাটের নতুন মাছবাজারে গিয়ে দেখা গেল এই ব্যস্ত চিত্র।
নিষেধাজ্ঞার পর বাজার যেন নিজের ছন্দে ফিরেছে। গত ২৫ অক্টোবর সাগরে মাছ ধরার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। এর পর থেকেই একের পর এক ট্রলার ভিড়ছে ঘাটে—কোনো ট্রলারভর্তি লইট্টা, কোনোটা ছুরি, চিংড়ি, ফাইস্যা বা ইলিশে ভরপুর। ভোর থেকেই আড়তগুলোয় শুরু হয় নিলাম, পরে সেই মাছ চলে যায় শহরের বাজারে। এমনকি জেলার গ্রামীণ হাটবাজারেও পৌঁছে যাচ্ছে ট্রাকভর্তি মাছ।
গতকাল দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, নদীর ঘাট ঘেঁষে ট্রলার। ঘাটে নামছে বরফঠান্ডা মাছের বাক্স। আড়তের সামনে ইলিশের স্তূপ ঘিরে ক্রেতাদের ভিড়। বিক্রেতারা তখন বরফ ছুড়ে দিচ্ছেন মাছের ওপর। ছোট আকারের ইলিশের দাম ক্রেতাদের কেউ হাঁকছেন ১০ হাজার, কেউ ১২ হাজার টাকা—শেষমেশ দর থামছে ১৬ হাজার টাকায়। ওই দরে বিক্রি হলো ১ মণ ছোট আকারের ইলিশ। এক কেজিতে পড়ছে পাঁচ থেকে ছয়টি করে মাছ।
নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ ধরা বন্ধ থাকায় বাজারে সরবরাহে ঘাটতি ছিল। এখন ধীরে ধীরে সব ঠিক হচ্ছে। তবে গত কয়েক দিন সাগরের নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় অনেক জেলে গভীর সমুদ্রে যেতে পারেননি। ফলে বড় ইলিশ আসছে কম।নুর মোহাম্মদ, আড়তদারমেসার্স হাজি আবদুল গণি ফিশিংয়ের স্বত্বাধিকারী নুর মোহাম্মদ প্রথম আলোকে জানান, নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর থেকেই জেলেরা সমুদ্রে পাড়ি জমিয়েছেন। কিন্তু বড় আকারের ইলিশ এখনো তেমন ধরা পড়ছে না। ছোট ও মাঝারি ইলিশই বাজারে বেশি আসছে।
ব্যস্ত ঘাট, ব্যস্ত আড়ত
ফিশারিঘাটে এখন সকাল থেকেই যেন উৎসবের আমেজ। ট্রলার ঘাটে ভিড়লেই শুরু হয় কর্মচাঞ্চল্য। আড়তগুলোর সামনেই চলছে বাক্সে মাছ ভরানোর কাজ। আড়তদারেরা জানান, চট্টগ্রামের এই ঘাটে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়। নিষেধাজ্ঞার সময় বাজার একটু স্তিমিত থাকে। অন্য সময় লেগে থাকে ব্যস্ততা।
ছোট ইলিশ কেজিতে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার কোনো ইলিশ সাড়ে ৩০০ টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে। বড় আকারের যেগুলো, সেগুলোর দাম একটু চড়া; প্রতি কেজি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা।আড়তদার নুর মোহাম্মদের মতে, নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ ধরা বন্ধ থাকায় বাজারে সরবরাহে ঘাটতি ছিল। এখন ধীরে ধীরে সব ঠিক হচ্ছে। তবে গত কয়েক দিন সাগরের নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় অনেক জেলে গভীর সমুদ্রে যেতে পারেননি। ফলে বড় ইলিশ আসছে কম। একই আক্ষেপ করলেন মেসার্স মা মরিয়ম ফিশিংয়ের কর্ণধার ছৈয়দ নুর। তিনি বলেন, বড় আকারের ইলিশ কম আসছে। তবে অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ প্রচুর ধরা পড়ছে। বিক্রিও ভালো।
দরদাম যেমন
ফিশারিঘাটের পাইকার ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ছোট ইলিশ কেজিতে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার কোনো ইলিশ সাড়ে ৩০০ টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে। বড় আকারের যেগুলো, সেগুলোর দাম একটু চড়া—প্রতি কেজি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা।
মাছের ওপর বরফ ছিটানো হচ্ছে। গতকাল দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম নগরের ফিশারিঘাট নতুন মাছ বাজারে