ঈশ্বরদীতে বিমানবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে ফতেমোহাম্মদপুর এলাকার একটি বাড়ি থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন– ফতেমোহাম্মদপুরের নিউ কলোনির আল আমিন, শিহাব হোসেন ও মো. নাদিম। 

ফতেমোহাম্মদপুরের ড্রাইভার পাড়ার মো. জাভেদ খানের দুই ছেলেকে ঈশ্বরদী বিমানবন্দরে ড্রোন গার্ড পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে তিন প্রতারক ১০ লাখ টাকা দাবি করে। জাভেদ খান ছেলেদের সঙ্গে আলোচনা করে গত ২ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাদের ছয় লাখ ৪০ হাজার টাকা দেন। এ সময় তারা জাভেদ খানের ছেলেদের বায়োডাটা, ছবি ও এনআইডি কার্ডের ফটোকপি নিয়ে যান।

পরে ভেরিফিকেশনের জন্য ৫০ হাজার ও মিষ্টি খাওয়া বাবদ আরও এক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এ ছাড়া ট্রেনিং ও সাঁতার শেখানোর কথা বলে একটি হাইসে (মাইক্রোবাস) করে তাদের রাজশাহী চিড়িয়াখানায় নিয়ে যান। ১৮ মে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে ড্রোন গার্ড পদে চাকরির নিয়োগপত্র প্রদান করা হবে বলেও জানায়। ২০ মে সকাল ১০টার দিকে প্রতারক চক্র জাবেদ খানের বাড়িতে গিয়ে ১৫০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করা চাকরির চুক্তিনামা দেন। এতে জাবেদ খানের সন্দেহ হলে ঈশ্বরদী থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। 

ওসি শহিদুল ইসলাম শহিদ জানান, গ্রেপ্তার তিন প্রতারক পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে এ চক্রের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে জানা গেছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প বন

এছাড়াও পড়ুন:

৫ বছরে সাতছড়িতে গাড়িচাপায় শতাধিক প্রাণির মৃত্যু

গত পাঁচ বছরে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া পুরাতন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে গাড়িচাপায় শতাধিক প্রাণি মারা গেছে। বহু প্রাণি আহত হয়ে পঙ্গু হয়েছে।

সবশেষ মঙ্গলবার (২০ মে) বিকেল ৩টার দিকে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে বিপন্ন প্রজাতির মুখপোড়া হনুমানের একটি বাচ্চা গাড়ির চাপায় মারা যায়। আহত হয় মা হনুমানটি। বন বিভাগ মৃত বাচ্চাটি উদ্ধার করে নিয়ে গেছে। তবে আহত মা হনুমানটিকে খুঁজে পায়নি।

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক এক সদস্য বলেন, “কয়েক বছরের মধ্যে গাড়িচাপায় ১২ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি কিং কোবরা, একটি শঙ্খিনী সাপ, একটি কালনাগিনী সাপ, একটি চশমাপরা হনুমান, একটি মুখপোড়া হনুমান, একটি মায়া হরিণ ও কয়েকটি বানর মারা যাওয়ার পর আমি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। এছাড়া আরও অনেক প্রাণি মারা যাওয়ার খবর শুনেছি। গত পাঁচ বছরে দুর্ঘটনাজনিত কারণে মারা যাওয়া প্রাণির সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যাবে।”

তিনি আরও বলেন, “স্থানীয়দের মতে-গাড়িচাপায় সবচেয়ে বেশি মারা যায় বানর। কারণ এরা রাস্তার পাশে বেশি ঘোরাফেরা করে। এছাড়া মারা যায় হনুমান, বন মোরগ, সজারু, বনরুই ও বিভিন্ন প্রজাতির সাপ।”

প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে বর্তমানে ১৯৭ প্রজাতির জীবজন্তুর বসবাস। এর মধ্যে ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৬ প্রজাতির উভচর প্রাণি এবং আরও প্রায় ২০০ প্রজাতির পশুপাখি রয়েছে।

প্রাণির মৃত্যুর বিষয়ে বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ সোসাইটির (ডব্লিউসিএস) সমন্বয়কারী সামিউল মোহসেনিন বলেন, “বনের ভেতর দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার সড়কে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিসীমা ২০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা থাকলেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক রোড সাইন নেই। চালকরাও প্রাণির প্রতি সদয় আচরণ করেন না। ফলে দিন দিন প্রাণি মৃত্যুর হার বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে রোড সাইন বাড়ানোসহ জরুরি প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিকল্প নেই।”

তিনি আরও বলেন, “একটি জার্মান আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা সাতছড়িতে প্রাণি মৃত্যুর হার নির্ধারণে কাজ করছে। তারা এখানকার পরিস্থিতি নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন।”

বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মীর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “সাতছড়িতে ঠিক কত প্রাণি মারা গেছে, তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে অনেক প্রাণি যে গাড়িচাপায় মারা যাচ্ছে, তা সত্যি। মূলত সড়ক পরিবহন আইনে স্পিড ব্রেকার নির্মাণের বিধান না থাকায় এমনটা ঘটছে।”

তিনি দাবি করেন, “গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার প্রাণি মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান স্যারের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিয়ে কিছু করার চেষ্টা করব।”

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন কয়েক শতাধিক বালু ও পাথরবোঝাই ট্রাক সাতছড়ি সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে যাতায়াত করে। এছাড়া বাস, ট্রাক ও ট্রাক্টরসহ বিভিন্ন যানবাহন বেপরোয়া গতিতে বনের মধ্যবর্তী সড়ক ব্যবহার করছে, যা প্রাণি মৃত্যুর জন্য দায়ী।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ছয় মাস আগেও যানবাহনের নিচে চাপা পড়ে মুখপোড়া হনুমান মারা গিয়েছিল। এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।”

তিনি আরও বলেন, “সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে মাত্র কয়েক জোড়া বিপন্ন হনুমান টিকে আছে। এভাবে একের পর এক হনুমান মারা গেলে সাতছড়ি থেকে বিলীন হয়ে যাবে এ প্রাণিটি।”

ঢাকা/মামুন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ