ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস গতকাল শনিবার জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তবে ওয়াশিংটনের প্রধান মধ্যস্থতাকারী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ এ প্রতিক্রিয়াকে ‘একেবারেই অগ্রহণযোগ্য’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

হামাস বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে তারা তাদের প্রতিক্রিয়ায় একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তার প্রতি জোর দিয়েছে। যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধ করার দাবিটি অনেক দিন ধরেই ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হয়ে আছে।

এদিকে উইটকফের মতো একই সুরে কথা বলেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, হামাসের এ প্রতিক্রিয়া ‘অগ্রহণযোগ্য’। হামাস সব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে চলেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

ইসরায়েল বলছে, যুদ্ধ থামাতে হলে হামাসকে সম্পূর্ণ নিরস্ত্র হতে হবে। ভেঙে ফেলতে হবে তাদের সামরিক ও প্রশাসনিক কাঠামো। গাজায় এখনো থাকা ৫৮ জিম্মিকেও ফেরত দিতে হবে।

ইসরায়েল গত শুক্রবার হামাসকে হুঁশিয়ার করে বলেছে, তারা যেন এ চুক্তির প্রস্তাব মেনে নেয় এবং গাজায় বন্দী জিম্মিদের মুক্তি দেয়। তা না হলে হামাসকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে।

গতকাল এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, তারা মধ্যস্থতাকারী পক্ষগুলোর কাছে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এ চুক্তির অংশ হিসেবে হামাসের হাতে বন্দী দখলদার শক্তির ১০ জীবিত জিম্মি মুক্তি ও ১৮ জিম্মির মরদেহ ফেরত দেওয়া হবে। বিনিময়ে নির্দিষ্টসংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দিতে হবে।’

হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর একটি সূত্র জানিয়েছে, তারা উইটকফকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তবে এর সঙ্গে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও গাজা থেকে পুরোপুরি ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছে।

উইটকফ বলেছেন, হামাসের এ প্রতিক্রিয়া ‘পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য, যা আমাদের আরও পিছিয়ে দিচ্ছে।’ যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্রস্তাব মেনে নিতে সংগঠনটির প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

আরও পড়ুনগাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার চায় হামাস১২ ঘণ্টা আগে

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে উইটকফ লিখেছেন,‘ আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ৬০ দিনের একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে এটিই (যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব) একমাত্র উপায়। এর আওতায় জীবিত জিম্মিদের অর্ধেক ও নিহত জিম্মিদের অর্ধেক পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারবেন। আমরা একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে আন্তরিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা শুরু করতে পারব।’

হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য বাসেম নাঈম পরে এএফপিকে বলেন, তাঁরা উইটকফের প্রস্তাবে ‘ইতিবাচক ও দায়িত্বশীল’ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তবে তিনি অভিযোগ করেন, ‘আলোচনার এ প্রক্রিয়া পুরোপুরিভবে ইসরায়েলের পক্ষপাতদুষ্ট। ইসরায়েল যে শর্তগুলো মানতে চাইছে না, তা নিয়ে আমরা আগেই মার্কিন দূতের সঙ্গে একমত হয়েছিলাম।’

হামাস দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছে যে চুক্তিতে যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধ করার বিষয়টি থাকতে হবে।

গত মার্চে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে বেশ কয়েকবার আলোচনা হলেও গভীর মতপার্থক্যের কারণে কোনো সমাধান আসেনি।

আরও পড়ুনইসরায়েলের বাধায় পশ্চিম তীর সফরে যেতে পারছেন না সৌদিসহ পাঁচ আরব পররাষ্ট্রমন্ত্রী১৫ ঘণ্টা আগে

ইসরায়েল বলছে, যুদ্ধ থামাতে হলে হামাসকে সম্পূর্ণ নিরস্ত্র হতে হবে। ভেঙে ফেলতে হবে তাদের সামরিক ও প্রশাসনিক কাঠামো। এ ছাড়া গাজায় এখনো থাকা ৫৮ জিম্মিকে ফেরত দিতে হবে।

অন্যদিকে হামাস বলছে, তারা অস্ত্র সমর্পণ করবে না; বরং ইসরায়েলকে গাজা থেকে সেনা সরাতে হবে ও যুদ্ধ বন্ধে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইসরায়েলি হামলা এ উপত্যকায় এখন পর্যন্ত ৫৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে পুরো উপত্যকা।

আরও পড়ুনগাজায় বিতরণ করা বিতর্কিত সংস্থা জিএইচএফের ত্রাণের বাক্সে কী আছে১৭ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র র প রস ত ব ইসর য় ল ইসর য আরও প

এছাড়াও পড়ুন:

সব দলের সঙ্গে আলোচনা না করে নির্বাচন দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না: এনসিপি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সরকারকে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দিকে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা না করে সরকার নির্বাচনের দিকে যদি অগ্রসর হয়, সেটা যে গ্রহণযোগ্য হবে না।

রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার ১৯তম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এনসিপির সদস্যসচিব এ কথাগুলো বলেন।

রাজনৈতিক দলগুলো যদি দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে সামগ্রিক রাষ্ট্রীয় স্বার্থ এবং বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে যায়, তাহলে জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই সনদ প্রণয়ন করা সম্ভব বলেও মনে করেন আখতার হোসেন। তিনি বলেন, ‘সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবে বলে আমরা মনে করি।’

এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে, এ রকম একটা টাইমলাইন অনেক আগেই বলছে। আমরা মনে করি, নির্বাচনের আগে বিচার-সংস্কারকে দৃশ্যমান পর্যায়ে উন্নীত করা, জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা, নির্বাচনের জন্য মাঠ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা এবং একই সঙ্গে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের ঘোষণার দিকে যেতে হবে। অবশ্যই জুলাই সনদ এবং জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের পরে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা যেতে পারে।’

আখতার হোসেন বলেন, ‘এর আগে প্রধান উপদেষ্টা লন্ডনে বসে যখন একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন, তখন আমরা তার প্রতিবাদ করেছিলাম। যদি সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা না করে সরকার নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হয়, সেটা যে গ্রহণযোগ্য হবে না, তা বলার অবকাশ রাখে না।’

এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, ‘যাঁরা বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, যাঁরা বাংলাদেশের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, এই ফ্যাসিবাদবিরোধী পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই যদি সরকার নির্বাচনের মতো বিষয়কে খোলাসা ও সুনির্দিষ্ট করতে শুরু করে, তাহলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার বিষয়টি আমরা পুনর্বিবেচনা করব।’

রোববারের আলোচনায় অংশ নেয় বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।

আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, মো. আইয়ুব মিয়া। সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারীদের নিয়ে বারে ‘অগ্রহণযোগ্য’ আচরণ, আমিরাতের ক্ষোভে রাষ্ট্রদূতকে ফেরত নিচ্ছে ইসরায়েল
  • ৩৫ বছর পর রাকসু তফসিল নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়
  • সরকারের ঘনিষ্ঠরাই বলছে, এই সরকারের নির্বাচন দেওয়ার সক্ষমতা নেই: জি এম কাদের
  • সব দলের সঙ্গে আলোচনা না করে নির্বাচন দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না: এনসিপি