যুক্তরাজ্য থেকে আইন ও ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর। এই জোড়া ডিগ্রিধারী রাহাত খান এখন গরুর খামারের মালিক। শুধু এটুকু বললে পুরোটা বলা হয় না। আসলে সফল উদ্যোক্তাও তিনি। আর এ সাফল্যের ধারাবাহিকতাও আছে। অন্য কোনো পেশায় না জড়িয়ে কেন এই পেশায় আসা? উত্তরে রাহাতের বক্তব্য, ‘ছোটবেলায় গরু পালতে দেখতাম। ভালো লাগত। কোরবানির সময় তো গরুর সঙ্গে একটা নৈকট্য তৈরি হয়। এ সব মিলিয়ে বলা যায়, এই প্রাণীর প্রতি একধরনের ভালোবাসা থেকেই এই খামারের পরিকল্পনা।’

রাহাত খানের প্রতিষ্ঠানের নাম আর কে অ্যাগ্রো। উত্তরের জেলা বগুড়ার শিবগঞ্জের চণ্ডীহারা গ্রামে রাহাতের খামারটি থেকে এখন প্রতিবছর ১০০ থেকে ১৫০টি গরু বিক্রি হয়।

রাহাত খানের মতো এমন অনেক তরুণ, উচ্চশিক্ষিত উদ্যোক্তা গোখামার বা প্রাণিসম্পদের খামার তৈরি করছেন। গোখামারের চিরাচরিত চেহারা পাল্টে দিয়েছেন তাঁরা। আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে পরিচালিত হচ্ছে খামার। হচ্ছে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান। দেশের পশুসম্পদ খাতে ছোট ধরনের বিপ্লব হচ্ছে বলা যায়। উচ্চশিক্ষার পর গরু বা প্রাণিসম্পদের খামারি হওয়ার জন্য নানা কথাও শুনতে হয়েছে
অনেককে। তবে সেগুলো তাঁরা গায়ে মাখেননি। এখন খামারি হয়ে উঠেছে গর্বের পরিচয়। তাঁদের কাছে মোটেও বিড়ম্বনা বা লজ্জার কোনো বিষয় নয় এই পেশা।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপিতে স্থির মূল্যে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান ১ দশমিক ৮০ শতাংশ। এ খাতে প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। আর চলতি মূল্যে জিডিপির আকার ৮২ হাজার ১৪ কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান বলছিলেন, ‘এসব সাহসী উদ্যোগের গল্প। দেশের মধ্যে তরুণ-তরুণীরা অর্থনীতির ভবিষ্যৎ খুঁজে পাচ্ছেন। কৃষি হবে আগামী দিনের বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির চালক। নতুন এই চালক হিসেবে তাঁদের এগিয়ে আসা অর্থনীতির ভালো সংবাদ।’ এ সংবাদই তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশের নানা প্রান্তে। তাঁদের এসব উদ্যোগের ফলে আখেরে লাভ হচ্ছে দেশের অর্থনীতির।

‘তোমার পরিচয় কী দেব, গরু পালো?’

কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার ধনাইতরি গ্রামের মিনা অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী মোফাজ্জল হক। তিনি যুক্তরাজ্য থেকে মার্কেটিং বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। আট বছর ধরে ছিলেন যুক্তরাজ্যে। তারপর দেশে এসে একটি প্রতিষ্ঠানে মাসখানেক প্রশিক্ষণ নেন। বাড়িতে গরু, হাঁস–মুরগি পালার একটা রেওয়াজ ছিল। আর তাতে নিবিষ্ট ছিলেন মোফাজ্জলের মা তাহমিনা আহমেদ চৌধুরী। গবাদিপশুর প্রতি মায়ের এই প্রবল আগ্রহ তাঁর মধ্যেও চলে এসেছে বলে মনে করেন মোফাজ্জল। একপর্যায়ে খামার করবেন বলে মা ও ছেলে মিলে যুব উন্নয়নের প্রশিক্ষণ নেন প্রায় তিন মাস। এরপর খামারের শুরু।

এত দিন বিদেশ অবস্থান, সেখানে উচ্চশিক্ষার পর ‘গরু পালন’কে পেশা হিসেবে নেওয়ার বিষয়টা অনেকেই ভালো মতো দেখেননি। তাঁর স্ত্রী চিকিৎসক। মোফাজ্জল বলছিলেন, ‘বিদেশ থেকে আসার পর আমাকে আমার স্ত্রী অনেকের সামনে গর্ব নিয়ে পরিচয় করিয়ে দিতেন। এরপর যখন গরুর খামার শুরু করলাম, তখন স্ত্রীও কিছুটা বিব্রত। বলতেন, “তোমাকে কীভাবে পরিচয় করিয়ে দেব, গরু পালো?” এখন অবশ্য স্ত্রীর মধ্যে আর কোনো হীনম্মন্যতা নেই। এখন গর্বভরেই স্বামীকে পরিচয় করিয়ে দেন।’

মোফাজ্জলের খামারে মূলত মাংস বিক্রির জন্যই গরু পালন করা হয়। এই কোরবানি ঈদের আগে ৬৫টি গরু বেচেছেন। দেশি, ক্রস ও শাহিওয়াল জাতের গরুর উৎপাদন হয় এখানে। এখান থেকে প্রতিদিন গরুর মাংসও বিক্রি হয়। আর শুধু খামার নয়, কুমিল্লা শহরে একটি রেস্তোরাঁও চালু করেছেন। সাড়াও পাচ্ছেন ভালো, জানালেন।

শুধু লাভ নয়, ঝুঁকির চিন্তাও থাকতে হবে

সব ব্যবসায় কি সব মানুষ সফল হয়? নিশ্চয়ই না। পৃথিবীর আর অন্য কিছুর মতো গরুর খামারের ব্যবসাতেও লাভ-লোকসান আছে। সব উদ্যোক্তা সফল হয়েছেন এমনও না। আমরা সফলতার গল্পগুলো বলছি। কিন্তু এতে অনেক ঝুঁকিও আছে বলে মনে করেন ঢাকার কেরানীগঞ্জের এসএসসি অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারীদের একজন মাসরুর আহমেদ। এটি মূলত গরু মোটাতাজা করার খামার। ২০২১ সাল থেকে মাসরুর ও তাঁর বন্ধু মিলে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। এখন বছরে প্রায় দেড় শ গরু এখান থেকে বিক্রি হয় বলে জানান এ উদ্যোক্তা। তিনি জানান, খামার করতে বড় খরচ গেছে শেড নির্মাণে। এতেই প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয় হয়ে যায়। এরপর তো বাকি খরচ আছে।

ঝুঁকির বিষয়টা নিয়ে মাসরুর আহমেদ বলছিলেন, ‘যদি একটা গরুরও ক্ষতি হয় বা মারা যায়, তাহলে ১৪ থেকে ১৫টা গরু বেচে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হয়। কেউ যদি মনে করেন এ ব্যবসায় শুধু লাভ আর লাভ, তাহলে খুব ভুল হবে। আর এমন যাঁরা ভাববেন, তাঁদের এ ব্যবসায় না আসাই ভালো। ব্যবসাটা ভালো করে বুঝতে হবে এবং ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। এটা না হলে ব্যবসায় ভালো করা সম্ভব নয়।’ 

অর্থনীতির শুভ লক্ষণ

অর্থনীতিবিদেরা প্রাণিসম্পদের কয়েকটি অবদানের কথা উল্লেখ করেন। এর মধ্যে আছে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন এবং সর্বোপরি খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপিতে স্থির মূল্যে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান ১ দশমিক ৮০ শতাংশ। এ খাতে প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। আর চলতি মূল্যে জিডিপির আকার ৮২ হাজার ১৪ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কৃষিজ জিডিপিতে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান ১৬ শতাংশের বেশি। জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ প্রত্যক্ষ এবং ৫০ শতাংশ পরোক্ষভাবে প্রাণিসম্পদ খাতের ওপর নির্ভরশীল।

এর মধ্যে বিশেষ করে গো বা প্রাণীর খামারের উদ্যোক্তা হিসেবে তরুণদের এগিয়ে আসা অর্থনীতির জন্য শুভ লক্ষণ বলে মনে করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রো বিজনেস অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। তিনি গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, পোলট্রি এবং মৎস্য খাতে আমরা যতটুকু এগিয়েছি, সে তুলনায় গরু বা অন্য প্রাণী উৎপাদনে বেশি এগোয়নি। সেখানে উন্নত প্রযুক্তির দরকার, মানসম্মত উৎপাদন দরকার। শিক্ষিত তরুণদের এ খাতে এগিয়ে আসা অর্থনীতির জন্য শুভ লক্ষণ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ফ জ জল ব যবস য় র জন য অবদ ন দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

রোহিতের পর কোহলির রেকর্ডও কাড়লেন বাবর, পাকিস্তানের সিরিজ জয়

আগের দিন রোহিত শর্মার রেকর্ড ভেঙেছিলেন বাবর আজম। লাহোরে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অপরাজিত ১১ রানের ইনিংস খেলেই ভারতের সাবেক অধিনায়ককে টপকে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড গড়েছিলেন বাবর। পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক আজ তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৬৮ রানের ইনিংস খেলে কেড়েছেন আরেক ভারতীয় কিংবদন্তি বিরাট কোহলির রেকর্ড। ২০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাবরের এটি ৪০তম ৫০ ছোঁয়া ইনিংস। ৩৯টি পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলে এত দিন বাবরের সঙ্গে  রেকর্ডটির যৌথ মালিক ছিলেন কোহলি।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১৩ ইনিংস পর ফিফটি পাওয়া বাবরের ইনিংসে ভর করেই লাহোরে তৃতীয় টি-টোয়েন্টিটা ৪ উইকেট জিতেছে পাকিস্তান। তাতে তিন ম্যাচের সিরিজটা পাকিস্তান জিতল ২-১ ব্যবধানে। প্রথম ম্যাচ হারার পর ঘুরে দাঁড়িয়েই সিরিজ জিতল পাকিস্তান।

টসে হেরে ব্যাটিং পাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা পুরো ২০ ওভার খেলে ৯ উইকেটে করে ১৩৯ রান। রানটা ৬ বল হাতে রেখেই পেরিয়ে গেছে পাকিস্তান।

রান তাড়ায় ইনিংসের ১১তম বলে ৮ রানে প্রথম উইকেট হারায় পাকিস্তান। বাবর ব্যাটিংয়ে নামেন এরপরই। দ্বিতীয় উইকেটে সাহিবজাদা ফারহানকে নিয়ে ৩৬ রান জুটি গড়া বাবর তৃতীয় উইকেটে সালমান আগাকে নিয়ে ৫২ বলে  যোগ করেন আরও ৭৬ রান। ২৬ বলে ৩৩ রান করে পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান যখন ফেরেন ২৭ বলে ২০ রান দরকার পাকিস্তানের।

৫ রান যোগ হওয়ার পর চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে বিদায় নেন বাবর ৪৭ বলে ৯ চারে ৬৮ রান করা বাবর ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। এরপর ১৫ রানের প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে আরও ২ উইকেট হারিয়ে জয়ের অপেক্ষা একটু লম্বা করেছে পাকিস্তান।

এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে ৩৬ বলে সর্বোচ্চ ৩৪ রান করেন ওপেনার রিজা হেনড্রিকস। এ ছাড়া অধিনায়ক ডোনোভান ফেরেইরা ১৪ বলে ২৯ ও অলরাউন্ডার করবিন বশ ২৩ বলে করেন ৩০ রান। পাকিস্তানি পেসার শাহিন আফ্রিদি ২৬ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট।

দুই দল এরপর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলবে। সিরিজের প্রথম ম্যাচ মঙ্গলবার ফয়সালাবাদে।

সংক্ষিপ্ত স্কোরদক্ষিণ আফ্রিকা: ২০ ওভারে ১৩৯/৯ (হেনড্রিকস ৩৪, বশ ৩০*, ফেরেইরা ২৯, ব্রেভিস ২১; আফ্রিদি ৩/২৬, তারিক ২/২৬, ফাহিম ২/২৮)।
পাকিস্তান: ১৯ ওভারে ১৪০/৬ (বাবর ৬৮, সালমান ৩৩, ফারহান ১৯; বশ ২/২৪, উইলিয়ামস ২/২৬)।
ফল: পাকিস্তান ৪ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: ৩-ম্যাচ সিরিজে পাকিস্তান ২-১ ব্যবধানে জয়ী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আরব আমিরাতকে ৪৯ রানে গুঁড়িয়ে ইতিহাস গড়ল যুক্তরাষ্ট্র
  • চট্টগ্রামে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যুবককে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা
  • ‘দূরে থেকেও আমরা কাছে, এটাই বাস্তব’
  • বিলাসবহুল প্রমোদতরিতে খুন, এরপর...
  • ফাইনালে দ. আফ্রিকাকে ২৯৯ রানের টার্গেট দিল ভারত
  • শাহরুখকে ‘কুৎসিত’ বলেছিলেন হেমা মালিনী, এরপর...
  • প্রথম দেখায় প্রেম নাকি ঝগড়া? আসছে ইয়াশ–তটিনীর ‘তোমার জন্য মন’
  • জেমিনিতে যুক্ত হলো গুগল স্লাইডস তৈরির সুবিধা, করবেন যেভাবে
  • নড়াইলে ৩ দিন ধরে স্কুলছাত্রী নিখোঁজ
  • রোহিতের পর কোহলির রেকর্ডও কাড়লেন বাবর, পাকিস্তানের সিরিজ জয়