১ হাজার ২০০ মাইল পথ পাড়ি দিল চালকবিহীন ট্রাক
Published: 2nd, May 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রে চালকবিহীন ট্রাক এখন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম দূরপাল্লার পথে নিয়মিত চলাচল শুরু করেছে। ডালাস ও হিউস্টনের মধ্যে চলাচল করছে এই ট্রাক।
স্বচালিত প্রযুক্তির ট্রাকে পণ্য সরবরাহ সেবা প্রদানকারী মার্কিন প্রতিষ্ঠান অরোরা গতকাল বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছে, তারা টেক্সাসে তাদের প্রথম গ্রাহক উবার ফ্রেইট ও হার্শবাক মোটর লাইনসের অধীন চালকবিহীন ট্রাকের বাণিজ্যিক পরিষেবা চালু করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো সময় ও তাপ সংবেদনশীল পণ্য সরবরাহ করে।
চালকবিহীন ট্রাকে এমন কম্পিউটার ও সেন্সর লাগানো আছে, যা চারটি ফুটবল মাঠের চেয়েও বেশি দীর্ঘ পথ দেখতে পারে। চার বছরের পরীক্ষামূলক পণ্য পরিবহনের সময় এ প্রযুক্তির মাধ্যমে ১০ হাজারের বেশি পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে। স্বচালিত এ প্রযুক্তির ট্রাক কোনো চালক ছাড়াই গতকাল পর্যন্ত ১ হাজার ২০০ মাইলের বেশি পথ পাড়ি দিয়েছে।ওই উভয় প্রতিষ্ঠান আগেই ‘অরোরা ড্রাইভার’ নামে পরিচিত স্বচালিত প্রযুক্তি যাচাই করতে চালকবিহীন ট্রাকের পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু করেছিল। তবে সেখানে ‘সুরক্ষা চালক’ উপস্থিত ছিলেন। এখন অরোরার নতুন বাণিজ্যিক পরিষেবায় আর কোনো সুরক্ষা চালক থাকবেন না।
আরও পড়ুনউবারে চালকবিহীন গাড়ি০৭ ডিসেম্বর ২০২২অরোরার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও সহপ্রতিষ্ঠাতা ক্রিস উর্মসন গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা স্বচালিত প্রযুক্তির সুবিধা নিরাপদে, দ্রুত ও ব্যাপকভাবে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে অরোরা প্রতিষ্ঠা করেছি। এখন আমরাই প্রথম প্রতিষ্ঠান, যারা সফলভাবে ও নিরাপদে উন্মুক্ত সড়কে চালকবিহীন ট্রাকে পণ্য পরিবহন সেবা বাণিজ্যিকভাবে চালু করেছি।’
আমরা স্বচালিত প্রযুক্তির সুবিধা নিরাপদে, দ্রুত ও ব্যাপকভাবে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে অরোরা প্রতিষ্ঠা করেছি। এখন আমরাই প্রথম প্রতিষ্ঠান, যারা সফলভাবে ও নিরাপদে উন্মুক্ত সড়কে চালকবিহীন ট্রাকে পণ্য পরিবহন সেবা বাণিজ্যিকভাবে চালু করেছি।ক্রিস উর্মসন, অরোরার সিইও এবং সহপ্রতিষ্ঠাতাচালকবিহীন ট্রাকে এমন কম্পিউটার ও সেন্সর লাগানো আছে, যা চারটি ফুটবল মাঠের চেয়েও বেশি দীর্ঘ পথ দেখতে পারে। চার বছরের পরীক্ষামূলক পণ্য পরিবহনের সময়, এ প্রযুক্তির মাধ্যমে ১০ হাজারের বেশি পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে। কোনো মনুষ্য চালক ছাড়া গতকাল পর্যন্ত ১ হাজার ২০০ মাইলের বেশি পথ পাড়ি দিয়েছে স্বচালিত এ প্রযুক্তির ট্রাক।
আরও পড়ুনচালকবিহীন এই উড়ন্ত গাড়ির দাম কত১৯ মার্চ ২০২৪শুরুতে অরোরা চালকবিহীন একটি ট্রাক দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে পণ্য পরিবহন সেবা শুরু করেছে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে আরও ট্রাক যুক্ত করার পরিকল্পনা করছে।
সাধারণ গ্রাহক ও পরিবহন কর্মকর্তারা স্বচালিত যানবাহনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অরোরা এ বছর একটি নিরাপত্তা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে তাদের প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে তার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।যাহোক, সাধারণ গ্রাহক ও পরিবহন কর্মকর্তারা স্বচালিত যানবাহনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অরোরা এ বছর একটি নিরাপত্তা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে তাদের প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে তার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
ট্রাকচালকদের প্রতিনিধিত্বকারী শ্রমিক ইউনিয়নগুলো সাধারণত এ প্রযুক্তির বিরোধিতা করে থাকে। কেননা এটি চাকরি হারানো ও নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ তৈরি করতে পারে।
আরও পড়ুনচালক ছাড়াই যাত্রী বহন করবে এই গাড়ি২১ ডিসেম্বর ২০২২আরও পড়ুনক্ষুব্ধ জনতা আগুন দেওয়ার পর চালকবিহীন গাড়ি ফিরিয়ে নিচ্ছে ওয়েমো১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ লকব হ ন ট র ক র পর ক ন র পদ গতক ল র বহন প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
৭৭ মেট্রিক টন চাল তুলে নিয়েছেন ডিলার, উপকারভোগীরা জানেন ‘বরাদ্দ হয়নি’
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় গত জুলাই মাসে ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) উপকারভোগীদের জন্য ৭৭ দশমিক ৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছিল। প্রক্রিয়া অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এ চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) একজন ডিলার (পরিবেশক) তুলেও নেন। তবে ওই মাসে টিসিবির অন্য পণ্য পেলেও চাল পাননি বলে অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহম্মদপুরের ৮ ইউনিয়নে টিসিবির উপকারভোগী কার্ডধারী আছেন ১৫ হাজার ৫৬৭ জন। এসব উপকারভোগী নিজেদের কার্ড দেখিয়ে প্রতি মাসে একবার ইউনিয়নের টিসিবির নিয়োগ করা ডিলারের কাছ থেকে বাজারের চেয়ে কম মূল্যে তেল, চিনি, ডাল ও চাল কিনতে পারেন। গত জুলাইয়ে ডিলারদের কাছ থেকে তেল, চিনি ও ডালের একটি প্যাকেজ কিনতে পেরেছেন তাঁরা। ওই মাসে চালের বরাদ্দ আসেনি বলে জানানো হয় কার্ডধারীদের।
মহম্মদপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পাওয়া নথিতে দেখা গেছে, গত ৩০ জুলাই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মজনুর রহমান স্বাক্ষরিত দুইটি বিলি আদেশে (ডিও) উপজেলার হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে একজন ওএমএস ডিলারের অনুকূলে ৭৭ দশমিক ৮৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই দিনই মহম্মদপুর ও বিনোদপুর খাদ্যগুদাম থেকে এ চাল তুলেও নেওয়া হয়।
সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।শরিফা, টিসিবির কার্ডধারী, রাজাপুর ইউনিয়নটিসিবি ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন টিসিবি উপকারভোগীদের চাল ছাড়া অন্য পণ্য সরাসরি তাঁদের নিয়োগ করা ডিলারদের কাছে সরবরাহ করে। চালের বরাদ্দ দেওয়া হয় খাদ্য বিভাগ থেকে। এ অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে প্রথমে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ করা ওএমএস বা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের অনুকূলে ২৬ টাকা কেজি দরে চাল বরাদ্দ দেয়। সেই চাল ওই ডিলারদের কাছ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে নেন টিসিবির ডিলাররা। এরপর তাঁরা ৩০ টাকা কেজি দরে ওই চাল উপকারভোগীদের কাছে বিক্রি করেন।
উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পারুল নামে টিসিবির এক উপকারভোগী ১ সেপ্টেম্বর জানান, আগস্ট মাসে চাল, ডাল, তেল ও চিনির প্যাকেজ পেলেও জুলাই মাসে তাঁদের চাল ছাড়া অন্য তিন ধরনের পণ্যের প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল। জুলাই মাসে তাঁদের জানানো হয় চাল বরাদ্দ হয়নি।
বিষয়টি জানতে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে টিসিবির নিয়োগ করা ৮ জন ডিলারের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁদের মধ্যে মহম্মদপুর সদর, নহাটা, পলাশবাড়ীয়া, বালিদিয়া, রাজাপুর ও বাবুখালী ইউনিয়নের ডিলার জানিয়েছেন, জুলাই মাসে তাঁদেরকে চাল দেওয়া হয়নি। নহাটা ও রাজাপুর ইউনিয়নের ডিলার মিলন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মিলন ঘোষ ৪ সেপ্টেম্বর বলেন, ‘জুলাই মাসে আমাদের বলা হইছিল চাল বরাদ্দ নেই। এ কারণে চাল ছাড়া অন্য পণ্যগুলো বিক্রি করেছি। তবে অ্যাপে দেখাইছিল চাল। কিন্তু আমরা পাইনি।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পানঅবশ্য বিনোদপুর ও দীঘা ইউনিয়নের দুই ডিলার দাবি করেছেন তাঁরা অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে চালও কার্ডধারীদের কাছে বিক্রি করেছেন। তবে দুই ইউনিয়নের অন্তত ১০ জন উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাঁরা কেউই চাল পাননি। এর মধ্যে বিনোদপুর বাজারের একজন ফল ব্যাবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জুলাই মাসে ডিলার জানাইছিল চাল ফুরায় গেছে।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পান বলে খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে হোসেনিয়া কান্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা তাঁর মুঠোফোনে সোমবার যোগাযোগ করা হলে একজন ধরে জানান, ওই নম্বর হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে কেউ ব্যবহার করেন না।
জানতে চাইলে টিসিবির ঝিনাইদহ ক্যাম্প অফিসের উপপরিচালক আকরাম হোসেন সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিসিবির চাল খাদ্য বিভাগ থেকে সরবরাহ করা হয়। আর বিতরণ কার্যক্রম তদারকির জন্য প্রতিটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। যেখানে প্রতি ইউনিয়নে একজন ট্যাগ অফিসার আছেন, যিনি এগুলো তদারকি করেন।’
জেলার কয়েকজন চাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ টাকা কেজি দরে কেনা এসব চাল বাজারে প্রায় ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। উপকারভোগীদের কাছে তা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। এ হিসাবে উপকারভোগীদের ফাঁকি দিয়ে এ চাল বাজারে বিক্রি করতে পারলে কেজিতে ২২ থেকে ২৪ টাকা লাভ হয়।
চাল না পাওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন মহম্মদপুরের ইউএনও শাহীনুর আক্তার। সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাল দেওয়া হয়নি এখন পর্যন্ত এমন অভিযোগ কেউ দেয়নি। খাদ্য অফিস থেকে আমি যত দূর জানতে পেরেছি তাতে সবকিছু দেওয়া হয়ে গেছে। বরাদ্দ থাকলে তা আটকে রাখার সুযোগ নেই। তারপরও কোনো অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখব।’
হঠাৎ এক মাসে চাল না পাওয়ায় বিপাকে পড়েন উপকারভোগীরা। রাজাপুর ইউনিয়নের শরিফা নামের টিসিবি কার্ডধারী এক নারী বলেন, ‘সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।’