“তালের পাখা প্রাণের সখা, শীতকালেতে যায় না দেখা’’— গ্রাম বাংলায় এমন একটি প্রবাদ থাকলেও  আধুনিক ও যান্ত্রিক যুগে অনেকটাই বিলুপ্তির পথে হাতে তৈরি তালপাতা পাখা। তবে এখনও রয়েছে এর আবেদন। ঐতিহ্যবাহী এই পাখা যুগ যুগ ধরে বংশ পরম্পরায় তৈরি করে চলেছে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার সদকী ইউনিয়নের মালিয়াট গ্রামের শতাধিক পরিবার। 

গ্রাম বাংলার এই প্রাচীন ঐতিহ্য হাতপাখা তৈরির প্রধান কাঁচামাল তালগাছের পাতা, বাঁশ, সুঁতা বা লোহার চিকন তার (জি আই তার)। তালপাতার শোভা বাড়াতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন রং। কয়েকজন নারী ও পুরুষ মিলে একটি করে দল গঠন করে তৈরি করে এইসব পাখা।

আরো পড়ুন:

সমাজের মধ্যে আরেকটি সমাজ গড়ে তুলেছিল ‘বেগম’ 

‘ব্লু লাইট’ যেভাবে ঘুমের ক্ষতি করে

তীব্র তাপপ্রবাহ ও প্রচণ্ড গরমে হাতপাখার কদর বেড়েছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পাখা তৈরির কারিগরদের ঘুমও হারাম হয়ে গেছে। কারিগররা এখন দিনরাত সমান তালের পাখা তৈরির কাজে ব্যস্ত।

সরেজমিন মালিয়াট গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কেউ তালপাতাগুলো পানি দিয়ে ভেজানোর কাজ করছেন, কেউ পাতা রোদে শুকাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার পাতা কেঁটে সাইজ করছেন, বাঁশ চিরে শলা তৈরি করছেন। কেউবা সুঁতা ও বাঁশের শলাতে রং লাগাচ্ছেন। এভাবেই কয়েক জনের হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে তালপাতার হাতপাখা। 

কারিগরদের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, মালিয়াট গ্রামের শতাধিক পরিবারের প্রায় ৪ থেকে ৫ শতাধিক নারী ও পুরুষ পাখা তৈরির কাজ করেন। পাখা তৈরির উপকরণ তালপাতা জেলার বিভিন্ন স্থান সংগ্রহ ও তৈরি পাখা বিক্রির কাজ মূলত পুরুষরাই করে থাকেন। তবে সংসারের কাজের পাশাপাশি রং মিশ্রিত বাঁশের কাঠি, সুই ও সুতা দিয়ে পাখা বাঁধার কাজটি করেন গৃহবধূরা। পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা পাখা তৈরির কাজে সহযোগিতা করে থাকেন। কারিগরদের সাথে আলাপকালে আরো জানা যায়, জেলা ও জেলার বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাখা তৈরির প্রধান কাঁচামাল তালের পাতা প্রতি পিস কেনা হয় ৫-৮ টাকা দরে। প্রতি পিস পাতায় ৮-১০টি পাখা তৈরি করা যায়। প্রতি পিস বাঁশ কেনা হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। প্রতিটি বাঁশে শতাধিক পাখা হয়। প্রতি পিস পাখা তৈরিতে খরচ হয় ৫ থেকে ৬ টাকা। তৈরিকৃত পাখা পাইকারি বিক্রয় হয় ১০ থেকে ১২ টাকায় আর খুচরা বিক্রয় হয় ২০ থেকে ২৫ টাকা। এখানকার তৈরিকৃত পাখাগুলো স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জেলার বাইরেও বিক্রি করা হয়।

এ বিষয়ে মালিয়াট গ্রামের করম আলী শেখের ছেলে রিজাউল শেখ বলেন, ‘‘খুব ছোট থেকেই একাজ করে আসছি। বিদ্যুৎ আর যান্ত্রিক যুগে হাত পাখার চাহিদা কমে গেলেও পৈতৃক পেশা হিসেবে ধরে রেখেছি।’’

তিনি আরও জানান, নারী ও পুরুষ সবাই মিলে দল বেঁধে আমরা কাজ করি। প্রতিটি দল দিনে ২৫০ থেকে ৩০০ পিস পাখা তৈরি করি। নারী কারিগর রহিমা বেগম বলেন, ঘরের কাজের পাশাপাশি পাখা তৈরির কাজ করে যা পাই, তাতে সংসার ভালভাবে চলে যায়। 

কুমারখালী পৌরবাজার এলাকার খূচরা বিক্রেতা করিম মোল্লা (৫৫) বলেন, ‘‘৩৫ বছর ধরে পাখার ব্যবসা করি।বৈদ্যুতিক আর প্লাস্টিক পাখা এসে আগের আর তালপাখার চাহিদা নেই। তবও সৌখিন হিসাবে অনেকেই কেনেন।’’

চৌরঙ্গী মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক আনিছুর রহমান বলেন, ‘‘ছাত্র জীবনে হাত পাখার ব্যাপক ব্যবহার করলেও বাড়িতে এখন বৈদ্যুতিক পাখা। তবে ঐতিহ্যবাহী হাতপাখার প্রচলন গ্রাম বাংলায় এখনও চোখে পড়ার মত।

এ বিষয়ে সদকী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল মজিদ বলেন, ‘‘ঐতিহ্যবাহী এই কুটিরশিল্পটি আমাদের ইতিহাসের স্বাক্ষী। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সরকারী ও বেসরকারীভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।’’ 

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক জ কর শত ধ ক

এছাড়াও পড়ুন:

হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স। 

গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’

পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।

আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’ 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’

তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে আত্মসমর্পণ ও অস্ত্রত্যাগের প্রস্তাব মাওবাদীদের
  • হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত