যুক্তরাষ্ট্রে চালকবিহীন ট্রাক এখন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম দূরপাল্লার পথে নিয়মিত চলাচল শুরু করেছে। ডালাস ও হিউস্টনের মধ্যে চলাচল করছে এই ট্রাক।

স্বচালিত প্রযুক্তির ট্রাকে পণ্য সরবরাহ সেবা প্রদানকারী মার্কিন প্রতিষ্ঠান অরোরা গতকাল বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছে, তারা টেক্সাসে তাদের প্রথম গ্রাহক উবার ফ্রেইট ও হার্শবাক মোটর লাইনসের অধীন চালকবিহীন ট্রাকের বাণিজ্যিক পরিষেবা চালু করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো সময় ও তাপ সংবেদনশীল পণ্য সরবরাহ করে।

চালকবিহীন ট্রাকে এমন কম্পিউটার ও সেন্সর লাগানো আছে, যা চারটি ফুটবল মাঠের চেয়েও বেশি দীর্ঘ পথ দেখতে পারে। চার বছরের পরীক্ষামূলক পণ্য পরিবহনের সময় এ প্রযুক্তির মাধ্যমে ১০ হাজারের বেশি পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে। স্বচালিত এ প্রযুক্তির ট্রাক কোনো চালক ছাড়াই গতকাল পর্যন্ত ১ হাজার ২০০ মাইলের বেশি পথ পাড়ি দিয়েছে।

ওই উভয় প্রতিষ্ঠান আগেই ‘অরোরা ড্রাইভার’ নামে পরিচিত স্বচালিত প্রযুক্তি যাচাই করতে চালকবিহীন ট্রাকের পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু করেছিল। তবে সেখানে ‘সুরক্ষা চালক’ উপস্থিত ছিলেন। এখন অরোরার নতুন বাণিজ্যিক পরিষেবায় আর কোনো সুরক্ষা চালক থাকবেন না।

আরও পড়ুনউবারে চালকবিহীন গাড়ি০৭ ডিসেম্বর ২০২২

অরোরার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও সহপ্রতিষ্ঠাতা ক্রিস উর্মসন গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা স্বচালিত প্রযুক্তির সুবিধা নিরাপদে, দ্রুত ও ব্যাপকভাবে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে অরোরা প্রতিষ্ঠা করেছি। এখন আমরাই প্রথম প্রতিষ্ঠান, যারা সফলভাবে ও নিরাপদে উন্মুক্ত সড়কে চালকবিহীন ট্রাকে পণ্য পরিবহন সেবা বাণিজ্যিকভাবে চালু করেছি।’

আমরা স্বচালিত প্রযুক্তির সুবিধা নিরাপদে, দ্রুত ও ব্যাপকভাবে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে অরোরা প্রতিষ্ঠা করেছি। এখন আমরাই প্রথম প্রতিষ্ঠান, যারা সফলভাবে ও নিরাপদে উন্মুক্ত সড়কে চালকবিহীন ট্রাকে পণ্য পরিবহন সেবা বাণিজ্যিকভাবে চালু করেছি।ক্রিস উর্মসন, অরোরার সিইও এবং সহপ্রতিষ্ঠাতা

চালকবিহীন ট্রাকে এমন কম্পিউটার ও সেন্সর লাগানো আছে, যা চারটি ফুটবল মাঠের চেয়েও বেশি দীর্ঘ পথ দেখতে পারে। চার বছরের পরীক্ষামূলক পণ্য পরিবহনের সময়, এ প্রযুক্তির মাধ্যমে ১০ হাজারের বেশি পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে। কোনো মনুষ্য চালক ছাড়া গতকাল পর্যন্ত ১ হাজার ২০০ মাইলের বেশি পথ পাড়ি দিয়েছে স্বচালিত এ প্রযুক্তির ট্রাক।

আরও পড়ুনচালকবিহীন এই উড়ন্ত গাড়ির দাম কত১৯ মার্চ ২০২৪

শুরুতে অরোরা চালকবিহীন একটি ট্রাক দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে পণ্য পরিবহন সেবা শুরু করেছে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে আরও ট্রাক যুক্ত করার পরিকল্পনা করছে।

সাধারণ গ্রাহক ও পরিবহন কর্মকর্তারা স্বচালিত যানবাহনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অরোরা এ বছর একটি নিরাপত্তা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে তাদের প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে তার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

যাহোক, সাধারণ গ্রাহক ও পরিবহন কর্মকর্তারা স্বচালিত যানবাহনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অরোরা এ বছর একটি নিরাপত্তা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে তাদের প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে তার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

ট্রাকচালকদের প্রতিনিধিত্বকারী শ্রমিক ইউনিয়নগুলো সাধারণত এ প্রযুক্তির বিরোধিতা করে থাকে। কেননা এটি চাকরি হারানো ও নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ তৈরি করতে পারে।

আরও পড়ুনচালক ছাড়াই যাত্রী বহন করবে এই গাড়ি২১ ডিসেম্বর ২০২২আরও পড়ুনক্ষুব্ধ জনতা আগুন দেওয়ার পর চালকবিহীন গাড়ি ফিরিয়ে নিচ্ছে ওয়েমো১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ লকব হ ন ট র ক র পর ক ন র পদ গতক ল র বহন প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানে হামলার আগে গোপনে ইসরায়েলে হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

ইরানে গতকাল শুক্রবার নজিরবিহীন হামলার আগে ইসরায়েলকে চুপিসারে কয়েক শ অত্যাধুনিক হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মিডল ইস্ট আইয়ের অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।

আগে থেকেই বড় পরিসরে অস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুত করছে ইসরায়েল। এরই অংশ হিসেবে ইরানে হামলার কয়েক দিন আগে গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র গোপনে ইসরায়েলে প্রায় ৩০০টি হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র পাঠায়। অথচ ট্রাম্প প্রশাসন বলছিল, তারা ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক ইস্যু নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী।

এত বিপুলসংখ্যক হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি ইঙ্গিত দেয় যে ইরানে ইসরায়েলের হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসন আগে থেকেই ভালোভাবে অবগত ছিল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে এ কথা জানান।

মার্কিন সংবাদ সংস্থা অ্যাক্সিওস গতকাল দুই ইসরায়েলি কর্মকর্তার বরাতে জানায়, ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েলি হামলার পরিকল্পনায় বাধা দেওয়ার শুধু ‘ভান’ করেছে। কার্যত তারা কোনো বাধা দেয়নি।

ইরানে হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্র যে ইসরায়েলে বিপুল পরিমাণে হেলফায়ারসহ অন্যান্য অস্ত্র সরবরাহ করেছে, সে খবর এত দিন প্রকাশিত হয়নি।

গতকাল রয়টার্সকে দুই মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ভূপাতিত করতে মার্কিন সেনাবাহিনী সহায়তা করেছে।

হেলফায়ার হলো লেজারনিয়ন্ত্রিত আকাশ থেকে স্থলে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বিস্ফোরণ ঘটাতে এ ক্ষেপণাস্ত্র বিশেষভাবে উপযোগী নয়। তবে নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য এটি কার্যকর।

গতকালের হামলায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ১০০টির বেশি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করেছে। এসব বিমান নির্ভুল শনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের নিশানা করে এবং কমান্ড সেন্টারগুলোর ওপর আঘাত হানে।

আরও পড়ুন‘আমরা সব জানতাম’, ইরানে ইসরায়েলের হামলা নিয়ে মুখ খুললেন ট্রাম্প২ ঘণ্টা আগে

এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ‘হেলফায়ার ব্যবহারের নির্দিষ্ট সময় ও ক্ষেত্র আছে। এগুলো ইসরায়েলের জন্য বেশ কার্যকর ছিল।’

গতকাল বিমান হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় ইরানি কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানীকে হত্যা করে ইসরায়েল।

নিহত এই কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি, সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি ও সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা আলি শামখানি।

ট্রাম্প প্রশাসন কয়েক মাস আগে থেকেই ইসরায়েলের এ হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে জানত।

চলতি মাসের শুরুতে মিডল ইস্ট আই প্রকাশ করে, গত এপ্রিল ও মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর ইসরায়েলের একতরফা হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে ব্রিফ করা হয়। এ পরিকল্পনায় ছিল নিশানা ব্যবস্থাগুলোর বিশ্লেষণ, সাইবার হামলার ছক কষা ও নির্ভুল আঘাতের কৌশল। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের রূপরেখা ট্রাম্প প্রশাসনকে মুগ্ধ করে।

তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ট্রাম্পের আচরণ বিশ্লেষক, এমনকি সম্ভবত ইরানিদের মধ্যেও এমন ধারণার জন্ম দিয়েছিল, তিনি নেতানিয়াহুর প্রকাশ্য হামলার আহ্বানে বাধা তৈরি করবেন।

মার্কিন সংবাদ সংস্থা অ্যাক্সিওস গতকাল দুই ইসরায়েলি কর্মকর্তার বরাতে জানায়, ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েলি হামলার পরিকল্পনায় বাধা দেওয়ার শুধু ‘ভান’ করেছে। কার্যত তারা কোনো বাধা দেয়নি।

ট্রাম্প পরে বলেন, তিনি হামলার আগে ইরানকে একটি নতুন পারমাণবিক চুক্তিতে সম্মত হওয়ার জন্য ৬০ দিনের সময় দিয়েছিলেন। ইসরায়েলি গণমাধ্যম গত মার্চে এই ৬০ দিনের সময়সীমার খবর প্রকাশ করেছিল।

ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের সঙ্গে গত ১২ এপ্রিল আলোচনায় বসে। এর ঠিক ৬১ দিন পর ইসরায়েল তেহরানে হামলা চালাল।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা থমকে যায়। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে দাবি তোলে, ইরান যেন কোনো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ না করে। আর তেহরান জানায়, এ বিষয়ে কোনো আপস তাদের পক্ষে গ্রহণযোগ্য নয়।

আরও পড়ুনইরানে হামলা: ট্রাম্প ৬০ দিনের সময়সীমার কথা বলছেন, সেটি কী?১৭ ঘণ্টা আগে

দুই মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আলোচনার পুরো সময়জুড়েই ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েলে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে।

যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে আলাদাভাবে জনসমক্ষে কিছু জানাতে হয়নি। কারণ, ৭৪০ কোটি ডলারের একটি অস্ত্র চুক্তির অংশ হিসেবে এটি আগে থেকেই অনুমোদিত ছিল।

আরও পড়ুনইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এখন কোথায়১৭ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সরকারি লবণের তথ্য পৌঁছেনি বিতরণে কারসাজির অভিযোগ
  • অশ্বিন ও তাঁর দলের বিরুদ্ধে রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে বল টেম্পারিংয়ের অভিযোগ
  • ইসরায়েল কেন ইরানি তেল ও গ্যাস স্থাপনায় হামলা চালাচ্ছে, এগুলো কেন এত গুরুত্বপূর্ণ
  • ড্রোন ও উড়ুক্কু যানে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চীনের
  • সুপেয় পানির সংকট, কাজে আসছে না কোটি টাকার প্রকল্প
  • নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু
  • সুপারম্যানের কাছে আছে পৃথিবীর শক্তি সংকটের সমাধান
  • ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করলে কী কী ঘটতে পারে?
  • ইরান–ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা রূপ নিতে পারে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতে
  • ইরানে হামলার আগে গোপনে ইসরায়েলে হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র