চিফ প্রসিকিউটরের বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে: চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়
Published: 13th, May 2025 GMT
জুলাইয়ে গণঅভ্যুত্থানের সময় গুলিতে সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের বক্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে বলে চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো.
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সম্প্রতি বাংলাদেশের কিছু গণমাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের বক্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। তারা বলেছেন যে, চিফ প্রসিকিউটর জুলাই মাসে গণহত্যা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন।’
এতে আরও বলা হয়, ‘‘চিফ প্রসিকিউটর নিজেই স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, জুলাইয়ে বাংলাদেশে ব্যাপক এবং পদ্ধতিগত হত্যাযজ্ঞ বা Mass Murder সংগঠিত হয়েছে, যা বাংলায় সাধারণভাবে গণহত্যা বলা হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী Genocide অর্থ হচ্ছে জাতিগত নির্মূল (Ethnic Cleansing) অর্থে গণহত্যা। তবে তিনি এই ঘটনার জন্য ‘জেনোসাইড’ (Genocide বা জাতি/গোষ্ঠীনিধন) এর অভিযোগ আনেননি, বরং অভিযোগ এনেছেন ‘ক্রাইম এগেইনস্ট হিউম্যানিটি’ বা ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ হিসেবে, যার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ব্যাপক ও পদ্ধতিগত গণহত্যা।’’
চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের এই প্রতিবাদ ও বিবৃতিতে আইনের যথাযথ অর্থ না জেনে বা ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে সংবাদ পরিবেশন থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত জ ল ইসল ম গণহত য অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যাসহ ৫ অভিযোগ
জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় সংগঠিত গণহত্যার মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গণহত্যাসহ পাঁচ অভিযোগ পেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। বাকি দুইজন হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক পুলিশের আইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
আজ সোমবার মামলার যাবতীয় নথিপত্র ও সিডিসহ প্রসিকিউশনে তিনজনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। পরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আজ সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা তাদের প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এতে তারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও হত্যার উসকানি, প্ররোচনা ও সরাসরি নির্দেশসহ পাঁচটি অভিযোগ পেয়েছে। এছাড়াও অপর দুই আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক পুলিশের আইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধেও এই অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, আগামী দুই-তিন সপ্তাহ প্রসিকিউশন তদন্ত সংস্থার দেওয়া প্রতিবেদনটি যাচাই-বাছাই ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করবে। এরপর সেটা আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র (ফরমাল চার্জ) হিসেবে ট্রাইবুনালে দাখিল করবে।
তিনি আরও বলেন, গত বছরের ১৪ আগস্ট একটি অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করা হয়। দীর্ঘ ৬ মাস ২৮ দিন তদন্ত করে তদন্ত সংস্থা তাদের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।
এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত ২০ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। প্রসিকিউশনের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত চিফ প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম।
গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা দুই মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত দুই মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর গুলি, হত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বিচারে হত্যা চালায়। প্রায় দেড় হাজার মানুষ প্রাণ হারান এই আন্দোলনে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিলে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিচার করার সিদ্ধান্ত নেয়।