আশির দশকের গৃহস্থবাড়ির পশুপাখি সময়টা ছিল কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির যুগ বা সময়। সঙ্গত কারণেই কৃষিকাজের প্রধান উপকরণ ছিল লাঙ্গল এবং জোয়াল। এই লাঙ্গল ও জোয়াল টানার জন্য প্রায় প্রতিটি বাড়িতে গরু থাকতো। সে সময় মহিষ খুব দেখা যেত না, অঞ্চলভেদে কোনো কোনো বাড়িতে মহিষ দেখা যেত। কিন্তু গরু সব বাড়িতেই ছিল।
সাধারণত এক গৃহস্থবাড়িতে হালের বলদ বা ষাড় থাকতো চারটা বা দুইটা। এর সাথে সাথে একটা বা দুইটা গাভীও থাকতো। তার সাথে সাথে বাছুরও থাকতো। এর পাশাপাশি কোনো কোনো বাড়িতে ছাগল পালন করা হতো। গরু যেভাবে মোটামুটি সব বাড়িতেই ছিল ওই অর্থে ছাগল সব বাড়িতেই ছিল না। আবার কিছু কিছু বাড়িতে শুধুই ছাগল থাকতো। গরু, ছাগল লালন পালন ছিল তৎকালীণ কৃষকের দ্বিতীয় প্রধান আয়ের উৎস। এ ছাড়া কৃষকের প্রধান আয়ের উৎস ছিল শস্য। একটি ছাগল দুইটা থেকে সর্বোচ্চ পাঁচটা পর্যন্ত বাচ্চা দিত একই সময়ে। এই বাচ্চাগুলো যখন একটু বড় হতো তখন কৃষক কিছু বিক্রি করতো। সবচেয়ে বড় কথা এইসব গরু এবং ছাগল থেকে যে দুধ পাওয়া যেত। সেটা কৃষকের খাদ্যের চাহিদা যেমন মেটাতে পাশাপাশি এই দুধ বাজারে বিক্রি করে কৃষক নগদ অর্থও পেতো।
ওই সময় প্রত্যেকটা বাড়িতেই মুরগি পোষা হতো। কোনো কোনো বাড়িতে হাঁসও পোষা হতো। সৌখিন কৃষকেরা কবুতর পুষতো। হাঁস, মুরগির ডিম বিক্রি করে কৃষক টাকা আয় করতে পারতো। বাড়িতে অতিথি আসলে– আপ্যায়নে বাড়ির হাঁস, মুরগি বা কবুতর জবাই করা হতো। কবুতর পোষার জন্য গৃহস্থের বাড়িতে সুদৃশ্য খোপ থাকতো। জোড়ায় জোড়ায় বসবাস করতো কবুতর। যে বাড়িতে কবুতর থাকতো, বাক-বাকুম ধ্বনিতে মুখরিত থাকতো সেই বাড়ি। কোনো কোনো বাড়িতে তিতিরও পোষা হতো। কারও কারও বাড়িতে ভারবাহী পশু হিসেবে ঘোড়া পোষা হতো। এ ছাড়া কোচোয়ানের (ঘোড়ার গাড়ির চালক) বাড়িতে একটা বা দুইটা ঘোড়া থাকতো। গৃহস্থ বাড়িতে গরু রাখার জন্য রাখাল থাকতো। তাদের কাজ ছিলো সকালে গোহাল থেকে গরু বের করা। এরপর চাড়িতে খড় কেটে, খৈল, পানি ও লবণ মিশিয়ে গরুকে খাওয়ানো। মাঝে মধ্যে নদী বা পুকুরে নিয়ে গরু গোসল করানোও ছিল রাখালের কাজ।
আরো পড়ুন:
ফিট থাকতে যে নিয়ম মেনে চলেন অক্ষয় কুমার
‘কেউ আমাকে পছন্দ করে না’ এমন কেন মনে হয়
এ ছাড়াও রাখালের আরেকটা কাজ ছিল- গোয়াল থেকে গোবর সংগ্রহ করা। গোবর উঠান লেপার কাজে ব্যবহার হতো। এ ছাড়া গোবর ভেঙে খোলা মাটিতে ছড়িয়ে ঘসি তৈরি করা হতো। এগুলো শুকিয়ে জ্বালানির কাজে ব্যবহৃত হতো। গোবর সংগ্রহ করে বাড়ির পালানে এক জায়গায় জমিয়ে জৈব সার উৎপাদন করাও রাখালের কাজের মধ্যে ছিল।
রাখালকে বাৎসরিক হিসাবে গৃহস্থের বাড়িতে রাখা হতো। গৃহস্থের বাড়িতেই থাকতো, খেতো। এদের বয়স ১৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে ছিল। বেশির ভাগ রাখাল পাশের গ্রাম থেকে আসতো। দেখা যেত রাতে বাড়িতে যাচ্ছে আবার ভোরবেলায়ই চলে আসতো গৃহস্থের বাড়িতে। শীতের দিনে গরুর একটু বেশি যত্ন করতে হতো। ছালা কেটে কম্বলের মতো করে গরুর গায়ে দিয়ে দেওয়া হতো। তখনকার দিনে দেখা যেত যে বেশির ভাগ ছাগলের গলায় দড়ি থাকতো না। ঘুরে ঘুরে খেয়ে বেড়াতো। সে সময় কৃষকের অনেক জমি পতিত থাকতো। সেই সব জমিতে ছাগল বেঁধেও রেখে আসা হতো। সারাদিন খেত, বিকালে বাড়ি নিয়ে আসা হতো। গরু বা ছাগলের রোগ বালাই হলে এগুলোর চিকিৎসা করার জন্য কবিরাজদের ওপর নির্ভর করতে হতো। তখন পশুডাক্তার সেভাবে ছিল না। গ্রামে কবিরাজি চিকিৎসাই হতো। অনেক সময় দেখা যেত, বিভিন্ন ধরণের অসুখে গরু ছাগলের মৃত্যু হতো। গরু সাধারণত তরকা, বাদলা, মিল্ক ফিভার ও খুঁড়া রোগে ভুগতো। তুলনামূলক ছাগলের রোগ কম হতো। ছাগলের কমন একটা রোগ ছিল পিপিআর।
কুরবানি ঈদের আগে গরু-ছাগল বিক্রির ছাগল বিক্রির হিড়িক পড়তো। গ্রামীণ জীবন ও জীবিকা ও বাজার ব্যবস্থায় এই ঈদের ব্যাপক প্রভাব তখনও ছিল।
গ্রামের কিছু কিছু মানুষের জীবন ও জীবিকা শিকার করা পশু-পাখির একটা ভূমিকা ছিল। যদিও আশির দশকের দিকে কৃষকের শিকার করে পশু বা প্রাণী খাওয়ার প্রবণতা কমে আসে। তবে অতিথি পাখি এবং দেশীয় জলজপাখি ফাঁদ পেতে শিকার করে খেতো। যেমন বক, বালিহাঁস, শামুকখোল, কাচিচোরা, ডাহুক, পানকৌড়ি, কালিম, হরিয়াল, ঘুঘু, কোড়া ইত্যাদি।
নিম্নবর্ণের হিন্দু ও আদিবাসী গোষ্ঠীর মানুষেরা কিছু কিছু ছোট প্রাণী শিকার করে খেতো। যেমন-সজারু, বনবিড়াল, গন্ধগোকূল, শিয়াল, গুঁইসাপ ইত্যাদি।
সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুতে বদল এসেছে, সেই পরিক্রমায় হারিয়ে গেছে সে সময়ের অনেক পশু-পাখি। বদল এসেছে গ্রামীণ জীবন ও জীবিকার সংস্কৃতিতেও।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এস এম জ হ দ হ স ন শ ক র কর র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
বিনা মূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের সুযোগ, সারা দেশে ৮টি কেন্দ্রে
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে হাফেজ, ইমাম, মাদ্রাসাছাত্র ও বেকার যুবকদের বিনা কোর্স ফিতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় কোর্সে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ প্রশিক্ষণের মেয়াদ দুই মাস। প্রশিক্ষণটি আগামী ১২ অক্টোবর শুরু হবে, চলবে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রশিক্ষণ শেষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সরকারি সনদ দেওয়া হবে। আগ্রহী প্রার্থীদের ৯ অক্টোবরের মধ্যে ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে আবেদন করতে হবে।
প্রশিক্ষণের বিষয়১. বেসিক কম্পিউটার,
২. অফিস অ্যাপ্লিকেশন ও ইউনিকোড বাংলা,
৩. ইন্টারনেট,
৪. গ্রাফিক ডিজাইন,
৫. ফ্রিল্যান্সিং,
৬. মার্কেটপ্লেস ও কনসালটিং।
আরও পড়ুনহার্ভার্ড এনভায়রনমেন্টাল ফেলোশিপ, দুই বছরে ১ লাখ ৮৫ হাজার ডলার১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫আবেদনের যোগ্যতা১. ন্যূনতম দাখিল বা সমমানের পরীক্ষায় পাস হতে হবে,
২. হাফেজদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা হবে,
৩. উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে,
৪. প্রার্থীকে কম্পিউটার চালনায় বেসিক জ্ঞান থাকতে হবে,
৫. যাঁদের নিজস্ব কম্পিউটার আছে, তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে হাফেজ, ইমাম, মাদ্রাসাছাত্র ও বেকার যুবকদের বিনা কোর্স ফিতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় কোর্সে প্রক্রিয়া শুরু করেছে।যে ৮টি কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে১. ঢাকা,
২. চট্টগ্রাম,
৩. রাজশাহী,
৪. খুলনা,
৫. বরিশাল,
৬. সিলেট,
৭. দিনাজপুর,
৮. গোপালগঞ্জ।
আরও পড়ুনবিনা মূল্যে ২ লাখ টাকার প্রশিক্ষণ, নন-আইটি স্নাতক শিক্ষার্থীদের সুযোগ ৭ ঘণ্টা আগেদরকারি কাগজপত্র১. শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সনদের সত্যায়িত ফটোকপি,
২. জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি,
৩. এক কপি পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি জমা দিতে হবে,
৪. ইমামদের ক্ষেত্রে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অথবা ওয়ার্ড কমিশনারের কাছ থেকে নেওয়া ইমামতির প্রমাণপত্রের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে,
৫. মাদ্রাসাছাত্রদের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের প্রধানের কাছ থেকে ছাত্রত্ব প্রমাণের কপি জমা দিতে হবে।
নিবন্ধন ফিমনোনীত প্রার্থীদের নিবন্ধন ফি হিসেবে ৫০০ টাকা দিতে হবে।
দেশের ৮টি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে