ব্যবসায়ীকে হত্যা করে লাশ ১০ টুকরা, দেবর-ভাবির মৃত্যুদণ্ড
Published: 29th, May 2025 GMT
সাড়ে সাত বছর আগে ঢাকার কেরানীগঞ্জে মফিজুর রহমান নামের এক ব্যবসায়ীকে হত্যার দায়ে দুজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
ঢাকার পঞ্চম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ইসরাত জাহান মুন্নি আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি হলেন মাকসুদা আক্তার ও তাঁর দেবর সালাউদ্দিন। পলাতক থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
রায়ের তথ্য অনুযায়ী, মাকসুদা কেরানীগঞ্জে এক ছেলে নিয়ে বাস করতেন। তাঁর স্বামী মালয়েশিয়া থাকতেন। মফিজুরও কেরানীগঞ্জে থাকতেন। তিনি স্বর্ণের ব্যবসার পাশাপাশি কবিরাজি করতেন। মাকসুদার একাধিকবার সন্তান মারা যায়। এ জন্য তিনি মফিজুরের শরণাপন্ন হন। একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি জানতে পারেন মাকসুদার প্রবাসী স্বামী। তিনি মুঠোফোনে মফিজুরকে এই সম্পর্ক থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। এরপর মফিজুরের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন মাকসুদা। পরে ভয়ভীতি দেখিয়ে মাকসুদার সঙ্গে সম্পর্ক অব্যাহত রাখেন মফিজুর। এতে ক্ষুব্ধ হন মাকসুদা। তিনি বিষয়টি নিয়ে তাঁর দেবর সালাউদ্দিনের সঙ্গে পরামর্শ করেন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর মফিজুরকে বাসায় দাওয়াত দেন মাকসুদা। বাসায় আসার পর খাবার ও চায়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন আসামিরা। খাওয়ার পর অচেতন হয়ে ঘুমাতে থাকেন মফিজুর। তাঁকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন মাকসুদা ও সালাউদ্দিন। তাঁরা লাশটি ১০ টুকরা করে একাধিক স্থানে ফেলে দেন।
এই ঘটনায় মফিজুরের ভাই বাদী হয়ে ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলাটি তদন্ত করে মাকসুদা ও সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। পরের বছরের ৩০ অক্টোবর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ১৯ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়। আজ রায় ঘোষণা করলেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন ঢাকা জেলা জজ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর খান মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ম্যারিকোর সাবেক শ্রমিকদের পাওনা দাবি-সংক্রান্ত আবেদনের শুনানি ঈদের পর
ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেডের সাবেক শ্রমিকদের ১ হাজার ৮২২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা পাওনা দাবি-সংক্রান্ত আবেদনের (রিট নম্বর ৫৭৬/২০১৮) শুনানি পিছিয়েছে। এ বিষয়ে ঈদুল আজহার পর শুনানি করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বিচারপতি ফাহমিদা কাদির ও বিচারপতি মুবিনা আসাফ গঠিত হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ মঙ্গলবার (২৭ মে) এ আদেশ দেন।
এর আগে গত ১৪ মে ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেডের দায়ের করা রিটের প্রতিপক্ষ ও প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ১৯ শ্রমিক ‘শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল’ ও ‘শ্রমিক কল্যাণ তহবিল’ থেকে তাদের পাওনা ১ হাজার ৮২২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা দাবি করে হাইকোর্টে আবেদন করেন। আদালত গত ১৯ মে শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন। এরপর এক সপ্তাহ পিছিয়ে ২৭ মে শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়।
এদিন দুপুরে আবেদনের ওপর শুনানির জন্য ডাকা হলে ম্যারিকোর সাবেক শ্রমিকদের পক্ষের আইনজীবী আদালতকে জানান, বিষয়টি একটু জটিল এবং শুনানির জন্য একটু বেশি সময়ের প্রয়োজন। এর পর হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ বিষয়টি ঈদুল আজহার পরে শুনানির করার নির্দেশ দেন।
ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেডের বিরুদ্ধে শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন না করার অভিযোগে ২০০৬-২০০৭ অর্থবছর থেকে ২০১২-২০১৩ অর্থবছর পর্যন্ত কর্মরত প্রাক্তন কর্মচারীদের পক্ষে ১৯ জন বাদী হয়ে ২০১৪ সালে ঢাকার শ্রম আদালতে মামলা করেন (মামলা নম্বর ৬৯১/২০১৪)।
এরপর ২০১৮ সালে ম্যারিকো বাংলাদেশ মামলটি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট পিটিশিন করে (৫৭৬/২০১৮)। পরবর্তীতে ২০২৫ সালের ১৪ মে সাবেক শ্রমিকদের পক্ষে ১৯ জন শ্রম আইনের ২৩৪ ও ২৪০(৩) ধারায় হাইকোর্টে ১ হাজার ৮২২ কোটি ৯৮ লাখ টাকার দাবিতে আবেদন করেন। আবেদনে মামলার রায় হওয়ার আগ পর্যন্ত দাবিকৃত টাকা ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেডের ভারতীয় মূল প্রতিষ্ঠান ম্যারিকো লিমিটেডের কাছে যাতে পাঠাতে না পারে সে বিষয়ে আদালতের আদেশ প্রার্থনা করেন।
বাংলাদেশের শ্রম আইনের ২৩৪ ধারায় শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন বাধ্যতামূলক হলেও ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড ২০০৬-২০০৭ অর্থবছর থেকে ২০১২-২০১৩ অর্থবছর পর্যন্ত আইন অমান্য করে তহবিল গঠন করেনি। ২০১৩-২০১৪ অর্থবছর থেকে তারা তহবিল গঠন শুরু করে।
ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেডের ৯০ শতাংশ শেয়ারের মালিক ম্যারিকো লিমিটেড ইন্ডিয়া। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে গত ১৬ বছরে প্রায় ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। এর মধ্যে ৪১৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা রেমিটযোগ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে। যার মধ্যে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরেই রেমিটযোগ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে ১ হাজার ৭৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, যা ১৬ বছরের মোট রেমিটযোগ্য টাকার প্রায় ৩৪ শতাংশ। এ অবস্থায় মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এবং প্রাক্তন শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের আগে আর কোনো অর্থ বিদেশে রেমিট না করার নির্দেশ দিতে হাইকোর্টে আবেদন জানানো হয়।
ঢাকা/রফিক