ভাগে কোরবানির ব্যবস্থা করছেন খামার মালিকরা
Published: 31st, May 2025 GMT
গত কয়েক বছর ধরে ভারত থেকে গরু আসা প্রায় বন্ধই বলা চলে। মিয়ানমার থেকে বৈধ-অবৈধভাবে কিছু গরু আসে। তবে এ সংখ্যা নেহাত খুবই কম। ফলে দেশে গরু, মহিষ ও ছাগলসহ পশুপালন এখন বেশ লাভজনক একটি খাতে পরিণত হয়েছে। গৃহস্থ পর্যায়ে পশু লালন-পালনের পাশাপাশি অনেকেই এটাকে ব্যবসা হিসেবে নিয়ে খামার গড়ে তুলছেন। বেকারত্ব ঘোচাতে এতে যুক্ত হচ্ছেন শিক্ষিত লোকজনও। ইতোমধ্যে খামারগুলোয় কোরবানির পশু বেচাকেনা শুরু হয়ে গেছে। অনেকেই আগেভাগে বুকিং দিয়ে রাখছেন। কোরবানির আগের দিন এসব পশু পৌঁছে যাবে কোরবানিদাতার বাসা-বাড়িতে। এবার ব্যতিক্রমী আয়োজন হলো, খামার মালিকরাই ক্রেতাদের জন্য ভাগে কোরবানির ব্যবস্থা করছেন।
চট্টগ্রামের নগরী ও জেলায় ১২ হাজার থেকে ১৩ হাজার ছোট-বড় খামার রয়েছে। এর মধ্যে তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার মাঝারি ও বড় মানের খামার রয়েছে। অবশিষ্ট খামারগুলো ছোট পরিসরের। এগুলোয় ৫ থেকে ১০টি করে গরু লালন-পালন করা হয়। এ ছাড়া গৃহস্থ পর্যায়েও এক থেকে একাধিক গরু, মহিষ ও ছাগলসহ কোরবানি যোগ্য বিভিন্ন পশু লালন-পালন করা হয়। 
 জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্যমতে, এবার কোরবানির ঈদে কমবেশি ৯ লাখের কাছাকাছি পশুর চাহিদা রয়েছে। কিন্তু কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে চট্টগ্রামের অভ্যন্তরে বিক্রির জন্য পশু প্রস্তুত করা হয়েছে ৮ লাখ ৬০ হাজার। ঘাটতি পূরণে ব্যাপারীদের মাধমে অবশিষ্ট পশু আসবে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলা থেকে।    
 চট্টগ্রাম ডিভিশনাল ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন জানান, ‘খামারগুলোয় সাধারণত গরু মোটাতাজাকরণের পাশাপাশি ছোট আকৃতির গরুকে লালন-পালনের মাধ্যমে বড় করা হয়। বিপুলসংখ্যক খামার গড়ে ওঠায় কোরবানির গরু নিয়ে চট্টগ্রামবাসীকে অন্তত দুশ্চিন্তা করতে হবে না। তবে কোরবানির ঈদ এলেই একটি মহল  পাশের  দেশগুলো থেকে গরু আমদানির অপতৎপরতা চালায়। এটা হলে খামারিরা লোকসানের শিকার হন। তবে গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় লালন-পালন করা গরুর দাম বেড়ে যায়। সরকার চাইলে গো-খাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রেখে এই খাতটিকে আরও বেশি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও নির্ভরযোগ্য করতে পারে।’
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.                
      
				
গত শুক্রবার নগরীর কাজীর দেউড়ি মোড়ে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য সমতল করা বড় একটি জায়গায় ঘেরা দিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন সাইজের শতাধিক গরু। শেঠ গ্রুপের মালিকানাধীন শেঠ এগ্রো ফার্মের গরুগুলো বিক্রির জন্য খামার থেকে নগরীর কেন্দ্রস্থলে নিয়ে আসা হয়েছে। রাতেও যাতে বেচাকেনা করা যায় সে জন্য লাগানো হয়েছে নানা রঙের বাতি। শেঠ গ্রুপের গবাদি পশু বিক্রির এই কেন্দ্রের সামনে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য রাখা হয়েছে একটি ছবি। গোটা শরীরে কালো কেশরাজিতে ভরা অনেকটা দাঁড়ানো মানুষের মতো হলেও দেখতে মুখটা একটি ষাঁড়ের। রাগী চোহারার এই ষাঁড়ের মাথায় শোভা পাচ্ছে দুটি বাঁকানো ও মোটা শিং। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, ক্রেতার চেয়ে আগ্রহী মানুষের সংখ্যাই বেশি।
মো. সেলিম নামে একজন বিক্রয়কর্মী জানিয়েছেন, এবার বিক্রির জন্য শতাধিক গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রাকৃতিক খাবার ও কুড়া-ভুষি খাইয়ে গরুগুলোকে বড় করা হয়েছে। দেড়-দুই লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা দামের গরু আছে এখানে। তবে এখনও পুরোদমে বেচাকেনা শুরু হয়নি। কেউ কেউ পছন্দ করে, দরদাম করে রেখে যাচ্ছেন।
দরদাম হলেই খামারের গরু চলে যাচ্ছে বাসা-বাড়িতে : ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সময় কোরবানির পশু বেচাকেনার প্রধান মাধ্যম ছিল হাট-বাজারগুলো। আনন্দ-উৎসাহে পরিবারের লোকজন নিয়ে মানুষ হাট-বাজার থেকে কোরবানির পশু ক্রয় করতেন। কিন্তু এখন সেদিন আর নেই। ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে অনেকই হাট-বাজারের পাশাপাশি মানুষ খামার থেকেই স্বাচ্ছন্দে পশু ক্রয় করছেন। অনেক খামারি অনলাইনে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গরু, মহিষ ও ছাগলসহ বিভিন্ন কোরবানিযোগ্য পশুর ছবি, ভিডিও আপলোড করছেন। দিচ্ছেন ওজনসহ বিভিন্ন তথ্য। আগ্রহী ক্রেতারা সেখান থেকে পছন্দের গরু খুঁজে নিচ্ছেন। দামে বনিবনা হলেই ক্রেতার সুবিধা অনুযায়ী ট্রাকে করে গরু চলে যাচ্ছে ক্রেতার বাসা-বাড়িতে। এভাবে কোরবানির পশু বেচাকেনার বিষয়টি দিনে দিনে জনপ্রিয় হচ্ছে।
খামার ব্যবসায় বড় বড় শিল্প গ্রুপ : শুধু নগরেই এখন ছোট-বড় প্রায় দুই’শ এগ্রো খামার গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীও এই ধরনের খামার গড়ে তুলেছেন। তাদের গড়া এসব খামারে কোরবানির জন্য কয়েক হাজার গরু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে খামার গড়ে তুলেছেন  টিকে গ্রুপ, আরডিএম গ্রুপ, ওয়েল গ্রুপ, শেঠ গ্রুপ, আবুল খায়ের গ্রুপ, এশিয়ান গ্রুপ, শাহ আমানত গ্রুপ, চৌধুরী গ্রুপ, কন্টিনেন্টাল গ্রুপসহ আরও কয়েকটি ছোটবড় শিল্প গ্রুপ। এসব খামারে দেড়-দুই লাখ টাকা থেকে ১৫ লাখ ২০ লাখ টাকা দামের গরুও পাওয়া যাচ্ছে।এশিয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ ছালামের উচ্চ শিক্ষিত ছেলে ওয়াসিফ আহমেদ ২০১৬ সালে মাত্র চারটি গরু দিয়ে শুরু করেন এশিয়ান অ্যাগ্রো খামার। এখন সেই খামারে বিক্রিযোগ্য গরু রয়েছে এক’শর ওপরে। নগরীর মোহরায় ওয়েল এগ্রো খামারেও শুরু করা হয় হাতেগোনা কয়েকটি গরু নিয়ে। এখন সেই খামারে বিক্রিযোগ্য গরু রয়েছে দুই শতাধিক। এভাবে এক’শ থেকে দুই শতাধিক গরু রয়েছে নগরীর বড় শিল্প গ্রুপগুলোর খামারগুলোতে।
 ভাগে কোরবানির ব্যবস্থা করে দিচ্ছে খামারিরা : এক বছর ধরে কোরবানিতে নতুন একটি ধারা তৈরি হয়েছে। অনেকের সামথ্য না থাকায়, কিংবা প্রয়োজন না পড়ায় ভাগে কোরবানি দিয়ে থাকেন। ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী, চাইলেই একটি গরুকে সাত ভাগে ভাগ করে সাতজনে মিলে কোরবানি দিতে পারেন। অনেক সময় এভাবে ভাগে কোরবানি দেওয়ার মতো লোক পাওয়া যায় না। কিছু সংখ্যক খামার মালিক নিজেদের ব্যবসার পাশাপাশি সেইসব মানুষদের কথা বিবেচনা করে, ভাগে কোরবানির ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। উদাহরণ দিতে গিয়ে একাধিক খামারি জানালেন, ধরুন কেউ একভাগ কিংবা দুইভাগ কোরবানি দিতে চান। খামার মালিকরা অনলাইনের মাধ্যমে এমন আগ্রহীদের নিয়ে কোরবানির ব্যবস্থা করেন। ক্রেতাদের সামর্থ অনুযায়ী গরুর দাম নির্ধারণ করে কোরবানি দেওয়া হয়। কোরবানিদাতা চাইলে খামারে সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারেন। নতুবা খামার মালিকরা ধর্মীয় বিধি-বিধান মেনে কোরবানির মাংস ভাগ করে কোরবানি দাতার বাসা-বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। 
 এবার চট্টগ্রাম জেলার আওতাধীন উপজেলা গুলোর মধ্যে বোয়ালখালীতে পশুর চাহিদা রয়েছে ২৯ হাজার ৭৪২টি, সাতকানিয়ায় ৪৫ হাজার ৩৭১টি, চন্দনাইশে ৪৭ হাজার ৪টি, আনোয়ারায় ৬৩ হাজার ৪২৮টি, পটিয়ায় ৭০ হাজার ১৮০টি, কর্ণফুলীতে ৩৩ হাজার ৫৩৩টি, মীরসরাইয়ে ৫৮ হাজার ৭৮০টি, সীতাকুণ্ডে ৫৬ হাজার ৮৫০টি, হাটহাজারীতে ৪৪ হাজার ৮৯০টি, রাঙ্গুনিয়ায় ৫০ হাজার, ফটিকছড়িতে ৬৯ হাজার ৪১৯টি, লোহাগাড়ায় ৩৮ হাজার ৫৯টি, রাউজানে ৩৪ হাজার ৩০২টি, বাঁশখালীতে ৫৯ হাজার ৪০৪টি। আবার চট্টগ্রামে এবার যেসব কোরবানি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে, তারমধ্যে  ষাঁড়ের সংখ্যা ৩ লাখ ৬৫ হাজার ২৯টি, বলদ ১ লাখ ২১ হাজার ৬৭০টি, গাভি ৪৯ হাজার ১১৪টি এবং মহিষ ৬৪ হাজার ১৬৩টি প্রস্তুত রয়েছে। এর বাইরে দুই লাখ ৫ হাজার ১৭৪টি ছাগল, ৫৫ হাজার ৬৯৭টি ভেড়া ও অন্যান্য পশু আছে ৩৫টি। 
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গর খ ম র ম ল কর খ ম রগ ল প রস ত ত খ ম র গড় র জন য শত ধ ক করছ ন নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
হস্তক্ষেপ নয়, পর্যবেক্ষণ ও সহযোগিতায় বিশ্বাসী টিম ডিরেক্টর রাজ্জা
সংবাদ সম্মেলন তখন শেষ। আব্দুর রাজ্জাককে মনে করিয়ে দেওয়া হলো, ‘‘বাংলাদেশ দলের টিম ডিরেক্টর কিন্তু টসেও ইনপুট দিতেন। আপনি কি…?’’ রাজ্জাক মুখে হাসি আটকে রাখেন। এই পদে আসন্ন আয়ারল্যান্ড সিরিজে দায়িত্ব পাওয়া রাজ্জাক স্রেফ এতোটুকুই বলতে পারেন, ‘‘আমাদের থেকে এমন কিছু কখনোই দেখতে পারবেন না। আমরা নতুন কিছু নিয়ে ভাববো।’’
জাতীয় দলকে নিয়ে সেই ভাবনা থেকেই আমিনুল ইসলাম বুলবুলের বোর্ড একজনকে টিম ডিরেক্টর নিয়োগ দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ের জাতীয় পুরুষ দলের ব্যর্থতার কারণে আলোচনা হচ্ছিল, ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ওপরে একটি ছায়া বিভাগ থাকবে যারা সরাসরি জাতীয় দল পর্যবেক্ষণ করবে।
সেই ছায়া বিভাগে সাবেক ক্রিকেটাররাই থাকবেন। প্রথম টিম ডিরেক্টর হিসেবে রাজ্জাক পেলেন দায়িত্ব। কেন টিম ডিরেক্টর নিয়োগ দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব হলো সেই প্রশ্ন করা হয় তাকে। নাজমুল হাসান বোর্ড সভাপতির দায়িত্বে থাকার সময় টিম ডিরেক্টর পদটি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। সাবেক অধিনায়ক ও বোর্ড পরিচালক খালেদ মাহমুদ এই দায়িত্ব পালন করেছেন বিশ্বকাপসহ বেশ কয়েকটি সিরিজে। দলের সঙ্গে গভীরভাবে মিশে যেতেন তিনি। টস থেকে শুরু করে টিম মিটিংয়ে দিতেন ইনপুট। যা নিয়ে পরবর্তীতে অভিযোগ করেছিলেন কোচ ও অধিনায়ক।
তবে রাজ্জাক নিজের কাজ, পরিধি এবং দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন বলেই নিশ্চিত করলেন,"অন্যান্য যে কোনো টিম ডিরেক্টরের মতোই হবে আমার কাজ। আমি সব কিছু পর্যবেক্ষণ করব, সব কিছুতে নজর রাখব। আর কখনও যদি টিম ম্যানেজমেন্ট মনে করে আমার কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন, তাহলে সেটিও দেওয়ার চেষ্টা করব। তাদের সাহায্য প্রয়োজন হলে আমি করব।"
"ক্রিকেট বোর্ডের মনে হয়েছে, দলের সঙ্গে একজন টিম ডিরেক্টর থাকলে ভালো হবে। এই পদটি কিন্তু আগেও ছিল। অনেক দিন ধরেই ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে বোর্ড পরিচালকের সংখ্যা কম থাকায় হয়তো দলের সঙ্গে কেউ যায়নি। তবে এর আগে প্রায় সিরিজেই দলের সঙ্গে টিম ডিরেক্টর থাকত।" - যোগ করেন তিনি।
ঢাকা/ইয়াসিন