সংবিধান পুনর্লিখনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। পাশাপাশি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছে দলটি। আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম এ কথা জানান।

সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয়ে এই বৈঠক বেলা দুইটার দিকে শেষ হয়। বৈঠক শেষে সিপিবির সভাপতি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের ফোর প্রিন্সিপাল (সংবিধানের চার মূলনীতি) যেটা আছে, তারা (ঐকমত্য কমিশন) সেটা রাখেনি। ওই জায়গাতে আমরা দ্বিমত করেছি। এককথায় সংবিধান পুনর্লিখনের আমরা বিরুদ্ধে।’

চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা স্বৈরাচারবিরোধিতা ছিল উল্লেখ করে শাহ আলম বলেন, এখানে মুক্তিযুদ্ধ, বাহাত্তরের সংবিধানকে বাতিল করতে হবে এমন কোনো বিষয় ছিল না। এগুলো পরে নিয়ে আসা হয়েছে; নানা বিতর্কের সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সেই বিতর্কে না যেতে বলেছি। এটা করলে ঐকমত্য কমিশন বিতর্কের মধ্যে পড়ে যাবে।’

সিপিবি মৌলিক সংস্কারের পক্ষে জানিয়ে দলটির সভাপতি বলেন, রাষ্ট্রকে সাতচল্লিশে ফেরত নিয়ে যাওয়ার জন্য সংবিধান সংস্কারের যে কথাগুলো আসছে, সেসব বিষয়ের ঘোরতর বিরোধী সিপিবি।

প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে চলা ওই বৈঠকে সংবিধান, নির্বাচন কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স)। তিনি জানান, বেশ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন তাঁরা।

তবে কেউ দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকা, নারী আসন বৃদ্ধি ও সরাসরি নির্বাচন, সংসদীয় গণতন্ত্র শক্তিশালী করার বিষয়গুলোতে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সিপিবি একমত পোষণ করেছে বলে রুহিন হোসেন জানান।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, সংবিধানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর জাতিসত্তার স্বীকৃতি প্রদান, জীবন ধারণের মৌলিক উপকরণের নিশ্চয়তা প্রদানকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে এর দায়িত্ব রাষ্ট্রের নেওয়া এবং নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তন করার প্রস্তাব করেছে সিপিবি।

নির্বাচিত সংসদই সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করবে—এমন দলীয় অবস্থানের কথা জানিয়ে রুহিন হোসেন বলেন, ‘আগামীতে নির্বাচনটাই যেহেতু আমাদের সামনে মূল বিষয়, এমন কোনো বিতর্কিত বিষয় সামনে আনা উচিত হবে না, যেটা নির্বাচনকে বিলম্বিত করবে। সুতরাং যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার করে আমরা নির্বাচনের জায়গায় যেতে চাই।’

বৈঠকে সিপিবির ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদলে অন্যদের মধ্যে সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক এ এন রাশেদা, কাজী সাজ্জাদ জহির (চন্দন), অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক কাজী রুহুল আমিন, রাগিব আহসান মুন্না, সাজেদুল হক রুবেল, আবিদ হোসেন ও অধ্যাপক ফজলুর রহমান ছিলেন।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য বিচারপতি মো.

এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন ও ইফতেখারুজ্জামান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য গঠন) মনির হায়দার বৈঠক সঞ্চালনা করেন।

আরও পড়ুনঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সিপিবির বৈঠক চলছে৭ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

কিছু রাজনৈতিক দল ঐকমত্য কমিশনে গিয়ে ফাঁদে পড়েছে: জাপা মহাসচিব

কিছু রাজনৈতিক দল ঐকমত্য কমিশনে গিয়ে ফাঁদে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তবে কারা, সেটা স্পষ্ট করেননি তিনি।

আজ শনিবার বিকেলে রংপুর নগরের সেন্ট্রাল রোডে জাপা কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শামীম হায়দার পাটোয়ারী এ মন্তব্য করেন।

শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছু দল ইতিমধ্যে ঐকমত্য কমিশনে গিয়ে বা স্বাক্ষর করে একধরনের ফাঁদে পড়ে গেছে। কিছু রাজনৈতিক দল বলছে, ঐকমত্য কমিশন প্রতারণা করেছে। এখানে প্রতারক ও প্রতারণা শব্দটি উচ্চারিত হচ্ছে। কিন্তু আমরা তো এ রকম সংস্কার চাইনি।’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ঐকমত্য তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে জাপা মহাসচিব বলেন, কমিশন ৫৬টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৩০টি দলকে বাদ দিয়েছে। যে দলগুলো সেখানে গেছে, তাদের মধ্যে অনেকগুলো বিষয় নিয়ে মতবিরোধ আছে। এক ভাগকে ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, আরেক ভাগ ঐক্য প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ অংশগ্রহণ করেছে। অন্য আরেক ভাগ ঐক্য প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে পরে সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করেছে।

বর্তমান প্রশাসনিক কাঠামো বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির বলে দাবি করেছেন শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তিনি বলেন, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল। কারণ, নির্বাচিত সরকার সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে ভোট করেছে ও নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে। এই মুহূর্তে দেশে যে প্রশাসনিক কাঠামো আছে, তার ব্যাপারে তথ্য উপদেষ্টা নিজেই বলেছেন, তাঁরা বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর কথামতো প্রশাসন সাজিয়েছে, তার সঙ্গে এনসিপি আছে। এই তিন দলের বাইরে অন্য কোনো দল যদি ভোটে আসে, এই প্রশাসনিক কাঠামো সেই দলকে সুষ্ঠু ভোট হতে দেবে না।

গণভোটের দাবি নজিরবিহীন উল্লেখ করে শামামী হায়দার পাটোয়ারী বলেন, সংবিধানে এই মুহূর্তে গণভোট কোনো প্রভিশনে নেই। বর্তমানে গণভোটের যে দাবি উঠেছে, সংসদে পাস হওয়ার আগে এই দাবি বাস্তবায়ন হলে ঐকমত্য কমিশনকে সংসদের মর্যাদা দেওয়া হবে। ঐকমত্য কমিশন সার্বভৌম নয়, নির্বাচিত নয় ও সংসদ নয়। সংসদকে এড়িয়ে গিয়ে কোনো আইন পাস করা হলে তা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে।

এ সময় জাপার কো–চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান, প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ইয়াসির, রংপুর জেলার আহ্বায়ক আজমল হোসেন, সদস্যসচিব হাজী আবদুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হাসানুজ্জামানসহ জাপা ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সরকারের ভেতরে একটা অংশ নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে: এনসিপি
  • প্রথম আলোরও একটা ঐকমত্য সনদ আছে, আর তা আছে আমাদের হৃদয়ে
  • রাজনৈতিক দলগুলোকে ৭ দিনের সময় দিলে সরকার
  • গণভোট নিয়ে মতভেদে উপদেষ্টা পরিষদের উদ্বেগ
  • দলগুলো ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে ব্যর্থ হলে সরকার নিজের মতো সিদ্ধান্ত নেবে
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়নে কেন এমন দুর্বোধ্য পথ
  • এক সপ্তাহের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘ঐকমত্য সুপারিশ’ দেওয়ার আহ্বান
  • সনদ বাস্তবায়নে দ্রুত সিদ্ধান্ত, আরপিওতে পরিবর্তন আসছে
  • তড়িঘড়ি না করে সংবিধান সংস্কারে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান
  • কিছু রাজনৈতিক দল ঐকমত্য কমিশনে গিয়ে ফাঁদে পড়েছে: জাপা মহাসচিব