বস্তির ঘরে কোমর-বুকসমান পানি, বাসিন্দারা আশ্রয় নিয়েছেন উড়ালসড়কের নিচে
Published: 30th, May 2025 GMT
অবস্থানভেদে কারও ঘরের ভেতরে কোমরসমান পানি, কারও আবার প্রায় বুকসমান পানি।
প্রবল বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রাজধানীর মিরপুরের কালশী বালুর মাঠ বস্তিতে। এ অবস্থায় বস্তির কয়েক শ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন কালশী উড়ালসড়কের নিচের খালি জায়গায়।
আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কালশী উড়ালসড়কের নিচে এই বস্তিবাসীদের অবস্থান করতে দেখা যায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার দিন ও রাতের বৃষ্টিতে বস্তি এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এ কারণে বস্তির এই বাসিন্দারা উড়ালসড়কের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। গতকাল রাত ১১টা থেকে তাঁরা এই জায়গায় অবস্থান করছেন বলে জানান।
সরেজমিনে দেখা যায়, উড়ালসড়কের নিচে কয়েক শ মানুষের ভিড়। কেউ বসে আছেন, কেউবা দাঁড়িয়ে। পলিথিনে থলিতে থাকা মুড়ি-গুড় খাচ্ছিলেন কেউ কেউ।
উড়ালসড়কের নিচের উঁচু স্থানে কেউ কেউ ভিজে যাওয়া তোশক বা জাজিম শুকানোর জন্য বিছিয়ে রেখেছেন। পানিতে নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষায় অনেকে নিজেদের ব্যবহৃত টেলিভিশন-রেফ্রিজারেটর ঘর থেকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন।
উড়ালসড়কের নিচে আশ্রয় নেওয়া অন্তত ১৫ জন বস্তিবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল সন্ধ্যার দিকে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে থাকলে তাঁদের ঘরে পানি ঢুকতে শুরু করে। রাত ৯টা-১০টার দিকে অনেকের ঘরে প্রায় হাঁটুসমান পানি উঠে যায়। এ অবস্থায় রাত ১১টার দিকে বস্তিবাসীরা উড়ালসড়কের নিচে এসে আশ্রয় নিতে শুরু করেন। অনেকে আবার কাছাকাছি থাকা আত্মীয়-স্বজনের বাসায় গিয়ে উঠেছেন বলে জানা গেছে।
কালশী বালুর মাঠ বস্তিতে স্বামী, শাশুড়ি ও দুই মেয়েকে নিয়ে থাকেন শিরিন আক্তার। বস্তির একেবারে ঢালু জায়গার দিকে তাঁদের ঘর। শিরিন বলেন, রাতেই কোমরসমান পানি উঠে গিয়েছিল। আজ সকাল ৮টার দিকে আরেকবার গিয়ে দেখে মনে হয়েছে, পানি আরও বেড়েছে। এরপর তিনি আর সেদিকে যাননি।
গতকাল রাত ১১টার পর থেকে উড়ালসড়কের নিচে আশ্রয় নিয়ে আছেন বলে জানান শিরিন। তিনি বলেন, পানিতে বিছানা, তোশক, ঘরের আসবাবপত্র সব ভিজে গেছে। শুধু কয়েকটা শুকনা কাপড় নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়েছেন। রাতে কলা-রুটি খেয়েছেন।
বস্তির মাঝামাঝি জায়গার ঘরে মেয়ে জান্নাত আর স্ত্রী জেসমিনকে নিয়ে থাকেন মোহাম্মদ কালাম। তিনি বলেন, গতকাল দিবাগত রাত ১২টায় ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন তাঁরা। এখনো ঘরের ভেতর হাঁটুর ওপরে পানি রয়েছে। কয়েকটা শুকনো কাপড় ছাড়া আর কিছুই ঘর থেকে আনতে পারেননি।
বস্তিটিতে প্রায় সাড়ে চার শ পরিবার থাকে। এই পরিবারগুলোর হাজারো সদস্য গতকাল সারা রাত উড়ালসড়কের নিচে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন বলে জানান ভুক্তভোগীরা। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ সকালে অনেকে এখান থেকে কাজে চলে গেছেন। কেউ কেউ ঘরে গিয়ে দরকারি জিনিসপত্র সরানোর চেষ্টা করছেন। চুরি ঠেকাতে কয়েকটা ঘরের সদস্যরা মিলে পালা করে পাহারা দিচ্ছেন।
উড়ালসড়কের নিচের এক পাশে বস্তিবাসীর মাঝে মুড়ি-গুড় বিতরণ করা হচ্ছিল। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই শুকনা খাবার দেওয়া হচ্ছে মোহাম্মদ মিন্টু নামের এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে।
ঘটনাস্থলে থাকা মোহাম্মদ মিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, পল্লবী থানার ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির ১০ নম্বর ইউনিটের সাংগঠনিক সম্পাদক তিনি। গত রাতেই তিনি এখানে এসেছিলেন, কিন্তু তখন এই মানুষগুলোর জন্য কিছু করতে পারেননি। দলের নির্দেশে আজ সকালে বস্তিবাসীদের মাঝে হালকা খাবার হিসেবে আপাতত মুড়ি ও গুড় দিয়েছেন। দুপুরের জন্য খিচুড়ির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেলা ১১টার দিকে উড়ালসড়কের নিচে খিচুড়ি রান্নার প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়।
কালশী মোড়ের কাছেই সড়ক থেকে নিচু জায়গায় বস্তিটির অবস্থান। বেলা ১১টার পর বায়তুল মঈন জামে মসজিদ হয়ে বস্তির ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করেন এই প্রতিবেদক। বস্তির ভেতরের দিকে ১০ মিটারের মতো যেতেই জমে থাকা পানির পরিমাণ হাঁটুসমান দেখা যায়। পরে সেখান থেকে ফিরে আসতে হয়।
বস্তিবাসীরা বলেন, গতকাল রাত থেকে আজ বেলা ১১টা পর্যন্ত তাঁদের এলাকায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কোনো কর্মীকে পানি অপসারণের কাজ করতে তাঁরা দেখেননি।
অবশ্য সকাল ১০টার দিকে ঢাকা উত্তর সিটির জনসংযোগ বিভাগ থেকে প্রথম আলোকে জানানো হয়, সংস্থার ১০ অঞ্চলের অধীনে কুইক রেসপন্স টিমের ৯৯ জন কর্মী জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছেন। তাঁদের সঙ্গে আছেন ৫০ জন শ্রমিক। পানি সরাতে দেশীয় সরঞ্জাম ব্যবহার করা হচ্ছে।
জলাবদ্ধতার তথ্য জানানোর জন্য গতকাল রাতে ঢাকা উত্তর সিটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ চালু করে বলে জানায় সংস্থাটির জনসংযোগ বিভাগ। আজ সকাল ১০টার দিকে এই বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তখন পর্যন্ত ২৮টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। ডিএনসিসির ১০টি অঞ্চলের ২৯টি জলাবদ্ধ এলাকায় কাজ করা হয়েছে বলেও জানানো হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গতক ল র ত ১০ট র দ ক অবস থ ন র জন য ১১ট র
এছাড়াও পড়ুন:
বস্তির ঘরে কোমর-বুকসমান পানি, বাসিন্দারা আশ্রয় নিয়েছেন উড়ালসড়কের নিচে
অবস্থানভেদে কারও ঘরের ভেতরে কোমরসমান পানি, কারও আবার প্রায় বুকসমান পানি।
প্রবল বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রাজধানীর মিরপুরের কালশী বালুর মাঠ বস্তিতে। এ অবস্থায় বস্তির কয়েক শ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন কালশী উড়ালসড়কের নিচের খালি জায়গায়।
আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কালশী উড়ালসড়কের নিচে এই বস্তিবাসীদের অবস্থান করতে দেখা যায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার দিন ও রাতের বৃষ্টিতে বস্তি এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এ কারণে বস্তির এই বাসিন্দারা উড়ালসড়কের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। গতকাল রাত ১১টা থেকে তাঁরা এই জায়গায় অবস্থান করছেন বলে জানান।
সরেজমিনে দেখা যায়, উড়ালসড়কের নিচে কয়েক শ মানুষের ভিড়। কেউ বসে আছেন, কেউবা দাঁড়িয়ে। পলিথিনে থলিতে থাকা মুড়ি-গুড় খাচ্ছিলেন কেউ কেউ।
উড়ালসড়কের নিচের উঁচু স্থানে কেউ কেউ ভিজে যাওয়া তোশক বা জাজিম শুকানোর জন্য বিছিয়ে রেখেছেন। পানিতে নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষায় অনেকে নিজেদের ব্যবহৃত টেলিভিশন-রেফ্রিজারেটর ঘর থেকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন।
উড়ালসড়কের নিচে আশ্রয় নেওয়া অন্তত ১৫ জন বস্তিবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল সন্ধ্যার দিকে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে থাকলে তাঁদের ঘরে পানি ঢুকতে শুরু করে। রাত ৯টা-১০টার দিকে অনেকের ঘরে প্রায় হাঁটুসমান পানি উঠে যায়। এ অবস্থায় রাত ১১টার দিকে বস্তিবাসীরা উড়ালসড়কের নিচে এসে আশ্রয় নিতে শুরু করেন। অনেকে আবার কাছাকাছি থাকা আত্মীয়-স্বজনের বাসায় গিয়ে উঠেছেন বলে জানা গেছে।
কালশী বালুর মাঠ বস্তিতে স্বামী, শাশুড়ি ও দুই মেয়েকে নিয়ে থাকেন শিরিন আক্তার। বস্তির একেবারে ঢালু জায়গার দিকে তাঁদের ঘর। শিরিন বলেন, রাতেই কোমরসমান পানি উঠে গিয়েছিল। আজ সকাল ৮টার দিকে আরেকবার গিয়ে দেখে মনে হয়েছে, পানি আরও বেড়েছে। এরপর তিনি আর সেদিকে যাননি।
গতকাল রাত ১১টার পর থেকে উড়ালসড়কের নিচে আশ্রয় নিয়ে আছেন বলে জানান শিরিন। তিনি বলেন, পানিতে বিছানা, তোশক, ঘরের আসবাবপত্র সব ভিজে গেছে। শুধু কয়েকটা শুকনা কাপড় নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়েছেন। রাতে কলা-রুটি খেয়েছেন।
বস্তির মাঝামাঝি জায়গার ঘরে মেয়ে জান্নাত আর স্ত্রী জেসমিনকে নিয়ে থাকেন মোহাম্মদ কালাম। তিনি বলেন, গতকাল দিবাগত রাত ১২টায় ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন তাঁরা। এখনো ঘরের ভেতর হাঁটুর ওপরে পানি রয়েছে। কয়েকটা শুকনো কাপড় ছাড়া আর কিছুই ঘর থেকে আনতে পারেননি।
বস্তিটিতে প্রায় সাড়ে চার শ পরিবার থাকে। এই পরিবারগুলোর হাজারো সদস্য গতকাল সারা রাত উড়ালসড়কের নিচে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন বলে জানান ভুক্তভোগীরা। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ সকালে অনেকে এখান থেকে কাজে চলে গেছেন। কেউ কেউ ঘরে গিয়ে দরকারি জিনিসপত্র সরানোর চেষ্টা করছেন। চুরি ঠেকাতে কয়েকটা ঘরের সদস্যরা মিলে পালা করে পাহারা দিচ্ছেন।
উড়ালসড়কের নিচের এক পাশে বস্তিবাসীর মাঝে মুড়ি-গুড় বিতরণ করা হচ্ছিল। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই শুকনা খাবার দেওয়া হচ্ছে মোহাম্মদ মিন্টু নামের এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে।
ঘটনাস্থলে থাকা মোহাম্মদ মিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, পল্লবী থানার ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির ১০ নম্বর ইউনিটের সাংগঠনিক সম্পাদক তিনি। গত রাতেই তিনি এখানে এসেছিলেন, কিন্তু তখন এই মানুষগুলোর জন্য কিছু করতে পারেননি। দলের নির্দেশে আজ সকালে বস্তিবাসীদের মাঝে হালকা খাবার হিসেবে আপাতত মুড়ি ও গুড় দিয়েছেন। দুপুরের জন্য খিচুড়ির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেলা ১১টার দিকে উড়ালসড়কের নিচে খিচুড়ি রান্নার প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়।
কালশী মোড়ের কাছেই সড়ক থেকে নিচু জায়গায় বস্তিটির অবস্থান। বেলা ১১টার পর বায়তুল মঈন জামে মসজিদ হয়ে বস্তির ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করেন এই প্রতিবেদক। বস্তির ভেতরের দিকে ১০ মিটারের মতো যেতেই জমে থাকা পানির পরিমাণ হাঁটুসমান দেখা যায়। পরে সেখান থেকে ফিরে আসতে হয়।
বস্তিবাসীরা বলেন, গতকাল রাত থেকে আজ বেলা ১১টা পর্যন্ত তাঁদের এলাকায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কোনো কর্মীকে পানি অপসারণের কাজ করতে তাঁরা দেখেননি।
অবশ্য সকাল ১০টার দিকে ঢাকা উত্তর সিটির জনসংযোগ বিভাগ থেকে প্রথম আলোকে জানানো হয়, সংস্থার ১০ অঞ্চলের অধীনে কুইক রেসপন্স টিমের ৯৯ জন কর্মী জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছেন। তাঁদের সঙ্গে আছেন ৫০ জন শ্রমিক। পানি সরাতে দেশীয় সরঞ্জাম ব্যবহার করা হচ্ছে।
জলাবদ্ধতার তথ্য জানানোর জন্য গতকাল রাতে ঢাকা উত্তর সিটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ চালু করে বলে জানায় সংস্থাটির জনসংযোগ বিভাগ। আজ সকাল ১০টার দিকে এই বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তখন পর্যন্ত ২৮টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। ডিএনসিসির ১০টি অঞ্চলের ২৯টি জলাবদ্ধ এলাকায় কাজ করা হয়েছে বলেও জানানো হয়।