তরুণদের মধ্যে তামাক ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে
Published: 1st, June 2025 GMT
গতকাল ছিল বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। বিশ্বের নানা দেশে দিবসটি পালিত হয় সচেতনতা বৃদ্ধির নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশও বিভিন্ন আয়োজনে দিনটি পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (এডাস্ট) সমকাল সুহৃদ সমাবেশ আয়োজন করেছে ‘তামাকবিরোধী সচেতনতা বৃদ্ধি ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনার।
সেমিনারে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারীমৈত্রীর পরিচালক খালিদ বিন ইউসুফ। প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আব্দুল কাইউম সরদার আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এমপিএইচ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো.
প্রধান আলোচক খালিদ বিন ইউসুফ তথ্যচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে তামাক ব্যবহার ও এর প্রভাব সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩৭ মিলিয়ন কিশোর-কিশোরী তামাক ব্যবহার করছে। তামাক কোম্পানিগুলো তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে চটকদার প্যাকেট, ফ্লেভার এবং বিজ্ঞাপনী কৌশল ব্যবহার করছে; যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি। গ্লোবাল অ্যালায়েন্স টু অ্যান্ড টোব্যাকোর ২০২২ সালের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে ১৫-ঊর্ধ্ব আনুমানিক চার কোটি মানুষ তামাকজাত পণ্য নিয়মিত ব্যবহার করে। এর এক-চুতুর্থাংশ নারী। এই সংখ্যার ভিত্তিতে বাংলাদেশ তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যায় বিশ্বে পঞ্চম এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এ ছাড়া টোব্যাকো অ্যাটলাসের তথ্যমতে, দেশে প্রতি বছর প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার ১৩৫ জন তামাকজনিত রোগে মারা যান। তামাক ব্যবহারের কারণে বার্ষিক অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় প্রায় ৩৯ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা।
আব্দুল কাইউম সরদার আলম বলেন, ‘তামাকজনিত রোগে প্রতিবছর লাখো মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। হৃদরোগ, ক্যান্সার, স্ট্রোক, শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা, অ্যাজমা ও ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী ও প্রাণঘাতী রোগের পেছনে তামাক অন্যতম প্রধান কারণ। জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী জনসমক্ষে ধূমপান নিষিদ্ধ বিজ্ঞাপন ও প্রোমোশন নিষিদ্ধ, স্বাস্থ্য সতর্ক বার্তা বাধ্যতামূলক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০০ গজের মধ্যে বিক্রি নিষিদ্ধ, স্কুলে তামাকবিরোধী শিক্ষা অন্তর্ভুক্তি, মোবাইল ফোনে তামাকবিরোধী বার্তা প্রচার, চিত্রায়িত স্বাস্থ্য সতর্কীকরণ লেবেল বাধ্যতামূলক করা, এনজিও ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর ভূমিকা, গবেষণা ও তথ্য প্রচারের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার কথা রয়েছে। তারপরও তরুণদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে তামাক ব্যবহার বেড়েছে।’ তিনি শিক্ষার্থীদের তামাক তথা ধূমপান থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন।
সূচনা বক্তব্যে সুহৃদ প্রধান উপদেষ্টা শারমিন আকতার তামাকবিরোধী সচেতনতায় পরিবারের ভূমিকার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। এই পর্বে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের জীবনের লক্ষ্য এবং তামাকজনিত বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধান আলোচক।
প্রতিবছর ৩১ মে নানা আয়োজনে দিনটি পালিত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আন্তর্জাতিক সচেতনতা দিবস হিসেবে ১৯৮৭ সালে তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে অবহিত করা এবং তামাকমুক্ত সমাজ গঠনের আহ্বান জানাতে দিনটি ঘোষণা করে। সমকাল সুহৃদ সমাবেশ এডাস্টের প্রাক্তন সভাপতি সাগর হোসেনর সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স হ দ সম ব শ ত ম ক ব যবহ র ব শ বব
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদের ছুটি উপলক্ষে শ্রীমঙ্গলের সব রিসোর্টের বুকিং প্রায় শেষ
পবিত্র ঈদুল আজহায় এবার লম্বা ছুটি পেয়েছেন মানুষ। ৫ থেকে ১৪ জুন টানা ১০ দিন ছুটি কাটাবেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। স্কুল–কলেজে সেই ছুটি আরও বেশি, ১৯ জুন পর্যন্ত। দীর্ঘ এই ছুটি উপভোগ করতে দেশের পর্যটনস্থলগুলোতে ছুটে যাবেন অনেকে। ভ্রমণপিপাসুদের বরণে প্রস্তুত দেশের প্রসিদ্ধ পর্যটনস্থল চায়ের রাজধানীখ্যাত শ্রীমঙ্গল।
পর্যটকদের জন্য শ্রীমঙ্গলে আছে প্রায় ১০০টি হোটেল–রিসোর্ট। এসব রিসোর্টের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ইতিমধ্যে ৭ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত হোটেল-রিসোর্টগুলোর প্রায় ৯০ শতাংশ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। ঈদের দিন থেকে সব হোটেল–রিসোর্ট হাউসফুল পর্যটক থাকবে বলে আশা করছেন পর্যটন–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
পর্যটন–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছরখানেক ধরে ভারতের ভিসা বন্ধ থাকায় দেশের পর্যটন–সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে। শ্রীমঙ্গলে এমনিতেই পর্যটকেরা সারা বছর ভিড় করেন।
শ্রীমঙ্গলে চারদিকে সবুজের সমারোহে সজ্জিত সারি সারি চা-বাগানের নয়নাভিরাম দৃশ্য মুগ্ধ করে পর্যটকদের। পাশাপাশি দার্জিলিং টিলা, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই), টি মিউজিয়াম, বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন, হাইল হাওর, মৎস্য অভয়াশ্রম বাইক্কা বিল, নীলকণ্ঠ সাত রঙের চা কেবিন, চা-কন্যা ভাস্কর্য, বধ্যভূমি-৭১, লাল পাহাড়, শঙ্কর টিলা, গরম টিলা, ভাড়াউড়া লেক, ব্রিটিশদের সমাধিস্থল ডিনস্টন ওয়ার সিমেট্রি, হরিণছড়া গলফ মাঠ, নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীদের পল্লিগুলো পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। পাশাপাশি শ্রীমঙ্গলের পার্শ্ববর্তী কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, নুরজাহান চা–বাগান পর্যটকদের বিমোহিত করে।
শ্রীমঙ্গলের পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে বেশি রিসোর্ট রয়েছে রাধানগর ও ডলুবাড়ি এলাকায়। সেখানের লেমন গার্ডেন রিসোর্টের মালিক সেলিম মিয়া বলেন, ‘রাধানগর ও ডলুবাড়ি এলাকার সব রিসোর্টেই আগাম বুকিং পেয়েছি। আমাদের লেমন গার্ডেন রিসোর্টে ৮ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত প্রায় সব রুমই আগাম বুকিং হয়ে গেছে। পর্যটকদের কথা ভেবে আমরা সব ধরনের সুযোগ–সুবিধার ব্যবস্থা করেছি।’
শ্রীমঙ্গল ট্যুর অপারেটর অ্যান্ড ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রাসেল আলম প্রথম আলোকে জানান, ঈদের এই লম্বা ছুটিতে বিদেশি পর্যটক নেই বললেই চলে। আর বিদেশি পর্যটক না এলে ট্যুর গাইডদের কম বুকিং থাকে। তবে হোটেল–রিসোর্টগুলো ভালো আগাম বুকিং পেয়েছে।
শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সভাপতি ও গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্টের মালিক সেলিম আহমেদ বলেন, ‘শ্রীমঙ্গলের রিসোর্টগুলো বেশির ভাগই শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে। শহরে আর বড় কিছু রিসোর্টে এখনো কয়েকটি রুম আছে। সবাই আগাম বুকিং দিয়ে দিয়েছেন। ৭ থেকে ১৫ তারিখের জন্য পর্যটকেরা আগাম বুকিং দিয়ে রেখেছেন। আমরা এরই মধ্যে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমরা আশা করছি, ঈদের লম্বা ছুটিতে চায়ের রাজ্যে প্রচুর পর্যটকের সমাগম হবে।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ শ্রীমঙ্গল জোনের পরিদর্শক মো. কামরুল হোসেন চৌধুরী জানান, পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি বেশ লম্বা থাকায় প্রচুর পর্যটক সমাগম হবে। ইতিমধ্যে পর্যটন–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সভা হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি দর্শনীয় স্থানে নজরদারি রাখা হচ্ছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ থানার পুলিশ, র্যাব সাদাপোশাকে এবং ট্যুরিস্ট পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় থাকবে। পর্যটকেরা যেন নির্বিঘ্নে ঘোরাফেরা করে সুন্দরভাবেই বাড়ি ফিরতে পারেন, সেভাবেই নিরাপত্তাব্যবস্থা তৈরি করা হচ্ছে।