ছয় দাবিতে সব পলিটেকনিক ‘কমপ্লিট শাটডাউন’
Published: 29th, April 2025 GMT
রাজপথে আন্দোলনের পর ছয় দফা দাবিতে এবার সারা দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে চলছে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) সকাল থেকে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ, এর ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করছেন সারা দেশে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা। পূর্ব ঘোষিত কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ও ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ পালন করছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।
পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে এই কর্মসূচি শুরু হয়। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন।
পরে ক্যাম্পাসের মেধা শহীদ চত্বরে শিক্ষার্থীরা এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মাশফিক ইসলাম দেওয়ান বলেন, “বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ আমাদের দাবি বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রণয়নে কমিটি করে দিলেও কমিটির একটিমাত্র সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে; আমরা কোনো প্রকার সফলতা দেখছি না। আমরা কোনো প্রকার তথ্য পাচ্ছি না, ভবিষ্যতে আমাদের দাবিগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে- সেই বিষয়ে। কমিটি দ্রুত কাজ করছে না।”
তিনি বলেন, “এমন পরিপ্রেক্ষিতে সারা বাংলাদেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে আমরা একযোগে সাবধান কর্মসূচি পালন করছি। আমাদের দাবি বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শাটডাউন থাকবে। প্রশাসনিক ভবন একাডেমিক ভবন তালাবদ্ধ থাকবে, ক্যাম্পাসে সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।”
এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে এ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এর আগে রবিবার ও সোমবার সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং সব জেলার ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারস বাংলাদেশ (আইডিইবি) কার্যালয়ে নিজেদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন আন্দোলনকারীরা।
এক সপ্তাহের বেশি সময় নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার পর তাদের দাবি বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রণয়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করলে গত ২২ এপ্রিল তারা আন্দোলন স্থগিত করে। তবে পরদিনই সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা আসে তাদের তরফ থেকে।
যে ছয় দাবিতে কারিগরি শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছেন—
জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি, ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদবি পরিবর্তন ও মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করতে হবে।
২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমানের (১০ম গ্রেড) পদ চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্নস্থ পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এ পদগুলোতে অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ এবং সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
কারিগরি শিক্ষায় বৈষম্য ও দুরবস্থা দূর করার পাশাপাশি দক্ষ জনসম্পদ তৈরিতে ‘কারিগরি ও উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়‘ নামে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।
পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নত মানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি, নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
ঢাকা/সুকান্ত/ইভা
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনৈতিক দলের মতের ভিত্তিতে জুলাই সনদের খসড়ায় সংশোধনী আনা হচ্ছে: আলী রীয়াজ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, কমিশনের বৈঠকে একমত হওয়া বিষয়গুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় কমিশন ‘অনুঘটক’ হিসেবে ভূমিকা রাখবে। প্রয়োজন হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য কমিশন আবার বসবে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের শেষ দিনের আলোচনার শুরুতে এসব কথা বলেন আলী রীয়াজ।
রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদের খসড়ায় সংশোধনী আনা হচ্ছে বলে জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘সনদের দুটি অংশ। একটি অংশে ঐকমত্যের বিষয়সমূহ এবং অন্য অংশে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’
শিগগিরই সনদ চূড়ান্ত করা যাবে বলে জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব দ্রুত চূড়ান্ত সনদ প্রস্তুত করে আপনাদের হাতে তুলে দিতে। এর ভিত্তিতে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাও করা হবে।’
আজকের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে—সরকারি কর্মকমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগ সম্পর্কিত বিধান, সংসদের উচ্চকক্ষের গঠন, সংসদ সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি ও এখতিয়ার, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, ইলেকটোরাল কলেজ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ সম্পর্কিত প্রস্তাব এবং রাষ্ট্রের মূলনীতি।
রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে আপনারা যে সব বিষয়ে একমত হয়েছেন, সেগুলো বাস্তবায়নের পথ আপনারা নিজেরাই তৈরি করতে পারবেন। সেখানে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিকভাবে অনুঘটকের কাজ করবে।’
আলোচনার শুরুতে আলী রীয়াজ বলেন, কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার আজ শেষ দিন। আজ যেসব বিষয় আলোচিত হবে, তার অধিকাংশই সিদ্ধান্তের বিষয়। বিশেষ করে যেসব দায়িত্ব আপনাদের পক্ষ থেকে আমাদের ওপর অর্পিত হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত আপনাদের জানানো হবে।
আলী রীয়াজ আরও বলেন, ‘কিছু অনালোচিত বিষয়ের আলোচনা হবে। আর সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহা হিসাবরক্ষক এবং ন্যায়পালসহ কিছু বিষয়ে আলোচনার ফ্লোর থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে আগেই ছয়টি কমিশনের সুপারিশের সার-সংক্ষেপ রাজনৈতিক দলগুলোকে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনায় কিছু কিছু বিষয়ে একমত হওয়া গেছে। যার একটি তালিকা দলগুলোর হাতে আছে। এ ছাড়া যেসব বিষয়ে মতভেদ রয়েছে, সেগুলো নিয়েও আলোচনা অব্যাহত আছে।
আরও পড়ুনমৌলিক সংস্কারের সব বিষয়ে মতৈক্য হয়নি ৬ ঘণ্টা আগেআলী রীয়াজ জানান, এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নমতের সুযোগ ছিল এবং আছে। আজকের আলোচনায় যেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে, সেগুলোর ক্ষেত্রে দলগুলো ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিতে পারবে।
আলী রীয়াজ আশা প্রকাশ করেন, আজকের মধ্যে আলোচনা পর্বের সমাপ্তি টানা সম্ভব হবে। আলোচনা শেষে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে এবং যেসব বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা দ্রুত দলগুলোর কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।
আজকের আলোচনায় অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি দল।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে উপস্থিত রয়েছেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া।
আরও পড়ুন১২ মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ২৯ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনপ্রাথমিক পর্যায়ে ঐকমত্যের খসড়া আজকালের মধ্যে পাবে রাজনৈতিক দলগুলো: আলী রীয়াজ২৯ জুলাই ২০২৫