গণমাধ্যমে সরকারের হস্তক্ষেপ না থাকায় বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশ এক বছরে ১৬ ধাপ এগিয়েছে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। 

শুক্রবার (২ মে) ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস্’ -এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান প্রসঙ্গে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ দেশের সব গণমাধ্যম এখন সরকারের প্রভাবমুক্ত। কোনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে সরকারের পক্ষ থেকে টেলিফোন করে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না। দেশের গণমাধ্যমকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করতে সরকার এরইমধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের ১৬ ধাপ উন্নতিই প্রমাণ করে—সরকার দেশের গণমাধ্যমকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করতে কাজ করছে।”

কমিশনের সুপারিশে সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী অতি শিগগিরই বেশ কিছু সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে।”

উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করে বলেন, “আগামী বছরে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশ আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে এবং দেশের সাংবাদিক ও গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টদের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে।”

৩ মে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে প্যারিস ভিত্তিক সংগঠন ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস্' -এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স, ২০২৫-এ ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৯তম। ২০২৪ সালের মে মাসে প্রকাশিত সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৫তম।

‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস্' -এর প্রতিবেদন অনুযায়ী এ বছর মুক্ত সংবাদমাধ্যমের বিবেচনায় ১০০ নম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ৩৩ দশমিক ৭১ নম্বর। যা গত বছর (২০২৪) ছিল ২৭ দশমিক ৬৪।

আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেওয়ার সময় বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২১তম। আওয়ামী লীগের শাসনামলে ১৫ বছরে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ৪৪ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ।

এ বছর মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে প্রতিবেশী দেশ ভারতের অবস্থান বাংলাদেশের দুই ধাপ নিচে (১৫১তম)।

তথ্যসূত্র: বাসস

ঢাকা/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল দ শ র অবস থ ন সরক র র উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১৩%

বাংলাদেশে ২০২৪ সালে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আগের বছরের চেয়ে  ১৩ শতাংশ কমেছে। গত বছর নিট বা প্রকৃত এফডিআই এসেছে ১২৭ কোটি ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় সাড়ে ১৫  হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ। ২০২৩ সালে নিট এফডিআই ছিল ১৪৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। 

বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের বিশ্ব বিনিয়োগ রিপোর্টে বিদেশি বিনিয়োগ আসার ওই পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভা থেকে আঙ্কটাড ‘ওয়ার্ল্ড ইনেভেস্টমন্ট রিপোর্ট-২০২৫’ নামে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বাকি দেশের পরিসংখ্যান ওই প্রতিবেদনে রয়েছে। 
বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সমপর্যায়ের অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। গত বছর যে পরিমাণ এফডিআই এসেছে, তা মাত্র এক মাসে রেমিট্যান্সের অর্ধেক এবং রপ্তানি আয়ের চার ভাগের এক ভাগ।  

একটি নির্দিষ্ট বছরের মোট বিদেশি বিনিয়োগ বলতে বাইরের উদ্যোক্তাদের থেকে নতুন পুঁজি, বিদ্যমান বিনিয়োগের মুনাফা থেকে পুনর্বিনিয়োগ এবং আন্তঃকোম্পানি ঋণের সমষ্টিকে বোঝানো হয়। একই সময়ের মধ্যে পুঁজি প্রত্যাহার, মূল কোম্পানিকে ঋণ দেওয়া এবং আন্তঃকোম্পানি ঋণ পরিশোধ বাদ দিয়ে নিট বিনিয়োগের হিসাব করা হয়।
বাংলাদেশে ২০২৪ সাল শেষে বিদেশি বিনিয়োগের স্থিতি ১ হাজার ৮২৯ কোটি ডলার, যা দেশের জিডিপির মাত্র ৪ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ায় এ ক্ষেত্রে গড় হার ১৩ শতাংশ। ভারতের হার ১৪ শতাংশ। ভুটানের মতো দেশে এ হার ১৭ শতাংশ। গত বছর ভুটানে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ৬ গুণ। 
বাংলাদেশে ২০২৪ সালে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগে (গ্রিনফিল্ড ইনভেস্টমেন্ট) অর্থের ঘোষণার পরিমাণও কমেছে। ঘোষিত অর্থের পরিমাণ ১৭৫ কোটি ডলার। ২০২৩ সালে যা ছিল ২৭০ কোটি ডলার। গত বছর কমে যাওয়ার হার ৩৫ শতাংশ। গ্রিনফিল্ড বিনিয়োগের ঘোষণা ভবিষ্যতের প্রকৃত বিনিয়োগের ইঙ্গিত দেয়। 

কেন বিনিয়োগ কম 
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের নিম্ন প্রবণতার কারণ জানতে চাইলে ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) সভাপতি এবং ইউনিলিভার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও এমডি জাভেদ আখতার সমকালকে বলেন, একজন বিনিয়োগকারী তখনই বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন, যখন তিনি বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলোর ওপর ভরসা পান। বিনিয়োগের পরিবেশ ব্যবসাবান্ধব হয়। দুঃখজনক হলেও এটি স্বীকার করতে হবে যে বাংলাদেশের বিনিয়োগের পরিবেশ কখনোই ভালো ছিল না। এর অন্যতম কারণ হলো, দেশের অঙ্গীকারবদ্ধ থাকার বিশ্বাসযোগ্যতা, রাষ্ট্রের বিনিয়োগ নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার অভাব। এর ওপর গত কয়েক বছর অর্থনৈতিক পরিস্থিতির এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা বিনিয়োগ আকৃষ্ট করেনি।  
ফিকি সভাপতির মতে, গত ১০ মাসে সরকার যদিও বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তার ফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে, অথর্নীতির চাকা সচল না হলে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসা পর্যন্ত বিনিয়োগের আশা করা শুধু অযৌক্তিক নয়, দুরূহ হবে।

তিনি বলেন, ‘দেশীয় বাজার এবং রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমাদের দেশের অবস্থান ভালো। কিন্তু উল্লিখিত তিনটি কারণের জন্য আমরা পিছিয়ে রয়েছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এসব বিষয় খতিয়ে দেখে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগুলোর প্রতিকার না করা পর্যন্ত বিনিয়োগকারীর আত্মবিশ্বাস বাংলাদেশের ওপর কখনোই আসবে না।’
আঙ্কটাডের প্রতিবেদনের বিষয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীর মন্তব্য জানতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে সম্প্রতি আশিক চৌধুরী বিডার ফেসবুকে ‘আমাদের আমলনামা’ নামে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি বিডায় তাঁর আট মাসের দায়িত্ব পালনকালে বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন। তিনি জানান, গত অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত  বিদেশি বিনোয়োগের পরিমাণ আগের একই সময়ের তুলনায় প্রায় একই। অস্থিতিশীল পরিস্থিতির পরে এত তাড়াতাড়ি বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ আগের জায়গায় ফিরে গেছে, যা আশার কথা।  

বাংলাদেশিদের বাইরে বিনিয়োগ কত 
আঙ্কটাড শুধু দেশওয়ারি বিনিয়োগ আসার তথ্য প্রকাশ করে না। কোনো দেশ থেকে বাইরে কী পরিমাণ বিনিয়োগ হয়, তার তথ্যও দেয়। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে বিদেশে মাত্র ৭০ লাখ ডলারের বিনিয়োগ হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৮৫ কোটি টাকা। গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২১ সালে দেশের বাইরে সর্বাধিক ৮ কোটি ডলারের বিনিয়োগ করেন বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা। ২০২৪ সাল শেষে বিদেশে বাংলাদেশিদের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৩২ কোটি ২০ লাখ ডলার। আগের বছরের তুলনায় যা ৮ শতাংশ কম। 

বিশ্ব ও আঞ্চলিক পরিস্থিতি
২০২৪ সালে প্রকৃত বৈশ্বিক বিনিয়োগ ১১ শতাংশ কমে দেড় ট্রিলিয়ন ডলারে নেমেছে। যদিও কিছু অন্থায়ী আর্থিক প্রবাহের কারণে সামগ্রিক চিত্রে ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি রয়েছে। ২০২৫ সালেও পরিস্থিতি নেতিবাচক থাকতে পারে পূর্বাভাস দিয়েছে আঙ্কটাড। বাণিজ্য উত্তেজনা, নীতি অনিশ্চয়তা এবং ভূরাজনৈতিক বিভক্তি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার মূল কারণ বলে মনে করছে সংস্থাটি। গত বছর দক্ষিণ এশিয়ায় বিনিয়োগ এসেছে ৩ হাজার ৪৫৭ কোটি ডলার, যা আগের বছরের মতোই। ভারতে এফডিআই কমেছে প্রায় ২ শতাংশ। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যুক্তরাষ্ট্রে অর্থপাচারের দায়ে ভারতীয় শিক্ষার্থীর কারাদণ্ড  
  • সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা অর্থ এক বছরে ৩৩ গুণ বেড়েছে
  • বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১৩%
  • জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মরণে নির্মাণ হবে গণমিনার
  • চট্টগ্রামে সাবেক এমপি ফজলে করিম নতুন ২ মামলায় গ্রেপ্তার
  • ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসির শেয়ারহোল্ডারদের ২৫% লভ্যাংশ অনুমোদন
  • সরাসরি: যুদ্ধ বাধলে ইরান-ইসরায়েলের অর্থনীতির কী হাল হবে?
  • সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের নামে জমায় উল্লম্ফন
  • ইরান বিষয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে তুলসী গ্যাবার্ডের বিরোধ
  • জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণে তৈরি হবে ‘গণমিনার’