সকালে কেন কোমর ব্যথা বাড়ে? করণীয় জেনে নিন
Published: 23rd, May 2025 GMT
সকালে ঘুম থেকে জাগার পরে অনেকে কোমর ব্যথা অনুভব করেন। চিকিৎসকেরা বলেন, ‘‘দিনে মানুষ অ্যাকটিভ অবস্থায় থাকেন। আর রাতে ঘুমের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ একইদিকে ফিরে শুয়ে থাকেন অথবা মাঝে মাঝে একদিকে একটু সরে যান। সারারাত প্রায় একই অবস্থানে শুয়ে থাকার কারণে, শরীরের অ্যাকটিভিটি কম হয়। এর ফলে শরীরের ভেতরে যে ফ্লুইড বা পানি থাকে সেটা মানুষের শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট, মাসলে জমে যায়। এতে জয়েন্ট এবং মাসলগুলো একটু ফুলে যায়।’’
ফিজিওথেরাপিস্টরা বলছেন, ‘‘ পানি জমা হওয়ার পরে জয়েন্টগুলোতে যে নার্ভের লিঙ্কগুলো থাকে তার ওপর প্রেসার পড়ে। দিনে চলাফেরা করার জন্য, মাসল বা জয়েন্টগুলো ফ্লুইড জমায় না। যার ফলে দিনে শরীরের ব্যথা কম থাকে কিন্তু দীর্ঘসময় শুয়ে থাকার ফলে শরীরের জয়েন্টগুলোতে পানি জমে যায় এবং বেশি ব্যথা অনুভূত হয়।’’
তবে সকালে কোমর ব্যথা হওয়ার জন্য আরও কিছু কারণ রয়েছে। যেমন আপনি যে বিছানায় শুয়েছেন সেটার অবস্থা কি এবং আপনি যে বালিশে শুয়েছেন সেই বালিশ আপনার জন্য অ্যাকসেপ্টেড কিনা। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে, আপনি যে পজিশনে ঘুমিয়েছেন সেই পজিশন আপনার শরীরের সঙ্গে মিলিয়ে সঠিক কিনা।
মেডিকেল নিউজ টুডে-এর তথ্য, ২০২১ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে পেশী শিথিলকারীগুলি দীর্ঘস্থায়ী পিঠের ব্যথার জন্য সাধারণত অকার্যকর এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। পেশী শিথিলকারী বিবেচনা করা ব্যক্তিদের তাদের ডাক্তারের সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করা উচিত।
আরো পড়ুন:
ছিলেন ভিক্ষুক, হয়েছেন চিকিৎসক
লিচু খাচ্ছেন, এই ফলের ভালো-মন্দ জেনে নিন
সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে কোমর ব্যথা অনুভব করলে একজন দক্ষ ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নিয়ে রাতে ঘুমানোর ভঙ্গি নির্ধারণ এবং ব্যায়ামের নির্দেশনা নিতে পারেন। এ ছাড়া কিছু নিয়ম মেনে কোমরের ব্যথা কমাতে পারেন।
গরম এবং ঠান্ডা থেরাপি: কোমরের ব্যথা কমানোর জন্য পিঠের নীচের অংশে গরম তাপ বা বরফের প্যাক প্রয়োগ করলে ব্যথা এবং প্রদাহ কমতে পারে। এই থেরাপি আপনার কোমরের নড়াচড়া উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
মৃদু স্ট্রেচিং: মৃদু স্ট্রেচিং কোমর ব্যথা উপশম করতে পারে এবং পিঠের নীচের অংশে গতিশীলতা উন্নত করতে পারে। তবে, স্ট্রেচিং করবেন কিনা-এই বিষয়ে প্রথমে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অনেক সময় স্ট্রেচিং কোমরের ব্যথা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
সূত্র: মেডিকেল নিউজ টুডে
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জয় ন ট র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ