অন্তর্বর্তী সরকার আজ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবে। যতটুকু জেনেছি, এবারের বাজেটের আকার হতে যাচ্ছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের চেয়ে নতুন বাজেটের আকার ৭ হাজার কোটি টাকা কম হতে পারে। অর্থ উপদেষ্টাসহ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মহল থেকে বলা হচ্ছে, এবারের বাজেট হবে জনকল্যাণমুখী। যদি তা–ই হয় তাহলে প্রশ্ন, অন্যান্য আর্থিক বছরের বাজেটের মতো এবারের বাজেটেও কি শিক্ষা খাত উপেক্ষিত থাকবে নাকি এবারের বাজেটে সরকার এই খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেবে?

জাতিসংঘের সংস্থা ইউনেসকোর পরামর্শ অনুযায়ী, মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির অন্তত ৪ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন। একই সঙ্গে সরকারি ব্যয়ের ১৫ শতাংশ শিক্ষা খাতে খরচ করা উচিত। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩ সালে শিক্ষা খাতে আমাদের ব্যয় ছিল জিডিপির মাত্র ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। বৈশ্বিকভাবে এই বরাদ্দ চতুর্থ সর্বনিম্ন। শিক্ষা খাতে অপ্রতুল ব্যয় আমাদের দক্ষ জনশক্তি তৈরির পথে এক বিরাট বাধা। বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর শিক্ষা শেষ করে এ দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন অনেক শিক্ষক। তাঁদের অভিজ্ঞতা ও মতামত থেকে জানা যায়, উচ্চশিক্ষা খাতে গবেষণা ও শিক্ষা উপকরণের ব্যবহারে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। অপ্রতুল শিক্ষা বরাদ্দ নিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বৈশ্বিক মানে সামনের দিকে আসতে পারবে না। তাই উচ্চশিক্ষাসহ সামগ্রিকভাবে শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে বরাদ্দ করা অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

বাজেটকে সামনে রেখে আরেকটি প্রত্যাশা রয়েছে। দেশে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এই মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনকে অনেক বেশি দুঃসহনীয় করে তুলেছে। তাই বাজেটের আকার কমানোর পাশাপাশি মূল্যস্ফীতিরও লাগাম টেনে ধরতে হবে। চলতি বছর প্রত্যাশা অনুযায়ী, কর আদায় না হওয়ায় বাজেটের অর্থ জোগান সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ ক্ষেত্রে সরকারকে অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিক প্রকল্পগুলোকে চিহ্নিত করে সেগুলো বাদ দিতে হবে। পাশাপাশি অত্যন্ত জরুরি ও প্রয়োজনীয় প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

সরকারের পক্ষ থেকে এবারের বাজেটকে বাস্তবমুখী বলে দাবি করা হচ্ছে। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারকে উপলব্ধি করতে হবে, শিক্ষা খাত একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ খাত। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সব খাতের সঙ্গে শিক্ষা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই সরকারের উচিত হবে এই খাতে বরাদ্দ বাড়ানো। এই বরাদ্দের ব্যয় যেন সুষ্ঠুভাবে ও সুপরিকল্পিতভাবে হয়, সেদিকেও লক্ষ রাখা জরুরি।

নৌশিন ফারজানা হুদা চৌধুরী, সহকারী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব শ বব দ য সরক র র বর দ দ

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব বাজেট হয়নি: ঢাকা চেম্বার

প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট সার্বিকভাবে ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব হয়নি। কারণ, প্রস্তাবিত বাজেটে বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন, সিএমএসএমই ও ব্যাংকিং খাত সংস্কারে সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা নেই।

আজ সোমবার সন্ধ্যায় প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ডিসিসিআইয়ের সহসভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহসভাপতি সালিম সোলায়মানসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা।

তাসকীন আহমেদ বলেন, ব্যাংক খাতে ঋণের সুদের হার কমিয়ে আনাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ ছাড়া বাজেটে ঘাটতি মেটাতে বেশি মাত্রায় ব্যাংকনির্ভর হওয়া একটি নেতিবাচক দিক। এবারের বাজেটে ব্যবসায় গতি আনার জন্য তেমন কোনো দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

এ সময় তাসকীন আহমেদ আরও বলেন, ‘বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমাতে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালন ব্যয় বাড়বে। এর ফলে সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির গতি কিছুটা মন্থর হয়ে যাবে। এ ছাড়া আর্থিক খাত থেকে অধিক হারে ঋণ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার কারণে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি আমদানি পর্যায়ে করমুক্ত পণ্যের ওপর ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আরোপকে আমরা সঠিক মনে করছি না। এতে ব্যবসার কার্যকরী মূলধন কমে যাবে।’

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তাসকীন আহমেদ আরও বলেন, ব্যক্তিগত করের ক্ষেত্রে আয়সীমায় ৫ শতাংশের সীমা উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে আগামী অর্থবছরে দেশের ৫০ শতাংশ মধ্যবিত্ত পরিবারের ওপর বাড়তি করের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ ছাড়া টার্নওভার কর শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি করেন ডিসিসিআইয়ের সভাপতি।

এ সময় অটোমোবাইল খাতে খুচরা যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করায় এই খাতের স্থানীয় উৎপাদন ব্যয় বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ইন্টারনেট ব্যবহারে খরচ কমলেও স্থানীয়ভাবে মোবাইল ফোন উৎপাদনে ভ্যাট বাড়ানোয় এ শিল্পের বিকাশ ব্যাহত হবে বলেও মনে করছে ঢাকা চেম্বার।

ডিসিসিআইয়ের সভাপতি আরও বলেন, ‘বাজেটে এলএনজিসহ ব্যবসার কাঁচামাল আমদানিতে কর কিছুটা কমানো হয়েছে। এর ফলে আমাদের হয়তো কয়েক মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমিয়ে আনা যাবে। আমাদের বেসরকারি খাতে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ কমছে। তবে বাজেটে ব্যবসাবান্ধব তেমন কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাইনি। এসএমই খাতে আমাদের দেশের সর্বমোট শ্রমশক্তির ৫০ শতাংশ ও ৮০ লাখের বেশি মানুষ জড়িত। অথচ বাজেটে এই খাত নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো রোডম্যাপ দেওয়া হয়নি।’

স্টার্টআপ খাত নিয়ে তাসকীন আহমেদ বলেন, এই খাতে ১০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের উদ্যোগ ইতিবাচক। তবে অনলাইন ব্যবসার লেনদেনে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। তাতে অনলাইনে যাঁরা ব্যবসা করছেন, তাঁদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতার পূর্বাপর
  • দিন পার করার বাজেট
  • দেশ পুনর্গঠনের প্রত্যয়ের আশানুরূপ প্রতিফলন নেই
  • করমুক্ত আয়সীমা বাড়বে তবে এক বছর পর
  • জ্বালানি খাতে বরাদ্দ দ্বিগুণ
  • নোবিপ্রবির রিসার্চ সেলে ৪৩ লাখ টাকা গড়মিল তদন্তে কমিটি
  • শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ টাকার অঙ্কে বেড়েছে, জাতীয় বাজেটের শতাংশে কমেছে
  • ওটিটি প্ল্যাটফর্মে নাটক, সিনেমা দেখায় খরচ বাড়তে পারে
  • তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য ১০০ কোটি টাকার তহবিল করবে সরকার
  • ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব বাজেট হয়নি: ঢাকা চেম্বার