Risingbd:
2025-11-03@23:50:31 GMT

আশির দশকের পশুপাখি

Published: 27th, May 2025 GMT

আশির দশকের পশুপাখি

আশির দশকের গৃহস্থবাড়ির পশুপাখি সময়টা ছিল কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির যুগ বা সময়। সঙ্গত কারণেই ‍কৃষিকাজের প্রধান উপকরণ ছিল লাঙ্গল এবং জোয়াল। এই লাঙ্গল ও জোয়াল টানার জন্য প্রায় প্রতিটি বাড়িতে গরু থাকতো। সে সময় মহিষ খুব দেখা যেত না, অঞ্চলভেদে কোনো কোনো বাড়িতে মহিষ দেখা যেত। কিন্তু গরু সব বাড়িতেই ছিল।

সাধারণত এক গৃহস্থবাড়িতে হালের বলদ বা ষাড় থাকতো চারটা বা দুইটা। এর সাথে সাথে একটা বা দুইটা গাভীও থাকতো। তার সাথে সাথে বাছুরও থাকতো। এর পাশাপাশি কোনো কোনো বাড়িতে ছাগল পালন করা হতো। গরু যেভাবে মোটামুটি সব বাড়িতেই ছিল ওই অর্থে ছাগল সব বাড়িতেই ছিল না। আবার কিছু কিছু বাড়িতে শুধুই ছাগল থাকতো। গরু, ছাগল লালন পালন ছিল তৎকালীণ কৃষকের দ্বিতীয় প্রধান আয়ের উৎস। এ ছাড়া কৃষকের প্রধান আয়ের উৎস ছিল শস্য। একটি ছাগল দুইটা থেকে সর্বোচ্চ পাঁচটা পর্যন্ত বাচ্চা দিত একই সময়ে। এই বাচ্চাগুলো যখন একটু বড় হতো তখন কৃষক কিছু বিক্রি করতো। সবচেয়ে বড় কথা এইসব গরু এবং ছাগল থেকে যে দুধ পাওয়া যেত। সেটা কৃষকের খাদ্যের চাহিদা যেমন মেটাতে পাশাপাশি এই দুধ বাজারে বিক্রি করে কৃষক নগদ অর্থও পেতো।

ওই সময় প্রত্যেকটা বাড়িতেই মুরগি পোষা হতো। কোনো কোনো বাড়িতে হাঁসও পোষা হতো। সৌখিন কৃষকেরা কবুতর পুষতো। হাঁস, মুরগির ডিম বিক্রি করে কৃষক টাকা আয় করতে পারতো। বাড়িতে অতিথি আসলে– আপ্যায়নে বাড়ির হাঁস, মুরগি বা কবুতর জবাই করা হতো। কবুতর পোষার জন্য গৃহস্থের বাড়িতে সুদৃশ্য খোপ থাকতো। জোড়ায় জোড়ায় বসবাস করতো কবুতর। যে বাড়িতে কবুতর থাকতো, বাক-বাকুম ধ্বনিতে মুখরিত থাকতো সেই বাড়ি। কোনো কোনো বাড়িতে তিতিরও পোষা হতো। কারও কারও বাড়িতে ভারবাহী পশু হিসেবে ঘোড়া পোষা হতো। এ ছাড়া কোচোয়ানের (ঘোড়ার গাড়ির চালক) বাড়িতে একটা বা দুইটা ঘোড়া থাকতো। গৃহস্থ বাড়িতে গরু রাখার জন্য রাখাল থাকতো। তাদের কাজ ছিলো সকালে গোহাল থেকে গরু বের করা। এরপর চাড়িতে খড় কেটে, খৈল, পানি ও লবণ মিশিয়ে গরুকে খাওয়ানো। মাঝে মধ্যে নদী বা পুকুরে নিয়ে গরু গোসল করানোও ছিল রাখালের কাজ।

আরো পড়ুন:

ফিট থাকতে যে নিয়ম মেনে চলেন অক্ষয় কুমার

‘কেউ আমাকে পছন্দ করে না’ এমন কেন মনে হয়

এ ছাড়াও রাখালের আরেকটা কাজ ছিল- গোয়াল থেকে গোবর সংগ্রহ করা। গোবর উঠান লেপার কাজে ব্যবহার হতো। এ ছাড়া গোবর ভেঙে খোলা মাটিতে ছড়িয়ে ঘসি তৈরি করা হতো। এগুলো শুকিয়ে জ্বালানির কাজে ব্যবহৃত হতো। গোবর সংগ্রহ করে বাড়ির পালানে এক জায়গায় জমিয়ে জৈব সার উৎপাদন করাও রাখালের কাজের মধ্যে ছিল।

রাখালকে বাৎসরিক হিসাবে গৃহস্থের বাড়িতে রাখা হতো। গৃহস্থের বাড়িতেই থাকতো, খেতো। এদের বয়স ১৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে ছিল। বেশির ভাগ রাখাল পাশের গ্রাম থেকে আসতো। দেখা যেত রাতে বাড়িতে যাচ্ছে আবার ভোরবেলায়ই চলে আসতো গৃহস্থের বাড়িতে। শীতের দিনে গরুর একটু বেশি যত্ন করতে হতো। ছালা কেটে কম্বলের মতো করে গরুর গায়ে দিয়ে দেওয়া হতো। তখনকার দিনে দেখা যেত যে বেশির ভাগ ছাগলের গলায় দড়ি থাকতো না। ঘুরে ঘুরে খেয়ে বেড়াতো। সে সময় কৃষকের অনেক জমি পতিত থাকতো। সেই সব জমিতে ছাগল বেঁধেও রেখে আসা হতো। সারাদিন খেত, বিকালে বাড়ি নিয়ে আসা হতো। গরু বা ছাগলের রোগ বালাই হলে এগুলোর চিকিৎসা করার জন্য কবিরাজদের ওপর নির্ভর করতে হতো। তখন পশুডাক্তার সেভাবে ছিল না। গ্রামে কবিরাজি চিকিৎসাই হতো। অনেক সময় দেখা যেত, বিভিন্ন ধরণের অসুখে গরু ছাগলের মৃত্যু হতো। গরু সাধারণত তরকা, বাদলা, মিল্ক ফিভার ও খুঁড়া রোগে ভুগতো। তুলনামূলক ছাগলের রোগ কম হতো। ছাগলের কমন একটা রোগ ছিল পিপিআর।

কুরবানি ঈদের আগে গরু-ছাগল বিক্রির ছাগল বিক্রির হিড়িক পড়তো। গ্রামীণ জীবন ও জীবিকা ও বাজার ব্যবস্থায় এই ঈদের ব্যাপক প্রভাব তখনও ছিল।

গ্রামের কিছু কিছু মানুষের জীবন ও জীবিকা শিকার করা পশু-পাখির একটা ভূমিকা ছিল। যদিও আশির দশকের দিকে কৃষকের শিকার করে পশু বা প্রাণী খাওয়ার প্রবণতা কমে আসে। তবে অতিথি পাখি এবং দেশীয় জলজপাখি ফাঁদ পেতে শিকার করে খেতো। যেমন বক, বালিহাঁস, শামুকখোল, কাচিচোরা, ডাহুক, পানকৌড়ি, কালিম, হরিয়াল, ঘুঘু, কোড়া ইত্যাদি।

নিম্নবর্ণের হিন্দু ও আদিবাসী গোষ্ঠীর মানুষেরা কিছু কিছু ছোট প্রাণী শিকার করে খেতো। যেমন-সজারু, বনবিড়াল, গন্ধগোকূল, শিয়াল, গুঁইসাপ ইত্যাদি।

সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুতে বদল এসেছে, সেই পরিক্রমায় হারিয়ে গেছে সে সময়ের অনেক পশু-পাখি। বদল এসেছে গ্রামীণ জীবন ও জীবিকার সংস্কৃতিতেও।

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এস এম জ হ দ হ স ন শ ক র কর র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ