এনসিপির মহানগর উত্তরের প্রধান সমন্বয়কারী হলেন হাফেজ আকরাম
Published: 2nd, June 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ঢাকা মহানগর উত্তরের কমিটি দেওয়া হয়েছে। এতে প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা হাফেজ আকরাম হুসাইন। তিনি বর্তমানে এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব পদে রয়েছেন।
রোববার এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং সদস্য সচিব আখতার হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ১৪ সদস্যের মহানগর উত্তরের কমিটি প্রকাশ করা হয়।
আকরাম হুসাইন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য হিসেবে ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে নীতিনির্ধারণী ভূমিকায় ছিলেন। তিনি ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সেসময় কমিটিতে সভাপতি ছিলেন এনসিপির বর্তমান সদস্যসচিব আখতার হোসেন।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করে বর্তমানে এনসিপির নেতা আকরাম একজন কুরআনের হাফেজ ও তারাবির ইমাম। তিনি একজন উদ্যোক্তা হিসেবে একটি আইটি ফার্মের প্রতিষ্ঠাতা এবং ‘সমাজচিন্তা’ নামক একটি পত্রিকার সম্পাদনা করেছেন তিনি। গত অক্টোবরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট আয়োজিত লিডারশিপ এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেন।
কমিটিতে যুগ্ম সমন্বয়কারী হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে মোস্তাক আহমেদ শিশিরকে। এ ছাড়া সদস্য হিসেবে রয়েছেন ১১ জন। তারা হলেন- এম এম শোয়াইব (মোহাম্মদপুর জোন), আব্দুল্লাহ আল মনসুর (মিরপুর জোন), মুনতাসির মাহমুদ (তেজগাঁও জোন), সৈয়দা নীলিমা দোলা, কাজী সাইফুল ইসলাম, সর্দার আমিরুল ইসলাম, মাশকুর রাতুল (উত্তরা জোন), মাইনুল ইসলাম (গুলশান জোন), ওমর ফারুক (রামপুরা জোন), খালেদা আক্তার, নাদিয়া চৌধুরী প্রমুখ।
জানতে চাইলে আকরাম হুসাইন বলেন, মাঠপর্যায়ে সংগঠনকে শক্তিশালী ও গতিশীল করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সমন্বয় কমিটি প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে থানা কমিটিগুলো গঠনের কাজ তদারকি করবে।
তিনি বলেন, সমন্বয় কমিটির কাজ হবে ঢাকা মহানগর উত্তরের প্রতিটি থানায় এনসিপির কমিটি গঠন করা। রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে এনসিপির নিবন্ধনের আবেদনের শর্ত পূরণের অংশ হিসেবেই এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনস প এনস প র ইসল ম সদস য আকর ম
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫