স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়া মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের স্বপ্ন ছিল তথ্যচিত্রের মাধ্যমে বাংলার রূপকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরা। কিন্তু ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের শামলাপুর চেকপোস্টে গুলি করে হত্যা করা হয় তাকে। থ্রিলার সিনেমাকেও যেন হার মানায় এ হত্যাকাণ্ড। মামলার অভিযোগপত্রে উঠে আসে এ ঘটনার আদ্যোপান্ত। 

সোমবার (২ জুন) সিনহা মামলায় সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়ই বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ছয় আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে। 

ওই সময়ে দাখিল করা মামলার অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের ৭ জুলাই সিনহা ও তার তিন সহযোগী শিপ্রা দেবনাথ, সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও তাহসিন রিফাত নূর কক্সবাজারের নীলিমা রিসোর্টে অবস্থান করেন। ইউটিউবে একটি ভিডিও চ্যানেল নিয়ে কাজ করার সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা হয়। সাধারণ মানুষ পুলিশের মাধ্যমে তাদের জিম্মি দশা, অত্যাচারের ঘটনা মেজর সিনহাকে জানায়। এসব জানতে পেরে সিনহা পীড়িত হন। নীলিমা রিসোর্ট থেকে টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওনা হন সিনহা ও তার সহকর্মী সাহেদুল ইসলাম সিফাত।

এরপর সন্ধ্যার দিকে মারিশবুনিয়া গ্রামের টুইন্যা পাহাড়ে উঠেছিলেন মেজর সিনহা। পরে একটি মসজিদ থেকে মাইকে ‘এলাকায় ডাকাত পড়েছে’ বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। এ ঘোষণার নেপথ্যে ছিলেন স্থানীয় আয়াজ উদ্দিন ও নুরুল আমিন। তারা দু’জনই পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত। ওইদিন সকাল থেকেই সিনহার গতিবিধি নজরে রাখা হয়। একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘বৃক্ষরোপণ’ অনুষ্ঠান শেষে ওসি প্রদীপকে জানানো হয়, মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ প্রাইভেটকার নিয়ে টেকনাফের শামলাপুর পাহাড়ে গেছেন। এসময় সোর্সের মাধ্যমে বাহারছড়া ক্যাম্পের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী সিনহার প্রতি নজর রাখতে থাকেন। শামলাপুর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান (এপিবিএন) চেকপোস্টে তল্লাশির নামে গাড়ি থেকে নামিয়ে মেজর (অব.

) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদকে খুব কাছ থেকে চারটি গুলি করেন ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী।

এর কিছুক্ষণ পরেই প্রদীপ কুমার দাশ যখন ঘটনাস্থলে যান, তখনো মেজর সিনহা জীবিত ছিলেন। এসময় ওসি প্রদীপ সিনহার মুখমণ্ডল ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পায়ের জুতা দিয়ে আঘাত করে ‘বিকৃত’ করার চেষ্টা করেন। এরপরই সিনহার মৃত্যু হয়। পরে লোক দেখানোভাবে তাকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের পাঁচ দিনের মাথায় ২০২০ সালের ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। 

আলোচিত এই মামলায় আসামি করা হয় টেকনাফ বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) লিয়াকত আলী, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, এসআই টুটুল, কনস্টেবল মো. মোস্তফা। তারা সবাই টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে ওইদিন রাতে কর্মরত ছিলেন।

আদালত থেকে র‌্যাব-১৫ কে মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয়। প্রথমে ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন র‌্যাব-১৫ এর সহকারী পুলিশ সুপার জামিল আহমদ। পরে তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তিত হয়ে র্যাবের সহকারী পরিচালক ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম তদন্তের দায়িত্বভার পান।
ওই মামলায় ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম।

এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৪ মাসের বেশি সময় ধরে চলা তদন্ত শেষে ২০২০ সালের  ১৩ ডিসেম্বর ৮৩ জন সাক্ষীসহ আলোচিত মামলাটির চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন র‌্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম। ১৫ জনকে আসামি করে দায়ের করা অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। 

২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলী এই দুজনের মৃত্যুদণ্ড, ছয় জনকে যাবজ্জীবন ও সাত জনকে খালাস দিয়ে রায় দেন।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে’ এ মামলা নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত দিলে চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়। ২৯ মে শুনানি শেষে আদালত রায়ের জন্য ২ জুন দিন ঠিক করে দেয়। আজ হাইকোর্ট ওই রায় বহাল রাখলেন। 

রায়ের পর আদালত প্রাঙ্গণ থেকে সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বলেন, “এ রায়ে আমরা খুশি। হত্যাকাণ্ডের ১৭৬৬ দিন পার হয়েছে। এরপর আমরা হাইকোর্টের রায় পেলাম। এখন আপিল বিভাগের কার্যক্রম শেষে রায় দ্রুত কার্যকর করা হোক।” 

তৎকালীন এসপি মাসুদ এ ঘটনায় ধোরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেলেন বলে কিছুটা অসন্তোষ রয়েছে বলেও তিনি জানান।

আজকের রায়কে ঐতিহাসিক রায় হিসেবে বর্ণনা করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “আজকের রায়ে সত্যের জয় হয়েছে। যেদিন সব প্রক্রিয়া শেষে রায় কার্যকর হবে সেদিন বলবো আমরা সন্তুষ্ট।” 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ২০২০ স ল র হত য ক ণ ড কর মকর ত ম হ ম মদ র সহক র তদন ত ক ল ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

এইচএসসি ও সমমান উত্তীর্ণদের জন্য ৩ কোটি টাকার স্কলারশিপ ঘোষণা

উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান এবং ‘এ’ লেভেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের জন্য তিন কোটি টাকার মেগা স্কলারশিপ প্রোগ্রাম চালু করেছে ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাস।

এ বিশেষ উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা এখন দেশে থেকেই মালয়েশিয়ার ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ পাচ্ছেন।

আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাস রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত। এটি মালয়েশিয়া ও আন্তর্জাতিক শিক্ষকদের সমন্বয়ে বৈশ্বিক পাঠ্যক্রম অনুযায়ী পরিচালিত।

এই স্কলারশিপ প্রোগ্রামের আওতায় যোগ্য শিক্ষার্থীরা ২০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বৃত্তি পেতে পারেন, যা নির্ধারিত হবে তাঁদের এইচএসসি, সমমান ও ‘এ’ লেভেল পরীক্ষার ফল এবং একটি বিনা মূল্যের অনলাইন প্লেসমেন্ট টেস্টের মাধ্যমে। এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা তাঁদের মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে স্কলারশিপ নিয়ে আন্তর্জাতিক মানের ডিগ্রি অর্জনের পথ উন্মুক্ত করতে পারবেন।

শিক্ষার্থীরা অনলাইনে নিবন্ধন করে বিনা মূল্যে প্লেসমেন্ট টেস্টে অংশ নিতে পারবেন নিম্নলিখিত লিংকে: https://ucsi-scholarship-form.web.app/

বিস্তারিত তথ্য, ভর্তিপ্রক্রিয়া ও প্রোগ্রামগুলো সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন:
https://www.bangladesh.ucsiuniversity.edu.my/

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এইচএসসি ও সমমান উত্তীর্ণদের জন্য ৩ কোটি টাকার স্কলারশিপ ঘোষণা
  • ‎নামাজরত বাবাকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ, ৩ পুলিশ আহত
  • দেশের প্রথম মালয়েশিয়ান ডিগ্রি ক্যাম্পাস: ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাস
  • সড়ক বিভাজকে মোটরসাইকেলের ধাক্কা, কিশোর নিহত