‘সবসময় চেয়েছি নিজেকে ভিন্নরূপে পর্দায় উপস্থাপন করতে। কতটা পেরেছি জানি না। দর্শক তা ভালো বলতে পারবেন। চলতে চেয়েছি নিজের ইচ্ছামাফিক। মন যে কাজে সায় দেবে না, তা করতে চাইনি কখনও। এমন ভাবনার কারণে অভিনয়ে আর আগের মতো ব্যস্ততা নেই। তারপরেও ভালো কিছু কাজের সুযোগ হয়েছে। তাই এ ধরনের কাজের মধ্য দিয়ে অভিনয়ের বাকি পথ পাড়ি দিতে চাই।’ এক নিঃশ্বাসে এ কথাই বলে গেলেন অভিনেত্রী ও মডেল তাসনুভা তিশা।
তাঁর কথা থেকে বোঝা গেল, পরিচিতি কিংবা জনপ্রিয়তার মোহে এখন আর তিনি অভিনয় করতে চান না; বরং ভালো কাজের মধ্য দিয়ে দর্শক মনে দাগ কাটতে চান। ভালো চিত্রনাট্য, চরিত্র, নির্মাতা পেলে নিজেকে উজাড় করে কাজ করতে চান। তাঁর এ কথার প্রমাণ পাওয়া যায় সম্প্রতি প্রচার হওয়া তারেক রেজা সরকারের ‘আপন মানুষ’, মাহমুদ হাসান রানার ‘প্রিয়জন’, আদিফ হাসানের ‘কাজল চোখ’, কাজী বাহাদুর হিমুর ‘অভিনয় নয়’, শামীম জামানের ‘ডাবল রোল’, পথিক সাধনের ‘লাভ টু হেইট ইউ’, শরীফুল ইসলাম শামীমের ‘সময়ের প্রয়োজনে’, মেহেদী হাসান জনির ‘হৃদয়ের আয়না’র দিকে চোখ রাখলে তাঁর অভিনীত এ নাটকগুলো দর্শকদের মনোযোগ কেড়েছে।
২০১৪ সালে ‘লাল খাম বনাম নীল খাম’ দিয়ে নাটকে অভিষেক হয় তিশার। এনটিভিতে এটি ভালোবাসা দিবসে প্রচার হয়েছিল। এরপর একনাগাড়ে অভিনয় করে গেছেন তিনি। মাঝে মা হওয়ার পর অভিনয় থেকে দূরে চলে যান। দীর্ঘ বিরতির পর গত বছরের মার্চে শুটিংয়ে ফেরেন এ অভিনেত্রী। বিরতি শেষে ফিরে কিছু কাজ তাঁকে নতুন করে আলোচনায় এনেছিল।
ওটিটিতে নিজের অভিনয়ের ঝলক দেখান ‘আগস্ট ১৪’ দিয়ে। মিজানুর রহমান আরিয়ানের ‘রেশ’ তাঁর অভিনয় ক্যারিয়ারের উল্লেখযোগ্য কাজ।
আসছে কোরবানির ঈদের জন্য তাইফুর জাহান আশিকের পরিচালনায় ‘সংসার বিষের বড়ি’ নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেছেন তারকা অভিনেতা মোশাররফ করিম। রোমান্টিক গল্পের বাইরেও ইদানীং পারিবারিক গল্পে অনেক কাজ করছেন। এ ধরনের গল্পের প্রতি কোনো দুর্বলতা আছে? ‘‘আমার মতো অনেকেই পারিবারিক গল্পের নাটক পছন্দ করেন। এর প্রমাণও পাওয়া গেছে বহুবার। অথচ এখন পারিবারিক গল্পে নাটকের খরা চলছে। অনেকে বাজেটের কথা মাথায় রেখে কাজ করেন। যেজন্য নাটকে হাতেগোনা দু-তিনটির বেশি চরিত্র খুঁজে পাওয়া যায় না। পরিচালক নির্মাতা তাইফুর রহমান আশিক যখন ‘সংসার বিষের বড়ি’ নাটকটির প্রস্তাব দিলেন, তখন কষ্ট করে হলেও তাঁর নাটকের জন্য সময় বের করেছি।’’ বললেন তিশা।
মিডিয়ায় অনেক জুটি সফল হয়েছেন। অনেক দিন ধরে অভিনয় করছেন, কিন্তু কোনো অভিনেতার সঙ্গে জুটি গড়ে ওঠেনি। এখন এ নিয়ে আলাদা করে কিছু ভাবছেন?
‘জুটিপ্রথা বেশ আগে থেকে ছিল মিডিয়ায়। কোনো অভিনেতার সঙ্গে আলাদা করে জুটি করে তোলা নিয়ে কখনও ভাবিনি। সত্যি যে, গত কয়েক মাসে আরশ খানের বিপরীতে কাজ বেশি হয়ে গেছে। এজন্য হয়তো মনে হতে পারে, আমি এখনও আরশের সঙ্গে কাজে বেশি আগ্রহী। দর্শকের কারণে জুটি তৈরি হয়। তাদের ভালোলাগাকে নির্মাতারা প্রাধান্য দিয়েছেন বলে আমাদের জুটি হয়েছে। অভিনয় ক্যারিয়ারের শুরু থেকে সবার সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছি, এখনও চাই। একজন অভিনয়শিল্পীকে সবার সঙ্গে কাজ করা উচিত বলে মনে করি। তাতে স্ক্রিনে ভিন্নতা পাওয়া যায়।’ বললেন তিশা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’
এবারের বাবা দিবস আমার কাছে একটু অন্যরকম। চারপাশ যেন কিছুটা বেশি নিস্তব্ধ, হৃদয়ের ভেতর যেন একটু বেশি শূন্যতা। কারণ এবার প্রথমবারের মতো আমার আব্বাকে ছাড়াই কাটছে দিনটি। আব্বা চলে গেছেন গত জানুয়ারিতে। ফলে বাবা দিবস এখন আর কেবল উদযাপনের দিন নয়– এটি হয়ে উঠেছে স্মরণ, অনুধাবন ও আমার জীবনের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উপলক্ষ। আব্বা না থেকেও আছেন, তবে এক ভিন্ন অনুভবে– আমার নীরব নিঃশব্দ অভিভাবক হয়ে।
আমাদের সমাজে কিংবা বলা যায় পারিবারিক সংস্কৃতির বাবারা সবসময় প্রকাশের ভাষায় ভালোবাসা বোঝান না। তাদের স্নেহ, দায়িত্ববোধ ও নিবেদন অনেক সময়েই নীরব থাকে, তবে গভীরভাবে অনুভব করা যায়। আমার আব্বাও ছিলেন তেমনই একজন। আব্বা ছিলেন আমার দিকনির্দেশক, আমার রক্ষাকবচ, আমার জীবনপথের চুপচাপ ভরসা।
আব্বার অ্যাজমা ছিল, তা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্বাস্থ্যসচেতন। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিতেন, আমাদের প্রতিও ছিল তাঁর সজাগ দৃষ্টি। আমি কিংবা আমার মেয়ে সামান্য অসুস্থ হলেই তিনি অস্থির হয়ে যেতেন। তাঁর যখন ৭৯ বছর বয়স, তখনও আমি ডাক্তারের কাছে একা যেতে গেলে বলতেন, ‘তুমি একা যাবে কেন? আমি যাচ্ছি।’ এই কথা বলার মানুষটাকে প্রতি পদে পদে আমার মনে পড়ে, যেন দূর থেকে দেখছেন সবই। আর আমিও তাঁর কনুই-আঙুল ধরে হেঁটে যাচ্ছি জীবনের পথে।
আব্বা ছিলেন একজন পুরোদস্তুর ধার্মিক মানুষ। শৈশব থেকে নামাজের গুরুত্ব তিনি আমার মধ্যে গভীরভাবে বপন করার চেষ্টা করে গেছেন। কখনও নরম সুরে, আবার কখনও খুব জোর গলায়। তখন মনে হতো তিনি চাপ দিচ্ছেন; কিন্তু এখন তাঁর অনুপস্থিতির নিস্তব্ধতায় আমি সেই কণ্ঠস্বরের জন্য আকুল হই।
অফিস থেকে ফিরতে দেরি করলে কিংবা আত্মীয়ের বা বন্ধুর বাসায় গেলে বাবার ফোন আসত, ‘কোথায়? কখন ফিরবি?’ সেসব ফোন একসময় মনে হতো আব্বার বাড়াবাড়ি। এখন মনে হয়, একটাবার হলেও যদি ফোনে তাঁর নামটা দেখতাম! ছোট ছোট এসব প্রশ্ন– এই উদ্বেগই তো ছিল নিঃশব্দ ভালোবাসা। এগুলোই ছিল বাবার নিজের মতো করে যত্ন নেওয়ার ভাষা। সেই ভাষাটাই আজ আর শোনা যায় না। আব্বা নেই, এখন জীবনযাপনে এক অদ্ভুত শূন্যতা ঘিরে থাকে।
আব্বা ছিলেন একজন ব্যাংকার। হয়তো চেয়েছিলেন আমি তাঁর পেশার ধারাবাহিকতা বজায় রাখি। কিন্তু কোনোদিন চাপ দেননি। বরং নিজের ইচ্ছেমতো পথ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন; ছায়ার মতো পাশে ছিলেন। আব্বাই আমাকে নিজের ওপর আস্থা রাখতে শিখিয়েছেন। বিয়ে করেছি, বাবা হয়েছি, নিজস্ব ক্যারিয়ার গড়েছি– তবুও বাবার সেই গাইডেন্স কখনও ফুরায়নি। আব্বা কখনও অর্থ বা অন্য কোনো সহায়তার কথা বলেননি; বরং সবসময় নিজে থেকেই পাশে থেকেছেন। মনে পড়ে, একবার মেয়ের অসুস্থতার সময় আমি অর্থকষ্টে ছিলাম, কিছু বলিনি তাঁকে। কিন্তু তিনি ঠিকই বুঝে গিয়েছিলেন, পাশে থেকেছেন।
এখন অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মনে হয়, ‘বাবা হলে কী করতেন?’ তাঁর শিক্ষা, অভ্যাস, স্নেহ– সবকিছু এখন আমার আচরণে, আমার সিদ্ধান্তে, আমার ভালোবাসায় প্রতিফলিত হয়। তাঁকে ছুঁতে না পারলেও আমি প্রতিদিন তাঁর উপস্থিতি অনুভব করি– স্মৃতিতে, নৈঃশব্দ্যে, নানা রকম ছোট ছোট মুহূর্তে।
এই বাবা দিবসে আব্বার কোনো ফোন আসবে না, থাকবে না কোনো উপহার বা আলিঙ্গনের মুহূর্ত; যা আছে সেটি হলো আব্বার প্রতি একরাশ কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা আর অপার ভালোবাসা। যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সন্তানদের শুধু দিয়েছেন, বিনিময়ে কিছু চাননি কখনোই। তাঁর জীবনদর্শন আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি– এগুলোই নিজের জীবনে ধারণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি, হয়তো পুরোপুরি পারছি না; কিন্তু আমার মনে হয় এ চেষ্টাটাই আমার জীবনে শৃঙ্খলা এনেছে।
বাবাকে হারানোর শোক যেমন গভীর, তেমনি গভীর তাঁর রেখে যাওয়া ভালোবাসা। নিজের অনুভবকে চাপা না দিয়ে, বরং বাবাকে নিজের ভেতরে জায়গা দিন। বাবার কথা বলুন, তাঁর শেখানো পথে হাঁটুন। কারণ প্রিয় মানুষরা চলে যান বটে, কিন্তু তাঁদের ভালোবাসা থেকে যায় সবসময়।
লেখক: কমিউনিকেশনস প্রফেশনাল