নির্বাচন ৩০ জুনের পরে যাবে না: প্রেস সচিব
Published: 1st, June 2025 GMT
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, এটা (নির্বাচন) আগেও হতে পারে, ৩০ জুন মানে এর বেশি যাবে না। এর মধ্যে এটা ডিসেম্বরে হতে পারে, জানুয়ারিতে হতে পারে, ফেব্রুয়ারিতে হতে পারে, মার্চেও হতে পারে, এপ্রিলে হতে পারে, মে মাসেও হতে পারে, জুনেও হতে পারে। কিন্তু জুনের ৩০–এর পরে যাবে না।
প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফর নিয়ে আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন প্রেস সচিব। সেখানে প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফর এবং সমসাময়িক বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সদস্যরা।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামীকাল সোমবার বিকেল চারটায় জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক উদ্বোধন করবেন বলে জানান প্রধান উপদেষ্টার উপ–প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
সংস্কার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সম্পৃক্ত আছে, তাদের সবাইকে ওই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে জানান আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। সংস্কার নিয়ে দ্বিতীয় দফায় আলোচনা শুরু করার জন্য প্রধান উপদেষ্টা এ আলোচনার উদ্বোধন করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি যে এই দ্বিতীয় দফা যে আলোচনা, যেটা আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে, এটা খুব শিগগির শেষ হবে এবং এই আলোচনা শেষেই ওনারা জুলাই চার্টার, যেটা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে, সে বিষয়ে একটা সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে পারবেন।’
‘জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হলো’প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফরের মধ্য দিয়ে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এই সফরে দুই দেশের মধ্যে ছয়টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে একটি হলো তারা আমাদেরকে ডেভেলপমেন্ট পলিসি লোন, যেটাকে বাজেট সাপোর্ট বলে, তারা ৪১৮ মিলিয়ন ডলার আমাদের দেবে বলে আশ্বাস দিয়ছে।’
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ বৈঠক হয়েছে উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা যতগুলো আশ্বাস চাচ্ছিলাম, তারা বলেছে, তারা ইন্টেরিম গভর্মেন্টের সঙ্গে থাকবে।’
প্রেস সচিব জানান, বাংলাদেশের জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ডুয়েল গেজ রেললাইনের জন্য ৬৪১ মিলিয়ন ডলার সহায়তা করবে জাপান। এর বাইরে জাপান ৪ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট ও স্কলারশিপের (মানবসম্পদ উন্নয়ন ও বৃত্তি) জন্য।
মহেশখালী-মাতারবাড়ি উন্নয়ন প্রকল্পে জাপান সহায়তা করবে জানিয়ে প্রেস সচিব আশাবাদ জানান, ২৯ বিলিয়ন ডলারের প্রাক্কলিত ব্যয়ের এই প্রকল্পে বড় ধরনের সহায়তা করবে জাপান। জাপানের প্রধান বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের দিক থেকে আমরা ভালো রেসপন্স পেয়েছি। আমরা আশা করছি, অনেক বড় বড় জাপানি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আসবে।’
আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে জাপান বিভিন্ন খাতে এক লাখ মানবসম্পদ নিতে চায় জানিয়ে শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘এ সফরের ফলে আমি মনে করি, জাপানের ম্যানপাওয়ারের মার্কেট একটি নতুন দুয়ার খুলল। এটার জন্য কিছু অ্যাগ্রিমেন্ট হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রফেসর ইউনূস একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছেন। একটা সমন্বিত উদ্যোগ আমরা নিলে এক লক্ষ কেন, হয়তো–বা আমরা এর চেয়ে বেশি পাঠাতে পারব।’
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদও উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’