তালপাতার পাখা: প্রয়োজন কমেছে, আবেদন কমেনি
Published: 2nd, May 2025 GMT
“তালের পাখা প্রাণের সখা, শীতকালেতে যায় না দেখা’’— গ্রাম বাংলায় এমন একটি প্রবাদ থাকলেও আধুনিক ও যান্ত্রিক যুগে অনেকটাই বিলুপ্তির পথে হাতে তৈরি তালপাতা পাখা। তবে এখনও রয়েছে এর আবেদন। ঐতিহ্যবাহী এই পাখা যুগ যুগ ধরে বংশ পরম্পরায় তৈরি করে চলেছে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার সদকী ইউনিয়নের মালিয়াট গ্রামের শতাধিক পরিবার।
গ্রাম বাংলার এই প্রাচীন ঐতিহ্য হাতপাখা তৈরির প্রধান কাঁচামাল তালগাছের পাতা, বাঁশ, সুঁতা বা লোহার চিকন তার (জি আই তার)। তালপাতার শোভা বাড়াতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন রং। কয়েকজন নারী ও পুরুষ মিলে একটি করে দল গঠন করে তৈরি করে এইসব পাখা।
আরো পড়ুন:
সমাজের মধ্যে আরেকটি সমাজ গড়ে তুলেছিল ‘বেগম’
‘ব্লু লাইট’ যেভাবে ঘুমের ক্ষতি করে
তীব্র তাপপ্রবাহ ও প্রচণ্ড গরমে হাতপাখার কদর বেড়েছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পাখা তৈরির কারিগরদের ঘুমও হারাম হয়ে গেছে। কারিগররা এখন দিনরাত সমান তালের পাখা তৈরির কাজে ব্যস্ত।
সরেজমিন মালিয়াট গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কেউ তালপাতাগুলো পানি দিয়ে ভেজানোর কাজ করছেন, কেউ পাতা রোদে শুকাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার পাতা কেঁটে সাইজ করছেন, বাঁশ চিরে শলা তৈরি করছেন। কেউবা সুঁতা ও বাঁশের শলাতে রং লাগাচ্ছেন। এভাবেই কয়েক জনের হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে তালপাতার হাতপাখা।
কারিগরদের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, মালিয়াট গ্রামের শতাধিক পরিবারের প্রায় ৪ থেকে ৫ শতাধিক নারী ও পুরুষ পাখা তৈরির কাজ করেন। পাখা তৈরির উপকরণ তালপাতা জেলার বিভিন্ন স্থান সংগ্রহ ও তৈরি পাখা বিক্রির কাজ মূলত পুরুষরাই করে থাকেন। তবে সংসারের কাজের পাশাপাশি রং মিশ্রিত বাঁশের কাঠি, সুই ও সুতা দিয়ে পাখা বাঁধার কাজটি করেন গৃহবধূরা। পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা পাখা তৈরির কাজে সহযোগিতা করে থাকেন। কারিগরদের সাথে আলাপকালে আরো জানা যায়, জেলা ও জেলার বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাখা তৈরির প্রধান কাঁচামাল তালের পাতা প্রতি পিস কেনা হয় ৫-৮ টাকা দরে। প্রতি পিস পাতায় ৮-১০টি পাখা তৈরি করা যায়। প্রতি পিস বাঁশ কেনা হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। প্রতিটি বাঁশে শতাধিক পাখা হয়। প্রতি পিস পাখা তৈরিতে খরচ হয় ৫ থেকে ৬ টাকা। তৈরিকৃত পাখা পাইকারি বিক্রয় হয় ১০ থেকে ১২ টাকায় আর খুচরা বিক্রয় হয় ২০ থেকে ২৫ টাকা। এখানকার তৈরিকৃত পাখাগুলো স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জেলার বাইরেও বিক্রি করা হয়।
এ বিষয়ে মালিয়াট গ্রামের করম আলী শেখের ছেলে রিজাউল শেখ বলেন, ‘‘খুব ছোট থেকেই একাজ করে আসছি। বিদ্যুৎ আর যান্ত্রিক যুগে হাত পাখার চাহিদা কমে গেলেও পৈতৃক পেশা হিসেবে ধরে রেখেছি।’’
তিনি আরও জানান, নারী ও পুরুষ সবাই মিলে দল বেঁধে আমরা কাজ করি। প্রতিটি দল দিনে ২৫০ থেকে ৩০০ পিস পাখা তৈরি করি। নারী কারিগর রহিমা বেগম বলেন, ঘরের কাজের পাশাপাশি পাখা তৈরির কাজ করে যা পাই, তাতে সংসার ভালভাবে চলে যায়।
কুমারখালী পৌরবাজার এলাকার খূচরা বিক্রেতা করিম মোল্লা (৫৫) বলেন, ‘‘৩৫ বছর ধরে পাখার ব্যবসা করি।বৈদ্যুতিক আর প্লাস্টিক পাখা এসে আগের আর তালপাখার চাহিদা নেই। তবও সৌখিন হিসাবে অনেকেই কেনেন।’’
চৌরঙ্গী মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক আনিছুর রহমান বলেন, ‘‘ছাত্র জীবনে হাত পাখার ব্যাপক ব্যবহার করলেও বাড়িতে এখন বৈদ্যুতিক পাখা। তবে ঐতিহ্যবাহী হাতপাখার প্রচলন গ্রাম বাংলায় এখনও চোখে পড়ার মত।
এ বিষয়ে সদকী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল মজিদ বলেন, ‘‘ঐতিহ্যবাহী এই কুটিরশিল্পটি আমাদের ইতিহাসের স্বাক্ষী। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সরকারী ও বেসরকারীভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।’’
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক জ কর শত ধ ক
এছাড়াও পড়ুন:
মেসিকে নিয়েই এশিয়া-আফ্রিকা সফরে আসছে আর্জেন্টিনা
২০২৬ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক প্রস্তুতি পর্ব জোরালো করছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। দলটি এবার ছুটছে এশিয়া ও আফ্রিকার পথে—আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলার লক্ষ্যে। এই সফরে দলের প্রাণভোমরা লিওনেল মেসিও অংশ নেবেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
আর্জেন্টিনার ক্রীড়ামাধ্যম ‘ওলে’ ও ‘টিওয়াইসি স্পোর্টস’-এর বরাতে জানা গেছে, আগামী অক্টোবর মাসে ফিফার আন্তর্জাতিক সূচির ফাঁকে চীন সফরে যাবে আর্জেন্টিনা দল। সেখানে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের, যদিও এখনও নির্দিষ্ট প্রতিপক্ষ চূড়ান্ত হয়নি। সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ হিসেবে চীন ছাড়াও আরও একটি আমন্ত্রিত দলের কথা বিবেচনায় রয়েছে।
চীনে ম্যাচ শেষে নভেম্বরে দলের পরবর্তী গন্তব্য আফ্রিকা। অ্যাঙ্গোলার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১১ নভেম্বর দেশটির বিপক্ষে মাঠে নামবে আর্জেন্টাইনরা। এই প্রীতি ম্যাচটি ঘিরে সম্প্রতি আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ) এবং অ্যাঙ্গোলা ফুটবল ফেডারেশনের (এফএএফ) কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আরো পড়ুন:
মায়ামির স্বপ্নভঙ্গ, ইতিহাস গড়লো ভ্যানকুভার এফসি
দুয়োতে ম্যাচ হেরে কনফাকাফ থেকে বিদায়ের শঙ্কায় মেসিরা
সেই আলোচনায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন এএফএ সভাপতি ক্লদিও তাপিয়া। তিনি ফোনে কথা বলেন লিওনেল মেসির সঙ্গেও। মেসি স্মরণ করেন, ২০০৬ সালে ইতালির মাটিতে অ্যাঙ্গোলার বিপক্ষে তাঁর প্রথম ম্যাচের কথা, যেখানে আর্জেন্টিনা জয় পেয়েছিল ২-০ গোলে।
অ্যাঙ্গোলার ম্যাচ শেষেই দলের পরবর্তী গন্তব্য কাতার—সেই মাঠ, যেখানে ২০২২ সালে বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরেছিল আর্জেন্টিনা। কাতার সফরেও একটি প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা রয়েছে, যদিও প্রতিপক্ষ এখনও নিশ্চিত নয়।
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চল থেকে প্রথম দল হিসেবে ২০২৬ বিশ্বকাপের মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে আর্জেন্টিনা। তাদের এখনও বাছাইপর্বে চারটি ম্যাচ বাকি আছে—চিলি, কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা ও ইকুয়েডরের বিপক্ষে, যেগুলো অনুষ্ঠিত হবে জুন ও সেপ্টেম্বরে।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে খেলার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে ও দলকে আরও পরিপক্ব করে তুলতেই এই ভিন্ন মহাদেশের সফর পরিকল্পনা করেছে আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। স্রেফ মাঠের অনুশীলন নয়, বাস্তব ম্যাচ পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই দলটিকে ভবিষ্যতের বড় মঞ্চের জন্য প্রস্তুত করতে চায় কোচ স্কালোনি ও তার টিম।
ঢাকা/আমিনুল