ডিএসসিসি বোর্ডের মেয়াদ শেষ, ইশরাকের শপথে অনিশ্চয়তা
Published: 2nd, June 2025 GMT
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বর্তমান বোর্ডের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ, সোমবার (২ জুন)। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন অনুযায়ী, মেয়রের পাঁচ বছর মেয়াদ গণনা করা হয় প্রথম সাধারণ সভার দিন থেকে। সেই হিসেবে মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় বিএনপি মনোনীত বৈধ ঘোষিত মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেনের শপথ নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন করে আইনি ও প্রশাসনিক অনিশ্চয়তা।
আইন কী বলে
২০০৯ সালের স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইনের ৪৯(১) ধারায় বলা হয়েছে, নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের প্রথম সভার দিন থেকে পাঁচ বছরের মেয়াদ কার্যকর হয়। ডিএসসিসির নির্বাচিত বোর্ডের প্রথম সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয় ২০২০ সালের ২ জুন। সেই হিসেবে বোর্ডের কার্যকাল আজ শেষ হচ্ছে।
আইনের ১৬ ধারায় বলা হয়েছে, মেয়রের পদ আকস্মিকভাবে শূন্য হলে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করে নতুন ব্যক্তি বাকি সময়টুকু দায়িত্ব পালন করবেন। তবে যেহেতু পুরো মেয়াদই শেষ হয়ে যাচ্ছে, এই ধারা আর কার্যকর নয়।
অন্যদিকে, আইনের ২৫(১) ধারায় বলা আছে, ‘অবস্থা বিশেষে’ সরকারের অনুমোদনে করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। এই প্রশাসক হতে পারেন প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কোনো কর্মকর্তা কিংবা অন্য উপযুক্ত ব্যক্তি।
এবিষয়ে নির্বাচন বিশ্লেষক আব্দুল আলিম বলেন, ‘‘করপোরেশনের বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় নতুন কাউকে শপথ করানো আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে এক ধরনের লেজেগোবরে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’’
এবিষয়ে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড.
আইনজীবীদের ভিন্ন যুক্তি
তবে ভিন্ন মত দিচ্ছেন ইশরাক হোসেনের আইনজীবী ও সাবেক আইনমন্ত্রী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, ‘‘আইনে ‘বিশেষ পরিস্থিতি’র ধারা রয়েছে। যেহেতু নতুন নির্বাচন হয়নি এবং আপিল বিভাগ ইশরাককে বৈধ ঘোষণা করেছে, সেহেতু তিনি আদালতের আদেশের ভিত্তিতে শপথ নিতে পারেন। নির্বাচন কমিশন চাইলে শপথের ব্যবস্থা করতে পারে।’’
ইসির অবস্থান
নির্বাচন কমিশন এখনও সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণ রায় হাতে পায়নি। ইসির সচিব মো. আখতার আহমেদ বলেন, ‘‘আমরা এখনো আদালতের পূর্ণ রায় হাতে পাইনি। নির্দেশনা এলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’’
পাঁচ বছরের আইনি লড়াইয়ের অবসান
ডিএসসিসির ২০২০ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিএনপি প্রার্থী ইশরাক হোসেনের দায়ের করা মামলার প্রায় পাঁচ বছর পর নিষ্পত্তি হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রেখেছে। ফলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে অপসারণ করে ইশরাক হোসেনকে বৈধ মেয়র হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তাপস বিজয়ী হন। তিনি ১৬ মে ২০২০ তারিখে মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং ১৭ মে প্রথম অফিস করেন। এরপর ২ জুন অনুষ্ঠিত হয় ডিএসসিসির প্রথম সাধারণ সভা, যেখান থেকে বোর্ডের পাঁচ বছরের মেয়াদ গণনা শুরু হয়।
পরাজিত বিএনপি প্রার্থী ইশরাক হোসেন ২০২০ সালের ৩ মার্চ নির্বাচনী ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করে ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। চলতি বছরের ২৭ মার্চ ট্রাইব্যুনাল রায়ে ইশরাকের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করে এবং তাকে মেয়র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এরপর ২৮ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করে। গেজেট স্থগিত চেয়ে মামুনুর রশিদ নামে এক ব্যক্তি ‘লিভ টু আপিল’ করেন, যা হাইকোর্ট ২১ মে এবং আপিল বিভাগ ২৯ মে খারিজ করে দেয়। আদালত তার রায়ে নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি নিষ্পত্তির দায়িত্ব দেয় এবং গেজেট প্রকাশের পক্ষে অবস্থান নেয়।
নগরবাসীর উদ্বেগ
সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ও ৫২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা জাকারিয়া মিয়া বলেন, ‘‘ ডিএসসিসির বোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ায় নগর ব্যবস্থাপনায় সাময়িক অচলাবস্থার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। দ্রুত প্রশাসক নিয়োগ বা নতুন নির্বাচনের ঘোষণা না এলে নগরসেবা ব্যাহত হতে পারে। আমরা নাগরিক সেবা বঞ্চিত। সামনে কোরবানির ঈদ।’’
দ্রুত নগরভবনের তালা খুলে দিয়ে কার্যক্রম চালুর দাবি জানান তিনি।
৬৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফজলে রশিদ বলেন, ‘‘ডিএসসিসির বর্তমান বোর্ডের মেয়াদ শেষ হলেও আদালতের রায় ও গেজেট প্রকাশ ইশরাক হোসেনকে শপথের একটি ব্যতিক্রমী সুযোগ রাখছে। এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে নির্বাচন কমিশন এবং সরকারকে। তারা চাইলে প্রশাসক নিয়োগ বা শপথ দুই পথেই অগ্রসর হতে পারে। তবে যেকোনো সিদ্ধান্ত দ্রুত না এলে নাগরিক দুর্ভোগ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’’
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তারা নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে। কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিলে সরকার আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেবে।
ইশরাক হোসেন বলেন, ‘‘আমি জনগণের ভোটে নির্বাচিত এবং আদালতের রায়ে বৈধ মেয়র। সরকারকে আদালতের আদেশ মানতেই হবে।’’
ঢাকা/টিপু
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইশর ক হ স ন ২০২০ স ল র ড এসস স র চ বছর র প রথম স ব যবস থ র প রথম অবস থ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
১৭৬৬ দিন পার হয়েছে, রায় দ্রুত কার্যকর করা হোক, মেজর সিনহার বোন
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার ১৭৬৬ দিন পার হয়েছে জানিয়ে এ ঘটনায় আদালতের রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন তার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস।
সোমবার (২ জুন) সকালে সিনহা হত্যা মামলায় টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলীর ফাঁসির রায় বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। এছাড়া, বাকি ৬ আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও বহাল রাখা হয়েছে।
রায়ের পর আদালত প্রাঙ্গণে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “এ রায়ে আমরা খুশি। হত্যাকাণ্ডের ১৭৬৬ দিন পার হয়েছে। এরপর আমরা হাইকোর্টের রায় পেলাম। এখন আপিল বিভাগের কার্যক্রম শেষে রায় দ্রুত কার্যকর করা হোক।”
তৎকালীন এসপি মাসুদ এ ঘটনায় ধোরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেলেন বলে কিছুটা অসন্তোষ রয়েছে বলেও তিনি জানান।
আজকের রায়কে ঐতিহাসিক রায় হিসেবে বর্ণনা করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
তিনি বলেন, “আজকের রায়ে সত্যের জয় হয়েছে। যেদিন সব প্রক্রিয়া শেষে রায় কার্যকর হবে সেদিন বলবো আমরা সন্তুষ্ট।”
সিনহা ছিলেন সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর, যিনি স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়ার পর কয়েকজন তরুণকে সঙ্গে নিয়ে ভ্রমণ বিষয়ক তথ্যচিত্র বানানোর জন্য কক্সবাজারে গিয়েছিলেন। ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের শামলাপুর চেকপোস্টে গুলি করে হত্যা করা হয় তাকে। ভাইকে হত্যার পাঁচ দিন পর সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন।
২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেয় র্যাব। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
২০২১ সালের ২৭ জুন ওই ১৫ আসামির বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছিলেন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল। সাত মাস পর ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি তিনি রায় ঘোষণা করেন। পরে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণে ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। আজ হাইকোর্ট ওই রায় বহাল রাখলেন।
ঢাকা/এম/ইভা