চুয়াডাঙ্গায় পাউবোর কর্মচারীকে ট্রেন থেকে ফেলে হত্যার অভিযোগে ট্রেন আটকে বিক্ষোভ
Published: 1st, June 2025 GMT
চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মচারী আবদুল গাফ্ফারকে ট্রেন থেকে ফেলে হত্যার অভিযোগে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। আজ রোববার সকালে উপজেলার উথলী রেলওয়ে স্টেশনে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
উথলী ইউনিয়নবাসী ও শোকাহত পরিবারের ব্যানারে এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়। এতে নিহত গাফ্ফারের ১১ মাস বয়সী শিশুসন্তানকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী রুবাইয়া আক্তার, বাবা জিন্নাত আলী, মা তহমিনা খাতুনসহ হাজারো নারী-পুরুষ অংশ নেন। কর্মসূচি ঘিরে সকাল থেকেই সেনাবাহিনী ও থানা-পুলিশের সদস্য উথলী রেলস্টেশন এলাকায় ছিলেন।
কর্মসূচি চলাকালে খুলনা থেকে রাজশাহীগামী ৭১৫ কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেন উথলী রেলস্টেশনে পৌঁছালে বিক্ষোভকারীরা প্রায় ২০ মিনিট ট্রেন আটকে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তাঁরা গাফ্ফার হত্যার ঘটনায় করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি টিটিই লালন চক্রবর্তী, অ্যাটেনডেন্ট মিলন ও সোহাগ মিয়া এবং জিআরপি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) পারভেজ ও কনস্টেবল কাদেরের শাস্তির দাবি জানান।
উথলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও নাগরিক সংগঠন জীবননগর উপজেলা লোকমোর্চার সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে কর্মসূচিটি হয়। এতে জেলা জামায়াতের শুরা সদস্য মাওলানা মো.
বক্তারা বলেন, গাফ্ফার বরাবরই প্রতিবাদী মানুষ। গত ২১ মে বিকেলে তিনি চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন থেকে উথলীর উদ্দেশে কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনে ওঠেন। ওই দিন ট্রেনের টিটিই, অ্যাটেনডেন্ট ও জিআরপি পুলিশ যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছিলেন। গাফ্ফার প্রতিবাদ করলে তাঁকে জোর করে পাশের বগিতে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। অন্য যাত্রীরা কারণ জানতে চাইলে তাঁরা গাফ্ফারকে ছিনতাইকারী বলে পরিচয় দেন ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান। কয়েক মিনিটের মাথায় জয়রামপুর স্টেশন এলাকায় তাঁকে ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলে ঘটনাস্থলেই মারা যান। সহযাত্রীরা বাড়িতে এসে ঘটনার বর্ণনা দিলে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় গাফ্ফারের বাবা বাদী হয়ে রেলওয়ে ও জিআরপি পুলিশের পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে ২৭ মে জীবননগর আমলি আদালতে হত্যা মামলার আবেদন করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি) দায়িত্ব দেন।
গাফ্ফারের মা তহমিনা খাতুনের অভিযোগ, মামলার ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও ডিবি এখনো কোনো যোগাযোগ করেনি। অথচ মামলা করায় জিআরপি পুলিশের কর্মকর্তারা ফোন দিয়ে তাঁদের হুমকি দিচ্ছেন।
জীবননগর উপজেলা লোকমোর্চার সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, গাফ্ফার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাতে হাজারো মানুষ আজ সমবেত হয়েছেন। এ ঘটনায় মামলার পাশাপাশি জেলা প্রশাসক ও রেলওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপারকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। মামলা নিয়ে কোনো গড়িমসি করলে এলাকাবাসীকে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জিআরপি পুলিশের চুয়াডাঙ্গা ফাঁড়ির এসআই জগদীশ চন্দ্র প্রথম আলোকে বলেন, ২১ মে বিকেলে জয়রামপুর থেকে গাফ্ফার লাশ উদ্ধারের পর পোড়াদহ রেলওয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়। ওই দিন নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা কোনো অভিযোগ নেই মর্মে লিখিত দিয়ে লাশ নিয়েছিলেন। পরে ২৭ তারিখে পাঁচজনের নামে মামলার বিষয়টি জেনেছেন। তিনি বলেন, মামলার আসামিরা বিষয়টি জেনেছেন। আইনগতভাবেই তা নিষ্পত্তি করবেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ বননগর র লওয় জ আরপ
এছাড়াও পড়ুন:
চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে টানা কর্মসূচির ঘোষণা অব্যাহতি পাওয়া শিক্ষানবিশ এসআইদের
চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে টানা কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন ৪০তম ব্যাচের অব্যাহতি পাওয়া শিক্ষানবিশ (ক্যাডেট) উপপরিদর্শকেরা। এখন প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ সদর দপ্তরের সামনে এ কর্মসূচি পালন করবেন তাঁরা।
আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর গুলিস্তানে পুলিশ সদর দপ্তরের সামনের সড়কের এক পাশে মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এ ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা। অব্যাহতি পাওয়া ৪০তম ব্যাচের শিক্ষানবিশ (ক্যাডেট) উপপরিদর্শকদের পক্ষ থেকে এসআই রকিবুল হাসান এই ঘোষণা দেন।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করেন। সেগুলোতে লেখা ছিল—‘এক বছরের পরিশ্রম, বৃথা কেন জানতে চাই’, ‘দাবি মোদের একটাই, চাকরি পুনর্বহাল চাই’, ‘রাষ্ট্রের বোঝা নয়, সেবক হতে চাই’, ‘বেতন ছাড়া ৩৬৫ দিন, আমার চাকরি ফিরিয়ে দিন’, ‘লাল সবুজের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’।
অব্যাহতি পাওয়া এসআই রকিবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অব্যাহতির পর আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সবার কাছে আমাদের দাবি জানিয়েছি। সর্বশেষ গত ১৯ মে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছি। কিন্তু উনি ব্যস্ততার কারণে ওই দিন দেখা করতে পারেননি।’
আরও পড়ুনপুলিশ সদর দপ্তরের সামনে অব্যাহতি পাওয়া শিক্ষানবিশ এসআইদের মানববন্ধন১৯ মে ২০২৫রকিবুল আরও বলেন, ‘পুলিশের মহাপরিদর্শক এক সপ্তাহের মধ্যে আমাদের সঙ্গে দেখা করার কথা বললেও দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। তাই আমরা আবার এসেছি। এখন থেকে চাকরি ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত পুলিশ সদর দপ্তরের সামনে আমাদের টানা কর্মসূচি চলবে।’
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া এসআইদের ভাষ্য, প্রশিক্ষণরত অবস্থায় অন্যায়ভাবে গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের মধ্যে চার ধাপে ৩২১ জনকে চাকিরচ্যুত করা হয়েছে। তাঁদের আত্মপক্ষ সমর্থনের ন্যূনতম সুযোগ দেওয়া হয়নি। অব্যাহতির পর ছয় মাস ধরে সরকারের কাছে দাবি জানালেও কেউ তাঁদের কথা শুনছেন না। বাধ্য হয়ে তাঁরা আইজিপির কাছে এসেছেন। কিন্তু তিনিও দেখা করছেন না। তাই এখন প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মানববন্ধন করবেন তাঁরা।
রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণ চলাকালে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে চার ধাপে ৪০তম ব্যাচের ৩২১ জন ক্যাডেট এসআইকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। নাশতা না খেয়ে হট্টগোল, প্রশিক্ষকের আদেশ না শোনা, অমনোযোগিতার মতো কারণ দেখিয়ে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। অব্যাহতি পাওয়ার পর থেকে তাঁরা চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন।