পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলায় ১৩ বছর পর এক আসামি গ্রেপ্তার
Published: 27th, May 2025 GMT
কক্সবাজারের মহেশখালীতে ১৩ বছর আগে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যার মামলায় এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর নাম নাসির উদ্দিন (৪৮)। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের কাঁঠালতলির নিজ বাড়ি থেকে দেশীয় একটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ তাঁকে আটক করে পুলিশ। নাসির ওই এলাকার গোলাম কুদ্দুসের ছেলে।
২০১২ সালের ১৮ জানুয়ারি উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের কালাগাজিরপাড়া এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয় অভিযানে থাকা তৎকালীন মহেশখালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) পরেশ কারবারিকে। এ ঘটনায় এক পুলিশ সদস্য বাদী হয়ে ৩৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। মামলার অভিযোগপত্রে নাসির উদ্দিনকে আসামি করা হয়।
পুলিশ জানায়, এসআই পরেশ কারবারির হত্যাকাণ্ডের পর থেকে নাসির পলাতক ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি হত্যা ও একটি অস্ত্রসহ পাঁচটি মামলা হয়েছে। রাতে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করেছে পুলিশ।
মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, গোপন সূত্রে বাড়িতে অবস্থানের খবর পেয়ে নাসিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযানের সময় তাঁর বাড়ি থেকে দেশীয় একটি এলজিও উদ্ধার হয়। ওসি আরও বলেন, পুলিশ কর্মকর্তা পরেশ কারবারি হত্যা মামলার আসামিদের মধ্যে এখন পর্যন্ত চারজন পলাতক রয়েছেন। তাঁদের ধরতে পুলিশের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত
এছাড়াও পড়ুন:
বাদীর কাছে এসআইয়ের ঘুষ দাবির অডিও ফাঁস
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থানার এক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবি, মিথ্যা প্রতিবেদনে ফাঁসানোর চেষ্টা এবং আসামি পক্ষকে মদদ দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় এক কৃষক। এ ঘটনায় মঙ্গলবার অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী কৃষকের ছোট ভাই।
চুনারুঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফয়সাল আমিনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তুলেছেন উপজেলার বাসিন্দা সাহাব উদ্দিন। পরে তার পক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন তার ছোট ভাই আলাউদ্দিন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রমাণ হিসেবে সামনে এসেছে ফাঁস হওয়া একটি অডিও ক্লিপ। সম্প্রতি ঘুষের টাকা নিয়ে এসআই ফয়সাল ও ওই ভুক্তভোগীর কথোপকথন হিসেবে দাবি করা ওই অডিও ক্লিপ ফাঁস হওয়ার পর থেকে এলাকায় নানা গুঞ্জন চলছে।
অডিওতে এসআই ফয়সলকে বলতে শোনা যায়, ‘নিয়ম হলো রিপোর্ট দিয়ে টাকা নেওয়া। আগে যেহেতু টাকা নিয়ে ফেলছি, এখন দায় সার অবস্থায় পড়ে গেছি। আমি টাকা ছাড়া কোনো কথা বলি না। একজন মাত্র ৭ হাজার টাকা দিয়ে গেছে। আপনার টাকাটা নিয়েই এখন বিপদে পড়ছি, সবাই জেনে গেছে।’
জবাবে ভুক্তভোগী সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘সে আমার আসামি। ২০ হাজার না ৩০ লাখ টাকা দিলেও আপনি খাইবেন, কিন্তু আমার বিষয়টা যেন ঘুরিয়ে না দেন। ধান বিক্রি করে, ঋণ করে টাকা দিয়েছি।'
মঙ্গলবার সাহাব উদ্দিনের ছোট ভাই আলাউদ্দিন এই ঘটনায় সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও এসআই ফয়সলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির দাবিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), হবিগঞ্জের পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে এর অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, প্রায় ৯ মাস আগে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ তুলে সাহাব উদ্দিন তার প্রতিবেশী সুরুক মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন এসআই ফয়সল আমিন। লেখার খরচ ও তদন্ত রিপোর্ট দ্রুত দেওয়ার জন্য এসআই ফয়সল ভুক্তভোগী সাহাব উদ্দিনের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন। পরবর্তীতে আরও ২০ হাজার টাকা দাবি করলে পরিবারটি তা দিতে না পারায়, তিনি আসামি পক্ষের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করেন। এছাড়া পুলিশ কর্মকর্তা ফয়সলের ইন্ধনে গত ২৯ মে সাহাব উদ্দিনের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় আসামিপক্ষ। এতে তার একটি হাত ও পায়ের হাড় ভেঙে যায়। সে অবস্থায় তিনি সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৮ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন, যার মধ্যে তিন দিন আইসিইউতে।
এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে এসআই ফয়াসল আমিন সাহাব উদ্দিনকে বলেন, ‘তোমরা তো ১৫ হাজার টাকা দিয়েছো, এরপর যোগাযোগ করোনি, তাই আগের রিপোর্টই পাঠিয়ে দিয়েছি।’ এ সময় থানায় বাদীপক্ষের হুমকির মুখেও পড়েছিলেন বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী সাহাব উদ্দিন বলেন, দ্বিতীয়বার টাকা দাবি করলে তিনি মোবাইলে ভিডিও ধারণ করেন। বিষয়টি টের পেয়ে তিনি এসআই তার মোবাইল থেকে ভিডিও ডিলিট করে দেন। পরে তিনি তা পুনরুদ্ধার করেন।
ভুক্তভোগী সাহাব উদ্দিনের ভাই আলাউদ্দিন বলেন, এসআই ফয়সলের ঘুষ বাণিজ্যের কারণে তারা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত। পুলিশের সদস্য হয়েও সে দুর্নীতির চর্চা করে।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, এসআই ফয়সলের কর্মকাণ্ড নিয়ে এলাকায় নানা প্রশ্ন রয়েছে। অভিযানে গিয়ে জুয়ার বোর্ড থেকে টাকা আত্মসাৎ, পক্ষপাতমূলক তদন্ত এবং ঘুষ নিয়ে মামলা পরিচালনার অভিযোগ একাধিক।
ফরিদপুর জেলার বাসিন্দা ফয়সাল আমিন ২০২০ সালে বাংলাদেশ পুলিশে নিয়োগ পান। ২০২৪ সালের ৯ অক্টোবর চুনারুঘাট থানায় যোগ দেন।
মাধবপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) এ কে এম সালিমুল হক বলেন, ঘটনার বিষয়ে ভুক্তভোগীর ভাই তাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযুক্ত এসআই ফয়সাল আমিন ঘটনা স্বীকার করে বলেন, ভুল হয়েছে, বিষয়টি যেন ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখা হয়। ভবিষ্যতে ভুল শুধরে নিয়ে সঠিকভাবে দায়িত্বপালনের কথাও বলেন তিনি।