জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেছেন, বর্তমান সরকারের দায়িত্ব বৈষম্যহীন বাংলাদেশের পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানো। কিন্তু সরকার জাতীয় সক্ষমতা না বাড়িয়ে বিকল্প খুঁজছে। 

শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ হলে গণতান্ত্রিক নাগরিক কমিটি আয়োজিত ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে কেমন বাজেট চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সভায় আগামী অর্থবছরের বিভিন্ন খাতের বাজেট নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশেষজ্ঞ আলোচকরা।

আনু মুহাম্মদ বলেন, বিকল্প হিসেবে বিদেশি কোম্পানিকে চট্টগ্রাম বন্দর না দিয়ে দেশের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাগুলো দূর করে জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানো যেতো। তাহলে এর প্রভাব ভবিষ্যতেও থাকতো।

তিনি বলেন, এই সরকার অস্থায়ী সরকার। যার স্থায়ী কোনো ম্যান্ডেট নেই। এই সরকার দীর্ঘদিন থাকবে না। সুতরাং তার পক্ষে অনেক কিছুই করা সম্ভব নয়। কিন্তু কিছু করণীয় সরকার খুব সহজেই করতে পারে। যেমন শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি। এটা বহু বছরের দাবি। আমরা চাই, সামনের বাজেটে যথাযথ কাজটি সরকার গ্রহণ করুক এবং বৈষম্যহীন বাংলাদেশের যাত্রাটা অগ্রসর হোক।

অর্থবছর পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, আমাদের অর্থবছর ব্রিটিশ আমলের মতো জুলাই-জুন থাকার কারণে দুর্নীতির একটি সুযোগ তৈরি হয়, অর্থেরও অপচয় হয়। এটাকে বাংলা বছর অনুযায়ী ১৪ এপ্রিল থেকে ১৩ এপ্রিল অথবা ইংরেজি বছর অনুযায়ী ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর করা যেতে পারে। 

শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ অন্যান্য খাতে দুর্নীতি, অপচয়, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, অপ্রয়োজনীয় বরাদ্দ, অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফর এবং অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ বন্ধ করার তাগিদ দেন আনু তিনি।
 
সভায় কৃষি বাজেট নিয়ে আলোচনায় শিক্ষক ও গবেষক মাহা মির্জা বলেন, কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধিতে কৃষকের উৎপাদন খরচ ক্রমাগত বাড়ছে। ফসল উৎপাদন করে কৃষক টিকতে পারছে না। সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএডিসির বীজের সরবরাহ বাড়ানোসহ কৃষি খাতের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে পাঁচটি সুপারিশ করেন তিনি। 

জ্বালানি বাজেট নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা ঋতু বলেন, ক্ষমতাচ্যুত সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বাজেটে আমদানিতে ব্যয় বেশি এবং দেশীয় গ্যাস উৎপাদনকে অবহেলা করেছে। বর্তমান সরকারকে দেশি বিশেষজ্ঞদের দিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিকল্পনা করতে হবে। 

চিকিৎসা বাজেট নিয়ে আলোচনায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যাপক ডা.

হারুন উর রশীদ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সংকট ও উত্তরণের পথ প্রসঙ্গে চিকিৎসক ১৬টি করণীয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যকে জনগণের মৌলিক অধিকার হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। গণমুখী স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। 

গত দেড় দশকের বাজেটের প্রবণতা নিয়ে লেখক ও গবেষক মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, গত ১৫ বছরে জনপ্রশাসন খাতের ব্যয় ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আমলা ও সচিবদের বরাদ্দ ক্রমাগত বেড়েছে, যেটা কাম্য নয়।  

বাজেটে বৈষম্য ও সামাজিক নিরাপত্তা নিয়ে লেখক এবং গবেষক কল্লোল মোস্তফা বলেন, এ দেশের কর ব্যবস্থা বৈষম্যমূলক। সরকার ধনীদের কাছ থেকে কর আদায়ে জোর না দিয়ে জোর দেয় দরিদ্র-নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছ থেকে পরোক্ষ কর আদায়ে। যা অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।

শিক্ষা বাজেট নিয়ে আলোচনায় সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিক বলেন, বাজেটে মোট জিডিপির ছয় ভাগ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ রাখতে হবে। বাজেটে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা এবং শিক্ষকদের যাবতীয় সংকট দূর করতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিতে হবে। 

সংস্কৃতি বাজেট নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাতা সজীব তানভীর বলেন, সংস্কৃতি খাতকে একটি অলাভজনক খাত হিসেবে চিন্তা করার মানসিকতা পরিহার করতে হবে। প্রশাসননির্ভর শিল্পচর্চা ব্যয় কমিয়ে সর্বসাধারণের কাছে সহজলভ্য করার প্রকল্পে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে।

‘শ্রীলঙ্কা থেকে কী শিখলাম’ বিষয়ে আলোচনায় লেখক কৌশিক আহমেদ বলেন, শ্রীলঙ্কার এনপিপির মতো একটি নীতিনিষ্ঠ ও অংশগ্রহণমূলক জোট তৈরি করে মানুষের অংশগ্রহণে ইশতেহার তৈরি করতে হবে। যেখানে থাকবে অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার, ধর্মনিরপেক্ষতা, পরিবেশ সচেতনতা ও লিঙ্গ সমতার নিশ্চয়তা, সত্যিকার অন্তর্ভুক্তি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা।
 
জেন্ডার বাজেট নিয়ে অ্যাকটিভিস্ট মারজিয়া প্রভা বলেন, এখনও পর্যন্ত রাষ্ট্র নারীর জন্য বিশেষায়িত বাজেট বরাদ্দকে জেন্ডার বাজেট হিসেবে দেখাতে চাচ্ছে। সেক্ষেত্রে কোন মন্ত্রণালয় কীভাবে তার প্রকল্পে নারীকে সুবিধাভোগীর জায়গায় রাখছে তা স্পষ্ট করতে হবে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ বর দ দ দ বল ন সরক র ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ

‎পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

আরো পড়ুন:

সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা

পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা

‎গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‎বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

‎সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি। 

এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

‎ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিনা মূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের সুযোগ, সারা দেশে ৮টি কেন্দ্রে
  • দক্ষিণ সিটির রাজস্ব আদায়ে ধস, আন্দোলনের ক্ষত এখনো কাটেনি
  • ২ কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং নির্ণয়
  • ৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
  • সেপ্টেম্বরের ১৬ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ২০ হাজার কোটি টাকা
  • বাংলাদেশ ব্যাংক এক দিনে ২৬ ব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি ডলার কিনল কেন