Samakal:
2025-08-01@03:17:14 GMT

গলার কাঁটা পানি শোধনাগার

Published: 29th, April 2025 GMT

গলার কাঁটা পানি শোধনাগার

বিয়ানীবাজার পৌরসভার গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে সেখানে স্থাপিত পানি শোধনাগার প্লান্টটি। দুই বছর ধরে পুষতে থাকা এই প্রকল্পকে কীভাবে লাভজনক প্রকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যায়, তার পথ খুঁজছেন সংশ্লিষ্টরা। পৌরবাসীকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা এই পানি শোধনাগার প্লান্ট উদ্বোধন করা হয় ২০২৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি। উদ্বোধনের পর এই প্রকল্প থেকে গত ২৬ মাসে এক টাকাও আয় করতে পারেনি পৌরসভা। উল্টো এই সময়ে প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল ও আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে মাসে ৩০ হাজার টাকা ব্যয় করা হচ্ছে এর পেছনে। পৌর সূত্র মতে, ২৬ মাসে এ ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মোট ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

দৈনিক ৪ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে স্থাপিত পানি শোধনাগারটির পানির প্রতি পৌরবাসীর কোনো আগ্রহই নেই। এখানে প্রাকৃতিকভাবে পানি সহজে আহরণ করা যায় বলে কৃত্রিম উৎসে পরিশোধিত পানির চাহিদা একেবারে নেই বললে চলে। যার কারণে শোধনাগারটি কোনো কাজেই আসছে না। উদ্বোধনের পর থেকে অকার্যকার হয়ে আছে এটি।

স্থানীয় পৌরবাসীর ভাষ্য, প্রাকৃতিকভাবে বিশুদ্ধ পানি প্রাপ্তির উৎস থাকায় শোধনাগারের পানির প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ নেই। যারা এসব প্রকল্পের কাজ করেন, তারা নিশ্চয় প্রতিটি স্থানের ভৌগোলিক অবস্থা সম্পর্কে জানেন। যেখানে স্বাভবাবিক উৎস থেকে পানি পাওয়া যাচ্ছে সহজে, সেখানে এমন একটি প্রকল্প যে অপরিকল্পিতভাবে করা– তা বোঝাই যায়। 

এদিকে পৌর কর্তৃপক্ষের বোঝায় পরিণত হওয়া এই প্রকল্পটিকে ঘিরে সৃষ্ট সমস্যা উত্তরণে এবং এটিকে আর্থিকভাবে লাভজনক প্রকল্পে পরিণত করার উপায় খুঁজছে পৌরসভা। এর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে পানি সরবরাহের পাইপলাইন সম্প্রসারণ করা বা পানি শোধনাগারটি লিজ দেওয়ার মতো বিষয় নিয়ে ভাবছে  কর্তৃপক্ষ।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, শোধনাগারটিতে উৎপাদিত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার লক্ষ্যে পৌরসভার আংশিক এলাকায় স্থাপন করা হয়েছিল ২২ কিলোমিটার পাইপলাইন। এ পাইপলাইন থেকে পৌর শহর, শহরতলি ও আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা কোনো সংযোগ নেননি। বাণিজ্যিক সংযোগ না থাকায় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের পুরো প্রক্রিয়াটি অকার্যকর হয়ে পড়েছে, যার কারণে প্রতি মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকার বাড়তি ব্যয়ের চাপ নিতে হচ্ছে পৌরসভাকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমনিতেই টানাটানি তার ওপর বাড়তি ব্যয়। 

সিলেট বিভাগের ১৯টি পৌরসভার উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশেষ প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ সালে বিয়ানীবাজার পৌরসভার পানি শোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু হয় পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত মেয়র আব্দুস শুকুরের সময়ে।

২০২০ সালের ২৩ অক্টোবর এ প্লান্ট স্থাপনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। সে সময় এ প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে পৌর পরিষদের মাসিক আলোচনায় কয়েকজন কাউন্সিলর আপত্তি তুলেছিলেন। সে সময় তাদের আপত্তি আমলেই নেননি তৎক্ষালীন মেয়র আব্দুস শুকুর।

২০২৩ সালে শোধনাগারটিকে কার্যকর করতে পৌরসভার ২০০ পরিবারকে বিনামূল্যে পানি সরবরাহের উদ্যোগ নেন সাবেক মেয়র ফারুকুল হক। তবে পৌরসভার সে উদ্যোগেও আগ্রহ দেখায়নি পৌরবাসী। যার কারণে উন্নয়নের নামে সরকারের ৯ কোটি টাকা গচ্চার পাশাপাশি পৌরসভা প্রতি মাসে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে।

অকার্যকর হয়ে পড়ে থাকা পানি শোধনাগারটি বন্ধের সুযোগ নেই জানিয়ে পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মুস্তফা মুন্না বলেন, এটি স্থাপন করার আগে এর প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা, সেটি সেভাবে সার্ভে করা হয়নি, যার ফলে বর্তমান পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং পৌরসভা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এই পানি শোধনাগারটিকে লাভজনক খাতে নিয়ে আসতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেতে কাজ করা হচ্ছে। দৈনিক ৪ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার মতো প্রয়োজনীয় পাইপলাইন স্থাপন করা হয়নি। পুরো পৌরসভাকে পানি সরবরাহের আওতায় নিয়ে আসতে হলে অবশিষ্ট অংশে পাইপলাইন স্থাপন করতে ব্যয় হবে ৩ কোটি টাকা।

এই প্রশাসনিক কর্মকর্তা আরও বলেন, পুরো পৌরসভায় পানির সরবরাহ লাইন স্থাপন করা গেলে নিয়মতান্ত্রিকভাবে গভীর ও অগভীর নলকূপ থেকে পানি উত্তোলন বন্ধ করা সম্ভব। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরবর হ র প রসভ র প রকল প প রব স ল ইন স

এছাড়াও পড়ুন:

গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা

কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ পর্যন্ত অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতি ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে অপচয় হয়েছে ২ শতাংশ।

‘দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়; গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে বলা হয়, ২ শতাংশ অপচয় গ্রহণযোগ্য, তাই ওইটুকু সমন্বয় করেই আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। গ্যাসের অপচয় রোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থা।

পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাস অপচয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পুরোনো, জরাজীর্ণ পাইপলাইন; গ্যাস সরবরাহ লাইনের গ্যাসস্টেশন রাইজারে লিকেজ (ছিদ্র); তৃতীয় পক্ষের উন্নয়নকাজে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া এবং আবাসিক খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ। তবে এসব অপচয় রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থায় মিটারিং/ মনিটরিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কারিগরি ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।

দেশের গ্যাস খাতের চিত্র তুলে ধরে সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।

শিল্পে নতুন সংযোগে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে, খোঁজ পেলেই বিচ্ছিন্ন করা হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্পে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু তারা বেশি দাম দেবে। তাই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে তিনটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের তালিকায় থাকছে, যেসব কারখানায় এখনই সংযোগ দেওয়া যাবে। এগুলো পরিদর্শন প্রায় শেষের দিকে, আগামী সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে।

সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্থলভাগের টার্মিনাল। মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় এটি করা হবে। এটি হলে কম দামের সময় বাড়তি এলএনজি কিনে মজুত করা যাবে। তবে এগুলো রাতারাতি করা যায় না, পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।

জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে

তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. শোয়েব। তিনি বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তৈরি পিএসসির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫০টি কূপ সংস্কার, উন্নয়ন ও খননের প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে। ৪টি কূপের কাজ চলমান। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী।

সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে

পেট্রোবাংলার আর্থিক দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে পেট্রোবাংলার রাজস্ব আয় ৫৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে অর্ধেক বকেয়া। গত মে পর্যন্ত গ্যাস বিল বকেয়া ২৭ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৩–১৫ হাজার কোটিতে বকেয়া নেমে এলে সন্তোষজনক। সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এরপর সার কারখানায় বকেয়া আছে ৯৬৪ কোটি টাকা। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির কাছে বিল বকেয়া নেই পেট্রোবাংলার। সব বিল শোধ করা হয়ে গেছে।

গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা

পেট্রোবাংলা বলছে, এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে লোকসান শুরু হয় সংস্থাটির। প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮-১৯ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হয়, ওই বছর ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরপর এলএনজি আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তুকিও বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে তারা ভর্তুকি নিয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা মোট ভর্তুকি নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার হিসাবে গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে ২৭ টাকা ৫৩ পয়সা। তারা বিক্রি করেছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায়। এর মানে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরানের ভুলে আজারবাইজান যেভাবে ইসরায়েলের দিকে ঝুঁকে পড়ল
  • গাজায় দুর্ভিক্ষের অংক
  • গ্যাস সংকট
  • ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতে যেসব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে
  • ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
  • কাফকো সার কারখানায় গ্যাস বিক্রির চুক্তি সই
  • গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
  • পাবনায় আগাম পাটের বাজার চড়া, বেশি দাম পেয়ে কৃষক খুশি
  • নবায়নযোগ্য জ্বালানির যুগ কড়া নাড়ছে দরজায়
  • ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধে জয় হচ্ছে বোয়িংয়ের