ধীরে ধীরে কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার কারণ
Published: 30th, May 2025 GMT
সুরা ফুরকান, পবিত্র কোরআনের ২৫তম সুরা, মক্কায় অবতীর্ণ। এতে ৭৭টি আয়াত রয়েছে। ‘ফুরকান’ অর্থ ন্যায়-অন্যায়ের মীমাংসা, যা কোরআনের একটি গুণবাচক নাম। এই সুরায় আল্লাহর একত্ববাদ, কোরআনের সত্যতা, আল্লাহর বান্দাদের (ইবাদুর রহমান) গুণাবলি, নবীদের কাহিনি এবং বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের জন্য জান্নাত ও জাহান্নামের সুসংবাদ ও দুঃসংবাদ বর্ণিত হয়েছে। সুরাটি পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য সতর্কবাণী ও অনুপ্রেরণা দেয়।
কোরআনের মহিমা ও উদ্দেশ্য
সুরার শুরুতে কোরআনকে ‘ফুরকান’ হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে: ‘কত মহান তিনি, যিনি তাঁর দাসের ওপর ফুরকান অবতীর্ণ করেছেন, যাতে সে বিশ্বজগতের জন্য সতর্ককারী হতে পারে। আকাশ ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব তাঁরই। তিনি কোনো সন্তান গ্রহণ করেননি। তাঁর সেই সার্বভৌমত্বে কোনো শরিক নেই।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত: ১-২)
পবিত্র কোরআনকে ধীরে ধীরে অবতীর্ণ করার কারণ ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে: ‘আমি তোমার কাছে এভাবে অবতীর্ণ করেছি, আর পাঠ করেছি থেমে থেমে, যাতে তোমার হৃদয় মজবুত হয়। ওরা তোমার কাছে কোনো সমস্যা নিয়ে এলে আমি তোমাকে তার সঠিক উত্তর ও সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছি।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত: ৩২-৩৩)
কোরআন মানুষের জন্য কল্যাণ, মানসিক দৃঢ়তা ও জিহাদের পাথেয়। এটি অবিশ্বাসীদের সঙ্গে কঠোর সংগ্রামের জন্যও গাইড হিসেবে কাজ করে (আয়াত: ৫০-৫২)।
অবিশ্বাসীরা কোরআনের সত্যতা প্রত্যাখ্যান করলেও এটি তাদের জন্য সতর্কবাণী এবং বিশ্বাসীদের জন্য হেদায়েত।আরও পড়ুনসুরা মাউনে মানুষদের মধ্যে দুটি দলের কথা বলা হয়েছে০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আল্লাহর বান্দাদের গুণাবলি
সুরার শেষাংশে ‘ইবাদুর রহমান’ বা আল্লাহর বান্দাদের ১২টি গুণাবলি বর্ণনা করা হয়েছে, যাঁরা জান্নাতের অধিকারী হবেন: ‘আর তারাই করুণাময়ের (রহমানের) দাস, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে আর যখন অজ্ঞ ব্যক্তিরা তাদের সম্বোধন করে তখন তারা বলে, ‘শান্তি’। আর তারা তাদের প্রতিপালকের জন্য সেজদায় ও কিয়ামে রাত কাটায়। আর তারা বলে, “হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের জন্য জাহান্নামের শাস্তি বন্ধ করো।”’ (সুরা ফুরকান, আয়াত: ৬৩-৭৪)
তাফসিরে ইবন কাসিরে উদ্ধৃত সেই গুণগুলো হলো:
 ১.                
      
				
২. মূর্খদের সঙ্গে তর্ক এড়ানো: অজ্ঞদের উত্তরে ‘শান্তি’ বলে এড়িয়ে যাওয়া।
৩. রাতে ইবাদত: নামাজ ও দোয়ার মাধ্যমে রাত অতিবাহিত করা।
৪. জাহান্নামের ভয় ও দোয়া: শাস্তি থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা।
৫. ব্যয়ে মধ্যম পন্থা: অপচয় বা কার্পণ্য না করে ভারসাম্য রক্ষা।
৬. শিরক থেকে মুক্তি: আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা।
৭. অন্যায় হত্যা থেকে বিরতি: বিনা কারণে প্রাণনাশ না করা।
৮. ব্যভিচার পরিহার: অপকর্ম ও অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকা।
৯. মিথ্যা সাক্ষ্য না দেওয়া: সত্যের পক্ষে থাকা।
১০. অসার কাজ এড়ানো: গুনাহের স্থান থেকে দূরে থাকা।
১১. কোরআনের প্রতি মনোযোগ: আল্লাহর আয়াতে প্রভাবিত হওয়া।
১২. উত্তম পরিবারের জন্য দোয়া: স্ত্রী-সন্তানের জন্য চক্ষু শীতল দোয়া এবং মুত্তাকিদের ইমাম হওয়ার প্রার্থনা।
এই গুণাবলি আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের জীবনব্যবস্থার একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা প্রদান করে।
‘আমি তোমার কাছে এভাবে অবতীর্ণ করেছি, আর পাঠ করেছি থেমে থেমে, যাতে তোমার হৃদয় মজবুত হয়। ওরা তোমার কাছে কোনো সমস্যা নিয়ে এলে আমি তোমাকে তার সঠিক উত্তর ও সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছি।’(সুরা ফুরকান, আয়াত: ৩২-৩৩)আরও পড়ুনসুরা কাওসারে তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫তওবা ও সৎকর্মের ফল
এ সুরায় তওবার গুরুত্ব তুলে ধরে বলা হয়েছে, ‘অবশ্য তারা নয় যারা তওবা করে, বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে। আল্লাহ পুণ্যের দ্বারা তাদের পাপক্ষয় করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত: ৭০)
যারা তওবা করে এবং সৎকর্মে লিপ্ত হয়, তারা আল্লাহর ক্ষমা ও রহমতের অধিকারী হয়।
নবীদের কাহিনি ও সান্ত্বনা
মহানবী (সা.)-কে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য নুহ (আ.), হুদ (আ.), সালেহ (আ.), মুসা (আ.) এবং হারুন (আ.)-এর কাহিনি উল্লেখ করা হয়েছে। আদ, সামুদ এবং অন্যান্য সম্প্রদায় তাদের নবীদের অবিশ্বাস করায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এই কাহিনিগুলো সত্য প্রত্যাখ্যানের পরিণতি এবং নবীদের প্রতি আনুগত্যের গুরুত্ব শিক্ষা দেয়। উদাহরণস্বরূপ: ‘তোমার আগে আমি যেসব রাসুল পাঠিয়েছি, তারা সকলেই তো খাওয়াদাওয়া করত ও হাটবাজারে চলাফেরা করত।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত: ২০)
সুরার শেষাংশে ‘ইবাদুর রহমান’ বা আল্লাহর বান্দাদের ১২টি গুণাবলি বর্ণনা করা হয়েছে, যাঁরা জান্নাতের অধিকারী হবেন।আরও পড়ুন‘বাকারা’ পবিত্র কোরআনের দ্বিতীয় সুরা০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আল্লাহর সৃষ্টি ও মহিমা
সুরায় আল্লাহর সৃষ্টির মহিমা বর্ণনা করা হয়েছে, ‘তিনি আকাশে বুরুজ সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে সূর্য ও উজ্জ্বল চাঁদ স্থাপন করেছেন।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত: ৬১)
এই আয়াতগুলো আল্লাহর অপরিমেয় শক্তি এবং সৃষ্টির সুষম বিন্যাসের প্রতি ইঙ্গিত করে।
সুরায় বিশ্বাসীদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ এবং অবিশ্বাসীদের জন্য জাহান্নামের দুঃসংবাদ দেওয়া হয়েছে। অবিশ্বাসীরা কোরআনের সত্যতা প্রত্যাখ্যান করলেও এটি তাদের জন্য সতর্কবাণী এবং বিশ্বাসীদের জন্য হেদায়েত। কোরআনকে আঁকড়ে ধরার মাধ্যমে মানুষ জাহান্নামের ভয় থেকে মুক্তি পেতে পারে এবং সঠিক পথে পরিচালিত হতে পারে। (মুহাম্মদ আসাদ, দ্য মেসেজ অব দ্য কোরআন, সুরা ফুরকান)
আরও পড়ুনসুরা ফাতিহার অর্থ ও ফজিলত০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব শ ব স দ র জন য দ র জন য জ র জন য স অব শ ব স ক রআন র ফ রক ন গ ণ বল আল ল হ রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’