কাকরাইল মোড়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের রাতভর অবস্থান, কর্মসূচি অব্যাহত
Published: 22nd, May 2025 GMT
ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় রাজধানীর কাকরাইল মসজিদের সামনের মোড়ে নেতা-নেতা-কর্মীদের অবস্থান করতে দেখা যায়।
নেতা-কর্মীরা জানান, তাঁরা রাতভর কাকরাইল মোড়েই অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন।
আজ সকাল সোয়া আটটার দিকে দেখা যায়, কাকরাইল মোড় থেকে যমুনার দিকে যেতে সড়কের ডান পাশে পুলিশ ব্যারিকেডের সামনে শতাধিক নেতা-কর্মী বসে-দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
ছোট ছোট দলে আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন আরও কয়েক শ নেতা-কর্মী।
সারা রাত অবস্থান করা কিছু নেতা-কর্মীকে বিশ্রাম নিতে দেখা যায়। কেউ কেউ আবার রাস্তায় বিছিয়ে রাখা ত্রিপলে শুয়ে-বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।
কাকরাইল মোড় থেকে মৎস্য ভবনের দিকে যাওয়ার সড়কে স্বেচ্ছাসেবক দলের বেশ কিছু নেতা-কর্মীকে ইশরাকের পক্ষে স্লোগান দিতে দেখা যায়।
আজ সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে সংশ্লিষ্ট সড়কপথ দিয়ে কর্মস্থলের দিকে যাওয়া লোকজনকে ভোগান্তিতে পরতে দেখা গেছে।
মৎস্য ভবন সংলগ্ন মোড়ে দেওয়া প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে কাকরাইল মোড়ে আসা অনেক মোটরসাইকেল চালককে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিতে দেখা যায় অবস্থানকারী নেতা-কর্মীরা।
রাস্তা বন্ধ থাকায় কাকরাইল মোড় থেকে মৎস্য ভবন কিংবা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের দিকে যেতে চাওয়া অনেককে অন্য দিক দিয়ে যেতে দেখা গেছে।
কেউ কেউ অবস্থান নেওয়া নেতা-কর্মীদের কাছে গিয়ে গন্তব্য জানিয়ে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করছিলেন। কিন্তু কাউকেই যেতে দেওয়া হচ্ছিল না।
সকাল ৯টার দিকে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীদের একসঙ্গে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। এ সময় তাঁরা স্লোগান দিচ্ছিলেন, ‘রাজপথের ইশরাক ভাই, আমরা তোমার ভুলি নাই’; ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই’; ‘যমুনারে যমুনা, আমি কিন্তু যাব না’, ‘শপথ নিয়ে টালবাহানা, চলবে না, চলবে না’, ‘আদালতে হস্তক্ষেপ, চলবে না, চলবে না’, ‘এ লড়াইয়ে জিতবে কারা, ইশরাক ভাইয়ের সৈনিকেরা’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ ঘিরে এলাকাটিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের এই অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয় গত বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে। মৎস্য ভবন মোড়, কাকরাইল মসজিদের সামনের মোড়সহ আশপাশের এলাকায় তাঁরা অবস্থান নেন। দিনভর সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যান তাঁরা।
গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন অবস্থান কর্মসূচিতে এসে ঘোষণা দেন, মেয়র পদে দায়িত্ব বুঝে না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। পাশাপাশি তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি করেন। ইশরাক হোসেন বলেন, সরকারের নিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনতে দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ করা উচিত।
পরে ইশরাক হোসেন আন্দোলনস্থলে অবস্থান নেন। রাত পৌনে ১২টা পর্যন্ত তিনি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে অবস্থান করেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইশর ক হ স ন মৎস য ভবন অবস থ ন ন কর ম দ র ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্প কীভাবে ‘ম্যাডম্যান তত্ত্ব’ ব্যবহার করে বিশ্ব বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে গত মাসে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ইরানে হামলায় তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন কি না। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এটা করতে পারি। আবার আমি না-ও করতে পারি। আমি কী করতে যাচ্ছি, তা কেউই জানে না।’
ট্রাম্প বিশ্বকে এমনটা বিশ্বাস করতে দিয়েছিলেন যে ইরানকে আলোচনা শুরুর সুযোগ দিতে দুই সপ্তাহ হামলা স্থগিত রাখার বিষয়ে তিনি সম্মত হয়েছেন। কিন্তু পরে এ সময়ের মধ্যেই তিনি হামলা চালিয়ে বসেন।
এ ঘটনায় একটি প্রবণতা সামনে এসেছে, ট্রাম্পের সম্পর্কে সবচেয়ে অনুমেয় বিষয়টি হলো তাঁর অননুমেয় আচরণ। তিনি তাঁর চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করেন। তিনি স্ববিরোধী কাজ করেন। তাঁর কথা আর কাজে মিল নেই।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক পিটার ট্রুবোউইৎজ বলেন, ‘(ট্রাম্প) একটি অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া তৈরি করেছেন, অন্তত পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে। সম্ভবত (প্রেসিডেন্ট) রিচার্ড নিক্সনের পর থেকে এটিই সবচেয়ে কেন্দ্রীভূত।’ তিনি বলেন, ‘এটি নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তগুলোকে ট্রাম্পের আচরণ, তাঁর পছন্দ ও মেজাজ-মর্জির ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল করে তুলেছে।’
ট্রাম্প তাঁর এই বৈশিষ্ট্যকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে আসছেন। তিনি তাঁর নিজের অননুমেয় আচরণকে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত ও রাজনৈতিক সম্পদে পরিণত করেছেন। তিনি এই অননুমেয় আচরণকে একটি মতবাদ বা নীতির পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। আর এখন যে ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য তিনি হোয়াইট হাউসে নিয়ে এসেছেন, সেটিই পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি বিশ্বব্যবস্থার বিদ্যমান কাঠামো পাল্টে দিচ্ছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এটিকে ‘ম্যাডম্যান থিওরি’ বা ‘খ্যাপাটে তত্ত্ব’ বলে থাকেন। এই তত্ত্বে একজন বিশ্বনেতা তাঁর প্রতিপক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি নিজের মেজাজ-মর্জিমতো যেকোনো কিছু করতে সক্ষম, যাতে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করা যায়। সফলভাবে ব্যবহার করা হলে এটি একধরনের জবরদস্তি বা চাপ প্রয়োগের কৌশল হতে পারে। ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, এটি সুফল দিচ্ছে এবং এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের তাঁর পছন্দমতো অবস্থানে নিয়ে আসতে পারছেন।
কিন্তু এটি কি এমন পদ্ধতি, যা শত্রুদের বিরুদ্ধেও কাজে দেবে? আর এর ত্রুটি কি এমনটি হতে পারে যে এটি প্রতিপক্ষকে বোকা বানানোর জন্য তৈরি করা একটি কৌশল না হয়ে বরং সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুস্পষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে গঠিত, যার ফলে তাঁর আচরণ আরও সহজে অনুমানযোগ্য হয়ে ওঠে?
কথার আক্রমণ, অপমান ও কাছে টানা
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কাছে টেনে আর আমেরিকার মিত্রদের কথার আক্রমণের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করেন। তিনি কানাডাকে অপমান করে বলেছিলেন, দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হয়ে যাওয়া উচিত।
ট্রাম্প বলেছিলেন, গ্রিনল্যান্ডকে (আমেরিকার মিত্র ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগের কথা বিবেচনা করতে তিনি প্রস্তুত। তিনি আরও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত পুনরায় পানামা খালের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।
সামরিক জোট ন্যাটো সনদের ৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি সদস্যদেশ অন্য দেশকে রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের এ অঙ্গীকারকে সংশয়ের মধ্যে ফেলে দেন। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন, ‘আমি মনে করি, (ন্যাটো সনদের) ৫ অনুচ্ছেদ লাইফ সাপোর্টে আছে।’
ন্যাটো সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (প্রথম সারিতে বাঁ থেকে চতুর্থ) ও বিশ্বনেতারা