রাজধানীতে পরপর তিন দিনে তিন জনসমাবেশ
Published: 30th, April 2025 GMT
আগামীকাল বৃহস্পতিবার ১ মে থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনের সরকারি ছুটি। এই তিন দিনে রাজধানী ঢাকায় তিনটি দল ও সংগঠন পৃথক জনসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এসব কর্মসূচি ঘিরে ছুটির তিন দিনে রাজধানীতে ব্যাপক জনসমাগমের সম্ভাবনা রয়েছে।
১ মে বৃহস্পতিবার ঢাকার নয়াপল্টনে শ্রমিক সমাবেশ করবে বিএনপি। পরদিন ২ মে শুক্রবার আওয়ামী লীগের বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে সমাবেশ করবে। ৩ মে শনিবার নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করবে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে আগামীকাল বেলা দুইটায় ঢাকার নয়াপল্টনে শ্রমিক সমাবেশ করবে বিএনপি। এতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান অতিথি থাকবেন। তিনি লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হবেন। এ ছাড়া বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। এই সমাবেশ আয়োজনে যুক্ত রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের প্রধান উপদেষ্টা নজরুল ইসলাম খান ও শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। ঢাকা মহানগরের বাইরে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ আশপাশের জেলা থেকে বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা সমাবেশে অংশ নেবেন।
নজরুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, সমাবেশটি অনেক বড় করার। আশা করি, আপনারা সেদিন উপস্থিত থাকলে দেখতে পাবেন।’
পরদিন শুক্রবার বেলা তিনটায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে সমাবেশ করবে গণ–অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল এনসিপি। দলটির ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে এই সমাবেশ হবে।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, এই কর্মসূচি থেকে গণহত্যার দায়ে ফ্যাসিস্ট দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার, এর রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা এবং নিবন্ধন বাতিল করার দাবি জোরালোভাবে জানানো হবে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড, জুলাই-আগস্ট গণহত্যা ও ২০২১ সালে নরেন্দ্র মোদির আগমনবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের মতো বড় হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচারও দাবি করা হবে।
২১ এপ্রিল থেকে দলগতভাবে আওয়ামী লীগের বিচার, দলটির নিবন্ধন বাতিল ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মশালমিছিলের মতো কর্মসূচি করছে এনসিপি। শুক্রবারের সমাবেশে ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষের জমায়েত হতে পারে বলে জানান এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন শিশির।
এনসিপির সমাবেশের পরদিন শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশের দিকে অনেকের দৃষ্টি। এক মাস ধরে সংগঠনটি সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সংগঠনটি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, ‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের কোরআন-সুন্নাহবিরোধী প্রতিবেদনসহ কমিশন বাতিল, সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল, ফ্যাসিবাদের আমলে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও শাপলা চত্বরে সংঘটিত গণহত্যাসহ সব হত্যার বিচার এবং ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলিম গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধের’ দাবিতে এই মহাসমাবেশ ডাকা হয়েছে। এ উপলক্ষে গতকাল সকালে খিলগাঁও জামিয়া ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম মাদ্রাসায় মহাসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির সভা হয়।
হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় সংগঠনের কেন্দ্রীয়, মহানগর ও আঞ্চলিক কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে বেলা ১১টায় মহাসমাবেশের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে নেতারা সংবাদ সম্মেলন করেন।
হেফাজতে ইসলামের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, এই মহাসমাবেশে তাঁদের মুখ্য দাবি হবে মূলত চারটি। এর মধ্যে প্রধান দাবি হচ্ছে, অনতিবিলম্বে হেফাজত নেতাদের নামে থাকা সব মামলা প্রত্যাহার। কারণ, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার এই মামলাগুলোকে পুঁজি করে হেফাজতকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে। ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে, তারাও একই কাজ করতে পারে। তাই মামলা প্রত্যাহার হচ্ছে তাঁদের মুখ্য দাবি। সংগঠনটির হিসাবমতে, সারা দেশে হেফাজত নেতাদের নামে প্রায় ৩০০টি মামলা রয়েছে।
এ ছাড়া ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ড, ২০২১ সালের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর ঘিরে হত্যাকাণ্ড, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার। এরপর যথাক্রমে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল, সংবিধানের প্রস্তাবনায় আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল করা, ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলিম গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধের দাবিগুলো থাকবে।
উল্লেখ্য, এক যুগ আগে ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে যৌথ বাহিনীর রক্তক্ষয়ী অভিযানের ঘটনা ঘটে।
আগামী ৫ মে সোমবার সরকারি কর্মদিবস। সপ্তাহের মাঝখানে রাজধানীতে সমাবেশ করলে বড় ধরনের জনদুর্ভোগে সৃষ্টি হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সে জন্য হেফাজতে ইসলাম ছুটির দিনে মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া হেফাজত ৫ মে বিশেষ দিবস হিসেবে পালন করে না। এ ধরনের দিবস পালন ইসলামের নীতিবিরোধী। তাই সবকিছু বিবেচনা করে ৩ মে মহাসমাবেশ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সংগঠনের নেতাদের নামে থাকা অতীতের মামলা-মোকদ্দমাগুলো প্রত্যাহারে সরকারের ওপর চাপ তৈরি, একই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক প্রভাব দৃষ্টিগ্রাহ্য করারও একটি লক্ষ্য রয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসল ম র ল ইসল ম গণহত য স গঠনট এনস প সরক র স গঠন আওয় ম ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
যারা জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে নিষিদ্ধ চায়, তারা আদালতে অভিযোগ দিতে পারে: সালাহউদ্দিন আহমদ
নির্বাহী আদেশে কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড বা কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা বিএনপি সমর্থন করে না। দলের এই অবস্থান জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, যারা জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা চাচ্ছে, তাদের বক্তব্য যদি সত্য হয় তাহলে তারা সেই অভিযোগটা আদালতে উত্থাপন করতে পারে।
আদালতের মাধ্যমেই এ বিষয়ে ফয়সালা হওয়া উচিত বলে উল্লেখ করেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ। জামায়াতে ইসলামীসহ বেশ কয়েকটি দল জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার পাশাপাশি জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এই প্রেক্ষাপটে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে নিজের বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ প্রসঙ্গে দলের অবস্থান তুলে ধরেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড বা কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা নির্বাহী আদেশে, সেটা আমরা সমর্থন করি না। আমরা আমাদের বক্তব্য দিয়েছি অনেক আগে যে বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ করার যে বিষয়টি সেটা নির্ধারিত হোক। লেট দ্য কোর্ট ডিসাইড (আদালতকে নির্ধারণ করতে দিন)।’
আইনি প্রক্রিয়ায় যদি কোনো দলের বিরুদ্ধে গণহত্যা বা মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণিত হয়, তাহলে আদালত সেই দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যদি নির্ধারিত হয়, সেটা নির্বাচন কমিশন মানতে বাধ্য। এ ছাড়া অন্য যেকোনো প্রক্রিয়ায় নির্বাহী আদেশের মধ্য দিয়ে যদি আমরা রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ চাই তাহলে সেটা হবে একটা ভয়ংকর চর্চা। কারণ, এখন যাঁরা জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা চাচ্ছেন, তাঁদের বক্তব্য যদি সত্য হয় তাহলে তাঁরা সেই অভিযোগটা আদালতে উত্থাপন করতে পারে, আইন তো আছে, বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেটা নিশ্চিত হোক।’
তবে আওয়ামী লীগের বিষয় সম্পূর্ণ আলাদা বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘তারা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী। তারা রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস করার জন্য দায়ী। সেই ফ্যাসিস্ট সরকারের যারা প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যদের বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মামলা দায়ের হয়েছে, আরও হবে, বিচার চলছে।’
রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিই সর্বপ্রথম আওয়ামী লীগের বিচারের দাবি তুলেছিল বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক। আদালত নির্ধারণ করবে তারা এ দেশে রাজনীতি এবং নির্বাচন করতে পারবে কি পারবে না। সেই প্রক্রিয়ায় যদি আরও কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ থাকে, সেটা আদালতে উত্থাপন করা যেতে পারে।’
আরও পড়ুনকয়েকটি অভিন্ন দাবিতে একযোগে বিক্ষোভে নামছে ৭টি দল১০ ঘণ্টা আগেআন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক হস্তক্ষেপের ঝুঁকির বিষয়েও সতর্ক করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হয় তাহলে দেশে একটা সাংবিধানিক শূন্যতা বিরাজ করতে পারে। সেই শূন্যতার মধ্যে জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হবে। ঐক্য বিনষ্ট হলে সেটার সূত্র ধরে কথিত ফ্যাসিবাদ সুযোগ নেবে এবং তাদের হাত ধরে আঞ্চলিক শক্তিগুলো এখানে জড়িত হয়ে যেতে পারে পরস্পরের বিরুদ্ধে এবং একটি বৈশ্বিক শক্তিও সেই সুযোগটা নিতে পারে। স্থিতিশীল রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা না করতে পারলে এই আশঙ্কাগুলো একদম উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, যারা এই ব্যবস্থার পক্ষে, তারা যেন নির্বাচনী ইশতেহারে তা তুলে ধরে জনগণের ম্যান্ডেট নেয়। জনগণের ইচ্ছা ছাড়া পিআর পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।
নির্বাচন বিলম্বিত বা বাধাগ্রস্ত করার যেকোনো রাজনৈতিক কৌশল জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে বলেও মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এ দেশের মানুষ ১৬-১৭ বছর ধরে রক্ত দিয়েছে, শহীদ হয়েছে। সুতরাং এই পথে যারাই বাধা সৃষ্টি করতে চাইবে কৌশলে রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য, দলীয় হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য, সেটা জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এখন শেষবিচারে জনগণই হচ্ছে বিচারক।’
আরও পড়ুনজামায়াত কীভাবে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে: আনিসুল ইসলাম মাহমুদ২ ঘণ্টা আগে