বৃষ্টিতে তলিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ
Published: 30th, May 2025 GMT
টানা ২৪ ঘণ্টার ভারী বর্ষণে হাঁটু থেকে কোমরসমান পানিতে ডুবে গেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ক্যাম্পাস। প্রায় ৩০ বছর ধরে এ ক্যাম্পাসে জলাবদ্ধতার সমস্যা কাটেনি। কলেজ কর্তৃপক্ষ পুকুর খননসহ নানা পদক্ষেপ নিলেও বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা এখনো পর্যাপ্ত নয়। ফলে, বর্ষাকালে শিক্ষার্থীরা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
১২৮ বছর পুরনো এ প্রতিষ্ঠানটি দক্ষিণ বাংলার প্রাচীন এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা কলেজগুলোর অন্যতম। বর্ষাকালে কলেজ ক্যাম্পাসের পরিবেশ একেবারেই অনুকূলে থাকে না। বিশেষ করে, ছাত্রাবাসগুলোর অবস্থা নাজুক হয়ে ওঠে। টানা বৃষ্টিতে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ভবনের নিচতলায় পানি উঠে যায়। এ কারণে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে হল ছেড়ে বন্ধুদের মেস বা নিজ বাড়িতে চলে যান।
গত দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে এ সমস্যা ফের দেখা দিয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রসায়ন ভবন থেকে মিলেনিয়াম ভবন, বিজ্ঞান ভবন-২, লাইব্রেরি ভবন এবং কলাভবনের নিচতলায় হাঁটুসমান পানি জমে আছে। ২ নম্বর গেট থেকে কলা ভবন পর্যন্ত রাস্তাজুড়ে পানি জমে শিক্ষার্থীদের চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি এডিস মশার প্রজনন বাড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ-ব্যাধির আশঙ্কা তৈরি করেছে।
ক্যাম্পাসের তিনটি ভবনের পাশেই রয়েছে গভীর পুকুর। পুকুরের উত্তর দিকে রয়েছে ছাত্রীদের আবাসিক হল, দক্ষিণে খেলার মাঠ ও পরিত্যক্ত ডোবা আর পূর্বদিকে রেললাইন লাগোয়া কিছু টিনশেড ভবন। পশ্চিম দিকে অবস্থিত তিনটি ভবনের নিচতলায় পানি ঢুকেছে। কারণ, পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই।
এবারের বর্ষায় নতুন এক দৃশ্যও দেখা যাচ্ছে—কলেজ ক্যাম্পাসে জলাবদ্ধতা হওয়ায় বড়শি ও ছল হাতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকারে নেমেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীরাও মাছ শিকার করছেন।
নজরুল হলে থাকা তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রিয়াজুর রহমান বলেন,“হলের বারান্দায় পানি উঠে গেছে, আমরা মশারি দিয়ে মাছ ধরছি। যারা নিচতলায় থাকেন, তারা বাধ্য হয়ে হল ত্যাগ করেছেন। যারা ওপরের তলায় থাকেন, তারা এখনো রয়ে গেছেন।”
জলাবদ্ধতার বিষয়ে ভিক্টোরিয়া কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা দুঃখ প্রকাশ করেছেন। গণিত বিভাগের শাহাদাত হোসেন সৈকত বলেছেন, “এ সমস্যা নতুন নয়, ২০২২ সাল থেকেই আছে। বৃষ্টি হলেই হাঁটুসমান পানি জমে। প্রতি বছর মেঝে উঁচু করার কথা বলা হলেও কোনো সমাধান আসেনি।”
পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী নাফিজ বলেছেন, “বৃষ্টির সময় আমাদের ল্যাবগুলো ব্যবহার করা যায় না। দেয়াল আর মেঝের অবস্থা খুবই খারাপ।”
ইতিহাস বিভাগের সাবরিনা উর্মি বলেন, “বর্ষায় আমাদের কলেজে জলাবদ্ধতা হয়। ভবনগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। লাইব্রেরিতে বই পড়তে গেলে সমস্যা হয়। মেঝে উঁচু করা ও রাস্তা সংস্কার করা প্রয়োজন।”
কলেজের অধ্যক্ষ আবুল বাশার ভূঁইয়া বলেছেন, “জলাবদ্ধতা সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে চলছে। মেঝে উঁচু করলেও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। আশপাশের হাউজিং এলাকা ও বিসিকের পানির কারণে কলেজের পুকুরে পানি ঢুকে যায়। আমাদের কলেজ নিচু জায়গায় হওয়ায় এ সমস্যা লেগেই থাকে। আমরা চারদিক থেকে বাউন্ডারি নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি, যা হলে আশপাশের পানি প্রবেশ বন্ধ হবে। আশা করছি, প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হবে।”
ঢাকা/রুবেল/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন চতল য় কল জ ক ভবন র সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
গণভোট নিয়ে মতভেদে উপদেষ্টা পরিষদের উদ্বেগ
জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুতত সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়। যদিও এর আগেই এক সংবাদ সম্মেলনে এমন কথায় জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
প্রেস উইং জানায়, জাতীয় ঐক্যমত কমিশন থেকে প্রণীত জুলাই সনদ এবং এর বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য স্থাপনের প্রচেষ্টার জন্য এবং বহু বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।
এতে বলা হয়, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) আদেশ চূড়ান্তকরণ এবং এতে উল্লেখিত গণভোট আয়োজন ও গণভোটের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয়। এতে লক্ষ্য করা হয় যে, ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘদিন আলোচনার পরও কয়েকটি সংস্কারের সুপারিশ বিষয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। এছাড়া, গণভোট কবে অনুষ্ঠিত হবে ও এর বিষয়বস্তু কী হবে এসব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে সে জন্য সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে গণভোটের সময় কখন হবে, গণভোটের বিষয়বস্তু কী হবে, জুলাই সনদে বর্ণিত ভিন্নমতগুলো প্রসঙ্গে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা নিয়ে ঐক্যমত কমিশনের প্রস্তাবগুলোর আলোকে জরুরী ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে সভা অভিমত ব্যক্ত করে।
এসব ক্ষেত্রে ফ্যসিবাদবিরোধী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বীয় উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে দ্রুততম সময়ে ( সম্ভব হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে) সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা প্রদান করার আহ্বান জানানো হয়। এমন নির্দেশনা পেলে সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেক সহজ হবে। বলেও উল্লেখ করা হয়। পরিস্থিতিতে কালক্ষেপণের যেকোনো সুযোগ নাই সেটাও সবার বিবেচনায় রাখার জন্য বলা হয়।
সভায় ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা না পেলে কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা আলাপ-আলোচনা করে এই বিষয়েও আমাদের একটি ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা দেবে—এ প্রত্যাশা করছি। ওনারা যদি আলাপ-আলোচনা করেন, আমাদের জন্য কাজটি অত্যন্ত সহজ হয়। ওনারা যদি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, অবশ্যই সরকার সরকারের মতো সিদ্ধান্ত নেবে।”
ঢাকা/ইভা