Risingbd:
2025-05-01@09:49:08 GMT

ছোট্ট হাতে সংসারের হাল

Published: 1st, May 2025 GMT

ছোট্ট হাতে সংসারের হাল

লেগুনার পেছনে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানোসহ টাকা তোলে সাগর (১০)। বাবা আরেকটা বিয়ে করে মাকে ছেড়ে চলে যান। এ কারণে পড়াশোনাও থমকে যায় তার। গৃহকর্মীর কাজ করা মাকে নিয়ে থাকে রায়েরবাজারের একটি বস্তিতে। মায়ের আয়ে সংসার না চলায় লেগুনার পাদানিতে পা রাখতে হয় সাগরকে। ছোট কাঁদে তুলে নিতে হয় বড় দায়িত্ব। 

যাত্রাবাড়ী-চট্টগ্রাম রুটে একই কাজ করে সবুজ। ঢাকার শহরের বিভিন্ন রুটে এমন হাজারো সাগর-সবুজ লেগুনার পেছনে ঝুলে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের ছোট্ট কাঁদে সাংসারের হাল।  

জানা গেছে, পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে দেশের বিভিন্ন কলকারখানা, বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, লেগুনা, বাসের হেলপারসহ সব জায়গায় শিশুরা কাজ করছে।

আরো পড়ুন:

একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা

নারী শ্রমিকেরা পাচ্ছেন না সমান মজুরি

বৃহস্পতিবার (১ মে) শ্রমিক দিবসের সকালে কথা হয় সাগরের সঙ্গে। 

সে বলে, “অভাবের কারণে বাধ্য হয়েই কাজ করতে হচ্ছে। সারা দিন পরিশ্রম করে দিনশেষে মায়ের হাতে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা তুলে দিতে পারি।”

গুলিস্তান-খিলগাঁও রুটে লেগুনাচালকের সহকারীর কাজ করে ১৩ বছরের সম্রাট। তিনি রাইজিংবিডিকে জানান, ভোলায় তাদের গ্রামের বাড়ি ছিলো। নদী ভাঙনে সব হারিয়েছে। মা-বাবার সঙ্গে ঢাকায় আসা। দুবছর ধরে লেগুনা চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করছে। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ-২০২২ অনুযায়ী, গত ১০ বছরে দেশে শিশুশ্রম কমেনি, বরং বেড়েছে। এ সময়ে দেশে প্রায় এক লাখ শিশু শ্রমিক বেড়েছে।  দেশে এখন ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৭ জন শিশু শ্রমিক আছে। ২০১৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ৩৬৯। এছাড়া, বর্তমানে শিশু শ্রমিকদের মধ্যে ১০ লাখ ৭০ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে। তবে ১০ বছরের ব্যবধানে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশু শ্রমিকের সংখ্যা দুই লাখের মতো কমেছে।

জরিপের অনুযায়ী, দেশে শিশুর সংখ্যা প্রায় চার কোটি। এর মধ্যে ২০ লাখ ৯০ হাজার শিশু গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে। তাদের মধ্যে আবার ২০ লাখ ১০ হাজার শিশু শ্রমিক কোনো পারিশ্রমিক পায় না। যারা পারিশ্রমিক পায়, তাদের গড় আয় মাসে ৬ হাজার ৬৭৫ টাকা।

কৃষি, শিল্প ও সেবা—তিন খাতেই শিশুশ্রম আছে। এর মধ্যে কৃষিতে ১ লাখ ৭০ হাজার, শিল্পে ১১ লাখ ৯০ হাজার এবং সেবায় ১২ লাখ ৭০ হাজার।

জরিপের পাশাপাশি বিবিএস ‘সেক্টরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শিশু শ্রম জরিপ ২০২৩’ প্রতিবেদনও প্রকাশ করে। সরকার ৪৩টি খাতকে শিশু শ্রমের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ওই ৪৩টি খাতের মধ্যে পাঁচটি খাতকে চিহ্নিত করে জরিপটি করা হয়েছে। খাতগুলো হলো মাছ, কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুক সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ (শুঁটকি উৎপাদন), পাদুকা উৎপাদন, লোহা ও ইস্পাত ঢালাই (ওয়েল্ডিং কাজ বা গ্যাস বার্নার মেকানিকের কাজ), মোটর যানবাহনের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত (অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ) এবং ব্যক্তিগত ও গৃহস্থালিসামগ্রী মেরামত (বিশেষত টেইলারিং ও পোশাক খাত)।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, উল্লিখিত পাঁচটি ঝুঁকিপূর্ণ খাতের ৪০ হাজার ৫২৫টি কারখানায় সব মিলিয়ে ৩৮ হাজার ৮ জন শিশু কাজ করে। তাদের প্রায় ৯৮ শতাংশ ছেলে, বাকিরা মেয়ে। এর মধ্যে শুঁটকি উৎপাদনে ৮৯৮ জন, পাদুকা উৎপাদনে ৫ হাজার ২৮১ জন; ওয়েল্ডিং কাজ বা গ্যাস বার্নার মেকানিকের কাজে ৪ হাজার ৯৯ জন, মোটর যানবাহনের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতে (অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ) ২৪ হাজার ৯২৩ জন এবং টেইলারিং ও পোশাক খাতে ২ হাজার ৮০৫ জন শিশু কাজ করে।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেন, “সরকার দেশ থেকে শিশুশ্রম নির্মূলে সম্ভাব্য সব উপায়ে কাজ করছে। সরকার ‘শিশুশ্রম শূন্যের কোটায় চলে এসেছে’ এমন দাবি না করলেও ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে শিশুশ্রম নির্মূল হবে।” 

২০২৩ তৎকালীন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, “দেশে শিশু শ্রমে নিয়োজিত শিশুর মোট সংখ্যা ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন (দেশে ১৭ লাখ শিশু)। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা ১ দশমিক ২ মিলিয়ন। ” 

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের পরিচালক আব্দুস শহীদ মাহমুদ বলেন, “শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজের একটি পরিবহন খাত। ঝুঁকির মধ্যে থেকে কঠোর পরিশ্রম করছে শিশুরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চাইলে শিশু শ্রম অল্প সময়ের মধ্যে বন্ধ করে দিতে পারে। কিন্তু হঠাৎ বন্ধ করলে ১০ থেকে ২০ হাজার শিশু শ্রমিক যাবে কোথায়? এ কারণে পুনর্বাসনের কার্যক্রম হাতে নেওয়া উচিত।” 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন  অধ্যাপক তৈয়েবুর রহমান বলেন, “শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করছেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দরিদ্র শিশু শ্রমিকদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিলে শিশু শ্রমিক কমবে।” 

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “দেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে শ্রমিকদের অবদান স্বীকার করতে হবে। সকল সেক্টরে শ্রমজীবী মানুষের মর্যাদা, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।” 

তিনি বলেন, “আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড শ্রমজীবী মানুষ। তাদের প্রাপ্য নিরাপত্তা, মর্যাদা এবং ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার কাজ করছে।”

বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন-২০১৮ অনুযায়ী, কোনো পেশায় বা প্রতিষ্ঠানে কোনো শিশুকে নিয়োগ করা যাবে না বা কাজ করতে দেওয়া যাবে না। কিন্তু সেখানে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত ‘শিশু’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের ‘কিশোর’ বিবেচনায় কাজে জড়ানোর বৈধতা দেওয়া হয়।

শ্রম আইন অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠানে অল্প বয়সীদের কাজে নিয়োগের আগে সে শিশু না কিশোর বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে জন্মনিবন্ধন সনদ, স্কুল সার্টিফিকেট বা রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে। কোনো অভিভাবক তার কিশোর ছেলেকে কাজের জন্য অনুরোধ করলে একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক কিশোরকে পরীক্ষা করে কাজের কতটুকু সক্ষমতা তার সিদ্ধান্ত দেবেন। চিকিৎসকের সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে কোনো কিশোরকে কোন কারখানায় হালকা কাজে নিয়োগ দিলেও দিনে পাঁচ ঘণ্টার বেশি কাজ করানো যাবে না। সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যবর্তী সময়ে কাজ করানো যাবে না। তবে বাস্তবের চিত্র ভিন্ন। 

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, “শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সবার সহযোগিতায় আমরা ২০৩০ সালের আগেই শিশু শ্রমমুক্ত বাংলাদেশ গঠন করতে পারবো।”

 ঢাকা/এএএম/ইভা

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ক জ কর ক জ করছ অন য য় মন ত র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

রূপগঞ্জে টেক্সটাইল কারখানায় গ্যাসের মিটার বিস্ফোরণে চারজন দগ্ধ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একটি টেক্সটাইল কারখানায় গ্যাসের মিটার বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকাণ্ডে চার নিরাপত্তা প্রহরী দগ্ধ হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তিনজনের শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার রূপসী কাজীপাড়া এলাকার জৈনপুরী আশরাফিয়া টেক্সটাইল কারখানায় (মঞ্জু টেক্সটাইল) এ ঘটনা ঘটে।

নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, মে দিবসের কারণে কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ। এ জন্য লাইনে গ্যাসের উচ্চ চাপ সৃষ্টি হয়ে মিটারে বিস্ফোরণ হয়। সেখান থেকে আগুন ধরে চারজন নিরাপত্তা প্রহরী দগ্ধ হয়েছেন। ফায়ার সার্ভিস পৌঁছানোর আগেই কারখানার লোকজন ও স্থানীয় লোকজন মিলে আগুন নিভিয়ে ফেলেন।

এ ঘটনায় দগ্ধ আবদুল হান্নান (৫০), কবির হোসেন (৪৫) ও সাইফুল ইসলামকে (২৫) রাজধানীর জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। দগ্ধ অন্যজনের নাম জানা যায়নি। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

হাসপাতালের আবাসিক সার্জন শাওন বিন রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ চারজনকে হাসপাতালে আনা হয়। আঘাত গুরুতর না হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে একজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি তিনজনের শরীরের ৩৪ থেকে ৫৩ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাঁদের শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়ায় অবস্থা আশঙ্কাজনক।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, রাতের ডিউটি (দায়িত্ব) শেষে সকাল আটটার দিকে শ্রমিকেরা কারখানা ছেড়ে চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর তিতাস গ্যাস সংযোগের আরএমএস কক্ষে বিকট শব্দে একটি দেয়াল ধসে পড়ে এবং আগুন ধরে যায়। তখনই চারজন দগ্ধ হন। পরে কারখানার লোকজন ও স্থানীয় লোকজন মিলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

ঘটনাটি ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ দাবি করে কারখানার মালিক মঞ্জুরুল হক ভূঁইয়া বলেন, ঘটনার পর আপাতত কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে। শ্রমিকদের সব চিকিৎসার ব্যয় কারখানা থেকে বহন করা হবে। তাঁদের প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেছে। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ