খুলনায় ২২ হাটে কোরবানির পশু বিক্রি শুরু
Published: 1st, June 2025 GMT
পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে খুলনা জেলায় পশুর ২২টি অস্থায়ী হাট বসেছে। হাটগুলোতে ইতোমধ্যে জমে উঠতে শুরু করেছে পশু বিক্রি। বিক্রেতারা জানান, ঈদের সময় যত এগিয়ে আসবে ততই বাড়তে থাকবে ক্রেতাদের উপস্থিতি।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এবার খুলনায় চাহিদার তুলনায় পশুর সরবরাহ রয়েছে পর্যাপ্ত। খুলনা জেলায় কোরবানিযোগ্য গবাদি পশু প্রস্তুত রয়েছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৩১টি। এর বিপরীতে চাহিদা ১ লাখ ৫৬ হাজার ২২৮টি। উদ্বৃত্ত থাকবে ৬৭৪৬টি পশু।
আরো পড়ুন:
বৃষ্টি বাগড়ায় পশুর হাটে ক্রেতা কম, দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা
আগেভাগেই পশুর হাট, দুর্ভোগে নগরবাসী
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.
খুলনার ৯টি উপজেলায় গড়ে উঠেছে ঈদকে কেন্দ্র করে অস্থায়ী পশুর হাট। এসব হাটে ইতোমধ্যে পশু উঠতে শুরু করেছে। রূপসা, দিঘলিয়া, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া, তেরখাদা, ফুলতলা, কয়রা ও বটিয়াঘাটার হাটগুলোতে গরু-ছাগলের পাশাপাশি ভেড়া ও মহিষও উঠছে।
প্রতিটি হাটেই স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে পশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও দাম নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেখানে থাকছেন ভেটেরিনারি চিকিৎসক, যারা গবাদিপশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সনদ প্রদান করবেন। স্বাস্থ্যসনদ ছাড়া কোনো পশু কেনাবেচা না করতে হাট ইজারাদারদের নির্দেশনা দিয়েছে প্রশাসন।
সূত্র জানায়, প্রতিবছরের মতো এবারো নগরবাসী এবং গ্রামাঞ্চলের ক্রেতারা স্থানীয় হাটেই বেশি ভরসা রাখছেন। তবে, এবার দেশি পশুর জোগান বেশি থাকায় দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক রব ন র হ ট
এছাড়াও পড়ুন:
আগেভাগেই পশুর হাট, দুর্ভোগে নগরবাসী
কোরবানির ঈদ এখনো সপ্তাহখানেক বাকি। সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ৩ জুন থেকে রাজধানীতে অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট বসবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।
পোস্তগোলা, ধোলাইপাড়, শনির আখড়া, মোহাম্মদপুর, গাবতলী, আফতাবনগরসহ অন্তত ২০টি জায়গায় ইতোমধ্যেই গরু চলে এসেছে। কোথাও কোথাও শুরু হয়ে গেছে বেচাকেনাও। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।
রাস্তা নয়, যেন গরুর খামার
আরো পড়ুন:
সমন্বয় বাড়িয়ে আর্থিক বিবরণীর মানোন্নয়নে ৩ সংস্থাকে দিকনির্দেশনা
৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ: স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে বিএসইসির স্পষ্টকরণ
অনেক জায়গায় হাটের নির্ধারিত সীমানা ছাড়িয়ে আশপাশের রাস্তা, গলিপথ এমনকি আবাসিক ভবনের সামনেও পশু রাখা হচ্ছে। ইসলামবাগ ও হাজারীবাগ এলাকায় রিকশা চলাচল প্রায় অচল।
দয়াগঞ্জের বি-ব্লকের বাসিন্দা রবিউল হক বলেন, “গলির মুখ থেকে মসজিদের পাশ পর্যন্ত গরু দাঁড়িয়ে আছে। এতে শিশু, রোগী ও পথচারীদের চলাফেরায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।”
রবিবার শনির আখড়ার বাসিন্দা সারোয়ার হোসেন বলেন, “রাস্তায় গরু দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। মাইকে সারাদিন বিক্রি-বিক্রির চিৎকার। ঘরে বয়স্ক মানুষ, শিশুরা আছে—এমন পরিবেশে থাকা দায় হয়ে উঠেছে।”
নিয়ম শুধু কাগজে
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন (উত্তর ও দক্ষিণ) প্রতি বছর নির্ধারিত সময়ে হাট চালুর নির্দেশনা দেয়। কিন্তু বাস্তবে তা মানা হয় না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) একজন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা ৩ জুন থেকে হাট চালুর নির্দেশ দিয়েছি। কিন্তু আগেভাগেই পশু এসেছে, কিছু বিক্রিও হচ্ছে। খোলা জায়গার ওইভাবে নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ছে।”
অন্যদিকে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মো. এজাজ বলেন, “আমরা নিয়ম মেনেই কাজ করছি। তবে কোথাও কোথাও আগেই পশু এলে তা সমস্যা তৈরি করতে পারে।”
দক্ষিণে রাজনীতি, উত্তরে উদাসীনতা
ডিএসসিসি এ বছর ১১টি অস্থায়ী হাট বসানোর পরিকল্পনা করে। কিন্তু রাজনৈতিক জটিলতা ও কর্মচারীদের আন্দোলনের কারণে মেরাদিয়া ও আফতাবনগরের হাট স্থগিত করা হয়। তবুও সেসব জায়গায় সরাসরি নিয়ম ভঙ্গ করেই হাট বসেছে।
ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. জিল্লুর রহমান বলেন, “অনেক জায়গায় এখনো দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। নগর ভবনে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করায় কার্যাদেশ জারি করতে দেরি হচ্ছে।”
অন্যদিকে উত্তরে, যেখানে রাজনৈতিক চাপ তুলনামূলকভাবে কম, সেখানে আগেভাগেই হাট বসে যাচ্ছে তদারকির অভাবে। পর্যাপ্ত নজরদারির ঘাটতি স্পষ্ট।
ব্যবসায়ীদের যুক্তি- বিক্রির জন্য দরকার প্রস্তুতি
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগেভাগে গরু আনার কারণ একটাই, ক্রেতাদের আগে থেকে দেখানোর সুযোগ তৈরি করা। এতে হাটে আসা মানুষের সংখ্যা বাড়ে, বিক্রির সম্ভাবনাও বাড়ে। যদিও তারা স্বীকার করেন, এখনো বিক্রির হার কম।
শনির আখড়া হাটের বিক্রেতা আজগর আলী বলেন, “১৫ লাখ চাচ্ছি, এখন পর্যন্ত ৮ লাখ বলছে। দাম পেতে সময় লাগে। আগেভাগে এলে দরকষাকষির সময় পাওয়া যায়।”
সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ
পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, হাট যেন তাদের জীবনে এক আতঙ্কের নাম। গরু, ট্রাক, মাইকিং, ময়লা, দুর্গন্ধ—সব মিলিয়ে এক অস্থির পরিবেশ।
রায়েরবাগ এলাকার বাসিন্দা হায়দার আলী বলেন, “দনিয়া কলেজ মাঠের হাটের অনুমতি দেওয়া হলেও গরু চলে এসেছে ৩ কিলোমিটার ভেতরে রায়েরবাগ পর্যন্ত। অলিগলি পর্যন্ত গরু। আমরা কোথায় যাব? কিভাবে চলবো?”
বিশৃঙ্খলা রোধে করণীয়
নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, “নগরের স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও নাগরিক অধিকার রক্ষায় হাট ব্যবস্থাপনায় কঠোরতা জরুরি। প্রতি বছর একই বিশৃঙ্খলা দেখছি, অথচ কার্যকর পদক্ষেপ নেই।”
তিনি বলেন, “প্রতিটি হাট নির্ধারিত সময় ও স্থানে চালু করতে হবে। আবাসিক এলাকায় হাট নিষিদ্ধ করতে হবে। মাইকিং ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কঠোরতা আনতে হবে। ডিজিটাল বা অনলাইন পশুর হাট জনপ্রিয় করতে পারলে চাপ অনেকটাই কমবে। হাট ব্যবস্থাপনায় যেসব সমস্যা প্রতিবছরই দেখা দেয়, তার পেছনে রয়েছে দুর্বল প্রশাসনিক সমন্বয়, রাজনৈতিক চাপ এবং ব্যবসায়িক স্বার্থ। হাট ইজারা প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা না থাকলে কেউ দায়িত্ব নিতে চায় না। আবার যাদের ইজারা দেওয়া হয়, তারা নির্ধারিত নিয়ম মানে না।”
তিনি আরো বলেন, “কিছু রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী নিয়ম অমান্য করেই আগে হাট বসিয়ে দেন। পরে প্রশাসন বাধ্য হয় বিষয়টি মেনে নিতে। এতে করে আইনের শাসন বিঘ্নিত হয়।”
ঢাকা/মেহেদী