বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘আমরা ডিসেম্বরে নির্বাচনের জন্য রোডম্যাপ চেয়েছিলাম। আমরা কারও পদত্যাগ চাইনি। পদত্যাগের নাটক দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ। গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য কথা বলা যদি অপরাধ হয়, সেই অপরাধ আমরা বারংবার করতে পারব।’

আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির তিন সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের আয়োজনে ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে’ বক্তব্যে এসব কথা বলেছেন তিনি।

সরকার ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ পাঠের ব্যবস্থা করবে এবং দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। তা না হলে গণতন্ত্রের দাবিতে, নির্বাচনের দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন হলে সেটি দুর্ভাগ্যজনক হবে বলে হুঁশিয়ার করেন তিনি।

আজ আইনের শাসন হুমকির মুখে উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্যবলেন, ‘আদালতের রায় কার্যকর করা হয় না। সেই পরিস্থিতিতে আহ্বান জানাব, সকলে যেন ঐক্যবদ্ধ থাকি। গণতন্ত্রের পক্ষে সকল শক্তির মধ্যে ইস্পাত-দৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলি। বাংলাদেশে যাতে আবার কোনো স্বৈরাচারের উৎপাদন না হয়। আমরা তেমন সংবিধান ও রাষ্ট্র সংস্কার করতে চাই, যেখানে আর কোনোদিন স্বৈরাচারের উত্থান হবে না।’

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তারুণ্যের সমাবেশ চলছে। আজ বুধবার বিকেলে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র

এছাড়াও পড়ুন:

চার মাসেও তালা খোলেনি বেগম রোকেয়া টেকনিক্যাল কলেজের

চার মাস আগে সুপারের বিরুদ্ধে নিয়োগবাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হয়েছে। সত্যতাও পাওয়া গেছে। কিন্তু তালা খোলা হয়নি। দীর্ঘদিন লেখাপড়া থেকে দূরে থাকায় ৩৫০ শিক্ষার্থীর জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মিঠাপুকুর উপজেলার বড় হযরতপুর ইউনিয়নের নানকর বেগম রোকেয়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড বিএম কলেজে এ ঘটনা ঘটেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, ভুক্তভোগীরা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন চার মাস আগে। এক শিক্ষক বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগও দিয়েছেন। তদন্ত চলছে। সব ঠিক আছে। প্রতিষ্ঠান কেন বন্ধ থাকবে? কেন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠান চালু রাখার ব্যবস্থা করেনি? আমাদের সন্তানদের জীবন থেকে চার মাস চলে গেলে এ দায় কার? এসব প্রশ্নের জবাব আমরা কার কাছে পাব? 
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মমিন মণ্ডল বলেন, তদন্তে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে। সুপারের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। এতদিনেও কেন প্রতিষ্ঠানের তালা খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা হলো না জানতে চাইলে কোনো উত্তর দেননি এ কর্মকর্তা। এক পর্যায়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। 
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সুপার জাহিদুল ইসলাম। চাকরি না পেয়ে ভুক্তভোগীরা চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি সুপারের কার্যালয় ও শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন। এরপর থেকে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। সুপারও পাওনাদারের চাপের মুখে প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছেন না। অন্য শিক্ষকেরা মাঝেমধ্যে অফিসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান। 
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাব্বি মিয়া ও দ্বাদশ শ্রেণির জেসমিন খাতুন জানায়, ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলছে। শিক্ষকরাও আসেন না। বছরের প্রায় অর্ধেক চলে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে পড়ালেখার কী হবে? তারা এর সমাধান চায়। 
একাদশের নয়ণ চন্দ্র বর্মণ আক্ষেপ করে বলে, ‘সুপারের কারণে আজ আমাদের এ অবস্থা। তার অপরাধের শাস্তি পাচ্ছি আমরা। কর্তৃপক্ষ কেন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে না বুঝতে পারছি না। এভাবে কতদিন আমাদের পড়ালেখা বন্ধ থাকবে?’ 
জানা গেছে, জাহিদুল ইসলাম ২০১৮ সালে যোগদান করেন। এরপর থেকে অনিয়ম-দুর্নীতির আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে স্থানীয় বেকার যুবকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন। অনেককে ভুয়া নিয়োগপত্রও দিয়েছেন। ভর্তি ও ফরম পূরণ ফি বাবদ আদায় করা ৩০ লাখ টাকা, রিজার্ভ ও জেনারেল তহবিলের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়াও নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। প্রতিনিয়ত লোকজন প্রতিষ্ঠানে এসে টাকার জন্য তাঁকে চাপ দিচ্ছিলেন। পাওনাদারের চাপের মুখে সুপার ফেব্রুয়ারি মাস থেকে প্রতিষ্ঠানে আসছেন না। 
ভুক্তভোগী শাহীন মিয়া জানান, ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে নৈশপ্রহরী পদে লোক চেয়ে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। সুপার তাঁকে চাকরি দেবেন বলে জানান। বিনিময়ে ৭ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। জমি বিক্রি করে ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা সুপারকে দেন। নিয়োগপত্র নিয়ে যোগদান করতে গেলে জানতে পারেন সেটি ভুয়া। টাকা ফেরত চাইলে টালবাহানা শুরু করেন সুপার। 
একই ঘটনা ঘটেছে স্থানীয় আব্দুল মোত্তালিবের ক্ষেত্রেও। চাকরি দেওয়ার কথা বলে তাঁর কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা নেন সুপার। কিন্তু, চাকরি দেননি। টাকাও ফেরত দেননি। আব্দুল মোত্তালিব বলেন, ‘মুই গরিব মানুষ। কোনোমতে বউ ছইলোক নিয়া করি খাও। চাকরি দিবার চায়া মোর কাছে জাহিদুল সুপার দেড় লাখ টাকা নেচে। চাকরিও দেয় নাই, ট্যাকাও দেওচে না। মুই এর বিচার চাও।’
এদিকে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে টাকা আত্মসাৎ, ভর্তি ও ফরম পূরণের টাকা আত্মসাৎ, দিনের পর দিন প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিতসহ ৮টি অভিযোগ এনে শিক্ষক প্রতিনিধি শরিফুল ইসলাম ইউএনওসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মমিন মণ্ডল তদন্ত করেছেন। তিনি গত ১৫ এপ্রিল ইউএনওর কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলেও এখনও পর্যন্ত সুপারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। 
অভিযোগের বিষয়ে সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগের ৮০ ভাগই মিথ্যা। সত্য হলো কয়েকজনের কাছে টাকা ধার নিয়েছিলাম। দ্রুত পরিশোধ করব। কাউকে ভুয়া নিয়োগপত্র দিইনি।’ লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের বিষয়ে বলেন, ‘একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে। তাদের কারণে প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছি না। সব ঝামেলা মিটিয়ে শিগগিরই প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত হবো।’
ইউএনওর (অতিরিক্ত) দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুলতামিস বিল্লাহ্ বলেন, ‘শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ