Risingbd:
2025-06-15@23:25:38 GMT

ছোট্ট হাতে সংসারের হাল

Published: 1st, May 2025 GMT

ছোট্ট হাতে সংসারের হাল

লেগুনার পেছনে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানোসহ টাকা তোলে সাগর (১০)। বাবা আরেকটা বিয়ে করে মাকে ছেড়ে চলে যান। এ কারণে পড়াশোনাও থমকে যায় তার। গৃহকর্মীর কাজ করা মাকে নিয়ে থাকে রায়েরবাজারের একটি বস্তিতে। মায়ের আয়ে সংসার না চলায় লেগুনার পাদানিতে পা রাখতে হয় সাগরকে। ছোট কাঁদে তুলে নিতে হয় বড় দায়িত্ব। 

যাত্রাবাড়ী-চট্টগ্রাম রুটে একই কাজ করে সবুজ। ঢাকার শহরের বিভিন্ন রুটে এমন হাজারো সাগর-সবুজ লেগুনার পেছনে ঝুলে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের ছোট্ট কাঁদে সাংসারের হাল।  

জানা গেছে, পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে দেশের বিভিন্ন কলকারখানা, বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, লেগুনা, বাসের হেলপারসহ সব জায়গায় শিশুরা কাজ করছে।

আরো পড়ুন:

একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা

নারী শ্রমিকেরা পাচ্ছেন না সমান মজুরি

বৃহস্পতিবার (১ মে) শ্রমিক দিবসের সকালে কথা হয় সাগরের সঙ্গে। 

সে বলে, “অভাবের কারণে বাধ্য হয়েই কাজ করতে হচ্ছে। সারা দিন পরিশ্রম করে দিনশেষে মায়ের হাতে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা তুলে দিতে পারি।”

গুলিস্তান-খিলগাঁও রুটে লেগুনাচালকের সহকারীর কাজ করে ১৩ বছরের সম্রাট। তিনি রাইজিংবিডিকে জানান, ভোলায় তাদের গ্রামের বাড়ি ছিলো। নদী ভাঙনে সব হারিয়েছে। মা-বাবার সঙ্গে ঢাকায় আসা। দুবছর ধরে লেগুনা চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করছে। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ-২০২২ অনুযায়ী, গত ১০ বছরে দেশে শিশুশ্রম কমেনি, বরং বেড়েছে। এ সময়ে দেশে প্রায় এক লাখ শিশু শ্রমিক বেড়েছে।  দেশে এখন ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৭ জন শিশু শ্রমিক আছে। ২০১৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ৩৬৯। এছাড়া, বর্তমানে শিশু শ্রমিকদের মধ্যে ১০ লাখ ৭০ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে। তবে ১০ বছরের ব্যবধানে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশু শ্রমিকের সংখ্যা দুই লাখের মতো কমেছে।

জরিপের অনুযায়ী, দেশে শিশুর সংখ্যা প্রায় চার কোটি। এর মধ্যে ২০ লাখ ৯০ হাজার শিশু গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে। তাদের মধ্যে আবার ২০ লাখ ১০ হাজার শিশু শ্রমিক কোনো পারিশ্রমিক পায় না। যারা পারিশ্রমিক পায়, তাদের গড় আয় মাসে ৬ হাজার ৬৭৫ টাকা।

কৃষি, শিল্প ও সেবা—তিন খাতেই শিশুশ্রম আছে। এর মধ্যে কৃষিতে ১ লাখ ৭০ হাজার, শিল্পে ১১ লাখ ৯০ হাজার এবং সেবায় ১২ লাখ ৭০ হাজার।

জরিপের পাশাপাশি বিবিএস ‘সেক্টরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শিশু শ্রম জরিপ ২০২৩’ প্রতিবেদনও প্রকাশ করে। সরকার ৪৩টি খাতকে শিশু শ্রমের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ওই ৪৩টি খাতের মধ্যে পাঁচটি খাতকে চিহ্নিত করে জরিপটি করা হয়েছে। খাতগুলো হলো মাছ, কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুক সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ (শুঁটকি উৎপাদন), পাদুকা উৎপাদন, লোহা ও ইস্পাত ঢালাই (ওয়েল্ডিং কাজ বা গ্যাস বার্নার মেকানিকের কাজ), মোটর যানবাহনের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত (অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ) এবং ব্যক্তিগত ও গৃহস্থালিসামগ্রী মেরামত (বিশেষত টেইলারিং ও পোশাক খাত)।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, উল্লিখিত পাঁচটি ঝুঁকিপূর্ণ খাতের ৪০ হাজার ৫২৫টি কারখানায় সব মিলিয়ে ৩৮ হাজার ৮ জন শিশু কাজ করে। তাদের প্রায় ৯৮ শতাংশ ছেলে, বাকিরা মেয়ে। এর মধ্যে শুঁটকি উৎপাদনে ৮৯৮ জন, পাদুকা উৎপাদনে ৫ হাজার ২৮১ জন; ওয়েল্ডিং কাজ বা গ্যাস বার্নার মেকানিকের কাজে ৪ হাজার ৯৯ জন, মোটর যানবাহনের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতে (অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ) ২৪ হাজার ৯২৩ জন এবং টেইলারিং ও পোশাক খাতে ২ হাজার ৮০৫ জন শিশু কাজ করে।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেন, “সরকার দেশ থেকে শিশুশ্রম নির্মূলে সম্ভাব্য সব উপায়ে কাজ করছে। সরকার ‘শিশুশ্রম শূন্যের কোটায় চলে এসেছে’ এমন দাবি না করলেও ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে শিশুশ্রম নির্মূল হবে।” 

২০২৩ তৎকালীন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, “দেশে শিশু শ্রমে নিয়োজিত শিশুর মোট সংখ্যা ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন (দেশে ১৭ লাখ শিশু)। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা ১ দশমিক ২ মিলিয়ন। ” 

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের পরিচালক আব্দুস শহীদ মাহমুদ বলেন, “শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজের একটি পরিবহন খাত। ঝুঁকির মধ্যে থেকে কঠোর পরিশ্রম করছে শিশুরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চাইলে শিশু শ্রম অল্প সময়ের মধ্যে বন্ধ করে দিতে পারে। কিন্তু হঠাৎ বন্ধ করলে ১০ থেকে ২০ হাজার শিশু শ্রমিক যাবে কোথায়? এ কারণে পুনর্বাসনের কার্যক্রম হাতে নেওয়া উচিত।” 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন  অধ্যাপক তৈয়েবুর রহমান বলেন, “শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করছেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দরিদ্র শিশু শ্রমিকদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিলে শিশু শ্রমিক কমবে।” 

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “দেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে শ্রমিকদের অবদান স্বীকার করতে হবে। সকল সেক্টরে শ্রমজীবী মানুষের মর্যাদা, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।” 

তিনি বলেন, “আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড শ্রমজীবী মানুষ। তাদের প্রাপ্য নিরাপত্তা, মর্যাদা এবং ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার কাজ করছে।”

বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন-২০১৮ অনুযায়ী, কোনো পেশায় বা প্রতিষ্ঠানে কোনো শিশুকে নিয়োগ করা যাবে না বা কাজ করতে দেওয়া যাবে না। কিন্তু সেখানে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত ‘শিশু’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের ‘কিশোর’ বিবেচনায় কাজে জড়ানোর বৈধতা দেওয়া হয়।

শ্রম আইন অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠানে অল্প বয়সীদের কাজে নিয়োগের আগে সে শিশু না কিশোর বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে জন্মনিবন্ধন সনদ, স্কুল সার্টিফিকেট বা রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে। কোনো অভিভাবক তার কিশোর ছেলেকে কাজের জন্য অনুরোধ করলে একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক কিশোরকে পরীক্ষা করে কাজের কতটুকু সক্ষমতা তার সিদ্ধান্ত দেবেন। চিকিৎসকের সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে কোনো কিশোরকে কোন কারখানায় হালকা কাজে নিয়োগ দিলেও দিনে পাঁচ ঘণ্টার বেশি কাজ করানো যাবে না। সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যবর্তী সময়ে কাজ করানো যাবে না। তবে বাস্তবের চিত্র ভিন্ন। 

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, “শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সবার সহযোগিতায় আমরা ২০৩০ সালের আগেই শিশু শ্রমমুক্ত বাংলাদেশ গঠন করতে পারবো।”

 ঢাকা/এএএম/ইভা

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ক জ কর ক জ করছ অন য য় মন ত র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ