বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, জলাশয় দখল ও দূষণসহ বিভিন্ন রকমের দূষণে ঢাকা শহরের পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত। এর ওপর যুক্ত হচ্ছে সিগারেটের ক্ষতিকারক রাসায়নিক দূষণ। এই দূষণ রোধে সিগারেট উৎপাদনকারী বহুজাতিক ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির (বিএটিবি) কারখানাটি ঢাকা শহরের আবাসিক এলাকা থেকে সরানোর দাবি তুলেছে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন। সরকারকে পরিবেশের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত কারখানাটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার দাবি করেছে সংগঠনগুলো।

রাজধানীর সেখানকার বাসিন্দারা দাবি করেন, ঘণবসতিপূর্ণ মহাখালী ডিওএইচএস এলাকায় অবস্থিত বিএটির সিগারেট কারখানা পরিবেশ ও জনস্বাস্থের জন্য মারাত্মক হুমকি। অত্র এলাকা থেকে এ সিগারেট কারখানা দ্রুত অপসারণ করা দরকার। বিশেষ করে, শিশু, নারী, বৃদ্ধদের তামাকের বিষস্ক্রিয়া থেকে রক্ষায় মহাখালী ডিওএইচএস আবাসিক এলাকা থেকে অবিলম্বে সিগারেট কারখানা সরাতে হবে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) গত ১৪ মে এক বিবৃতিতে জানায়, ১৯৬৫ সালে যখন ঢাকার মহাখালী ডিওএইচএস এলাকায় বিএটিবির তামাক কারখানা স্থাপন করা হয়, তখন এটি একটি গ্রামীণ জনপদ ছিল। মূল শহরের অংশ ছিল না। ক্রমান্বয়ে মহাখালী ডিওএইচএস এলাকা ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক ও পর্যায়ক্রমে মিশ্র-আবাসিক এলাকায় পরিণত হয়েছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার শিশু লেখাপড়া করে। কিন্তু বিএটির তামাক কারখানা থেকে নির্গত তামাকের রাসায়নিকের কারণে বাতাস দূষিত হচ্ছে, শিশুদের শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা হচ্ছে।

আরো পড়ুন:

সকালে কেন কোমর ব্যথা বাড়ে? করণীয় জেনে নিন

ছিলেন ভিক্ষুক, হয়েছেন চিকিৎসক

তামাক কোম্পানির প্রভাবে ২০২৩ সালে এসে ‘পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা’ সংশোধন করে তামাকসংশ্লিষ্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে লাল শ্রেণির পরিবর্তে কমলা শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে এবং তামাক চাষে ২৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে শূন্য শতাংশ করা হয়েছে। তামাক কোম্পানি ও তাদের অনৈতিক কার্যক্রম সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।

বাপা ও পবা বলছে, কারখানা থেকে নির্গত তামাকের হাজার হাজার ক্ষতিকর রাসায়নিক বাতাসকে মারাত্মকভাবে দূষিত করে চলেছে। প্রাণঘাতী ও পরিবেশ বিধ্বংসী তামাক কারখানা ঢাকার মহাখালী ডিওএইচএস এলাকার পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী। অবিলম্বে এ তামাক কারখানা শহরের অভ্যন্তর থেকে সরানো জরুরি।

বাপার বিবৃতিতে বলা হয়, তামাক চাষ, চারকোনা ঘরে আগুনের তাপে তামাক পাতা শুকানো, কারখানায় বিড়ি-সিগারেট-জর্দা-গুল ইত্যাদি তামাকপণ্য উৎপাদন, তামাক সেবন ও ধূমপান এবং শেষে এগুলোর বর্জ্য সব প্রক্রিয়াতেই পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতির ক্ষতি করে। তামাক পাতার নিকোটিন ও অন্যান্য রাসায়নিক এবং তামাক চাষে ব্যবহৃত সার ও কীটনাশকের কারণে মাটি, পানি ও বাতাস মারাত্মকভাবে দূষিত হয়। ফলে মাটির উপকারী পোকামাকড়, মাছসহ পানিনির্ভর জলজ প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চুল্লিতে আগুনের তাপে কাঁচা তামাক পাতা শুকানোর সময় বাতাসে নিকোটিন ছড়িয়ে বাতাসকে মারাত্মকভাবে দূষিত করে।

তামাকের মধ্যে হাজার হাজার ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান রয়েছে। তামাক কারখানার কারণে মহাখালী ডিওএইচএস এলাকার বাতাসে নিকোটিনসহ ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে এলাকার শিশু-নারী-বৃদ্ধ সবার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এজন্য আবাসিক এলাকা থেকে ক্ষতিকর সিগারেট কারখানা সরানো সময়ের দাবি।

জানা গেছে, তামাক কোম্পানির প্রভাবে ২০২৩ সালে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা সংশোধন করে তামাক শিল্পকে লাল শ্রেণি থেকে কমলা শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা এবং তামাক চাষে ২৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে শূন্য শতাংশ করা হয়েছে। অথচ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ শহরের কেন্দ্র থেকে তামাক কারখানা সরিয়ে স্বাস্থ্যবান্ধব পরিবেশ তৈরি করেছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তামাকজাত চাষ, নিয়ন্ত্রণ ও কোম্পানিগুলোকে এ ব্যবসা থেকে দূরে সারানোর বিষয়ে নির্দেশনা দিলেও উল্টো সরকার তামাক পাতার রপ্তানি কমিয়েছে।

পরিবেশ নিয়ে কাজ করে বেসরকারি সংস্থা এইড ফাউন্ডেশন প্রকল্পের পরিচালক শাগুফতা সুলতানা রাইজিংবিডিকে বলেন, “সংবিধানে পরিবেশ সংরক্ষণ ও জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের বিষয়টিকে উপেক্ষা করে কোম্পানিগুলোকে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। মহাখালীর বিএটি কারখানা চালু রাখা সংবিধানবিরোধী। একইসঙ্গে আমরা মনে করি কোম্পানিটি এদেশের আইনের প্রতি কোনো ধরনের তোয়াক্কাও করছে না।”

গত ১৮ মে  তামাকবিরোধী ও পরিবেশবাদী সংগঠন অবস্থান কর্মসূচি, মানববন্ধন ও ভার্চুয়াল টক শোর আয়োজন করে

তিনি বলেন, “পরিবেশ রক্ষার্থে এর আগে ঢাকা শহর থেকে অনেক গার্মেন্টস কারখানা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কারখানাগুলো ঢাকার আশেপাশে গড়ে উঠেছে। কিন্তু বিএটি সিগারেট কারখানা কেন সরানো হচ্ছে না, বা কোন কারণে এটিকে রাখা হয়েছে তা এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।?”

কারখানা সরানোর দাবিতে কর্মসূচি
ঘণবসতিপূর্ণ মহাখালী ডিওএইচএস এলাকায় অবস্থিত বিএটির সিগারেট কারখানা সরানোর দবিতে গত ১৮ মে একাধিক তামাকবিরোধী ও পরিবেশবাদী সংগঠন অবস্থান কর্মসূচি, মানববন্ধন ও ভার্চুয়াল টক শোর আয়োজন করে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে পরিবেশ উপদেষ্টা, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, পরিবেশ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে সংগঠনগুলো তাদের দাবি উপস্থাপন করে।

মানববন্ধনে উপস্থিত বক্তারা বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে আমাদের সংবিধানেও স্পষ্ঠভাবে বলা আছে। বাংলাদেশ সংবিধানের ১৮(১) অনুচ্ছেদে ‘জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা’ অংশে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘জনগণের পুষ্টির স্তর-উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতিসাধনকে রাষ্ট্র অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলে গণ্য করবে এবং মদ ও অন্যান্য মাদক পানীয় এবং স্বাস্থ্যহানিকর ভেষজের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে’।

উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালের ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ‘ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড’ এর এক সভায়, ‘মহাখালীস্থ ট্যোবাকো কারখানা থেকে উদ্ভুত তামাকের গুড়া এবং উহার ঝাঝালো অসহনীয় গন্ধ; বায়ু দূষণ তথা পরিবেশ দূষণ চারপাশের লোকজনের স্বাস্থ্যহানীর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ফ্যাক্টরিটি অন্যত্র স্থান্তর করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও রাজধানীর একটি গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকায় তামাক কোম্পানির বহাল তবিয়তে অবস্থান দেখে বোঝা যায় আইন লঙ্ঘনকারী তামাক কোম্পানি জনস্বাস্থ্যকে তোয়াক্কা না করে দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

কর্মসূচিতে বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট, এইড ফাউন্ডেশন, টিসিআরসি, বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটি, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সহ বিভিন্ন পেশাজীবী, আইনজীবী, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, পরিবেশবাদী ও তামাকবিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। 

ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জনস ব স থ য কর র স এল ক য় পর ব শ অবস থ শহর র স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

যৌথবাহিনী বন্ধ করল জনতার বাজার, তাৎক্ষণিক জমে উঠল মেলার বাজার

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের জনতার বাজারে পশুরহাট শনিবার বসতে দেয়নি আইনশৃংখলা বাহিনী। জনতার বাজার বন্ধ ঘোষণার পরপরই বাজার রক্ষার জন্য ‘দিনারপুর পরগনাবাসী’ ব্যানারে একটি মানববন্ধন করা হয়।

জনতার বাজার বন্ধ হয়ে গেলে হাজীগঞ্জ মেলার বাজারে তাৎক্ষণিক বসানো হয় গরুর হাট। জনতার বাজার থেকে ওই বাজারটি ৫০০ থেকে ১ হাজার ফুট দূরে।

শনিবার সকালে সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশের বিশেষ টিম জনতার বাজারের আশপাশে অবস্থান নেয়। এই বাজারে আসা লোকজন ও ব্যবসায়ীদের গরু নিয়ে বাজার ত্যাগ করার জন্য মাইকিং করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এতে বিপাকে পড়েন বাজারে আসা হাজারো গরু ব্যবসায়ী। পরে তারা নিরূপায় হয়ে পাশের হাজীগঞ্জ মেলার বাজারে গরু নিয়ে ওঠেন। মুহুর্তের মধ্যে সেখানে কয়েক হাজার গরু জমায়েত হলে পুরো বাজারটি জমে ওঠে। 

জনতার বাজার পরিচালনা কমিটি বলছে, আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে প্রশাসন তাদের বাজার বন্ধ করে দিয়েছে এই অভিযোগে দিনারপুর পরগনাবাসী নামে মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধন শেষে প্রতিবাদ সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জনতার বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী তোফায়েল আহমদ। সঞ্চালনা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম। বক্তব্য দেন ডা. আবুল কালাম আজাদ, আব্দুশ শহীদ, আব্দুর রশিদ, ময়না মিয়া, কাজী জাহিদ আহমদ, সাবেক মেম্বার স্বপন মিয়া প্রমুখ।

জানা গেছে, ২০২৫ সালের ৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফরিদুর রহমান হাটটিকে অবৈধ ঘোষণা করে ৩১ জানুয়ারির পর হাট বন্ধের নির্দেশ দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে মাইকিং ও নোটিশও টাঙানো হয়। নির্দেশনায় উল্লেখ ছিল, মহাসড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি বা অনুমোদনহীন হাট পরিচালনা করলে হাট-বাজার আইন ২০২৩ এবং মহাসড়ক আইন ২০২১ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ হবে। তবে এসব নির্দেশনার বিরুদ্ধে জনতার বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী তোফায়েল আহমদ হাইকোর্টে রিট করেন। তখন জেলা প্রশাসনের আদেশ হাইকোর্ট স্থগিত করে রুল জারি করেন। এর পর থেকে বাজারটি থেকে কোনো রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে না। ফলে বাজার পরিচালনা কমিটি প্রত্যয়নপত্রের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কাজ না করেই অর্ধেক টাকা তুলে নেন ঠিকাদার
  • পরিবেশ সুরক্ষায় সচেতনতা
  • তিতুমীর কলেজকে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান করার দাবি শিক্ষার্থীদের
  • মাইমুনা হত্যার প্রতিবাদে জবিতে মানববন্ধন
  • টাঙ্গাইলে মিনি স্টেডিয়াম নিহত ফারুকের নামে করার দাবি
  • মুকুলের উপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে ২৩ ও ২৪নং ওয়ার্ড বিএনপি মানববন্ধন 
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সড়ক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ এলাকাবাসীর
  • দোহারে বিএনপি নেতা শিক্ষক হারুনুর রশিদের খুনিদের গ্রেপ্তার দাবিতে মানববন্ধন
  • যৌথবাহিনী বন্ধ করল জনতার বাজার, তাৎক্ষণিক জমে উঠল মেলার বাজার