সাবেক সেনা সদস্যদের আবেদন পুনর্বিবেচনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। একইসঙ্গে ধৈর্য ও শৃঙ্খলা বজায় রাখারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বাহিনীর পক্ষ থেকে।

বুধবার (১৪ মে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর)।

আইএসপিআর জানায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তার গৌরবময় ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের পেশাদারিত্ব, নিরলস পরিশ্রম এবং শৃঙ্খলার মাধ্যমে অর্জন করেছে। এই বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের প্রশ্নাতীত আনুগত্য, সততা ও আত্মত্যাগই আজকের এই সাফল্যের মূল ভিত্তি। সামরিক শৃঙ্খলা একটি পেশাদার সেনাবাহিনীর মূল চালিকাশক্তি। সামরিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষ্যে সেনা আইন অনুযায়ী যথাযোগ্য পুরস্কার ও শাস্তি প্রদানের বিধান রয়েছে।

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে ডিপ্লোমা-বিএসসি নার্সিং শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, আহত ১০

যেসব নম্বরে ফোন করলে মিলবে সেনাবাহিনীর সহায়তা

আইএসপিআর আরো জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে কতিপয় সাবেক সেনা সদস্যের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার কিছু আবেদন উত্থাপিত হয়েছে যা সেনাসদর সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছে। মানবিক ও প্রশাসনিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে এসব আবেদনগুলো যথাযথভাবে পর্যালোচনার উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে সেনা সদরে উচ্চপর্যায়ের একটি পর্ষদ গঠিত হয়েছে এবং এই পর্ষদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অদ্যাবধি, এ সংক্রান্ত মোট ৮০২টি আবেদন গৃহীত হয়েছে, যার মধ্যে ১০৬টি আবেদন চূড়ান্ত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট রেকর্ডে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকি ৬৯৬টি আবেদন পর্যায়ক্রমে যাচাই-বাছাই এবং মূল্যায়ন সাপেক্ষে নিষ্পত্তির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।বিষয়টি সময়সাপেক্ষ হলেও সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ আন্তরিকতা এবং দায়িত্ববোধের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।

দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা রক্ষায় সেনাবাহিনীর সব সদস্যদের অবদান অনস্বীকার্য এবং জাতি তা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে। সরকার ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, সাবেক সেনা সদস্যদের প্রাপ্য সম্মান, মর্যাদা ও ন্যায্য দাবিসমূহের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাশীল এবং ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিশ্বাস করে—পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহানুভূতি ও যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে চলার মাধ্যমেই প্রতিটি সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা সম্ভব। এ ব্যাপারে যেকোনো ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহ্বান জানানো হচ্ছে। একই সঙ্গে, যেকোনো পরিস্থিতিতে ধৈর্য, শৃঙ্খলা ও সহনশীলতা বজায় রাখার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা/হাসান/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করেনি: আইএসপিআর প্রধান

টানা চার দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ভারত ও পাকিস্তান গত শনিবার (১০ মে) যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় কূটনৈতিক তৎপরতায় এই যুদ্ধবিরতি সম্ভব হয়েছে।

তবে পাকিস্তান দাবি করে বলছে যে, তারা যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করেনি বরং ভারতীয়দের অনুরোধে সাড়া দিয়েছে।

সোমবার (১২ মে) পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। 

আরো পড়ুন:

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে কার কেমন ক্ষতি হলো?

সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত: যুক্তরাষ্ট্রকে হস্তক্ষেপের আহ্বান

প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর মিডিয়া উইং আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে পাকিস্তানের অবস্থান স্পষ্ট করে বলেছেন, “পাকিস্তান কখনো কোনো যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করেনি।”

সশস্ত্র বাহিনীর কৌশলগত পদক্ষেপ ও যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানাতে রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে আইএসপিআর প্রধান বলেন,  “৬ ও ৭ মে রাতে, সেই জঘন্য ও কাপুরুষোচিত হামলার পর, ভারতীয়রা (যুদ্ধবিরতির) অনুরোধ করে। পাকিস্তান খুব স্পষ্টভাবে জানায়- এই পদক্ষেপের প্রাপ্য জবাব দেওয়ার পরেই আমরা বিবেচনা করবো।”

লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরীর মতে, ‘অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস’- এর অধীনে পাকিস্তান তাদের প্রতিশোধমূলক অভিযান পরিচালনা করার পরই ইসলামাবাদ ভারতীয় প্রস্তাবের প্রতি সাড়া দিয়েছে।

তিনি বলেন,  “সুতরাং ১০ মে, প্রতিক্রিয়া ও প্রতিশোধের পরে...এবং আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের অনুরোধ ও হস্তক্ষেপের ভিত্তিতে, আমরা ভারতীয়দের ইতিমধ্যেই করা অনুরোধের প্রতি সাড়া দিয়েছি।”

তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত ভাইরাল দাবিরও জবাব দেন যে, পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে একজন ভারতীয় পাইলট আটক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, “আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, পাকিস্তানে কোনো ভারতীয় পাইলট আটক নেই।” তিনি বলেন, “এগুলো সবই ভুয়া খবর এবং নেতিবাচক প্রচারণার অংশ, যা একাধিক ভারতীয় উৎস থেকে তৈরি করা হয়েছে।”

দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার উচ্চ ঝুঁকি তুলে ধরে, পাকিস্তান আইএসপিআর প্রধান ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের ধারণাটিকে ‘অকল্পনীয়’ এবং ‘নিছক বোকামি’ বলে অভিহিত করেন।

তিনি বলেন, “দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী পারমাণবিক শক্তির মধ্যে সংঘাতে...এই ধরনের সংঘাত আসলে একটি অযৌক্তিকতা।

তিনি আরো বলেন, “ভারত ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে, এই ধরনের সংঘাত ১.৬ বিলিয়নেরও বেশি মানুষের বিপদ ডেকে আনতে পারে।”

আইএসপিআর প্রধান বলেন, “বাস্তবে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের কোনো স্থান নেই এবং যদি কেউ যুদ্ধের জন্য এই স্থান তৈরি করতে চায়, তবে সে আসলে পারস্পরিক ধ্বংসের জন্য স্থান তৈরি করছে।”

সংবাদ সম্মেলনে লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী জানান, ভারতের উস্কানি সত্ত্বেও পাকিস্তান পুরো সংঘাত জুড়ে কৌশলগত পরিপক্কতার সঙ্গে কাজ করেছে। তিনি বলেন, “ভারতীয় আগ্রাসনের জবাব সতর্কতার সঙ্গে পরিচালিত হয়েছে যাতে অনিয়ন্ত্রিত উত্তেজনা এড়ানো যায় এবং একই সাথে প্রচলিত সামরিক বাহিনী ব্যবহার করে ‘দ্বিগুণ’ উচ্চতর জবাব দেওয়া হয়েছে।”

আইএসপিআর প্রধান ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের ‘অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস’কে ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতি পাকিস্তানের একটি ব্যাপক জাতীয় প্রতিক্রিয়া হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “এই অভিযানের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনী জাতির কাছে দেওয়া প্রতিটি প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছে।”

তিনি বলেন, “অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস জাতীয় শক্তির সকল উপাদানের একত্রিত হওয়ার এক দুর্দান্ত উদাহরণ। পাকিস্তানি জনগণের অপ্রতিরোধ্য সমর্থনে, আমরা কার্যকরভাবে আমাদের জাতীয় সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা এবং আমাদের মহান মাতৃভূমির প্রতি প্রত্যক্ষ হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করেছি।” 

লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী পুনর্ব্যক্ত করেন যে, সংঘাতের শুরুতে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী তিনটি স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল: “আমরা ভারতীয় আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব দেব। সেই জবাব আমাদের নিজস্ব পছন্দের সময়, স্থান এবং পদ্ধতিতে আসবে। এবং যখন আমরা পাল্টা আঘাত করব, তখন পুরো বিশ্ব জানবে- এটি এমন কিছু হবে না যা আপনাকে ভারতীয় মিডিয়ার কাছে বলতে হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এগুলো কেবল অভিপ্রায়ের বিবৃতি নয় বরং উদ্দেশ্য, যা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়েছে। আমরা এটাই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম এবং তা পূরণ করেছি।”

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাবেক সেনাসদস্যদের আবেদন পুনর্বিবেচনা করছে সেনাবাহিনী: আইএসপিআর
  • সাবেক সেনাসদস্যদের আবেদন সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে, ধৈর্য ধরার পরামর্শ
  • ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানে নিহত সেনাসদস্যের সংখ্যা বেড়ে ১৩: আইএসপিআর
  • ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাবে কি বিব্রত ভারত
  • ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষে ১১ সেনা নিহত ও ৭৮ জন আহত হয়েছেন: পাকিস্তান আইএসপিআর
  • ভারতীয় হামলায় পাকিস্তানে ১১ সেনা নিহত, আহত ৭৮: আইএসপিআর
  • ভারতই যুদ্ধবিরতির আগ্রহ দেখিয়েছে, দাবি পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর
  • পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করেনি: আইএসপিআর প্রধান