বাজেটের আকার হতে পারে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা
Published: 1st, June 2025 GMT
বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার ব্রত নিয়ে সোমবার (২ জুন) ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করা হচ্ছে। এবারকার বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এটি হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকরারের প্রথম বাজেট।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ দুপুর ৩টায় ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট পেশ করবেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারের সরাসারি ভাষণের মাধ্যমে এটি জাতির সামনে উপস্থাপন করবেন তিনি। এর আগে, সকাল সাড়ে ৯টায় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্ব অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে প্রস্তাবটি উত্থাপনের জন্য অনুমোদন করিয়ে নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
এই বাজেট নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা রীতিমতো সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তিনি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, “এই বাজেটটি বেশ ভালোই হবে। আমরা চেষ্টা করব ভালো কিছু দেওয়ার।”
আরো পড়ুন:
বাজেট পেশ সোমবার, লক্ষ্য অর্থনীতির ব্যয় সংকোচন
আসছে বাজেটে যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে
বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য কিছু থাকবে কীনা-এ ব্যাপারে সরাসারি কোনো উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, “বাজেটেই তা দেখতে পারবেন।” অর্থনীতিবীদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বাজেটকে গতানুগতিক বলেছেন, সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “তার কথা তাকে বলতে দেন।”
এদিকে, আগামী অর্থবছরে জন্য যে বাজেট তৈরি করা হয়েছে, তাতে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। এই ঘাটতি পূরণের জন্য মূলত অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভর করতে হবে সরকারকে। ফলে আগামী অর্থবছরে দেশের ভেতর থেকে অভ্যন্তরীণ ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা। বিদেশি ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে, ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভূত খাত থেকে আসবে আরো ১৯ হাজার কোটি টাকা। কর- বহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আদায় হবে ৪৬ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে অনুন্নয় ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ থাকছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ করা হয়েছে সাড়ে ৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ।
আগামী বাজেটে একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তাখাতে ব্যয় বাড়ানোর ঘোষণা থাকবে। এ ছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সর্ব্বোচ্চ ২০ শতাংশ মহার্ঘভাতা দেওয়ার ঘোষণা থাকতে পারে বাজেট বক্তব্যে। জুলাই যোদ্ধাদের জন্য নেওয়া বিভিন্ন কর্মসূচির কথাও থাকবে বাজেট বক্তৃতায়। তাদের জন্য গৃহনির্মাণ ও ভাতার দেওয়ার কথাও বলা হবে এতে। তবে মধ্যবিত্তদের জন্য জন্য এবার ব্যক্তি শ্রেণির আয়করমুক্ত সীমা বাড়ানো হচ্ছে না বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে যাদের টিআইএন আছে তাদের প্রত্যেককে ন্যূনতম ১০০০ টাকা কর দেওয়ার বাধ্যকতা থাকছে বাজেটে।
এবাবের বাজেট দলিল হিসেবে মোট ১১টি বই দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
ঢাকা/হাসনাত/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ র জন য উপদ ষ ট লক ষ য
এছাড়াও পড়ুন:
বাজেট পেশ ২ জুন, প্রচার হবে বিটিভিসহ সব টেলিভিশনে
জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে বাজেট উপস্থাপন করা হবে ভিন্ন আঙ্গিকে। সংসদ না থাকায় ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেট রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হবে।
আগামী ২ জুন (সোমবার) বিকেল ৪টায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের বাজেট বক্তব্য সম্প্রচার করা হবে।
সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জাতির উদ্দেশ্যে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করবেন।ওইদিন বিকেল ৪টায় ধারণকৃত বাজেট বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে প্রচারিত হবে। এছাড়া বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে ‘ফিড’ নিয়ে অন্যান্য সব বেসরকারি টেলিভিশন ও বেতারে একই সময়ে জাতীয় বাজেট বক্তব্য প্রচারের অনুরোধ করা হয়েছে তথ্য বিবরণীতে।
আরো পড়ুন:
বাজেটে ‘অত্যাচারের কর’ চালু করুন: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
বাজেটে সুদ মেটাতে ধরা হয়েছে ১ লাখ সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে চলতি বাজেটের চেয়েও ছোট বাজেট দেওয়া হবে। আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছর সরকারি ব্যয় ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা চলতি বাজেটের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম।আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতায় কিছু কর্মসূচিতে ভাতার পরিমাণ ও উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি কর্মসংস্থানে সুযোগ তৈরির উদ্যোগ থাকবে গ্রামীণ পর্যায়ে। এজন্য উজ্জীবিত করা হবে রাস্তাঘাট নির্মাণ, সংস্কারসহ গ্রামীণ অবকাঠামো খাতের কর্মযজ্ঞকে।
এর আগে সংসদের বাইরে বাজেট দেওয়া হয়েছিল ২০০৮ সালে। তখন ক্ষমতায় ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ওই বছরের ৯ জুন তখনকার অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম ২০০৮-০৯ অর্থবছরের জন্য ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। সেদিনও ছিল সোমবার।বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে সম্প্রচার করা হয়েছিল মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের বাজেট বক্তব্য।
তারপর আওয়ামী লীগের চার মেয়াদে সাড়ে ১৫ বছরে আবুল মাল আবদুল মুহিত টানা ১০ বার, আ হ ম মুস্তফা কামাল পাঁচবার এবং আবুল হাসান মাহমুদ আলী একবার জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করেন। নির্বাচিত সরকারের আমলের এসব বাজেট জাতীয় সংসদেই উপস্থাপন করা হয়। পরে মাসজুড়ে সেই প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনা হত সংসদে। জুন মাসের শেষ দিকে সংসদে পাস হত নতুন অর্থবছরের বাজেট।
এবার সংসদ না থাকায় সংসদের আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকছে না। তবে বাজেট ঘোষণার পর প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর নাগরিকদের নিকট মতামত চাইবে অর্থ মন্ত্রণালয়। মতামতের ভিত্তিতে তা চূড়ান্ত করা হবে। এরপর আগামী ২৩ জুনের পর যেকোনো একদিন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন নিয়ে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে তা আগামী এক জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে।
সবশেষ ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। জুলাইয়ে নতুন অর্থবছর শুরুর পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এবার বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা।
ঢাকা/এএএম/এসবি