সরকারের ওপর অব্যাহত চাপ জাতি ভালোভাবে দেখছে না: চরমোনাই পীর
Published: 27th, May 2025 GMT
‘দেশে একটা দল কেবলই নির্বাচন নির্বাচন করছে। যারা নির্বাচনের জিকির তুলেছে, তাদের অতীত আমরা জানি। প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়সীমা আর বিএনপির দাবি করা সময়সীমার মাঝে পার্থক্য মাত্র ছয় মাস।’ এই ছয় মাসের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের ওপরে চাপ প্রয়োগ করাকে জাতি ভালোভাবে দেখছে না বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম চরমোনাই পীর।
মঙ্গলবার ঠাকুরগাঁওয়ে এক গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চরমোনাই পীর এ কথা বলেন। পরে দলটির পক্ষ থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
চরমোনাই পীর বলেন, ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লাখো মানুষের আত্মত্যাগে অর্জিত স্বাধীনতার পর ৫৪ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু আমরা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার পাইনি; বরং বাংলাদেশকে বিশ্বের সেরা দুর্নীতিবাজ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে বিগত সরকারগুলো।’
সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম আরও বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে রাজনৈতিক হানাহানিতে লাখো মায়ের বুক খালি হয়েছে। জনমানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে। হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এরপর এল জুলাই অভ্যুত্থান। হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে। এখনো তারা বিছানায় কাতরাচ্ছে। অন্ধ হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণে মানুষ হতাশ হচ্ছে। এই পরিস্থিতি সহ্য করা হবে না। মানুষকে আবারও আশাহত হতে দেওয়া যাবে না।’
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের কথা উল্লেখ করে চরমোনাই পীর বলেন, ‘বিদ্যমান প্রশাসন, রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও দলগুলোর স্বার্থান্বেষী আচরণ অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ করার সুযোগ নষ্ট করে দিয়েছে। আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে আশ্বস্ত করেছি এবং জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও সংস্কারের দাবি জানিয়েছি।’
আগামী নির্বাচনে সবার কাছে ভোট চেয়ে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ‘দেশ, জাতি ও মানবতার পক্ষে আমাদের সম্মিলিত লড়াই করতে হবে। এই লড়াইয়ে আমি আপনাদের পাশে চাই। সকল ধরনের রাজনৈতিক প্রলোভন এড়িয়ে আমরা কাজ করে গিয়েছি। জুলাই অভ্যুত্থানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলীয় ব্যানারে রাজপথে লড়াই করেছে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার আন্দোলনেও আমরা রাজপথে থেকেছি। তাই আগামী নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে বিজয়ী করতেই হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চরম ন ই প র র জন ত ক ত হয় ছ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
চীন–যুক্তরাষ্ট্র, আবারও তিন মাসের বাণিজ্যে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের শীর্ষ অর্থনৈতিক কর্মকর্তারা সোমবার সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বৈঠক করেছেন। বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক বিরোধ মেটানো ও চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে এ আলোচনা হয়েছে। ফল—আবারও তিন মাস মেয়াদি যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এ আলোচনায় অংশ নেন। সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় রোজেনবাদে এ বৈঠক হয়। বৈঠকে চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী হে লিফেং উপস্থিত ছিলেন।
বিদ্যমান বন্দোবস্ত অনুযায়ী, চীনকে আগামী ১২ আগস্টের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে স্থায়ী শুল্ক চুক্তি করতে হবে। এর আগে মে ও জুন মাসে তাদের মধ্যে প্রাথমিক সমঝোতা হয়েছিল। সে সমঝোতার কল্যাণে পাল্টা শুল্ক আরোপ ও দুর্লভ খনিজ রপ্তানি বন্ধের মতো উত্তেজনাপূর্ণ পদক্ষেপ স্থগিত করা সম্ভব হয়।
দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা সন্ধ্যা আটটার দিকে ‘রোজেনবাদ’ কার্যালয় ত্যাগ করেন, যদিও তাঁরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি। মঙ্গলবার আবার আলোচনা শুরু হওয়ার কথা।
স্কটল্যান্ডে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প এ আলোচনার বিষয়ে বলেন, ‘আমি চাই, চীন নিজেদের বাজার খুলে দিক।’ বাস্তবতা হলো চীন–যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চুক্তি না হলে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার আবারও তিন অঙ্কের ঘরে ফিরে আসতে পারে। ফলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য কার্যত নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে পারে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার জানান, আজ মঙ্গলবার স্টকহোমের আলোচনায় বড় অগ্রগতি আশা করছেন না তিনি। আরও বলেন, ‘আমার প্রত্যাশা হলো এ পর্যন্ত যে চুক্তিগুলো হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের প্রবাহ ঠিক রাখা। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্যের ভিত্তি স্থাপন।’
এ আলোচনার আগে গত রোববার ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করেন। এখন পর্যন্ত তিনি যত চুক্তি করেছেন, তার মধ্যে এ চুক্তি অন্যতম বৃহৎ। এ চুক্তির অধীন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা বেশির ভাগ ইউরোপীয় পণ্যে ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়।
বাণিজ্য বিশ্লেষকদের মতে, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অনুষ্ঠিত ৯০ দিনের যুদ্ধবিরতি আরও বাড়ানো হতে পারে। সম্ভবত ট্রাম্প ও চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের মধ্যে অক্টোবরের শেষ কিংবা নভেম্বরের শুরুতে একটি বৈঠকের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সম্ভবত এ সময়সীমা এর জন্যই বাড়ানো হচ্ছে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানায়, বেইজিংয়ের সঙ্গে চলমান আলোচনা ব্যাহত না করতে এবং সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের পথ মসৃণ করতে যুক্তরাষ্ট্র আপাতত চীনে প্রযুক্তি রপ্তানিতে কড়াকড়ি শিথিল করেছে।
অন্যদিকে ওয়াশিংটনে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দলের সিনেটররা চলতি সপ্তাহে চীনের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, ভিন্নমতাবলম্বী ও তাইওয়ান নিয়ে নতুন বিল উত্থাপন করতে যাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে উভয় দেশের আলোচনা জটিল হয়ে যেতে পারে।
তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং তে আগস্ট মাসে সম্ভাব্য যুক্তরাষ্ট্র সফর স্থগিত করছেন। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত সূত্রগুলো রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছে।
এ সফরে বেইজিং ক্ষুব্ধ হতে পারত এবং পরিণামে আলোচনার পথও রুদ্ধ হতো। চীন তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ হিসেবে দাবি করে। যদিও তাইওয়ান এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে এবং তাইপের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো সমর্থনের প্রতি নিন্দা জানায় চীন।
এর আগে মে ও জুন মাসে জেনেভা ও লন্ডনে অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য আলোচনায় মূলত পাল্টাপাল্টি শুল্ক হ্রাস এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া খনিজ ও প্রযুক্তিপণ্যের রপ্তানি আবার চালুর বিষয়ে আলোচনা হয়।
আলোচনা এখন পর্যন্ত এসব বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে। আরও গভীর অর্থনৈতিক বিষয়, যেমন চীনের রপ্তানিনির্ভর রাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন অর্থনৈতিক মডেল কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের জাতীয় নিরাপত্তাভিত্তিক যুক্তি—এসব নিয়ে গভীরে আলোচনা হয়নি।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের চীনবিষয়ক অর্থনৈতিক বিশ্লেষক স্কট কেনেডি বলেন, জেনেভা ও লন্ডনের আলোচনা ছিল মূলত সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রাথমিক পদক্ষেপ, যেন পরে প্রকৃত সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলা যায়।
বেসেন্ট ইতিমধ্যে সময়সীমা বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি চান, চীন রপ্তানিনির্ভর প্রবৃদ্ধির মডেল থেকে অভ্যন্তরীণ চাহিদাভিত্তিক মডেল গ্রহণ করুক, এটি যুক্তরাষ্ট্রের বহুদিনের নীতিগত লক্ষ্য।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র-চীন আলোচনার জটিলতা অন্য এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনার চেয়ে অনেক বেশি এবং তাতে আরও সময় লাগবে। বিশেষ করে সামরিক সরঞ্জাম থেকে শুরু করে গাড়ির উইন্ডশিল্ড ওয়াইপার পর্যন্ত বহু পণ্যে ব্যবহৃত চীনের দুর্লভ খনিজ ও চুম্বক উপাদান যুক্তরাষ্ট্রের ওপর একধরনের চাপ প্রয়োগের কার্যকর হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
গত ১২ মে দেশ দুটি বাণিজ্যযুদ্ধ বিরতিতে সম্মত হয়। এর আগপর্যন্ত তারা কেবল একে অপরের পণ্যে শুল্ক বাড়িয়েই গেছে। সেদিনের যৌথ বিবৃতি অনুযায়ী, ১৪ মে থেকে যুক্তরাষ্ট্র চীনের পণ্যে আরোপিত ১৪৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ৩০ শতাংশে নিয়ে আসে এবং চীনও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক ১২৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনে।