পাঁচ কোটির ক্লাবে জংলি, প্রযোজক জানালেন ব্লকবাস্টারের অপেক্ষায়
Published: 2nd, May 2025 GMT
বিগত বছরের তুলনায় এবার ঈদুল ফিতরে সিনেমা নিয়ে দর্শকের উন্মাদনা ছিল অনেকটাই বেশি। মুক্তি পাওয়া হাফ ডজন সিনেমার মধ্যে অনেক সিনেমা নিয়েই দর্শকদের ন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মত। ঈদের সাড়া জাগানো একটি ছবি সিয়াম আহমেদের ‘জংলি’।
শুরুতে ‘জংলি’ সিনেমার প্রতি অন্যরকম ভাবনা ছিল দর্শকদের। কেউ ভেবেছেন এটি অ্যাকশন ঘরানার, আবার কেউ ভেবেছেন থ্রিলার স্টোরি। কিন্তু প্রেক্ষাগৃহে যাওয়ার পর ছবিটি দেখে ভিন্ন অভিজ্ঞতা পায় দর্শকেরা।
এর সঙ্গে ‘জংলি’ মুক্তির পর দিন যতো যায়, সিনেমাটি সাফল্যের আলো দেখতে থাকে ততটাই। এক মাস হলো ছবিটি মুক্তির। এখনও প্রেক্ষাগৃহে চলছে ‘জংলি’, দর্শকেও ভর্তি প্রেক্ষাগৃহের অন্দর।
দেশের মাল্টিপ্লেক্স, সিনেমা হলগুলো থেকে তো বটেই, বিদেশের থিয়েটার থেকেও সুখবর পাওয়া গেল সিয়াম আহমেদের এই ছবিটি নিয়ে। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে একটা বড় অঙ্কের টাকা আয় করেছে পরিচালক এম রাহিম-এর এই সিনেমাটি।
এদিকে মুক্তির মাস খানেক পর জংলি সিনেমার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়া জানিয়েছে সিনেমাটি টোটাল ওয়ার্ল্ডওয়াইড গ্রস সেল ৫ কোটি ২ লক্ষ টাকা। পাশাপাশি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিনেমাটিকে সুপারহিট দাবি করে ব্লকবাস্টার হিটে পথেও বলে দাবি করেছেন।
টাইগার মিডিয়ার কর্ণধার জাহিদ হাসান অভি জানিয়েছেন, 'জংলি' আমাদের গোটা টিমের প্রচণ্ড প্যাশন প্রজেক্ট। আমরা খুব কনশাসলি এই প্রজেক্টটা রেডি করেছিলাম যেন মার্কেট থেকে লগ্নিকৃত অর্থ তুলতে পারি পাশাপাশি এই ভগ্নপ্রায় ইন্ডাস্ট্রি থেকে প্রফিট করে আরও মানুষকে অনুপ্রেরণা দিতে পারি। প্রযোজকরা যেন স্বপ্ন দেখার সাহস পায়, এটাই আমাদের ইচ্ছা ছিল। জংলির বাজেট আড়াই কোটি টাকা, রিলিজের আগেই আমরা প্রপার ব্র্যান্ড প্লেসমেন্ট, টিভি রাইটস থেকে বেশ ভালো একটা অংক ফেরত পেয়েছি। এদিকে সিনেমাহল থেকেও দেশে-বিদেশে দারুণ সাড়া পাচ্ছি। এখন পর্যন্ত দেশের সিনেমাহল থেকে জংলি ৪ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা গ্রস সেল করেছে ও বাইরের দেশ থেকে ৭৫ লক্ষ টাকা গ্রস সেল করেছে। জংলির টোটাল ওয়ার্ল্ডওয়াইড গ্রস সেল ৫ কোটি ২ লক্ষ টাকা।
অভি বলেন, 'জংলি'কে এখনও যেভাবে ভালোবাসা দিচ্ছেন আপনারা, তাতে করে আমি আমার এক যুগের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি 'জংলি' নিশ্চিতভাবেই ব্লকবাস্টার হতে যাচ্ছে।’
জানা গেছে, জনি থেকে জংলি হয়ে ওঠা চরিত্রে অভিনয় করেছেন সিয়াম আহমেদ। সিনেমার প্রথমার্ধে সিয়ামকে সেই চিরায়ত ‘চকলেট বয়’ লুকে দেখা গেলেও পরে তার লুক ও অভিনয় ছিল আগের কাজগুলোর চেয়ে একেবারেই আলাদা। পর্দায় এবার তিনি পাশের বাড়ির ছেলে নন; বরং বখে যাওয়া এক জংলি। পর্দায় তিনি সত্যিই জংলি হয়ে উঠেছিলেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স য় ম আহম দ ঈদ র স ন ম লক ষ ট ক গ রস স ল
এছাড়াও পড়ুন:
মে দিবস ২০২৫ : শ্রমিক-মালিক ঐক্যে গড়বে নতুন বাংলাদেশ
১৮৮৬ সালের ১ মেÑএকটি দিন, একটি দাবি, আর হাজারো শ্রমিকের আত্মত্যাগের মাধ্যমে ইতিহাসে রক্তাক্ত দাগ কেটে দিয়েছিল যে মুহূর্ত, তা আজ বিশ্বব্যাপী ‘মে দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। তখনকার দাবিটি ছিল স্রেফ ৮ ঘণ্টা শ্রমের অধিকার। কিন্তু আজ ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে শ্রমিকের দাবি শুধু সময়
নয়Ñমর্যাদা, সুরক্ষা ও ন্যায্যতার প্রশ্নও।
এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য “শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়বো এদেশ নতুন করে”Ñএ যেন সময়ের এক গুরুত্বপূর্ণ পাঠ। উন্নয়নশীল বাংলাদেশের বাস্তবতায় এই বার্তা কেবল প্রাসঙ্গিক নয়, বরং তা রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান ও সমাজের জন্য এক যৌথ দিকনির্দেশনা।
বাংলাদেশের শ্রমচিত্র ও বাস্তবতা
বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত শ্রমনির্ভর। তৈরি পোশাক শিল্পে প্রায় ৪০ লাখ, কৃষি ও নির্মাণ খাতে আরও কয়েক কোটি মানুষ নিয়োজিত। পরিসংখ্যান বলছে, দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে শ্রমনির্ভর খাত থেকে। কিন্তু যাঁরা এই অর্থনীতির ইঞ্জিন হিসেবে কাজ করছেন, সেই শ্রমিকরা কি পেয়েছেন তাদের প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা?
দুঃখজনক হলেও সত্য, এখনও বহু শ্রমিক পান না ন্যূনতম মজুরি, কর্মস্থলে নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সেবা কিংবা ছুটি সংক্রান্ত মৌলিক সুবিধা। নারী শ্রমিকদের পরিস্থিতি আরও জটিলÑযত্রতত্র হয়রানি, মাতৃত্বকালীন সুবিধার অভাব, কিংবা নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ গড়ে না তোলার ফলে এই খাতেও স্থিতিশীলতা আসছে না।
মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক: দ্বন্দ্ব নয়, দরকার সহমর্মিতা
এক সময় শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক মানেই ছিল দ্বন্দ্ব, ধর্মঘট ও হুমকি। তবে বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতা বলছেÑসহযোগিতাই টেকসই উৎপাদনের চাবিকাঠি। মালিকপক্ষ যখন শ্রমিককে কেবল “ব্যয়” হিসেবে না দেখে “সম্পদ” হিসেবে বিবেচনা করেন, তখন প্রতিষ্ঠান লাভবান হয়। একইভাবে শ্রমিকও যদি বুঝেন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন মানে তার কর্মস্থলের স্থায়িত্বÑতাহলে দুপক্ষের মধ্যে বিশ্বাসের
ভিত্তি গড়ে ওঠে।
এই বিশ্বাস গঠনের জন্য প্রয়োজন তিনটি স্তম্ভ:
নীতিগত স্বচ্ছতা Ñ ন্যায্য মজুরি, নির্ধারিত কর্মঘণ্টা ও চুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তা দায়িত্বশীল মালিকপক্ষ Ñ কর্মপরিবেশ, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিতে উদ্যোগ সচেতন শ্রমিকশ্রেণি Ñ অধিকার আদায়ের পাশাপাশি কর্তব্য পালনের মানসিকতা
নীতি ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ
বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ ও সংশোধিত ২০১৮ সংস্করণ অনুযায়ী শ্রমিকের অধিকার স্বীকৃত হলেও বাস্তবায়নের জায়গায় ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে অনানুষ্ঠানিক খাতে (যেমন কৃষি, গৃহপরিচারিকা, গিগ-ওয়ার্কার) শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়টি এখনও প্রায় উপেক্ষিত।
এছাড়া, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, দুর্ঘটনা বীমা, এবং পুনঃপ্রশিক্ষণের ব্যবস্থাপনা আরও জোরদার হওয়া জরুরি। সরকার শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন করলেও তা অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
এই প্রেক্ষাপটে ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে’ দেশ গড়ার বার্তাটি যেন শুধুই স্লোগানে সীমাবদ্ধ না থাকে। বরং এটি হোক রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আর্থিক বিনিয়োগ ও মানবিক বিবেচনার এক বাস্তব প্ল্যাটফর্ম।
প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ ও নতুন শ্রম বাস্তবতা
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে শ্রমবাজার দ্রুত বদলে যাচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, অটোমেশন ও গিগ-ইকোনমি অনেক চাকরি বিলুপ্ত করছে, আবার নতুন দক্ষতা চাচ্ছে। বাংলাদেশ যদি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চায়, তাহলে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ, পুনঃস্কিলিং এবং ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এখানে মালিক ও রাষ্ট্র উভয়ের উচিত হবে, শ্রমিককে প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখতে বিনিয়োগ করা, কারণ দক্ষ শ্রমিক ছাড়া কোনো শিল্পই টিকে থাকে না।
মে দিবস: উৎসব নয়, দায়বদ্ধতার প্রতীক
মে দিবস কেবল লাল পতাকা হাতে শোভাযাত্রার দিন নয়, এটি আমাদের মানবিক চেতনার প্রতিফলন। যে শ্রমিক ঘাম ঝরিয়ে ভবন গড়ে, কৃষি জমি চষে, রপ্তানি পণ্য তৈরি করেÑতার জন্য আমাদের উচিত মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করা।
এবছর, আসুন আমরা সবাই রাষ্ট্র, মালিকপক্ষ ও শ্রমিকÑএকটি মানবিক, উৎপাদনশীল ও শীদারিত্বভিত্তিক সমাজ গঠনের পথে এগিয়ে যাই। শ্রমিকের হাতে গড়া এই বাংলাদেশ হোক তার জন্যই গর্বের জায়গা।
লেখক পরিচিতি:
মীযানুর রহমান
সাংবাদিক ও সমাজ বিশ্লেষক
মোবাইলঃ ০১৭৫৪১০৯০৭২
যোগাযোগ: : [email protected]