বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করার জের ধরে দুটি টেলিভিশন মিডিয়ার দুজন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করার অভিযোগ উঠেছে। একই ঘটনার জেরে আরেকটি চ্যানেল একজন সাংবাদিককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।

এসব টেলিভিশন চ্যানেলের মধ্যে একটি এটিএন বাংলা। ওই চ্যানেলটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সোমবার সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলনে তাদের রিপোর্টারের প্রশ্নের বিষয়টিতে তারা বিব্রত।

এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী সম্পাদক মনিউর রহমান জানান, সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নের জের ধরে তাদের টিভি চ্যানেল ঘেরাওয়ের হুমকি দেওয়া হয়েছে। যে কারণে ওই প্রতিবেদককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

দীপ্ত টিভির সংবাদ কার্যক্রম সরকার বন্ধ করেনি: তথ্য উপদেষ্টা

খামারিদের স্বল্প সুদে ঋণ দিতে সরকার কাজ করছে: ফরিদা আখতার

একই কারণে দীপ্ত টিভির একজন সাংবাদিককেও চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

সেই সাথে দীপ্ত টিভির সংবাদ প্রচার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির হেড অব নিউজ এস এম আকাশ।

প্রতিষ্ঠান দুটিতে কর্মরতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার সচিবালয়ে সংস্কৃতি উপদেষ্টার একটি সংবাদ সম্মেলনে ওই দুই প্রতিষ্ঠানের দুই রিপোর্টারের প্রশ্ন ঘিরেই তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে।

একই কারণে চ্যানেল আইয়ের এক রিপোর্টারকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে তদন্ত শুরু করার কথা জানিয়েছে টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ।

এ নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফারুকী বলেন, “আজকে সারা দিন আমি বিশ্রামে ছিলাম। আপনার কাছেই প্রথম এটা জানলাম। আমি বা আমার মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে একদমই ওয়াকিবহাল না। ওই প্রতিষ্ঠানগুলোই আসলে বলতে পারবে তাদের এই সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ কী।”

অন্যদিকে সন্ধ্যায় সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের এক অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা মো.

মাহফুজ আলম জানিয়েছেন, সরকার দীপ্ত টিভির সংবাদ কার্যক্রম বন্ধ করেনি। এটি দীপ্ত টিভি-কর্তৃপক্ষের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত।

কী হয়েছিল সংস্কৃতি উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলনে?
সোমবার সচিবালয়ে কান চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশি শর্টফিল্ম ‘আলী’র প্রদর্শনীর আমন্ত্রণ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন অংশ নেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত একাধিক সাংবাদিক বিবিসিকে জানান, সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে সাংবাদিকরা সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টার কাছে সাম্প্রতিক নানা ইস্যুতে প্রশ্ন করেন।

সেখানে এক পর্যায়ে চ্যানেল আইয়ের সাংবাদিক রফিকুল বাসার পয়লা বৈশাখের শোভাযাত্রায় শেখ হাসিনার মোটিফ প্রসঙ্গ তুলে সংস্কৃতি উপদেষ্টার কাছে জানতে চান, “শেখ হাসিনার মোটিফ প্রদর্শন করার বিষয়টি কি ঠিক হয়েছে? নাকি এতে সমস্যা আরো দীর্ঘায়িত হলো?”

পাল্টা প্রশ্ন করে সাংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, “এবার নববর্ষের থিম কী ছিল?”

তখন সাংবাদিক বাসার পাল্টা প্রশ্ন করেন, “এতে কী ঐক্য হলো? আমরা কি সুন্দর জায়গাতে গেলাম নাকি আরো অসুন্দরের দিকে গেলাম?”

জবাবে উপদেষ্টা ফারুকী বলেন, “মোটিফ কী ব্যবহার করবে এটা চারুকলা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত।”

এই প্রশ্নের উত্তরে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা জুলাই অগাস্টের আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা ১৪০০ ছিল বলে উল্লেখ করেন।

তখন দীপ্ত টিভির রিপোর্টার মিজানুর রহমান উপদেষ্টা ফারুকীর কাছে প্রশ্ন করেন, “জুলাই আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা ১৪০০ আপনি কীভাবে বলেন? এটা তো যারা রাজনীতিবিদ তারা বলবে।”

জবাবে সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, “আমি জাতিসংঘের রিপোর্টের ভিত্তিতে বলেছি। আপনি রিসার্চ করুন। প্লিজ ডু ইওর ওউন রিসার্চ।”

পরে সাংবাদিক মিজান উপদেষ্টা ফারুকীকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, “উপদেষ্টা ফারুকী আপনি তো বললেন ১৪০০ মানুষ যিনি খুন করেছেন, আপনি কীভাবে বুঝলেন একজন মানুষ ১৪০০ মানুষকে খুন করেছে? এটা তো কোর্ট রায় দিবে। আপনি বায়াসড উত্তর দিলেন।”

জবাবে উপদেষ্টা পাল্টা প্রশ্ন করেন, “৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পরে আপনার মতো একজন সাংবাদিক যদি এসে বলতেন, কী করে আপনি বলছেন- এত লোককে পাকিস্তানিরা মেরেছে। কোর্ট তো ভার্ডিক্ট দেয় নাই এখনো। দিস এই অ্যাবসার্ড। ডোন্ট সে দিস।”

এই বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন সাংবাদিক উপদেষ্টা ফারুকীকে নানা প্রশ্ন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরো দুয়েকজন সাংবাদিক এসব বিষয় নিয়ে প্রশ্নের এক পর্যায়ে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন শেষ হয়।

সেখানে অভিনেতা ইরেশ জাকেরের বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনের ঘটনায় মামলা নিয়েও প্রশ্ন করা হয়। সেসবের জবাব দেন উপদেষ্টা।

ফেসবুকে আন্দোলনের হুমকি
ওই ঘটনার পরপরই ‘জুলাই রেভ্যুলেশনারী অ্যালায়েন্স-জেআরএ’ ফেসবুক পেজ থেকে এই ইস্যু নিয়ে কয়েকটি পোস্ট দেওয়া হয়।

সেখানে দীপ্ত টিভির সাংবাদিক মিজানুর রহমান, চ্যানেল আইয়ের সাংবাদিক রফিকুল বাসার ও এটিএন বাংলার রিপোর্টার ফজলে রাব্বির ছবি দিয়ে পোস্ট করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

ওই চ্যানেলগুলো তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবে, তা দ্রুত জানানোরও দাবি জানানো হয় ফেসবুক পোস্ট থেকে।

ওই পেজের এই পোস্ট সোমবার রাত থেকে অনেককে শেয়ারও করতে দেখা যায়।

মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে ওই তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার আল্টিমেটাম দিয়ে আবারো ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া হয়।

তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ‘মার্চ টু দীপ্ত টিভি ,চ্যানেল আই, এটিএন বাংলা’ কর্মসূচি পালনেরও হুমকি দেওয়া হয় ওই পেজ থেকে।

জুলাই রেভ্যুলেশনরী অ্যালায়েন্স-জেআরএ পেজটিতে একটি ফোন নম্বর দেওয়া রয়েছে। যোগাযোগের জন্য ওই নম্বরটিতে ফোন করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

সন্ধ্যায় ওই পেজ থেকেই এটিএন বাংলার সাংবাদিক ফজলে রাব্বি ও দীপ্ত টিভির সাংবাদিক মিজানুর রহমানকে তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে জানিয়ে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। একই সাথে বরখাস্তের চিঠিও সেখানে আপলোড করা হয়।

তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, দীপ্ত টিভির খবর বন্ধ
রবিবার দুপুরে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দীপ্ত টিভির সাংবাদিক রহমান মিজানুর রহমানকে বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্ত করে দেওয়া ওই চিঠিতে কোনো কারণের কথা হয়নি।

একই সময় টেলিভিশন চ্যানেলটি তাদের নিউজ স্ক্রলে ঘোষণা দেয়, “অনিবার্য কারণবশত দীপ্ত টিভির সকল সংবাদ পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।”

রাতে অব্যাহতি দেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানটির ডিজিটাল ইনচার্জ মাহমুদুর রহমান শাওনকে।

এ বিষয়ে দীপ্ত টিভির হেড অব নিউজ এসএম আকাশ বলেন, “আমাদের ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত আপাতত, দীপ্ত টেলিভিশনের সংবাদ প্রচার হবে না। এই হচ্ছে তাদের সিদ্ধান্ত। আজকে দুপুর থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে।”

মিজানুর রহমানের বরখাস্তের কারণ কী, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটা এইচআর বিভাগ করেছে। তারা কাউকে বরখাস্ত করলে কোন কারণ দেখায় না। একই সাথে এটার সাথে নিউজ বন্ধের সাথে কোনো সম্পর্ক আছে কি না, সেটাও বলা হয়নি।”

আর এটিএন বাংলা থেকে ফজলে রাব্বীকে বরখাস্ত করে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, রিপোর্টিংয়ের কাজে ‘যথাযথ পেশাগত দায়িত্ব’ পালন না করায় তাকে চাকুরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

জানতে চাইলে এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী সম্পাদক মনিউর রহমান বলেন, “গতকালের প্রেস কনফারেন্সের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এটা নিয়ে জুলাই রেভ্যুলেশন অ্যালায়েন্স পেজে পোস্ট দেওয়া হয়েছে। সেখানে দীপ্ত, চ্যানেল আই ও এটিএন বাংলার সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হবে। মূলত সে কারণেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”

“আমাদের রিপোর্টার যখন প্রেস কনফারন্সে কাভার করেছে এটিএন বাংলার হয়ে, সে এই প্রশ্ন করার ব্যাপারে আমাদের সাথে কোনো পরামর্শ তো করেনি। আমাদের চ্যানেল থেকেও এই রকম প্রশ্ন করতে বলা হয়নি”, যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, “সেখানে সংস্কৃতি উপদেষ্টা একটা কথা বলেছে। সেটাকে পাল্টা প্রশ্ন করা বা এটাতে ডিজঅ্যাগ্রি করতে তো আমরা রিপোর্টারকে বলে দেই নি। রিপোর্টার হিসেবে আমাদের রিপোর্টার ব্যক্তিগতভাবে প্রশ্নটা করেছে।”

এদিন সন্ধ্যায় চ্যানেল আই তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেখানে জানানো হয়, সংস্কৃতি উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে পেশাদারিত্ব প্রদর্শন করার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারের বিষয়ে চ্যানেল আই কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করেছে।

একই সাথে ওই রিপোর্টারকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলেও জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

এই বিষয়ে ফজলে রাব্বি বলেন, “সারা দিন অ্যাসাইনমেন্ট করেছি, অফিসে ফেরার পর আমাকে একটা চিঠি ধরিয়ে দেওয়া হয় যে, আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আমি নাকি অপেশাদার আচরণ করেছি।”

 “এর আগেও আমার সাথে একাধিকবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। এবার আমাকে কেন বা কী কারণে অপেশাদার আচরণ বললো, সেটা আমি জানতে পারলাম না। কিন্তু সেটা জানা আমার অধিকার ছিল,” তিনি বলেন।

এই বিষয়ে মঙ্গলবার রাতে রফিকুল বাসার বলেছেন, '“আমার যে বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা ঠিক না। আমি যে প্রশ্নটি করেছিলাম, তা ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।”

রফিকুল বাসার জানিয়েছেন, তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। অফিস এখন এটি নিয়ে তদন্ত করছে।

তিনি এর বাইরে আর কিছু বলতে রাজি হননি।

তবে মিজানুর রহমানের সঙ্গে বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হলেও তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

পাঁচই অগাস্টের পটপরিবর্তনের পরে এর আগেও অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীদের চাপে প্রেস ক্লাব ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে পরিবর্তনের অভিযোগ উঠেছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাদের চাপের কারণে কর্মরতদের পরিবর্তন, ছাঁটাই বা পরিচালনায় পরিবর্তনের ঘটনা ঘটেছে।

বিশেষ করে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সময় টেলিভিশনে কর্মরত পাঁচ গণমাধ্যমকর্মীর একসঙ্গে চাকরি যাওয়ার ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন নেতার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ সামনে আসে।

ঢাকা/রাসেল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট স স ক ত ব ষয়ক উপদ ষ ট ম জ ন র রহম ন চ য ন ল আই ক উপদ ষ ট ব যবস থ ফ সব ক আম দ র স মব র ন কর র ব ষয়ট সরক র একই স তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত ত্বক থাকলে ৪০ শতাংশের বেশি দগ্ধ রোগীকেও বাঁচানো যায়

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে হতাহত হওয়ার ঘটনার পর দেশের একমাত্র স্কিন ব্যাংকের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এ ব্যাংকের অবস্থান। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মাইলস্টোনের ঘটনার পর অনেকেই স্কিন (চামড়া বা ত্বক) দান করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে ইনস্টিটিউটে যোগাযোগ করছেন। স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্বক থাকলে ৪০ শতাংশের বেশি পুড়ে যাওয়া রোগীকেও বাঁচানো সম্ভব।

২১ জুলাই দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। গত সোমবার রাত ১০টায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ৩৪ জন মারা গেছে। আর সোমবার বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ৪৫ জন। তাদের মধ্যে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি ৩৩ জন।

দেশে স্কিন ব্যাংকের যাত্রা শুরুর পর দান করা ত্বক ব্যবহার করে ১০ জন দগ্ধ রোগীর চিকিৎসা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯ জনই বেঁচে গেছেন। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকায় একজন মারা গেছেন।

জীবিত ব্যক্তির শরীর থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করা ত্বক মারাত্মকভাবে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া যে কেউ চাইলে মরণোত্তর ত্বক দান করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে দাতার মৃত্যুর পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মরদেহ থেকে ত্বক সংগ্রহ করা হয়। পরে সেই ত্বক দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।

ওজন কমানোসহ কিছু প্লাস্টিক সার্জারির পর বেঁচে যাওয়া ত্বক সংরক্ষণ করার মধ্য দিয়ে দেশের একমাত্র স্কিন ব্যাংকটি যাত্রা শুরু করে। আগে এ ধরনের অস্ত্রোপচারের পর বাড়তি ত্বক ফেলে দেওয়া হতো।

স্কিন ব্যাংকের সমন্বয়কারী ও জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুব হাসান প্রথম আলোকে বলেন, মাইলস্টোনের ঘটনার পর ত্বকদানের বিষয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে; বিশেষত অনেক নারী আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এখন পর্যন্ত শতাধিক মানুষ এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে যোগাযোগ করেছেন।

তবে সমস্যা হলো, আগ্রহী ব্যক্তিদের বেশির ভাগ চাইছেন, মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধ শিক্ষার্থীদের শরীরে যাতে তাঁদের দান করা ত্বক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় যে প্রক্রিয়া শেষে কার দান করা ত্বক কার শরীরে ব্যবহার করা হবে। এ ছাড়া ত্বক দান করার ক্ষেত্রে স্ক্রিনিংসহ পুরো প্রক্রিয়া শুনে অনেকে আর আগ্রহ দেখাননি। এখন পর্যন্ত যাঁরা যোগাযোগ করেছেন, তাঁদের মধ্যে ১৫ থেকে ১৬ জন ত্বক দান করতে চেয়েছেন বলে জানান চিকিৎসক মাহবুব হাসান।

ভবিষ্যতে দগ্ধ রোগীর চিকিৎসায় ত্বক সংরক্ষণ করে রাখতে হয়। ত্বক সংগ্রহের পর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তরল নাইট্রোজেনে ডুবিয়ে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। তাহলে সেই ত্বক পাঁচ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে।মাহবুব হাসান, জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক।

৩ জুলাই মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম আন্তর্জাতিক দগ্ধ ও আঘাতপ্রাপ্তদের সম্মেলন। এই সম্মেলনে ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব ফার্স্ট স্কিন ব্যাংক ইন বাংলাদেশ: দ্য ওয়ে অব ওভার কামিং দ্য চ্যালেঞ্জেস’ শিরোনামের বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাহবুব হাসান। প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, দেশে স্কিন ব্যাংকের যাত্রা শুরুর পর দান করা ত্বক ব্যবহার করে ১০ জন দগ্ধ রোগীর চিকিৎসা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯ জনই বেঁচে গেছেন। আর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকায় একজন মারা গেছেন।

আপাতত রেজিস্ট্রেশন ও স্ক্রিনিং

দেশের একমাত্র স্কিন ব্যাংক উদ্বোধন করা হয় গত ৯ জানুয়ারি। তবে গত ২০ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়। ব্যাংকটিতে কারিগরি সহায়তা দিয়েছে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল। বর্তমানে এই ব্যাংকে দুজন চিকিৎসক ও একজন নার্স দায়িত্ব পালন করছেন।

স্কিন ব্যাংক যাত্রা শুরুর পর মোট ১৪ হাজার ৫০০ সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক সংরক্ষণ করা হয়েছিল। মাইলস্টোনের ঘটনার আগপর্যন্ত ৯ হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ব্যাংকে ছিল। মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় গত রোববার পর্যন্ত এ ব্যাংক থেকে সাড়ে ৩ হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ব্যবহার করা হয়েছে।

স্কিন ব্যাংক যাত্রা শুরুর পর মোট ১৪ হাজার ৫০০ সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক সংরক্ষণ করা হয়েছিল। মাইলস্টোনের ঘটনার আগপর্যন্ত ৯ হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ছিল। মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় গত রোববার পর্যন্ত এ ব্যাংক থেকে সাড়ে তিন হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ব্যবহার করা হয়েছে।

মাইলস্টোনের ঘটনার পর ত্বকদানের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আলোচনা হচ্ছে। ত্বকদানের আহ্বান জানিয়ে অনেকেই পোস্ট দিচ্ছেন। তবে কিছু কিছু ভুল তথ্যও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে।

আরও পড়ুনস্কিন ব্যাংক চালু হলো বাংলাদেশে, দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত২৫ জুলাই ২০২৫

মাইলস্টোনের ঘটনার পর জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, অনেকেই ত্বক দান করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তবে স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্বক সংরক্ষিত আছে।

এ বিষয়ে চিকিৎসক মাহবুব হাসান বলেন, এ মুহূর্তে ত্বকদানে আগ্রহী ব্যক্তিদের রেজিস্ট্রেশন আর স্ক্রিনিং করে রাখার বিষয়ে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে, যাতে জরুরি প্রয়োজনে তাঁদের কাছ থেকে ত্বক সংগ্রহ করা যায়।

সংগ্রহ করা ত্বক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তরল নাইট্রোজেনে ডুবিয়ে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখলে পাঁচ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-আ.লীগ নেতা–কর্মীদের ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে গ্রেপ্তার ২২, সেনা হেফাজতে মেজর
  • দেশের চারজনের একজন বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার
  • ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে
  • ডেঙ্গুতে দুজনের, করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যু
  • জাওয়াইদেহ বেদুইনদের মৌখিক সাহিত্য
  • রাবিতে আ.লীগ ট্যাগ দিয়ে চিকিৎসা কর্মীকে বিবস্ত্র করে মারধর
  • ইরানের সঙ্গে সংঘাত: ইসরায়েলকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা দিতে সৌদি সরকারকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র
  • সিরিজের শেষ ম্যাচে নেই স্টোকস, দায়িত্বে পোপ
  • সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
  • স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত ত্বক থাকলে ৪০ শতাংশের বেশি দগ্ধ রোগীকেও বাঁচানো যায়