ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কীটনাশক পানে দম্পতির মৃত্যু
Published: 26th, May 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলায় কীটনাশক পান করে এক দম্পতির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে উপজেলার কুড়েরপাড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এই দম্পতি হলেন আল আমিন (৩৫) ও তাঁর স্ত্রী জরিনা খাতুন (২৫)। আল আমিন কুড়েরপাড় এলাকার নান্নু মিয়ার ছেলে এবং জরিনা একই নোয়াগাঁও গ্রামের ইদ্রিস মিয়ার মেয়ে। আল আমিন পেশায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক ছিলেন। এই দম্পতির দুই ছেলে-মেয়ে আছে।
পুলিশ, পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১১ বছর আগে জরিনার সঙ্গে আল আমিনের বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে নানা বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। আল আমিন ধারদেনা করে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক কিনলেও পরে সেটি বিক্রি করে দেন। এ নিয়ে স্ত্রী জরিনার সঙ্গে গতকাল রাতে ঝগড়া হয়। এরপর জরিনা কীটনাশক পান করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে আল আমিনও কীটনাশক পান করেন। পরে রাত ১০টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে জরিনাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১টার দিকে আল আমিন মারা যান।
আল আমিনের মা সামসুন্নাহার বেগম বলেন, সাংসারিক অশান্তি ও অভাব-অনটনের কারণেই তাঁর ছেলে ও ছেলের বউ এমন করেছেন। তাঁদের ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
জরিনার ভাই আনোয়ার হোসেন বলেন, অভাব-অনটন ও টানাপোড়েনের মধ্যে তাঁদের সংসার চলছিল। এসব নিয়ে ঝগড়ার একপর্যায়ে তাঁর বোন ও বোনের স্বামী কীটনাশক পান করে মারা গেছেন।
আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য ওই দম্পতির মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাসপাতাল মর্গে নেওয়া হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য়
এছাড়াও পড়ুন:
বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা
কদিন ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আড্ডায় ঘুরেফিরে একটাই নাম জিনাত ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই বক্সার প্রথমবারের মতো পা রেখেছেন জাতীয় বক্সিং রিংয়ে। আর প্রথমবারই নিজের জাত চেনালেন।
আজ বিকেলে পল্টনের মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে ৫২ কেজি ওজন শ্রেণির ফাইনালে নেমে প্রতিপক্ষ আফরা খন্দকারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তুলেছেন জিনাত। প্রতিযোগিতার আগেই যাঁর আগমন ঘিরে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে, সেই জিনাত রিংয়ে নামতেই যেন বুঝিয়ে দিলেন, অন্যদের চেয়ে কেন তিনি এগিয়ে।
তিন রাউন্ডের লড়াইয়ে শুরু থেকেই জিনাত ছিলেন আক্রমণাত্মক। পাঞ্চে ছিল গতি, রক্ষণে ছিল আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে আফরা খন্দকার চেষ্টা করেছেন রক্ষণ সামলে লড়াইয়ে টিকে থাকতে। খান কয়েক মোক্ষম ঘুষিতে কিছুটা নড়বড়ে হলেও শেষ পর্যন্ত দমে যাননি আফরা।
বরং জিনাতের ঘন ঘন আক্রমণের ফাঁক গলে এক-আধটু পাল্টা আঘাত করতেও পেরেছেন। তবে এই পর্যায়ের এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হয়ে পড়ে তাঁর জন্য অনেকটাই চাপের। তবু আফরা লড়ে গেছেন। আর জিনাতের আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি এ লড়াইকে করে তুলেছিল দেখার মতো।
গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও আফরার বড় বোন আফঈদা খন্দকার। উৎসাহ দিচ্ছিলেন ছোট বোনকে। পাশে ছিলেন মা–বাবাও। তবে পরিবারের ষোলো আনা সমর্থনও জিনাতকে হারানোর জন্য যথেষ্ঠ হয়নি।
ম্যাচ শেষে আফরা বললেন, ‘তিনি একজন ভালো খেলোয়াড়। তাঁর বিপক্ষে খেলা আমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে তাঁর আক্রমণাত্মক স্কিলটা দুর্দান্ত। ম্যাচ শেষে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, গুড ফাইট।’
বিজয়ী জিনাত পরে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি সবাইকে বলতে চাই, বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা খেলতে চায়। তারা যদি সুযোগ-সুবিধা পায়, অনেক ভালো করবে। ওদের স্কিল আছে।’
সেমিফাইনালে আছিয়া না ফাইনালে আফরা—কোন লড়াইটা বেশি কঠিন ছিল? জিনাতের জবাব, ‘আমি আমার খেলাটা খেলেছি এবং জিতেছি। দুজনই আলাদা ধাঁচের প্রতিপক্ষ।’
জিনাত বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পদক জয়ের আকাঙ্ক্ষার কথা আজও বলেছেন। আগামী এশিয়ান গেমসে সুযোগ পেলে পদক জিতবেন কি না, প্রশ্নের ছোট্ট উত্তর, ‘ইনশা আল্লাহ।’
আফরা-জিনাত ফাইনাল ম্যাচটা যেন ছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বক্সারের লড়াই নয়, এর বাইরেও চলছিল আরেক নাটক। ফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগেই বক্সিং রিংয়ে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। আনসারের বক্সার জাহিদুল হক রেফারির রায় নিয়ে ক্ষোভ জানাতে রিংয়ে বসে পড়েন প্রতিবাদ হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বক্সার জনি ভদ্রর ঘুষিতে কপালে চোট পান জাহিদুল। চিকিৎসাও নেন। একপর্যায়ে রিংয়ের মাঝখানে বসেই অভিনব প্রতিবাদ জানান।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ আনসার দল বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতির কাছে অভিযোগ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আনসারের প্রতিনিধিরা রিং ছেড়ে চলে যান। মুহূর্তেই ঘনীভূত হয়ে ওঠে অনিশ্চয়তা, আফরা-জিনাত ফাইনালটি আদৌ হবে তো? কারণ, আফরা বাংলাদেশ আনসারের প্রতিযোগী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আনসার ফিরে আসে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
এ বিষয়ে বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফাইটে হারলে যা হয়। হারলেই বলে অন্যায় হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত রিংয়ে ফিরে এসেছে, খেলেছে, এটা ভালো।’
ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদল গ্যালারিতে এসে জিনাতকে শুভেচ্ছা জানায়, তাঁকে উপহারও দেয় তারা। গ্যালারিতে বাড়তি উত্তেজনা আর গুরুত্ব যোগ করে ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে। আর দেশের সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক উপস্থিতি তো ছিলই ম্যাচটা ঘিরে।