চার মাস পরে আগামী ৫ মে (সোমবার) লন্ডন থেকে দেশে ফিরবেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাসসকে বলেছেন, ‘ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে বেশ ভালো। সবকিছু ঠিক থাকলে তিনি আগামী ৫ মে দেশে ফিরবেন।’

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সফরসঙ্গী হিসেবে থাকছেন তাঁরই দুই পুত্রবধূ তারেক রহমানের সহধর্মিণী চিকিৎসক জুবাইদা রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান।

বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি নিয়মিত ফ্লাইটে বিশেষ ব্যবস্থায় দেশে ফিরবেন খালেদা জিয়া। দেশে ফিরতে পুরোপুরি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা পাওয়া না গেলেও লন্ডনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসক ও সফরসঙ্গীরা সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পুরো বিষয়টি তদারক করছেন।

লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পথে খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী থাকবেন আটজন। দুই পুত্রবধূ ছাড়াও সফরসঙ্গী থাকবেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমিনুল হক চৌধুরী, এপিএস মাসুদুর রহমান ও দুই গৃহপরিচারিকা ফাতেমা বেগম ও রূপা হক।

২০১৮ সালে খালেদা জিয়া একটি দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ছিলেন। করোনা মহামারির সময় বিগত সরকার তাঁকে বিশেষ বিবেচনায় কারামুক্তি দেয়। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি মো.

সাহাবুদ্দিনের এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দী ছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত।

চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়। টানা ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর লন্ডন ক্লিনিক থেকে গত ২৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে তারেক রহমানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। অর্ধযুগের বেশি সময় পর এবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপন করেছেন খালেদা জিয়া।

তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কারাবন্দী অবস্থায় চারটি ঈদ কেটেছে কারাগার ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে।

বর্তমানে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন খালেদা জিয়া। সেখানে তাঁর পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ শারীরিক নানা অসুস্থতায় ভুগছেন।

আরও পড়ুনএয়ার অ্যাম্বুলেন্স পেলে রোববার দেশে ফিরতে পারেন খালেদা জিয়া১০ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন সফরসঙ গ

এছাড়াও পড়ুন:

কিশোরদের যৌন সম্পর্ক কি অপরাধ, কী চাচ্ছেন ভারতের শিশু অধিকারকর্মীরা

ভারতে ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য যৌন সম্পর্ক বেআইনি। প্রচলিত আইনে এটিকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে এ বিধান নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন দেশটির আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং। এ–সংক্রান্ত আইনকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করেছেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে ভারতে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।

জয়সিং যুক্তি দেন, পারস্পরিক সম্মতিতে ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের মধ্যে যৌন সম্পর্ক শোষণমূলক নয় কিংবা নিপীড়নমূলকও নয়। এ ধরনের সম্পর্ককে ফৌজদারি অপরাধের আওতার বাইরে রাখতে আদালতের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।

আদালতে জমা দেওয়া আনুষ্ঠানিক নথিতে জয়সিং বলেন, আইনের মাধ্যমে যৌন সম্পর্কের বয়সসীমা নির্ধারণের উদ্দেশ্য হলো নিপীড়ন রোধ করা, ওই সম্পর্ককে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা নয়।

তবে কেন্দ্রীয় সরকার জয়সিংয়ের এই দাবির বিরোধিতা করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ১৮ বছরের কম বয়সীদের যৌন সম্পর্কের বৈধতা দিলে শিশুদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা হুমকির মুখে পড়বে। এতে তারা নিপীড়ন ও শোষণের শিকার হতে পারে।

সুপ্রিম কোর্টে জয়সিংয়ের এই চ্যালেঞ্জের কারণে ভারতে আবারও যৌন সম্পর্কে সম্মতি এবং শিশুদের যৌন সুরক্ষা আইন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। শিশুদের যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে ভারতের প্রধান আইন পসকো অ্যাক্ট-২০১২।

এ আইন অনুযায়ী, পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতেও ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীরা যৌন সম্পর্কে জড়ালে তা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। বিষয়টি পসকো আইন থেকে বাদ দেওয়া উচিত কি না, তা নিয়ে ভারতে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

অনেক দেশের মতো ভারতও যৌন সম্পর্কের জন্য সম্মতির বয়স নির্ধারণ নিয়ে সংগ্রাম করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে অঙ্গরাজ্যভেদে এই বয়স ভিন্ন হতে পারে। তবে ভারতজুড়ে একটি নির্দিষ্ট বয়সসীমা বেঁধে দেওয়া আছে।

শিশু অধিকারকর্মীরা বলছেন, কিশোর-কিশোরীদের এই আইনের আওতামুক্ত রাখলে তাদের ব্যক্তিস্বাধীনতা সুরক্ষিত থাকবে। অন্যদিকে এই মতের বিরোধীরা বলছেন, এতে মানব পাচার ও বাল্যবিবাহের মতো অপরাধ আরও বাড়তে পারে।

বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন, নিপীড়নের শিকার হলে কিশোর-কিশোরীরা কি আদৌ প্রমাণের দায়ভার বহন করতে সক্ষম? তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো—যৌন সম্পর্কের জন্য সম্মতির বয়স নির্ধারণ করে দেয় কে। আর এই আইন আদতে কার স্বার্থ রক্ষা করে?

অনেক দেশের মতো ভারতেও যৌন সম্পর্কের জন্য সম্মতির বয়স নির্ধারণ নিয়ে তর্কবিতর্ক চলছে। যুক্তরাষ্ট্রে অঙ্গরাজ্যভেদে এই বয়স ভিন্ন হতে পারে। তবে ভারতজুড়ে একটি নির্দিষ্ট বয়সসীমা বেঁধে দেওয়া আছে।

ইউরোপের অধিকাংশ দেশ কিংবা যুক্তরাজ্য ও কানাডার মতো দেশে যৌন সম্পর্কের বৈধ বয়স ১৬। কিন্তু ভারতে যৌন সম্পর্কের বয়সসীমা এর চেয়ে বেশি।

১৮৬০ সালে যখন ভারতে ফৌজদারি বিধি চালু হয়, তখন যৌন সম্পর্কের জন্য সম্মতির ন্যূনতম বয়স ছিল ১০ বছর। ১৯৪০ সালে এই বিধি সংশোধনের মাধ্যমে তা বাড়িয়ে ১৬ বছর করা হয়।

পরে ২০১২ সালে পসকো আইনের মধ্য দিয়ে বড় পরিবর্তন আসে। এতে যৌন সম্পর্কের জন্য সম্মতির বয়স ১৮ বছরে উন্নীত করা হয়। এক বছর পর ভারতের ফৌজদারি আইন এই পরিবর্তন অনুযায়ী সংশোধিত হয়। ২০২৪ সালে প্রণীত নতুন দণ্ডবিধিতেও এই বয়সসীমা বহাল রাখা হয়েছে।

ভারতে কিশোর-কিশোরীদের সম্মতিমূলক যৌন সম্পর্ক কেন অপরাধ

কিন্তু এক দশকের বেশি সময় ধরে অনেক শিশু অধিকারকর্মী এবং এমনকি আদালতও যৌন সম্পর্কের বৈধ বয়সসীমার সমালোচনা করেছেন এবং এই বয়সসীমা ১৬ বছরে নামিয়ে আনার পক্ষে মত দিয়েছেন। তাঁদের মতে, পসকো আইন কিশোর-কিশোরীদের পারস্পরিক সম্মতিতে গড়ে ওঠা সম্পর্ককে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং প্রায়ই প্রাপ্তবয়স্করা এ ধরনের সম্পর্কে বাধা দিতে এই আইনের অপব্যবহার করেন। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে এটি বেশি ঘটে।

ভারতে এখনো যৌনতা একটি নিষিদ্ধ ও অস্বস্তিকর বিষয়। যদিও বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, কোটি কোটি ভারতীয় কিশোর-কিশোরী যৌন সম্পর্কে সক্রিয়।

শিশুদের যৌন নিপীড়ন রোধে কাজ করা সংস্থা ফাউন্ডেশন ফর চাইল্ড প্রোটেকশন-মুসকানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা শর্মিলা রাজ বলেন, ‘আমাদের সমাজ জাত, শ্রেণি ও ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত। ফলে সহজেই এ আইনের অপব্যবহার করা যায়।’

কিন্তু এক দশকের বেশি সময় ধরে অনেক শিশু অধিকারকর্মী এবং এমনকি আদালতও যৌন সম্পর্কের বৈধ বয়সসীমার সমালোচনা করেছেন এবং এই বয়সসীমা ১৬ বছরে নামিয়ে আনার পক্ষে মত দিয়েছেন।

২০২২ সালে কর্ণাটক হাইকোর্ট ভারতের আইন সংস্কার সংস্থা ল’ কমিশনকে নির্দেশ দেন, যেন তারা পসকো আইনের আওতায় যৌন সম্পর্কের জন্য সম্মতির বয়স পুনর্বিবেচনা করে। এ ক্ষেত্রে বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিতে বলা হয়।

আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে, বহু ক্ষেত্রে ১৬ বছর পেরোনো কিশোরীরা প্রেমে পড়ে পালিয়ে যায় এবং যৌন সম্পর্ক গড়ে তোলে। কিন্তু পরে শুধু ছেলেটির বিরুদ্ধে পসকো আইন ও দণ্ডবিধির আওতায় অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়।

পরের বছর ২০২৩ সালে ল’ কমিশনের প্রতিবেদনে বয়সসীমা কমানোর প্রস্তাব নাকচ করা হয়। তবে কমিশন সুপারিশ করেছে, ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীর মধ্যে যদি পারস্পরিক সম্মতিতে সম্পর্ক গড়ে ওঠে, সে ক্ষেত্রে সাজা দেওয়ার সময় বিচারকদের জন্য ‘নির্দেশিত বিচারিক বিবেচনার’ সুযোগ রাখা উচিত। এর অর্থ হলো বিচারক যাতে পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নির্দিষ্ট নির্দেশনার আলোকে সাজা কমাতে বা মওকুফ করতে পারেন।

এটি এখনো কার্যকর না হলেও মামলার তথ্য ও ভুক্তভোগীর বক্তব্য বিবেচনায় নিয়ে ইতিমধ্যে ভারতের বিভিন্ন আদালত এই নীতির ভিত্তিতে জামিন, খালাস বা মামলা বাতিলের সিদ্ধান্তও নিচ্ছেন।

ভারতে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পসকো আইনের আওতায় বিশেষ আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল প্রায় ২ দশমিক ৫ লাখ।

শর্মিলা রাজসহ অনেক শিশু অধিকারকর্মী চান, এই বিধানটি যাতে আইনে পরিণত হয়। শুধু প্রস্তাব আকারে থাকলে আদালত তা উপেক্ষা করতে পারেন।

ইন্দিরা জয়সিং মনে করেন, শুধু বিচারকের বিবেচনা যথেষ্ট নয়। কারণ, অভিযুক্তকে পুলিশের জেরা, আদালতের দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া ও সামাজিক লজ্জার মুখোমুখি হতে হয়। ভারতের বিচারব্যবস্থা এতটাই ধীর যে বহু মানুষ এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই শাস্তি পেয়ে যান।

ইন্দিরা জয়সিং আরও বলেন, প্রতিটি মামলা বিচারকের বিবেচনার ওপর ছেড়ে দেওয়া সেরা সমাধান নয়। কারণ, এতে ফলাফল অসম হতে পারে এবং পক্ষপাতিত্বের আশঙ্কাও থেকে যায়।

ভারতে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পসকো আইনের আওতায় বিশেষ আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল প্রায় আড়াই লাখ।

জয়সিংয়ের দাবি, বয়সের ব্যবধান যদি খুব সামান্য হয় এবং উভয়েই সম্পর্কের জন্য সম্মত থাকে, তবে সে যৌন সম্পর্ককে যাতে ধর্ষণ বা শোষণের মতো অপরাধ হিসেবে বিবেচনা না করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ