স্মারকলিপি দিতে গিয়ে ইউএনও কার্যালয়ে অপদস্থ ৬ প্রবীণ
Published: 30th, May 2025 GMT
অসম্মতি, অসন্তুষ্টির পর বিয়ানীবাজারের এক ইউপি চেয়ারম্যানকে বহাল রাখতে স্থানীয়দের দাবি সংবলিত স্মারকলিপি গ্রহণ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। এ নিয়ে ইউএনও কার্যালয়ে অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সাংবাদিকসহ স্থানীয়দের উপস্থিতিতে ইউএনওর আচরণে বিব্রত হন স্থানীয়দের পক্ষ থেকে যাওয়া ছয় প্রবীণ প্রতিনিধি।
বৃহস্পতিবার উপজেলার ৭ নম্বর মাথিউরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আমান উদ্দিনকে স্বপদে বহাল রাখতে ইউএনওর মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিতে যান ইউনিয়নবাসীর পক্ষ থেকে কয়েকজন প্রবীণ প্রতিনিধি। সেখানে প্রথমে স্মারকলিপি গ্রহণে অসম্মতি জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মুস্তফা মুন্না। ঘণ্টাখানেক পর শর্ত সাপেক্ষে তিনি তা গ্রহণ করেন। এ নিয়ে তাঁর কার্যালয়ের সামনে নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্মারকলিপি দিতে যাওয়া ইউনিয়নের প্রবীণ ব্যক্তিরা। এ সময় ঘটনাস্থলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি এবং স্থ্যানীয়রা উপস্থিত ছিলেন।
স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য ঘটনার দিন বিকেল ৩টায় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ইউএনও কার্যালয়ে যান ইউনিয়নের ছয়জন মুরুব্বি প্রতিনিধি। বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রয়োজনীয় কাজ সারতে আসা লোকজন স্বাভাবিকভাবে কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারলেও সেখানে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে কার্যালয়ের বাইরে অপেক্ষায় রাখা হয় তাদের। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে গুঞ্জন শুরু হয়।
এমন পরিস্থিতিতে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে মাথিউরা ইউনিয়নবাসীর ব্যানারে মানববন্ধন আয়োজনের কথা শোনা গেলে নিরাপত্তা জোরদার করেন ইউএনও। বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা চত্বরে সেনাবাহিনীর একটি দল এবং কার্যালয়ের সামনে থানা পুলিশের কয়েক সদস্য অবস্থান করছেন। এ অবস্থায় মুরুব্বিরা স্মারকলিপি দিতে চাইলে কার্যালয়ে দায়িত্বরত আনসার সদস্য তাদের প্রবেশের অনুমোতি নেই বলে বাধা দেন। এক পর্যায়ে প্রতিবেশী দুই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় এক ঘণ্টা পর, ছবি তোলা যাবে না এবং সাংবাদিকরা ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন না– এমন শর্তের ভিত্তিতে স্মারকলিপি নেন ইউএনও।
মাথিউরা ইউনিয়নের মুরব্বি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলীন বলেন, মাথিউরাবাসীর বহু দাবি নিয়ে এ কার্যালয়ে বহুবার এসেছি। কখনও এমন অসম্মান কেউ কোনোদিন করেননি। জুলাই অভ্যুত্থানের ঘটনায় করা মামলার আসামি উপজেলার কয়েকজন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান। তারা নিজেদের জায়গায় বহাল থাকলেও শুধু মাথিউরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ বিষয়টি ইউনিয়নবাসীর পক্ষ থেকে লিখিতভাবে প্রশাসনকে অবহিত করতে এসেছিলেন তারা। এটি একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার দ্বিমুখী আচরণ বলে দাবি করেন এই প্রবীণ বাসিন্দা।
অপর মুরুব্বি নিজাম উদ্দিন বলেন, মাথিউরা ইউনিয়নবাসীর ভোগান্তি দূর করতে এবং অচলাবস্থা নিরসনে সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে তারা ছয়জন স্মারকলিপি নিয়ে এসেছিলেন। এখানে এসে যা দেখলেন তা অপ্রত্যাশিত। একই অপরাধে অপরাধী অন্যরা বহাল থাকলেও শুধু মাথিউরাবাসীকে জনপ্রতিনিধি ছাড়া করা হচ্ছে। এমন অবিচারের জবাব জানাতে এসেছিলেন তারা।
ছবি তুলতে নিষেধ করার বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মুস্তফা মুন্না বলেন, ‘চেয়ারম্যানকে সাময়িক বরখাস্ত করা নিয়ে ইউনিয়নে দুটি পক্ষ রয়েছে। একটি পক্ষ স্মারকলিপি দিতে এলে আমি ব্যস্ত ছিলাম। পরে তাদের স্মারকলিপি গ্রহণ করেছি এবং স্মারকলিপি যথাযথ নিয়মে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।’
১৯ মে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে মাথিউরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে সাময়িক বরখাস্ত করে। এর পর ২০ মে ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও একই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য প্যানেল চেয়ারম্যান-১ আলতাফ হোসেন নিজেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দাবি করে বল প্রয়োগে চেয়ারম্যানের বন্ধ কার্যালয় খুলে কার্যক্রম শুরু করেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে তিনি স্বঘোষিত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন শুরু করলে আপত্তি জানান ছয় ইউপি সদস্য। তারা ২১ মে জেলা প্রশাসক বরাবর এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দেন। ২৩ মে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে প্রধান করে এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি পুরো ঘটনা তদন্ত করে ২৭ মে প্রতিবেদন জমা দেন।
এ বিষয়ে প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান হেকিম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের নীতিমালা মেনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মাথিউরা ইউনিয়ন পরিষদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তদন্তে গত কয়েকদিনে যেসব অনৈতিক ঘটনা ঘটেছে, সেসব তুলে ধরা হয়েছে। ইউএনও গোলাম মুস্তফা মুন্না বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন সিলেটের জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে।
বিয়ানীবাজার প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, প্রথমবারের মতো বিয়ানীবাজার ইউএনও কার্যালয়ে এমন ঘটনা ঘটল। যেখানে স্থানীয় পর্যায়ে জরুরি একটি বিষয়ে সাংবাদিকদের উপস্থিত থাকতে দেওয়া হলো না। স্থানীয়দের পক্ষ থেকে প্রবীণ প্রতিনিধিরা গিয়েছিলেন। সাংবাদিকরাও ছিলেন। মুরুব্বিদের দপ্তরের দরজার সামনে আনসার দিয়ে প্রবেশে বাধা দেওয়া হলো। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের ই মাহবুব বলেন, তিনি এ বিষয়ে অবগত নন। দ্রুতই এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে খোঁজখবর নেবেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অফ স স ম রকল প কর মকর ত প রব শ প রব ণ স ত কর সদস য উপজ ল গ রহণ তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
শেরপুরে বেশি দামে সার বিক্রি: ২ ব্যবসায়ীকে সোয়া লাখ টাকা জরিমানা
শেরপুরে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি করায় দুই সার ব্যবসায়ীকে প্রায় সোয়া লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শেরপুর পৌর শহরের আখের মাহমুদ বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় এক বিএডিসি সার ডিলারকে ১ লাখ টাকা ও লাইসেন্সবিহীন সার বিক্রি করায় আরেক ব্যবসায়ীকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
আরো পড়ুন:
সোনারগাঁয়ে মহাসড়কে ১০০০ স্থাপনা উচ্ছেদ
ঝিনাইদহে ২৫০টি অবৈধ জাল জব্দ, বাঁধ উচ্ছেদ
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ভুইয়া আদালত পরিচালনা করেন। তিনি জরিমানার তথ্য জানান।
ইউএনও আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ভুইয়া বলেন, ‘‘সার বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই অসাধু ব্যাবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। কৃষকের উপর জুলুম মেনে নেওয়া হবে না।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমাদের বিভিন্ন সোর্স এ সব অসাধু ব্যবসায়ীদের খোঁজখবর রাখছেন। যার বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।’’ জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি।
অভিযানকালে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসলিমা খানম নীলু, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি রোপা আমন মৌসুমে কৃত্রিম সার সংকট দেখিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে কৃষকদের কাছে সার বিক্রি করছেন। বেশি দাম নেওয়ার অভিযোগ পেয়ে মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শহরের আখের মাহমুদ বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে বেশি দামে সার বিক্রির প্রমাণ পেয়ে বিএডিসি সার ডিলার মেসার্স মীম এন্টারপ্রাইজকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন। একইসঙ্গে লাইসেন্সবিহীন সার বিক্রয় করায় একই বাজারের কীটনাশক বিক্রেতা শিশির এন্টারপ্রাইজকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
শেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসলিমা খানম নীলু বলেন, ‘‘আমন মৌসুসে সারের দাম ও চাহিদার ভারসাম্য রক্ষায় আমরা নিয়মিত অভিযান করছি। আমরা যেখানে অভিযোগ পাচ্ছি, সেখানে অভিযান পরিচালনা করছি। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রির সুযোগ নেই।’’
ঢাকা/তারিকুল/বকুল