‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে মন্তব্য করায় ভারতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গ্রেপ্তার
Published: 18th, May 2025 GMT
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরিচালিত ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভারতের অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আলী খান মাহমুদাবাদকে রবিবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এনডিটিভি অনলাইন জানিয়েছে, ক্ষতিকর কর্মকাণ্ড, সশস্ত্র বিদ্রোহ বা নাশকতামূলক কার্যকলাপের প্ররোচনা এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের অবমাননার সাথে সম্পর্কিত ফৌজদারি কার্যবিধির ধারায় অধ্যাপক আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
৮ মে ফেসবুকে এক পোস্টে মাহমুদাবাদ লিখেছিলেন, “আমি খুব খুশি যে এত ডানপন্থী মন্তব্যকারী কর্নেল সোফিয়া কুরাইশির প্রশংসা করছেন, কিন্তু সম্ভবত তারা একইভাবে জোরে জোরে দাবি করতে পারেন যে গণপিটুনি, নির্বিচারে বুলডোজার হামলার শিকার এবং বিজেপির ঘৃণা ছড়ানোর শিকার অন্যান্যদের ভারতীয় নাগরিক হিসেবে সুরক্ষিত রাখা হোক। দুই নারী সেনার অনুসন্ধানমূলক উপস্থাপনের দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ, তবে দৃষ্টিভঙ্গিকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে, অন্যথায় এটি কেবল ভণ্ডামি।”
পোস্টটিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর মুসলিম কর্মকর্তা সোফিয়া কুরেশি এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে আক্রমণের বিষয়ে বলা হয়েছিল। এই সোফিয়া কুরেশি ‘অপারেশন সিঁদুর’ চলাকালে নিয়মিত প্রেসি ব্রিফ করতেন।
সোমবার হরিয়ানা নারী কমিশন জানিয়েছে, অধ্যাপকের বক্তব্য ‘ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর মহিলা অফিসারদের অবমাননা করেছে এবং সাম্প্রদায়িক বৈষম্যকে উস্কে দিয়েছে।’
পরে এক্স- এ এক পোস্টে অধ্যাপক মাহমুদাবাদ তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, “আমার পুরো মন্তব্যই ছিল নাগরিক এবং সেনা উভয়ের জীবন রক্ষা করার বিষয়ে। তাছাড়া, আমার মন্তব্যে এমন কিছু নেই যা নারীবিদ্বেষী বলে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।”
তবে অধ্যাপক মাহমুদাবাদের এই মন্তব্যে নাশকতামূলক কার্যকলাপে প্ররোচনা দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে শনিবার হরিয়ানার ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) যুব শাখার সাধারণ সম্পাদক যোগেশ জাঠেরি মামলা করেন।
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানে হামলার নিন্দা ব্রিকসের, কাদের ওপর অতিরিক্ত ১০% শুল্ক বসানোর হুমকি দিলেন ট্রাম্প
ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে নেতারা ‘ভবিষ্যৎ না ভেবে দেওয়া’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা আমদানি শুল্ক আরোপ এবং সম্প্রতি ইরানে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ হামলার কড়া সমালোচনা করেছেন। গতকাল রোববার ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
গতকাল রাতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এই সমালোচনার জবাবে হুমকি দিয়ে লিখেছেন, ‘যেকোনো দেশ, যারা ব্রিকসের যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী নীতির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করবে, তাদের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এ নীতির কোনো ব্যতিক্রম হবে না।’
ব্রিকসের ১১টি উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে রয়েছে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশ। এই সংস্থা বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে এবং বৈশ্বিক উৎপাদনের ৪০ শতাংশের বেশি অবদান রাখে।
এই জোট অনেক বিষয়ে বিভক্ত হলেও যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা শুল্কনীতি ও আচরণের বিষয়ে তারা একমত। অবশ্য সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নাম সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি।
সম্মেলনের যৌথ বিবৃতিতে ব্রিকস নেতারা বলেন, ‘একতরফাভাবে বৃদ্ধি করা শুল্ক নিয়ে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। কারণ, এই শুল্ক বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি করতে পারে।’
ইরানের পাশে ব্রিকস
ব্রিকস সম্মেলনে ইরানের প্রতি প্রতীকী সমর্থন জানিয়ে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক সামরিক হামলার নিন্দা জানানো হয়েছে। এই দুই দেশ ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ নিশানায় এসব হামলা চালায়।
চলতি বছরের এপ্রিলে ট্রাম্প তাঁর মিত্র ও প্রতিপক্ষ দেশগুলোকে একের পর এক শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। তবে বাজারে ভয়াবহ দরপতনের মুখে পড়ে কিছু সময়ের জন্য তা স্থগিত করেন।
ট্রাম্প হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, আগামী ১ আগস্টের মধ্যে চুক্তি না হলে তিনি একতরফা শুল্ক আরোপ করবেন। তবে সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র যেমন ব্রাজিল, ভারত ও সৌদি আরবের প্রতি সম্মান রেখে যুক্তরাষ্ট্র বা ট্রাম্পের নাম কোনো জায়গায় সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি।
সম্মেলনের প্রেক্ষাপট ও অনুপস্থিতির বিষয়
প্রায় ২০ বছর আগে গঠিত ব্রিকস এখন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা শক্তির বিকল্প কেন্দ্র হিসেবে চীনের নেতৃত্বাধীন একটি শক্তিশালী মঞ্চ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
তবে সদস্যসংখ্যা বাড়িয়ে ইরান, সৌদি আরবসহ নতুন নতুন দেশ যুক্ত হওয়ায় গাজা যুদ্ধ কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য নিয়ে জোটের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা কঠিন হয়ে পড়েছে।
যেমন ব্রিকস সম্মিলিতভাবে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বে শান্তিপূর্ণ দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষে অবস্থান নেয়। অথচ ইরান বহুদিন ধরে বলে আসছে, ইসরায়েলের ধ্বংস হওয়া উচিত।
একজন ইরানি কূটনীতিক বলেন, তাঁদের সরকারের পক্ষ থেকে ‘কিছু আপত্তি’ ব্রাজিলের আয়োজকদের জানিয়েছে। তবুও ইরান পুরো বিবৃতিকে প্রত্যাখ্যান করেনি।
ব্রাজিল সরকারের একটি সূত্র জানায়, এই স্পর্শকাতর অবস্থান থেকে বোঝা যায়, কেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকালের আলোচনায় অংশই নেননি।
সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপ্রযুক্তির অস্ত্রের সবচেয়ে বড় গ্রাহকদের একজন এবং বহুদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র।
গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতা অনুপস্থিত
চলতি বছরের সম্মেলনের রাজনৈতিক গুরুত্ব কিছুটা কমে গেছে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়েরঅনুপস্থিতির কারণে। তিনি ১২ বছরের মধ্যে এবার প্রথম ব্রিকস সম্মেলনে উপস্থিত হননি।
এ ছাড়া রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সরাসরি সম্মেলনে আসেননি। তিনি ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে সম্মেলনে অংশ নেন। তাঁর বিরুদ্ধে ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত।
সম্মেলনে পুতিন তাঁর বক্তব্যে বলেন, ব্রিকস এখন বৈশ্বিক নেতৃত্বের গুরুত্বপূর্ণ এক শক্তি হয়ে উঠেছে।
এআই নিয়ে উদ্বেগ
সম্মেলনে নেতারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারে আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন গঠনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই প্রযুক্তি শুধু ধনী দেশগুলোর একচেটিয়া অধিকার হতে পারে না।
বর্তমানে এই খাতে যুক্তরাষ্ট্রের টেক জায়ান্টরা এগিয়ে থাকলেও চীন ও অন্যান্য দেশও দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে।